নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির মাঝেই সমাধান খুঁজি।

উড়ন্ত বাসনা

জীবন কে ভালবাসি।

উড়ন্ত বাসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরুষ আবার তোরা মানুষ হ

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩০

একটি বিদেশি গল্প দিয়ে শুরু করি, কয়েক বছর ধরে বাবার হাতে ধর্ষণের শিকার হয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। থানা-পুলিশ বা বাইরের কাউকে ঘটনাটি বলার সাহস ছিল না তার। ধুকে ধুকে মরত মনের জ্বালায়। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক কাউন্সেলিং থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘হায়েনা বাবার’ কুকীর্তির কথা শিক্ষককে জানালে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি ভারতের মুম্বাইয়ে। শিক্ষকের টেবিলে চুপিচুপি ছুটির আবেদনের কথা বলে একটি চিঠি দিয়ে চলে যায় সে। চিঠিটি খোলার আগেও শিক্ষক জানতেন না কী ভয়াবহ বার্তা দিয়েছে মেয়েটি। চিঠি খুলেই শিক্ষকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এতে লেখা ছিল প্রতিদিন তাকে ধর্ষিত হতে হয় বাবার দ্বারা। আর সবকিছু জেনেও চুপ করে থাকেন তার মা।

চিঠি পড়েই এক মুহূর্তে দেরি করেননি ওই শিক্ষক। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাদের সাহায্যেই মুম্বাইয়ের ভাসি থানায় বাবা, মায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৩ বছরের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী চিঠিতে লিখেছিল, আমার বাবা আমাকে ধর্ষণ করে, মা সব জেনেও আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন না। পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত বাবা একজন ফল বিক্রেতা। বয়স ৪৫ বছর। পুলিশকে মেয়েটি জানিয়েছে, ‘মায়ের সামনেই বাবা আমাকে ধর্ষণ করত। তারপর মাঝে মাঝেই মা আমাকের একটা করে ওষুধ খেতে দিত। আমার যখন ৭ বছর বয়স, তখন থেকে চলে আসছে এই ঘটনা। মা কখনই আমাকে সাহায্য করেনি।’

অভিযোগকারিনী মেয়েটির এক বড় বোন ও তিন ভাই রয়েছে। অন্য ভাইবোনরা বাড়িতে যখন থাকত না, তখনই তাকে ধর্ষণ করা হতো বলে জানিয়েছে সে। মায়ের সাহায্য না পেয়ে বড় বোন (১৭) কাছে ছুটে গিয়েও লাভ হয়নি। কারণ, বোনও ছিল একই পরিস্থিতির শিকার। পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বাইয়ের কিছু স্কুলে কয়েকটি এনজিও শিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে কাউন্সেলিং সেশন করেছিল। সেখানে যোগ দিয়েই সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটি। তার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত একটি চিলড্রেন্স হোমে রয়েছে মেয়েটি। এবার দেশের কথা বলি।

ব্যাপক ভাবে দেশে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন। ধর্ষণ তো দিন দিন ঘটছেই। এছাড়াও নির্মম পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ধর্ষকরা বেশ প্রভাবশালী। অনেকেই সরকারি দলের। ক্ষমতার প্রভাবে আইনি হাত থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে ধর্ষকরা। ধর্ষণের ঘটনার পর ভিকটিমরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেও মাঝপথে এসে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অনেক সমস্যা ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। অসংখ্য ঘটনা থাকলেও প্রায় ২০ শতাংশ নারী বছরের পর বছর মামলায় লড়ছেন ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। অধিকাংশের পরিবার বিভিন্ন মহলের চাপে প্রভাবিত হয়ে আইন-আদালতের ঝামেলা এড়িয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৫৩২ জন এবং এর মধ্যে মামলা করেছেন ৬৩০ জন। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র বলছে, ভুক্তভোগীদের পরিবার থেকে মামলা করতে না চাওয়ায় তা আদালতে গড়ায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা আর পরিবেশগত কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে। আমাদের দেশের গ্রামেগঞ্জে লাখ লাখ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তার বেশির ভাগই ধামাচাপা পড়ে যায়। লজ্জার ভয়, ভবিষ্যতের কথা ভেবে,দুর্বলতার দরুন সহ অনেক কারণ । সব ঘটনা পত্র পত্রিকায় আসেনা, যে ঘটনাটি চাপা দেওয়া যায় না সেটিই আলোচনায় চলে আসে। আসলেও বিপদ, সমাজে মুখ দেখাতে পারেনা। বিয়ে হয়না। মানুষ বাঁকা চোখে দেখে।
ভিকটিমরা নানা ধরনের চাপে থাকে। পুলিশ অনেক সময় মামলা নেয়না, টাকা -পয়সা বিয়ে দফা রফা করে দেয়। কিছুদিন আগে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যার ফলে শিশুটির গোপন অঙ্গে দেখা দিয়েছে বড় সংক্রমণের শঙ্কা। যেজন্য শিশুটির ওপর কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারে যাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। বিষয়টি মিডিয়ায় আলোচিত হওয়ার কারণে ধর্ষক গ্রেফতার হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগ থেকে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল অজ্ঞান অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হয় নেত্রকোনার একটি মেয়ে। ওই ঘটনার ধর্ষকের নাম আরিফ। সে স্থানীয় প্রভাবশালীর ছেলে। গত ৫ মে মেয়েটির মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া মেয়েটি তার জবানবন্দিতে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের কথা উল্লেখ করেন। তাতে আরও বলা হয়, আরিফ তাকে পরীক্ষার শিট নেওয়ার কথা বলে তার ঘরে নিয়ে যায়। আর সে সময় তার ওপর নির্যাতন চালায়।
মানুষের বিবেক মরে গেছে,ভুলে গেছে নারীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা। মা, বোন নারী এক ও আভিন্ন, ভোগ ও লোলুপ দৃষ্টি পুরুষের মনে। ঘেন্না ঐ নরপশুদের প্রতি। বিভিন্ন পার্লার ও ড্রেস চেঞ্জ রুমে থাকে হিডেন ক্যামেরা। নামকরা ডায়গনসটিকেও থাকে এ ক্যামেরা। এ নিয়ে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে গেলে রোষের মুখে পরতে হয়। আইন তখন কাজ করেনা টাকার কাছে। ক্ষমতার বলে ও সরকারের দলের হলে এমনি এমনি সব শেষ হয়ে যায়।

এ পৃথিবীতে এমন কোন ভূখন্ড নেই যেখানে কম-বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে না। ধর্ষণের কারনেও যে কোন দেশে বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো তার জ্বলন্ত উদাহরন। এক জরিপে যে বাস্তব চিত্র বেরিয়ে এসেছে তার আলোকে সেখানকার এই অবস্থাকে ভয়ংকর গুপ্ত সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। গত ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে সেখানকার ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের প্রায় চার লাখেরও বেশি নারী ধর্ষিত হয়েছে। এই গবেষণা ও জরিপের প্রধান অ্যামবার পিটারম্যান জানান, সামাজিক বাধা, লজ্জা ও ভয়ে অনেকেই যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের কথা প্রকাশ করেন না। তাছাড়া ১৫ বছরের নিচে ও ৪৯ বছরের বেশি বয়সের নারীদের তথ্য এ জরিপে ধরা হয়নি। মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হার্ভার্ড হিউম্যানেটরিয়ান ইনিশিয়েটিবের পরিচালক মিখায়েল ভ্যানরোয়েন কঙ্গোতে ধর্ষণের এই ব্যাপকতাকে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলা মানবিক সংকটের এক বিভীষিকাময় রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আদালতে ধর্ষণ সংক্রান্ত অসংখ্য মামলা জমা পড়ে আছে, মামলাগুলোর বিচার হতে সময় লাগছে। অনেকেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। যতগুলো ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে না। সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাগুলো বাড়ার কারণ হলো ধর্মীয় জ্ঞানের ঘারতি, মূল্যবোধের অভাব, নীতিগত শিক্ষার কমতি,আইনের শাসন প্রয়োগ না হওয়া। ইন্টারনেটের অপব্যবহার তো আছেই । পরিবেশগত কারণও রয়েছে। ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতার কারণের অনেকের শারীরিক ও মানসিক বিকৃতি ঘটে। আর এসব সমাধানের জন্য পারিবারিক সচেতনতা,ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে হবে। গত মাসের প্রথম দিকে একটি জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ এসেছিলো যে স্কুলগামী ৭৭ ভাগ কিশোর পর্ণতে আসক্ত! এটা শুধু বাংলাদেশের খবর। পৃথিবীর গড় পরিসংখ্যান বেশ ভয়াবহ, পশ্চিমা দেশে অবস্থা আরও কঠিন। গর্ভপাতের সংখ্যা শ’তে ৭৮ জনের আধিক। মাধ্যমিক না পেরুতেই অনেক কিশোরী মা হয়ে যান। বাংলাদেশে বর্তমান নারীদের নিরাপত্তার কোন গ্যারান্টি নেই,খাদিজার মত বা তনুর মত অনেক মেয়ে পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে। খবর হয় মেয়েদের স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়েও। এ লজ্জা কার? ভারতের অবস্থাও হার মানবে যদি টেনে না ধরা হয়। নিয়ন্ত্রণের কোন বালাই নেই। সংস্কৃতির নামে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপথগামী। বলতে হবে পুরুষ আবার তোরা মানুষ হ , ভালো ও সুন্দর মানুষ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আপনার টাইটেলের সুত্র ধরেই, আমাদেরই আগে মানুষ হতে হবে।। তবে সু্ত্র থাকলে আরো গ্রহনযোগ্যতা পাবে।।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:১৫

চাঁদগাজী বলেছেন:

"সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাগুলো বাড়ার কারণ হলো ধর্মীয় জ্ঞানের ঘারতি, মূল্যবোধের অভাব, নীতিগত শিক্ষার কমতি,আইনের শাসন প্রয়োগ না হওয়া। ইন্টারনেটের অপব্যবহার তো আছেই । পরিবেশগত কারণও রয়েছে। ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতার কারণের অনেকের শারীরিক ও মানসিক বিকৃতি ঘটে। আর এসব সমাধানের জন্য পারিবারিক সচেতনতা,ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে হবে। "

১। "ধর্মীয় জ্ঞানের ঘারতি "
২। "মূল্যবোধের অভাব "
৩। "নীতিগত শিক্ষার কমতি, "
৪। "আইনের শাসন প্রয়োগ না হওয়া। "
৫। "ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির "

-আমার কাছে মনে হচ্ছে, ফ্যাক্টর অনেক থাকতে পারে, সমাধান হলো বিচার ও সম্ভাব্য ধর্ষণকারীকে প্রতিহত করার জন্য পুর্ব পদক্ষেপ।

প্রশ্ন:
-ধর্মীয় জ্ঞান দেয়ার উপায় কি?

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৪৮

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ঠিক এরকম কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা যদি এদেশেও হয় তবে অনেক জঘন্য অপরাধী ধরা পড়বে।

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৯

কানিজ রিনা বলেছেন: আইনের বিচার না হওয়ায় ধর্ষন মহামারীর দিকে এগিয়ে গেছে। আমার মতে যে ধর্ষক গুল হাতেনাতে
ধরা পরে তাদের সেখানেই পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে।

৫| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

অগ্নিঝরা আগন্তুক বলেছেন: প্রথমত আপনার পোস্টের টাইটেল বড় রকমের ভুল রয়েছে। ধর্ষনকারির বিরুদ্ধে আপনার পোস্ট, সকল পুরুষ নয়। আর আমাদের দেশে ধর্ষনের বিচার দ্রুত বিচার আদালতে হয়া প্রয়োজন।

৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.