![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয় রানা,
নিশ্চয়ই ভাল আছ। তুমি তো আবার ভালোদের দলে ! তোমার মত পাগল আমি একটাও দেখি নি এ জন্মে । পরের জন্মে দেখবো কিনা কে জানে । তাই চিন্তা করছি তোমাকে সাথে করে একদিন চন্দ্রিমা উদ্যান এ ঘুরতে যাব। কিন্তু আমি এখনো সিদ্ধান্তে পৌছুতে পারছি না তার কারন, তুমি তো আবার সভ্য কোন স্থানে যাও না....!
এতটুকু পড়ে চিঠিটার গন্ধ শুকলো রানা । এটা তার ছোটবেলার অভ্যাস । এমন কোন কিছু নেই যেটার গন্ধ সে শুকে না । হাতের কাছে যা পায় তার গন্ধ ই সে নেয় !
আজ সকালে তার ঘুম ভাঙলো পোস্টম্যানের ডাকাডাকিতে । বিছানা থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে দরজা খুললো । মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে তোলার আগেই পোস্টম্যান হাসি হাসি মুখে বলে উঠলো "স্যার,একটা স্পেশাল চিঠি ! "
-স্পেশাল তুমি বুঝলে কিভাবে?
-স্যার, আমি বুঝি! সকাল সকাল যেসব চিঠি আসে তা স্পেশাল ই হয় ।
-ও
কি জানি, হবে হয়তো... চিঠি পেয়ে দরজা লাগাতে লাগাতে চিঠি টা নাকের সামনে নিয়ে আসতেই বুঝতে পারলো এটা 'রাহি'র চিঠি । কিন্তু এত সকালে রাহি কেন চিঠি পাঠাবে??
চিঠিটা অর্ধেক পড়তে পড়তে ই তার ঘুম চলে আসলো । যদিও ঘুমুতে পারলো না মশার কামড়ে । সারারাত এরা কামড়ে কামড়ে রানার বা হাত টা ফুলিয়ে ফেলেছে । এদের কয়েকটা কে সে রাতেই না ফেরার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে । আরও কয়েকটা ভাগ্যের গুনে বেঁচে থাকলেও রানার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এদের কপালে আজ দুঃখ আছে । কিন্তু তাতে বাধ সাধলো পোলাও এর গন্ধ । তার মনে পড়লো আজ তো শুক্রবার । মেসে আজ পোলাও দিবস হবে । সে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলো....।
বিকেলে চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো রাহি র । রাহি আসছে । মুখে হাসি ফুটে উঠলো রানা র ।
তাকিয়ে থাকল । চোখের পাতা যেন পড়ছেই না তার । ঠোটে গাড় করে লিপস্টিক, চোখে মোটা করে কাজল,মোটা পাড়ের হালকা নীল শাড়িতে রাহি কে বেহেশতি হূর পরী দের মত লাগছে । সে ভেবে পাচ্ছে না এতটা সুন্দর করে এরা কিভাবে সাজে ।
রাহি দেখছে রানা তার দিকে হাবলার মত তাকিয়ে আছে। ছেলেটা তাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তাদের সম্পর্কের ৩ বছর চলছে অথচ সে একবার ও তাকে 'ভালোবাসি' কথাটা বলে নি। রাহি জোর করলে তবেই বলে ।
-আমার দিকে তাকায়া আছ কেন??
-কেন তাকায়া থাকা কি গুনাহ নাকি???
-আরে আজব তো আমি বলছি নাকি গুনাহ হবে??? তুমি এত বেশি বুঝো কেন?? তুমি সবসময় ই বেশি বুঝো !
রানা বুঝতে পারলো আর থামানো যাবে না রাহি কে । একবার শুরু করলে তার রাগ এত সহজে কমে না। সে চিন্তা করতে শুরু করলো কিভাবে তা কমানো যায় ।
-'তুমি আজকে নিশ্চয়ই স্ট্রবেরি ফ্লেভারের লিপস্টিক দিয়েছ?? 'রানার মুখে চাপা হাসি ।
-'হুম,তুমি কিভাবে জানলে??' রাহি বিস্মিত ।
-তুমি যখন সাজছিলে তখন আমি তোমার পাশে ছিলাম।তোমাকে অনেক ভালোবাসি তো তাই সবসময় তোমার পাশে থাকি কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে পাও না।
-এই তুমি মিথ্যা বলবা না । আমি একদম মিথ্যা পছন্দ করি না ।
-'তুমি নিশ্চয়ই সিনেমা পছন্দ করো???' রানা মুচকি হাসছে ।
- তুমি দেখাবা সিনেমা??? তুমি তো কিপটা । তুমি দেখাবা সিনেমা???
রানা উত্তর না দিয়ে হাটা শুরু করলো । রানা জানে রাহি তাকে পেছনে ডাকবে । রানা সাড়া না দিলে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা দের মত কাদতে শুরু করবে । রাহির কান্না দেখতে খুব মজা পায় রানা । রানার মতে, মেয়েদের আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পায় মেয়েরা যখন ঘুমে থাকে আর কাঁদতে থাকে । রানা তাই সেই মুহুর্তের অপেক্ষায় আছে ।
এসব ভাবতে ভাবতে রানা অনেক দুর চলে এসেছে । কিন্তু রাহি আসছে না কেনো । রানা পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো আশেপাশে রাহির নামগন্ধও নেই । যেখানে রাহি দাড়িয়ে ছিলো তার থেকে কিছু সামনে একটা জটলা দেখা যাচ্ছে । রানা দেখতে গেলো সমস্যা কি । জটলা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই রানার মাথা পুরোপুরি ফাকা হয়ে গেলো । রাহি মাটিতে শুয়ে আছে। মাথায় রক্ত, হাতে অনেকটা ছিলে গেছে । রাহি রানার কাছে আসছিলো কিন্তু হঠাৎ একটা ট্রাক এসে সব উলোটপালট করে দিলো । রানা কি করবে বুঝতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সে এখনই পড়ে যাবে মাথা ঘুরিয়ে ।
৫ ঘন্টা পর :
ডাক্তার : এখন কেমন লাগছে আপনার??
রানা :ভাল । আচ্ছা আমার পাশে একটা মেয়ে পড়ে ছিলো । সে কোথায়??
ডাক্তার - ও আপনার কি হয়?
রানা - বান্ধবী । ও কোথায় প্লিজ বলবেন??
ডাক্তার -অবশ্যই বলবো ! আপনি একটু রেস্ট নিন । আপনি এখন ভালো নেই । পুরোপুরি সুস্থ হোন আপনাকে আমি তার কাছে নিয়ে যাব ।
রানা ঘুমানোর চেষ্টা করলো । স্বপ্নে সে রাহির লিপস্টিকের গন্ধ পাচ্ছে । সে বলছে 'তোমাকে খুব ভালো দেখাচ্ছে ।' এটা নিশ্চয়ই স্ট্রবেরি ফ্লেভার??'
রাহি কোনো কথা বলছে না শুধু দুরে সরে যাচ্ছে আর তাকে হাত দিয়ে কাছে ডাকছে ।
এই পর্যায়ে রানার ঘুম ভেঙে গেল । সে গলায় হাত দিয়ে দেখলো সে প্রচুর ঘেমে গিয়েছে । এখন কিছুটা সুস্থ বোধ করছে । ডাক্তার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন ।
-আপনি এখন কেমন বোধ করছেন?
-ভালো ।
চলুন আপনাকে আপনার বান্ধবির কাছে নিয়ে যাই ।
-স্যার, ও কোন কেবিনে??
-আসুন, ভেতরে আসুন । দেখুন তো ও ই কি আপনার বান্ধবী ? আমরা খুব দুঃখিত । আসলে উনি তখনই মারা গিয়েছেন । একটা ট্রাক উনাকে প্রচন্ড ধাক্কা দেয় আর উনি মারা যান । আমরা দুঃখিত খবরটা আগে না দেয়ার জন্যে। কিন্তু এতে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারতো তাই দেয়া হয় নি খবরটা... ।
ডাক্তারের কোনো কথাই কানে ঢুকছে না রানার । সে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো । চুপচাপ হেটে যাচ্ছে সে । কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না... । নাকে আসছে কড়া লিপস্টিকের গন্ধ .....!
কয়েক দিন পর :
-রানা,এই রানা ।
ঘুম ভেঙে গেলো রানার । সে স্পষ্ট শুনেছে রাহি তাকে ডাকছে । কিন্তু না, রাহি তো নেই...! তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ।
ঘড়িতে দেখলো রাত ৩টা বেজে ৩২ মিনিট । সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। হঠাৎ করে তার মনে হলো তার কাধে যেনো কেউ হাত দিয়েছে । সে মাথা ঘুরিয়ে দেখবে কি না ভাবছে । ঠান্ডা হাত । বারান্দার আবহাওয়াও হঠাৎ করে মনে হচ্ছে বরফ শীতল হয়ে গিয়েছে । হাতটা খুব কোমল ।
সে আরও বুঝতে পারছে, তার নাকে স্ট্রবেরীর গন্ধ আসছে ।
সিগারেটের আগুন পড়ে গেলো । এবার সে শুনতে পাচ্ছে কে যেনো তার মগজের ভেতরে কথা বলছে ।
"রানা, এই রানা । তুমি সবসময় এত মিথ্যা বল কেন ?
তুমি নাকি গন্ধ শুকেই সবকিছু বলতে পারো । বলোতো আমি কে?
রানার মনে হচ্ছে সে যেনো তলিয়ে যাচ্ছে । তার শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করলো ।
"এখনো বলতে পারলে না? "
রানা গন্ধ শুকার চেষ্টা করলো । সে পারছে না । রানার কান্না আসছে । সে পারছে না কেনো? তার তো কখনও এমন হয় না । হঠাৎ মনে হলো সে স্ট্রবেরির গন্ধ পাচ্ছে ।
রানা বলে উঠলো -রাহি??????????
দুর থেকে রাহি হাসছে । রানার খুব ভালো লাগছে .....! কিন্তু হাসিটা মিলিয়ে যাচ্ছে কেনো.....?
পরেরদিন :
আজকের তাজা খবর ! আজকের তাজা খবর !
"ছাদ থেকে পড়ে একটা ছেলের মৃত্যু.... "
©somewhere in net ltd.