![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার উপর থেকে ব্যান না তুললে আমি কাইন্দা দিমু ।।।
আমি চব্বিশ বছর বয়সী এক যুবক। আমি প্রেমে পড়েছি। ভীষণ প্রেমে পড়েছি। কিন্তু আমি সব সময় নিজেকে প্রশ্ন করি, কতো বছর বয়সী মেয়ের প্রেমে পড়া উচিত ছিল আমার। আঠারো-উনিশ কিংবা তার চেয়েও বেশি বয়সী মেয়ের যে অন্ততপক্ষে কলেজে পড়াশোনা করছে।
আসল কথা হলো, আমি এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছি যে কি না ক্লাস ফোরে পড়ে! বয়স আর কতো হবে, দশ-বারো।
২০১০ সালের জুনে আমার বাসার সামনে তিন তলা ভাড়া নিয়ে একটা প্রাইভেট কোচিং সেন্টার খুললেন আমার পুরনো পরিচিত এক শিক্ষক। অনেক খোজাখুজি করেও ভালো ইংরেজি শিক্ষক না পাওয়ার পর তিনি আমার শরণাপন্ন হলেন। এক প্রকার আবদার করেই বললেন তার কোচিংয়ে নাইন-টেনের ইংরেজি ক্লাস নিতে।
আমি জানতাম, নাইন-টেন ক্লাসের কোন বয়সী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে।
ছোটবেলা থেকে মেয়েদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলার কারণে একটু মানসিক দুর্বলতায় ভুগছিলাম। শেষমেশ এক বিকেলে জীবনে প্রথমবারের মতো চক-ডাস্টার নিয়ে শিক্ষক হিসেবে ক্লাসে ঢুকলাম। শুরু হলো আমার শিক্ষকতা জীবন।
আমার ক্লাস তিন তলায়। নিচতলা এবং দোতলায় প্রাইমারি সেকশনের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। সিড়ি টপকে উপরে যাওয়ার পথে ফিট চারেক উচ্চতার একটা মেয়েকে চোখে পড়লো। ফ্রক এবং পায়জামা পরা ফর্শা মেয়েটি। মাথায় অ্যাশ কালারের ওড়না জড়ানো। দেখে মনে হলো ভালো পরিবারের সন্তান। সেদিন এ পর্যন্তই। তবে মেয়েটার মায়া মাখা মুখটি আমার চোখের পাতায় লেপ্টে রইলো সারা রাত।
কেটে গেল কয়েকদিন। একই জায়গায় একই সময়ে আবার একদিন তার সঙ্গে দেখা। মেয়েটাকে ডাকলাম।
প্রশ্ন ভরা চোখ নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
নাম জানতে চাইলাম।
অতি চমৎকার নাম। মাহি। আমার নামের সঙ্গে খানিকটা মিল আছে। বললাম, তুমি আমাকে চেনো?
না। জবাব দিল মাহি।
পরিচালকের উপস্থিতির কারণে সেদিনের মতো আর আগানো সম্ভব হলো না।
সময়-সুযোগ হলেই আমি মাহিদের ক্লাসে যেতাম। প্রাণ ভরে ওর মুখটি দেখতাম। হাসলে ডান গালে স্পষ্ট টোল দেখা যায়। চিকন-লম্বা হাত দুটো যেন রুপার কাঠি।
মাহিদের ক্লাসের অতি চঞ্চল কয়েকটা মেয়ে আমার রোগ শনাক্ত করে ফেলেছিল। ওরা আমাকে বললো, স্যার, আপনার মুখে এতো মাহির নাম শুনি কেন?
আমি হেসে ফেললাম।
মাহি লজ্জায় মুখ লুকিলো।
সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। শিশুরা বৃষ্টির কারণে বাসায় যেতে পারছিল না।
আমিও বারান্দায় ঠাই দাড়িয়ে ছিলাম।
হঠাৎ শশী নামে এক মেয়ে আমাকে এসে জানালো, মাহি আমাকে ডাকছে।
হন্তদন্ত হয়ে ছুটলাম মাহির কাছে।
সে বললো, আমি ছাতা আনতে ভুলে গেছি। আপনার ফোন থেকে আব্বুকে ফোন করে ছাতা আনতে বলতে হবে।
মাহির আব্বুকে ফোন করলাম।
ভদ্রলোক জানালেন, তিনি অসুস্থ এবং বিনীত ভাবে আমাকে অনুরোধ করলেন মাহিকে বাসায় পৌছাতে সাহায্য করতে।
আমি মনে মনে বেজায় খুশি হলাম মাহিদের বাসাটা দেখতে পাবো বলে।
ডান হাতে ছাতা এবং বাম হাতে মাহিকে জড়িয়ে ওদের বাসায় পৌছালাম। দূরত্ব অতি সামান্য। মিনিট পাচেকের রাস্তা আর কি! সময়টা রাত সাড়ে আটটা।
কলাপসিবল গেইটের সামনে মাহির আম্মু দাড়িয়ে ছিলেন।
আমরা ভেতরে ঢুকলাম। আকশি রঙে মোড়ানো বাড়ির ভেতরটা। আলোর খুব বাড়াবাড়ি।
আমাকে বসতে দিয়ে ভদ্রমহিলা মাহিকে নিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেলেন।
অল্প সময় পর মাহির আব্বু এবং দুই বোন এলেন। বড় বোন নর্থ বেংগল মেডিকাল কলেজে এমবিবিএস পড়ছেন। ওনার স্বামী ইংল্যান্ডে থাকেন। প্রবাসী ডাক্তার। অন্য বোনটা আমাদের কলেজেই ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছেন। মাহির বাবা বিদেশ ফেরত প্রকৌশলী। ভদ্রলোক আমার নাম-ধাম জানলেন এবং পড়াশোনার হাল-অবস্থা জিজ্ঞাসা করলেন।
গল্পে গল্পে কেটে গেল ঘণ্টাখানেক। ইতিমধ্যে বৃষ্টি ধরে এসেছিল।
আমাকে খাবার ঘরে যেতে অনুরোধ করলেন মাহির বাবা। বারকয়েক আপত্তি দেখালেও শেষ পর্যন্ত ওনার কথাই মেনে নিতে হলো। শর্ত দিলাম, তবে মাহি আমাকে খাওয়াবে।
মাহির দুষ্টুমির রূপটা সেদিন দেখলাম। অনেক খাইয়ে ফেললো সে আমাকে।
বোধ করি আমার শিক্ষক সত্তাটা আমি সেদিন হারিয়েই ফেলেছিলাম। এতো হাসির কথা শুনিয়েছিলাম সবাইকে যে, তারা আমাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছিলেন।
মাহিকে নিয়ে আমি অনেক ভাবতাম। হিসাব কষতাম, আমার যখন মাস্টার্স শেষ হবে তখন মাহি কোন ক্লাসে পড়বে, তার বয়স তখন কতো হবে ইত্যাদি।
কথায় আছে, সবার কপালে নাকি সুখ সয় না। হোক কল্পনায়, মাহিকে নিয়ে খুব সুখেই ছিলাম। এর মধ্যে নাজ নামে ক্লাস টেনে পড়–য়া এক মেয়ে ঝামেলা লাগিয়ে ফেললো।
আমি জানতাম, নাজ আমাকে পছন্দ করে। তাই বলে আমি তো তার ডাকে সাড়া দিতে পারি না। তাছাড়া মনে-প্রাণে আমি মাহিকে ভালোবাসি!
যাহোক, নাজ আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব জানালো তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে।
আমি সরাসরি অস্বীকার করলাম। বিষয়টা ছিল আমার কাছে উভয় সংকটের মতো।
নাজ সবাইকে বলে বেড়াচ্ছিল, আমিই নাকি তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি।
তার এ অমূলক কথা কেউই কানে তুলছিল না। কারণ আমার সম্পর্কে সহকর্মী শিক্ষক, এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও ভালো ধারণা পোষন করতো। সুতরাং আমি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলাম না। বলতে পারবো না, বিষয়টা মাহি জানলো কিভাবে।
সে কোচিংয়ে আসা অফ করে দিল।
প্রায় সপ্তাহখানেক পর মাহিদের ক্লাসে গিয়ে অন্য মেয়েদের কাছে জানতে চাইলাম, মাহি আসছে না কেন?
ওরা কিছু বলতে পারলো না।
মাহির বাবাকে ফোন করলাম।
ভদ্রলোক আমাকে কড়া ভাষায় যা বললেন তার সারমর্ম হলো এই যে, আমরা যারা শিক্ষকতা পেশায় আছি তারা সবাই নৈতিক চরিত্রহীন।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না কোথায় কি ঘটেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম, যে করেই হোক অন্ততপক্ষে মাহির বাবাকে বুঝতে হবে আমি নির্দোষ। অন্যথায় আমার স্বপ্নের রানী আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। তহা আমি কিছুতেই হতে দেবো না।
কোনো আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ ছাড়াই মাহিদের বাসায় গেলাম।
মাহি এক পলকের জন্যও আমার সামনে এলো না।
মাহির বাবাকে পুরো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করলাম।
ভদ্রলোক আমার প্রতি সদয় হলেন এবং পরামর্শ দিলেন কোচিংয়ে শিক্ষকতা না করতে। তিনি বললেন, তুমি যতোদিন এই শহরে আছ ততোদিন মাহি তোমার কাছে পড়াশোনা করবে।
আমিও দুষ্টমি করে বললাম, এ শহর ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
বেচারা আমার দিকে কৌতুকের দৃষ্টিতে তাকালেন এবং বললেন, পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মেছ, ঘরের বাইরে না হলে তোমার পুরুষত্বের ষোলো আনাই বৃথা।
মাহির হাউস টিউটর আমি। ওকে এক পলক দেখেই আমার রাজ্যের সুখ। কি মায়ামাখা মুখ আর চাহনি!
খুব ভালোবাসি ওকে আমি। ওকে কল্পনা করে আনন্দে নেচে উঠি। ওর গোমরা মুখ আমার মনে বিষণতার প্রলয় বইয়ে দেয়। ওর শূন্যতা আমাকে কাদিয়ে ভাসায় লবণ পানির সাগরে।
আই লাভ সো মাচ মাহি। আই লাভ ইউ সো মাচ।
©somewhere in net ltd.