নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আপনারে দীপ করে জ্বালো\' (\'অত্তদীপ ভব\')

গৌতমী সাময়িকী

নীড় ছাড়ার গন্ধ শরীরে যার!

গৌতমী সাময়িকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই নারীরও একটা গল্প আছে // মোহাম্মদ আমির হোসেন

০২ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০২


একজন নারী। বাংলায় সেই নারীকেই আবার বলা হয়; মহিলা, স্ত্রী, মানবী, রমণী, মাগী, মেয়েমানুষ, পরিচারিকা, দাসী, অঙ্গনা, রক্ষিতা, বনিতা কতই না নামে। ঢাকার মাতুয়াইল অঞ্চলে নারীদেরকে আমি মাতারি বলতে শুনেছি। প্রথম যেদিন শুনলাম, তখন আমার বয়েস অল্প, বুঝতে পারিনি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, মাতারি কি? আমার অজ্ঞতায় তাঁরা হেসেছিল। সেই নারীরও একটা গল্প আছে। মানুষ থেকে নারী হয়ে উঠবার গল্প। সে অনেক আগের প্রাক সাম্যবাদী সমাজের কথা। সেই ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় নারীরা কখনই দুর্বল ছিলনা। পুরুষের থেকে শক্তি, সামর্থ্য বা বুদ্ধিতে নারীরা কোনো অংশেই কম ছিলনা। তারাও পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে শিকার করতো, খাদ্য সংগ্রহ করত, প্রতিপক্ষ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করত। সেই সময়ে নারীরা পুরুষদের চ্যালেঞ্জ করতো শক্তি পরিক্ষার। নারী পুরুষ কুস্তী লড়তো। সেই লড়াইয়ে নারীরা বীরের মর্যাদায় জয়ী হতেন। নেতৃত্ব দিতেন নিজ গোত্রের। তারা ছিল স্বাধীন। এখন যেমন সকল ক্ষমতার উৎস পুরুষ, তখন কিন্তু তেমনটা ছিলনা। নারী পুরুষের ক্ষমতার ব্যাল্যান্স ছিল। নারী ইচ্ছে করলেই পুরাতন পুরুষ সঙ্গীকে ত্যাগ করে নতুন সঙ্গী নির্বাচন করতে পারতো। তখনকার গোত্র প্রধান সমাজও তা মেনে নিতো। বরং এক দিকে পুরুষ কিছুটা দুর্বলই ছিল। সঙ্গী নির্বাচনে পুরুষদের সকল সময় নারীর সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করতে হত। ইচ্ছে করলেই তারা নারী সঙ্গীকে ত্যাগ বা নতুন নারী সঙ্গী গ্রহন করতে পারতোনা। সেই সিদ্ধান্ত নারীদের অধিকারেই ছিল। পুরুষেরাই প্রথম লুকোচুরী পরকীয়া প্রেমের প্রবর্তন করেন। নারীদের লুকোচুরী করার কোনো প্রয়োজন ছিলনা। এক সময়ে পুরুষ চতুরতা শিখে যায়। তারা দেখলো গর্ভকালীন সময়ে নারী সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে। নারীর এই দুর্বলতাকেই পুরুষরা কাজে লাগালেন। ধিরে ধিরে নারীকে তারা নিরাপত্তার অযুহাতে গৃহে আবদ্ধ করতে থাকলেন। নারীরও কোন উপায় ছিলনা, তাদের দীর্ঘ গর্ভকালীন সময় ও পরবর্তী সন্তান সন্তদি প্রতিপালনের একটা বড় সময় তাদের ব্যয় করতে হল। চতুর পুরুষ সেই সুযোগেই কিছুদিন পর পরই নারীকে গর্ভবতী করে তুলতে লাগলেন, যেন নারী অধিকাংশ সময়ই দুর্বল হয়ে গৃহে আবদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। এভাবেই নারীর শক্তিকে খর্ব করার ষড়যন্ত্র করতে থাকেন পুরুষেরা। নিজেদের স্বার্থে পুরুষ সকল সময়ই পুরুষের। এত গেল নারীর শক্তিকে খর্ব করার ইতিহাস। কিন্তু পুরুষ দেখলো নারীরা তখনও বুদ্ধিতে পুরুষদের থেকে এগিয়ে। তারা কৃষি কাজের আবিষ্কার করে ফেলেছে। খাদ্য সংগ্রহ করে রাখার জন্যে পাত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে। আগুন আবিষ্কার করে ফেলেছে। আর পুরুষেরা নারীদের গৃহে আবদ্ধ করে তখনও হাড়খাটুনির শিকারে গিয়ে বেঘরে মৃত্যু বরণ করছে।এটাও পুরুষদের সহ্য হয়নি। তারা কৃষি কাজের দায়িত্ব নারীদের থেকে নিয়ে নিল। চুরি করল পাত্র, আগুনের আবিষ্কারের ফর্মুলা। নারীর বুদ্ধিকে চিরতরে বোতলে বন্দি করে রাখতে তারা সৃষ্টি করলো মহা শক্তিমান অস্ত্র “ধর্ম”। যেখানে দাঁড়া করে দিল এক গাজাখোরী গল্পের ঈশ্বরকে। নারীরা চিরতরে বন্দী হয়ে গেল। এর পর বাকি রইলো নারীর মহত্বকে খর্ব করার। তারা ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে পাপ পূন্য নামের দুইটি হাস্যকর বিধান চালু করলো। তারা নারীদের বোঝাতে সক্ষম হল, নারীরা হল পাপের ফসল। দুর্বল প্রায় নারীরা তখন তাই মেনে নিল। পুরুষরা প্রচার করতে থাকলো, পুরুষরা কখনই নারীর গর্ভে জন্ম নেয়নি। ঈশ্বর পৃথিবীতে তাদেরকেই প্রথম সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে। এর পর পুরুষের অস্তি দ্বারা পুরুষের প্রয়োজনে নারীকে ঈশ্বর তৈরী করেন। অর্থাৎ পুরুষের সৃষ্টি নারী হতে নয়, বরং নারীর সৃষ্টি পুরুষের থেকে। পুরুষ তার মহামূল্যবান সৃষ্টিবীর্য নারীদের কাছে সংরক্ষণ করেণ নিজের বংশ বৃদ্ধিতে। নারীরা মৃদু হলেও এর প্রতিবাদ করেছিল। তখন চতুর পুরুষ নারীদের মুখ বন্ধ করতে নারীর মুখে লজেন্স এটে দেয়, নারীকে তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই মায়ের ভূষণে ভূষিত করেন। এটাই ছিল পুরুষদের থেকে নারীর প্রথম ও শেষ পুরষ্কার। ধিরে ধিরে নারী ভুলে যায় তার শক্তি তার বীরত্বের ইতিহাস, নারী ভুলে যায় তার বুদ্ধিমত্বার ইতিহাস, নারী ভুলে যায় তার মহত্মের ইতিহাস। নারী বাঁধা পড়ে পুরুষের জালে। নারী ভুলে যায় সে কেবল একজন নারী নয়, কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী নয়, সেও মানুষ।

তথ্য সূত্রঃ ১। রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন (ভোলগা থেকে গঙ্গা) ২। ভারতের বিবাহের ইতিহাস (অতুল সূর) ৩। মুক্তিযুদ্ধ ও নারী গ্রন্থের প্রারম্ভিক আলোচনা থেকে। (রোকেয়া কবির/মুজিব মেহদী)

লেখাটি গৌতমী সাময়িকী 'সপ্তম সংখ্যা' থেকে নেয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.