![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোগীকে ঔষধ দেয়া হয়, সেবনের জন্য, পূজার্চনার জন্য নয়। উপশম হয়ে গেলে ঔষধ সেবনেরও প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।
এমটাই বুদ্ধ তাঁর ধম্ম সম্পর্কে বলেছেন_ 'আমার দেশিত ধম্ম নৌকার মতো, পারে পৌঁছানোর জন্য, ঘাড়ে নিয়ে হাঁটার জন্য নয়।
__মজ্ঝিম নিকায়
জটাবদ্ধ-বিশ্বাস ও আঁকড়ে থাকার মোহ জীবন বা ধম্ম কোনোটাই নয়। মানুষকে যেতে হয় অভয়-আস্থার কাছে, আত্মজিজ্ঞাসায়। হৃদয়ঙ্গম করতে হয় 'সব কিছুই অনুসন্ধান ও পরীক্ষার অধীন'। যুগে-যুগে মানুষ অনুসন্ধান ও পরীক্ষাবিমুখ হয়েছে বলে পৃথিবীতে বদ্ধমূল-ধারণার পূজারী সংখ্যাতীত।
জীবনের পূজা বর্জন করে, সংখ্যাতীতেরা, অর্থহীন সকল পূজায় কখনো জড়তা-নিমগ্ন, কখনো উত্তেজিত ও ধ্বংসশীল হয়ে থাকে।
নিজেদের জিজ্ঞাসা করা দরকার, অন্ধের হাতীদর্শন মুখে-মুখে শুনে, আত্মবিসর্জন দিয়ে, মোক্ষলাভ হয়? সুসচেতন মানুষের নিবেদন: এখন, এই মুহূর্ত থেকে শুরু হউক, কায়-বাক্য-মনের সঠিক পরিচর্যা।
জীবনবান্ধব সম্পর্কের গুণাত্বক নাম ধম্ম। একমাত্র জীবন হলো ধম্মের ভিত্তি। ধম্মের মধ্যে কোনো ইশ্বর-আত্মা-পূর্বাপর-জন্মান্তর শাখা নেই। এসব অচিন্তনীয় (অকাজ) চিন্তার ভ্রম।
ধম্ম (শিক্ষা) মানুষের সমন্বয়, হৃদয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনচর্চা। সমস্ত বিষয়-বস্তু, ব্যক্তিবর্গের প্রভাব আর আচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত জীবনের চর্চা। ধর্ম-বর্ণ--দেশ-কাল-দেয়ালহীন সমগ্র মানবজীবনচর্চা।
নাম-ধাম-শাস্ত্র-দোহাই-জপে-তপে নির্ভরতা নেই। নিজেই নিজের নির্ভরতা, নিজেই নিজের আশ্রয়। নিজের প্রচেষ্টায় জ্বলে উঠে আত্মদীপ, নিজের প্রচেষ্টাতে হয় মন বা চিত্ত বিশুদ্ধ-জীবন বহতা।
সদা-স্বজাগ্রত সুসচেতন প্রজ্ঞাবান এবং করুণাঘন মানুষ হন ধম্মপরায়ণ।
সুসচেতন ধম্মপরায়ণ মানুষের কর্তব্য সর্বত্র সকল প্রানীর প্রতি। 'বহুজনের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য দিকে-দিকে ছড়িয়ে যাও' বুদ্ধের দেশনা তাঁরা গভীর মনোযোগের সাথে গণ্য করেন।
আশ্চর্য বা অবাক হবার কিছু নেই। জ্ঞানীগণের মুষ্ঠির আড়ালে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। জ্ঞানীগণ অক্ষরজ্ঞানশূন্য মানুষকেও বিমুক্তিশিক্ষা সাদামাঠাভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন এবং জাগতিক ভ্রান্তিসমুহের নিরসন করতে পারেন। যদিও কুপ্রথা-সংস্কারমারের জটাবদ্ধদেয়াল জ্ঞাণীগণের সম্মুখে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে।
এই চক্রবালে অলৌকিক, অতি আশ্চর্যের কিছু নেই। যাকিছু আছে স্বচ্ছ-মন আর প্রখর-দৃষ্টি হলে মানুষের কাছে অম্লান থাকবে না। অজানাকে জানা হয়ে গেলে সবকিছু স্বাভাবিক, সহজ অবস্থায় পরিগণিত হয়। মানুষ নিজের ভেতর ঐশ্বর্য উৎপন্ন করতে পারে। নিজের প্রচেষ্টাতে সবকিছু হয়। মানুষের আছে মহাজগতের মতো বিস্তৃত সম্ভাবনা।
মহৎ সুন্দর সম্ভাবনা নিয়ে সেই মানুষ কেনো থাকবে লোভ আর ভয় মেশানো প্রথা-প্রার্থনা-সংস্কারে অবগুণ্ঠিত? এটা যে আত্মবিমোহিত কূপমণ্ডূকতা!
মানবজন্ম দুর্লভ এটাকে অতি ভোগের চর্চায়, তুচ্ছতায় বিনাশ না করে, বিকশিত করাই উৎকৃষ্ট মননের বৈশিষ্ট। জম্বুদ্বীপে দাঁড়িয়ে উন্মুক্ত বিশ্বের দিকে বুদ্ধের দেয়া ঘোষণায় শোনা যায়_ “দুল্লভঞ্চ মনুস্ সত্তং”
মানুষকে প্রজ্ঞার চোখ আর করুণার বাহু মেলে যেতে হয় মহাজীবনভ্রমণ।
মহাজীবন আর ভ্রমণপথে অন্যের প্রতি কর্তব্য (ধম্ম) আছে, সেই কর্তব্য কী তা বুদ্ধের হৃদয় থেকে বহিত হয়ে শহীদ কাদরীর কবিতায় তরঙ্গিত হয়েছে এভাবে- _
"এই গ্রহের মহাপুরুষরা কে কী বলেছেন
আপনারা সবই জানেন। এখানে বক্তৃতা আমার উদ্দেশ্য
নয়। আমি এক নগন্য মানুষ, আমি
শুধু বলি: জলে পড়ে যাওয়া ঐ পিঁপড়াটাকে ডাঙায় তুলে দিন"
এই জ্ঞানে আমাদের অদিষ্ঠিত থাকতে হবে, সত্ত্বার পরম বিকাশে মানুষ ছাড়াও সকল প্রানী, সম্পূর্ণ স্বাধীন। যেকোনো ক্ষেত্রে কাউকে বন্দী করার বৈধতা কারোই নেই।
“মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই তাকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়” রুশোর মহৎ এই উক্তির আগেও মানুষ জেনেছে- 'অত্তহি অত্তনো নাথো কোহি নাথো পরো সিযা?' আপনিই আপনার প্রভু, আপনিই আপনার আশ্রয়। ভিন্ন কোনো প্রভু, ভিন্ন কোনো আশ্রয় আছে?
ইচ্ছাশক্তিতে পূর্ণ মানুষকে আহব্বান করে আগত, অনাগত জ্ঞানীগণের পক্ষে অসীমে প্রসারিত উন্মুক্তচেতনার মানবপদ্মের নিবেদন_
‘সব্ব পাপসস অকরণং, কুসলসস উপসম্পদা
সচিত্ত পরিয়োদপণং এতং বুদ্ধানসাসনং।’
'সকল প্রকার অকুশল কর্ম থেকে বিরতি, কুশল কর্মের সম্পাদন, স্বীয় চিত্তের পরিশুদ্ধি সাধন, এই হচ্ছে সকল জ্ঞানীগণের (বুদ্ধের) অনুশাসন।
লেখাটি গৌতমী সাময়িকী 'সপ্তম সংখ্যা' থেকে নেয়া।
©somewhere in net ltd.