নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আপনারে দীপ করে জ্বালো\' (\'অত্তদীপ ভব\')

গৌতমী সাময়িকী

নীড় ছাড়ার গন্ধ শরীরে যার!

গৌতমী সাময়িকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিক্ষুণী উপসম্পদা ও ইহার বৈধতা (Bhikkhuni Ordination and Its Legality)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬


লেখক ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু
সূচনাঃ-
এ নিবন্ধটি রচনাকালে ভিক্ষুণী উপসম্পদা ও ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠার বৈধতা বিষয়ে জিজ্ঞাসু মনের শঙ্কা নিরসন করে সর্ব সাধারণের মধ্যে নিঃসন্দিগ্ধতা আনয়ন (Beyond Doubt) করতে আমি পালি সাহিত্য ত্রিপিটক Canonical Sources), এদের অট্ঠকথা বা ভাষ্য (Commentaries) এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন রচনা (Relevant Secondary Sources) সমূহ অতীব মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করেছি । আলোচ্য নিবন্ধটি আমি নিম্নোদ্ধৃত ছয়টি ভাগে বিভক্ত করেছি ।
১) ভিক্ষুণী সংঘ এবং বুদ্ধগয়ায় ভিক্ষুণী উপসম্পদা
২) থেরবাদে আইনি বৈধতা
৩) ষষ্ট গুরুধর্ম
৪) বুদ্ধগয়া উপসম্পদায় মহিলা প্রার্থী
৫) চীনা উপাধ্যায়গণ
৬) ভিক্ষুদের দ্বারা ভিক্ষুণীদের একক উপসম্পদা
১) ভিক্ষুণী সংঘ এবং বুদ্ধগয়ায় ভিক্ষুণী উপসম্পদাঃ:-

থেরবাদ বিনয়ে ভিক্ষুণী সংঘ স্হাপনার (Constitution of Bhikkhuni Order) বিবরণ নিম্নোক্তভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ-২৫৫, P.T.S) । বিনয় পিটকের চুলবর্গে বর্ণিত হয়েছে- মহাপ্রজাপতি গৌতমী গৌতম সম্বুদ্ধ শাসনে প্রথম মাতৃজাতি উপসম্পদা গ্রহণকারী ভিক্ষুণী (First Woman to Receive Higher Ordination) । তাঁর উপসম্পদা গৃহীত হয়েছে 'অষ্ট গুরুধর্ম' স্বীকারের মাধ্যমে (By Accepting the '' Eight Principles to be Respected'';)
এ অষ্ট গুরুধর্মের অন্যতম একটি গুরুধর্ম ভিক্ষুণী সংঘের বৈধতা সম্পর্কিত বিষয়ে (Legal Aspect) আমাদের অতীব গুরুত্ব সহকারে পর্য্যালোচনা (Considerable Importance) করতে হবে । অন্যতম এ গুরুধর্মটির ক্রমসংখ্যা হল ষষ্ট । ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণে মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে যে আটটি শর্ত পালনের স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে ঊপসম্পদার অনুমোদন করেছিলেন সে শর্ত সমূহের ষষ্ট শর্ত হল: 'উপসম্পদা প্রার্থী মাতৃজাতিকে দু'বছর পর্য্যন্ত শিক্ষার্থিনী (Undergone Two Year of Training Period) বা শিক্ষামানারূপে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে । দু'বছর শিক্ষামানারূপে অতিক্রমণের পর তিনি ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী উভয় সংঘের (Both Communities of Bhikkhu and Bhikkhunis) নিকট উপসম্পদা লাভের জন্য প্রার্থনা করতে পারবেন' ।
চুলবর্গে আরো বিবৃত (Further Described) হয়েছে- মহাপ্রজাপতি গৌতমীর দ্বারা অষ্ট গুরুধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে উপসম্পদা স্বীকৃত হলে তিনি বুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'যে সকল মহিলারা তাঁর অনুগামী হতে ভিক্ষুণী হওয়ার জন্য তাঁকে অনুসরণ করে এখানে (বৈশালী) এসেছেন তাঁদের প্রতি তিনি কেমন আচরণ করবেন' ? উত্তরে বুদ্ধ ব্যবস্হাপত্র দিয়ে (Prescribed) বললেন- 'তারা ভিক্ষুদের মাধ্যমে উপসম্পদা গ্রহণ করবে' ।
চুলবর্গের এর পরবর্তী অনুচ্ছেদের (Subsequent Section)উল্লেখানুসারে জানা যায়, ভিক্ষুদের দ্বারা উপসম্পদা প্রার্থী মাতৃজাতিদের শারীরিক অবস্হা সম্পর্কিত যথানুরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত (Interrogation) হলে তাঁরা সবিশেষ লজ্জা অনুভব করতেন (Felt Ashamed) (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ-২৭১, P.T.S) । প্রশ্ন সমূহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকত সাধারণতঃ মহিলাদের জন্ম ও স্ত্রী রজঃ সম্পর্কিত (Menstruation) বিষয় । পুরুষের দ্বারা বিশেষতঃ কোন একজন ভিক্ষুর দ্বারা একান্তে বা সংঘ সম্মুখে মাতৃজাতিদেরকে এ জাতীয় প্রশ্নের অবতারণা করলে তাঁদের লজ্জিত হওয়া বা বিব্রতকর ( Felt Uncomfortable) অবস্হায় পরা খুবই স্বাভাবিক বিষয় । চুলবর্গ আমাদের জ্ঞাত করায় যে, মাতৃজাতিদের উপরোক্ত সমস্যা সমূহের কথা বুদ্ধের কর্ণগোচর হলে তিনি তাঁর প্রদত্ত এ সম্পর্কিত আদেশের সংশোধন (Amend) করেন । বুদ্ধ আবার নির্দেশ প্রদান করেন- ''ভিক্ষুণীদের দ্বারা উল্লিখিত প্রশ্নোত্তর জিজ্ঞাসিত হয়ে উপসম্পদা গ্রহণের পরেই মাতৃজাতিরা ভিক্ষুদের মাধ্যমে আবার উপসম্পদা লাভ করবে'' । এ ক্ষেত্রে ভিক্ষুদের দ্বারা মাতৃজাতিদেরকে পুন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে অনুশাসনের প্রয়োজন নেই । এগুলিই হল চুলবর্গে এ নিবন্ধের মুখ্য আলোচনার উপজীব্য বিষয় (Key Elements) ।
ভিক্ষুণী সংঘের ইতিহাস বিষয়ে আমি উপরোক্ত বর্ণনানুসারে সংক্ষেপে যথানুরূপ পর্য্যালোচনায় (Survey Briefly) ব্রতী হব । ভারতে ভিক্ষুণী সংঘ ৮ম শতাব্দী পর্য্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল (Thrived) । ভিক্ষুণী সংঘ ভারতবর্ষ হতে অন্তর্ধান (Disappeared)হওয়ার পূর্বে খৃষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের ( খৃষ্ট পূর্ব ২৬২-২৩২) শাসনকালে (Reign) শ্রীলঙ্কায় ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (Transmitted) । সিংহলের ইতিহাস গ্রন্হ (Chronical of Ceylon) 'দীপবংশ' আমাদের সাক্ষ্য (Report) দেয় যে বৌদ্ধধর্মে সদ্য দীক্ষিত রাজা দেবানংপিয় বা দেবপ্রিয় তিষ্য ( খৃষ্ট পুর্ব ২৫০-২১০) তাঁর প্রিয়তমা মহিষী (Queen) অনুলার অনুরোধে অরহত মহিন্দ বা মহেন্দ্র স্হবিরের নিকট উপস্হিত হয়ে (Approached) নিবেদন করলেন যে তাঁর রাণী অনুলা প্রব্রজ্যা (Going Forth) গ্রহণে একান্তই ইচ্ছুক । দীপবংশের উল্লেখ মতে, তখন অরহত মহিন্দ রাজাকে জ্ঞাপন করলেন যে দীক্ষা দিতে ভারত (জম্বুদীপ) হতে ভিক্ষুণী সংঘের প্রয়োজন হবে । কেননা 'অকপ্পিযা মহারাজ ইত্থিপব্বজ্জা ভিক্খুনো' মহারাজ ! ভিক্ষুদের পক্ষে স্ত্রী বা মাতৃজাতিদের প্রব্রজ্যাদান অকপ্পিয় বা অশোভন (Improper) । এখানে পালি বাক্যে যে শব্দ সমূহ প্রয়োগ (Implications) করা হয়েছে সে গুলো সম্পর্কে যৎসামান্য আলোচনার প্রয়োজন (Need a little discussion) আছে বলে মনে করি ।
বিনয় পিটকের মূল (Canonical Vinaya) গ্রন্হানুসারে ভিক্ষুরা মহিলা বা মাতৃজাতি প্রব্রজ্যা প্রার্থীদের দীক্ষা দিতে পারবে না এরকম কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা (Explicit Ruling) বিনয় পিটকে নাই । একমাত্র বিনয়ের অট্ঠকথা 'সামন্ত পাসাদিকা'য় দেখা যায় যে, 'ভিক্ষুণীরাই কেবল মাতৃজাতি প্রার্থীদের প্রব্রজ্যা দিতে পারবে' । বর্ণিত বিষয়ের গুরুত্ব (Narrative Context) বিবেচনায় ইহা প্রতীয়মান হয় যে, বাক্যে দীপবংশে ব্যবহৃত 'প্রব্রজ্যা' শব্দ মুল বিনয় পিটকে ব্যবহৃত 'উপসম্পদা' শব্দ হতে কোন পৃথক অর্থ বহন করেনা । এ বাক্যে সাধারণভাবে যা বোধগম্য হয় তা হল, আগারিক হতে অনাগারিক (Lay life to Monastic) জীবন যাপনের অভিপ্রায় প্রকাশ করা হয়েছে । অতএব, এখানে 'প্রব্রজ্যা' শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রব্রজ্যা (Going Forth) এবং উপসম্পদা (Higher Ordination) উভয় দীক্ষাকেই বুঝানো (Cover) হয়েছে ।
যেহেতু সবেমাত্র রাজা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন, সেহেতু তাঁর পক্ষে তখনও প্রব্রজ্যা-উপসম্পদা শব্দ সমূহের ভিন্নতা আয়ত্ব করা সম্ভব হয়নি । ধর্মীয় ব্যবহৃত শব্দাবলীর খুঁটিনাটি (Technicalities of Ordination) বিষয়ে সবকিছু তিনি যে জেনে উঠতে পেরেছেন সে প্রত্যাশাও আমরা করতে পারি না । যে কারণে তিনি 'পব্বাজ্জেহি অনূলকং' বাক্যে তাঁর মহিষীর গৃহত্যাগের অভিব্যক্তি প্রকাশ (Expression) করেছেন । স্বাভাবিকভাবে অরহত মহিন্দ থেরও প্রত্যুত্তরে একই পরিভাষা ব্যবহার করেছেন । অনূলা এবং তাঁর সহচরীগণ শ্রামণী হয়ে বসবাস করেননি, তাঁরা উপসম্পদা নিয়ে ভিক্ষুণীরূপেই জীবন যাপন করেছেন । তথাপি দীপবংশ 'পব্বজ্জিংসু' শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা অব্যাহত রেখেছে । অতএব, ইহা সুস্পষ্ট যে ব্যবহৃত 'পব্বজ্জিংসু' শব্দের অন্তর্গত (Included)করা হয়েছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা উভয় শব্দকে ।
এখন আমি ভিক্ষুণী সংঘের ইতিহাস বিষয়ক মুখ্য আলোচনায় ফিরে আসছি । ভারত হতে সম্রাট অশোক কন্যা অরহত সংঘমিত্তা বা সংঘমিত্রা থেরীর নেতৃত্বে ভিক্ষুণীগণ শ্রীলঙ্কায় খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে যে ভিক্ষুণী সংঘের প্রতিষ্ঠা করছিলেন সে ভিক্ষুণী সংঘ তথায় একাদশ শতাব্দী পর্য্যন্ত সগৌরবে (Thrive) বিরাজ করছিল । শ্রীলঙ্কায় উত্তাল রাজনৈতিক অস্হিরতার সময় ভিক্ষু সংঘ পর্য্যুদস্ত (Decimated) হয়ে পড়লে ভিক্ষুণী সংঘের পরম্পরায়ও সেখানে ছেদ পড়ে গিয়েছিল ।
শ্রীলঙ্কায় ভিক্ষুণী শাসন পরিসমাপ্তির বহু পূর্বে পঞ্চম শতাব্দীর প্রারম্ভে শ্রীলঙ্কা হতে একদল ভিক্ষুণী চীনে গিয়ে তথায় ভিক্ষুণী সংঘ স্হাপন (Transmitted) করেছিলেন । চীনে থেরবাদ বিনয় পিটকও পঞ্চম শতাব্দীতে চীনা ভাষায় অনুদিত হয় । কালক্রমে অনুদিত এ বিনয় পিটক চীনে বিলুপ্তি ঘটে । তা সম্ভবতঃ চীনে রাজনৈতিক অস্হিরতার (Instability) সময়ে । অষ্টম শতাব্দীর গোড়ার দিকে ধর্মগুপ্তক বিনয় প্রকাশ্যে আসলে তা চীনের সমস্ত সংঘারাম সমূহে অনুসরণের জন্য রাজাজ্ঞা জারী হয় (Imposed by Imperial Order) । সে সময় হতে চীনের সকল ভিক্ষু-ভিক্ষুণী ধর্মগুপ্তক বিনয় অনুসরণ করে আসছে ।
সাম্প্র্রতিককালে চীনা ভিক্ষুণীদের সহায়তায় (Cooperation) শ্র্রীলঙ্কায় পূণঃ ভিক্ষুণী সংঘ স্হাপিত হয় ভারতের বুদ্ধগয়ায় ১৯৯৮ সালে ভিক্ষুণী উপসম্পদার মাধ্যমে । ইহার পূর্বেও তথায় ভিক্ষুণী দীক্ষা হলেও ১৯৯৮ সালের বুদ্ধগয়ার ভিক্ষুণী উপসম্পদাকেই শ্রীলঙ্কায় প্রামাণ্যরূপে (Momentum) গণ্য করা এবং এর পর হতে শ্রীলঙ্কায় ভিক্ষুণী উপসম্পদা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেরাই প্রদান করে আসছে ।
বুদ্ধগয়ায় উপসম্পন্ন ভিক্ষুণীগণ থেরবাদ পরম্পরায় পাত্র-চীবর গ্রহণ করেছেন । তাঁরা চীনা বা মহাযানীদের বোধিসত্ত্ব প্রতিজ্ঞা (Vow) গ্রহণ করেননি । চীনা ভিক্ষুণীদের উপসম্পদা লাভের পর তাঁরা আবার কেবল থেরাবাদী ভিক্ষুদের দ্বারা বিধি সম্মতভাবে উপসম্পদা গ্রহণ করেন । এখন এ উপসম্পদার বৈধতা থেরবাদের দৃষ্টিকোণ (Theravada Legal Viewpoint) থেকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য সে সম্পর্কে এক গম্ভীর প্রশ্নের (Crutial Question) অবতারণা হচ্ছে । এ প্রশ্নের অবলোকনের পূর্বে আমি প্রথমে থেরবাদের কতিপয় বৈধ নীতির (Legal Principles) আলোচনা করতে প্রয়াসী হব ।
২) থেরবাদে আইনি বৈধতা:-
থেরবাদ বা স্হবিরবাদের সাধারণ অর্থ হল প্রবীন পন্হী বা প্রবীনদের ভাষ্য ( Way of Elders বা Sayings of Elders) । দীপবংশে ব্যবহৃত থেরবাদ শব্দে নির্দেশিত হয়েছে ধারাবাহিক নিয়মে রাজগৃহে প্রথম সঙ্গীতিতে (First Communial Recitation) থের বা স্হবিরগণের দ্বারা সংগৃহীত (Collected) বচন সমূহ । দীপবংশ এবং কথাবত্থুর অট্ঠকথাতেও থেরবাদ শব্দের দ্বারা প্রথম সঙ্গীতি হতে পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কায় থের পরম্পরানুসারে পালি ভাষায় সংগৃহীত ও সংরক্ষিত (Protected) বচনাবলীকে বুঝাতে থেরবাদ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে । মূল ভাষা পালিতে রচিত গ্রন্হ সমূহই হল থেরবাদীদের চিহ্নিতকরণ (Identity) অথবা মুখ্য চর্চার বা অনুশীলনের আধার । ইহা হল পবিত্র ত্রিপিটকের ভাষা (Sacred language of the Scripture) যা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থেরবাদী বৌদ্ধগণ অতীব শ্রদ্ধার সাথে সংরক্ষণ করে আসছে এখনো পর্য্যন্ত । কেবল তাই নয়, তাঁদের দৈনন্দিন পূজা-অর্চনা ও বন্দনা-উপাসনার মাধ্যমও এ পালি ভাষা (Liturgical Language) ।
পালি ভাষায় সংরক্ষিত ত্রিপিটকের একটি অংশ হচ্ছে বিনয় পিটক, যেখানে ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের সাংঘিক জীবনের আচার -ব্যবহার সম্পর্কিত নিয়মাবলী (Rules and Regulation) সংগৃহীত রয়েছে । একারণে থেরবাদী সাংঘিক সম্প্রদায়ের প্রধান গুরুত্বও রয়েছে এ বিনয় পিটকে । বিনয় পিটকের অট্ঠকথা বা ভাষ্য (Commentary) 'সামন্ত পাসাদিকা' মূল পিটকের বিষয়কেই অধিকতর গুরুত্বের (Eminent) মাধ্যমে আলোচনার উজ্জ্বলালোক (Highlights) প্রদান করেছে । এতে ঘোষিত হয়েছে -প্রাচীন অর্থকথা আচার্য্যদের দ্বারা ব্যক্ত অভিমত যতটুকু দৃঢ়তর নয়, তার থেকে অধিকতর দৃঢ়তর হল মূল পিটকীয় উপস্হাপনা (Presentation) । 'অত্তনোমতিতো আচারিযবাদো বলবতরো......আচারিযবাদতো হি সুত্তানুলোমং বলবতরং' । অতএব, সংক্ষেপে বলতে গেলে থেরবাদ সাংঘিক (Theravada Monastic) পরম্পরায় কোন বিষয়ে মুখ্য সিদ্ধান্তে আসতে হলে মূল পালি পিটকীয় গ্রন্হই হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ভরসা (Reliable Resource) ।
থেরবাদ পরম্পরায় ভিক্ষুণী সংঘ পুন স্হাপনের (Reviving) প্রশ্নে কেন্দ্রীভূত ভূমিকা রয়েছে পালি বিনয়ের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্হিতি ও সময়ানুকুল সংশোধনীতে । বিনয়ের শিক্ষাপদ পরিবর্তন বা সংশোধন করে (Amended) ভিক্ষুণী সংঘ পুনরুত্থানের অনুমতি দানের যে প্রস্তাব করা হচ্ছে তা থেরবাদী বা স্হবিরবাদী পরম্পরার দৃষ্টিকোণ (Viewpoint of Theravada tradition)থেকে এখন অগ্রহণযোগ্য (Unacceptable) করা হচ্ছে । পালি বিনয়ে যে মানসিকতায় (Adherence) নিয়মাবলী সমূহ সংরক্ষিত (Preserved) হয়ে আসছে তার সাথে এ জাতীয় পরামর্শ থেরবাদ পরম্পরা ধারার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে অবশ্যই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ।
দীর্ঘ নিকায়ের অট্ঠকথা 'সুমঙ্গল বিলাসিনী' অনুসারে রাজগৃহের প্রথম সঙ্গীতিতে ভিক্ষুগণ সর্ব প্রথমে বিনয় আবৃত্তি (Recited) বা সঙ্গায়ন করেছিলেন । প্রথমে বিনয় আবৃত্তির কারণ হল, ভিক্ষুগণ অনুভব করেছিলেন বিনয় বুদ্ধ শাসনের (Dispensation) আয়ু বৃদ্ধি করতে সমর্থ-'বিনযো নাম বুদ্ধস্স সাসনস্স আযু' । যতদিন (As long as) বিনয় টিকে থাকবে বুদ্ধের শাসনও ততদিন টিকে থাকবে- 'বিনযো ঠিতে সাসনং ঠিতং হোতি' ।
বিনয়ের শিক্ষাপদ পরিবর্তন বা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব কেবলমাত্র বুদ্ধ শাসনের শক্তি দুর্বল করে আয়ু সংহার করা নয়, ইহা থেরবাদের পরম্পরাগত অবকাঠামোতেও (Framework) ধ্বস নামানোর পরামর্শ-যা একেবারেই অসম্ভব । দীর্ঘ নিকায়ের 'মহাপরিনির্বাণ সুত্রে' ভিক্ষুদেরকে বুদ্ধ এমন কিছু বিষয়ে গুরুত্বারোপ (Highlight) করে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন যেগুলো অনুসরণ করলে ভিক্ষুদের সমৃদ্ধি হয়, আর অনুসরণ না করলে পরিহানী হয় । সতর্ক সমূহের একটি হল তথাগত কর্তৃক যা প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে তা যেমন বাদ দিতে পারবে না, তেমনি যা প্রজ্ঞাপ্ত হয়নি তাও সংযুক্ত বা অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না । (অপঞ্ঞত্তং ন পঞঞাপেস্সন্তি, পঞঞত্তং ন সমুচ্ছিন্দিস্সন্তি';) । কাজেই এ বাক্যানুসারে থেরবাদ পরম্পরায় ভিক্ষুদের এবিষয়ে কলহ-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্ক করা অর্থহীন এবং ইহা মূল থেরবাদ পরম্পরার ভিক্ষুদের তাঁদেরই নিশ্চিত আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি সরাসরি বিরোধিতা (Directly Opposed) করারই নামান্তর ।
ভিক্ষুণী সংঘ পুনরুত্থান আজ কেবলমাত্র নিছক লিঙ্গ সাম্যতার (Gender Equality) প্রশ্ন নয় । আধুনিক সময়ের মূল্যবোধে লিঙ্গের বিভেদমূলক (Discrimination) চিন্তা-চেতনা অবশ্যই প্রত্যেকের জন্য তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে ক্ষতিকর । কিন্তু থেরবাদী সাংঘিক সদস্যেদের পরম্পরার সম্পর্ক প্রশ্নে এগুলি বিচারের চুরান্ত মাপকাঠি নয় । ভিক্ষুণী সংঘ গঠনের প্রশ্নে যে সমস্যা আরো গভীরে নিহিত (Apprehension) রয়েছে তা হল নিয়ম সমূহের বৈধতা বিষয়ক যা না থাকলে থেরবাদী সাংঘিক পরম্পরার (Theravada Monastice Tradition) রচিত ভিত বিপন্ন হয়ে যায় (Jeoparadized) ।
ধরা যাক, কোন মাতৃজাতি ভিক্ষুণী হতে চেয়ে চীনা ধর্মগুপ্তক পরম্পরায় উপসম্পদা নিয়ে চীনাদের চীবরাদি পরিধান করে তাঁদের সাংঘিক আচার-অনুষ্ঠানাদিতে (Monastic Rituals) অংশ গ্রহণ করছে । তাতে থেরবাদী পরম্পরার ভিক্ষুরা হয়ত তাঁকে কতঞ্চিত অস্বীকৃতি জানাতে পারেন থেরবাদী ভিক্ষুণী নয় বলে । মাতৃজাতি কেবল ভিক্ষুণী হতে চাচ্ছেন সমস্যা নিছক এখানে সীমাবদ্ধ নয় । প্রশ্ন আসছে চীনা ধর্মগুপ্তক পরম্পরায় উপসম্পন্ন ভিক্ষুণী থেরবাদী সংঘে স্বীকৃত (Recognized) হচ্ছে কিনা ।
এ বিষয়টি থেরবাদী পরম্পরার বিচারের মানদণ্ডে (Parameters) মধ্যে সমাধানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । বিশেষ করে পালি বিনয়ের আলোকে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে । যখন লিঙ্গ সাম্যতা (Gender Equality) প্রভৃতি আইনি অনিশ্চয়তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তখন তাঁরা নিজেরাই অস্হিরতায় পড়ে । বিধি সম্মতভাবে থেরবাদী পরম্পরায় আরো যুক্তিগ্রাহ্য নিশ্চিত স্বীকৃতির প্রয়োজন ।
সুতরাং, যদি থেরবাদ বিনয়ে ভিক্ষুণী সংঘ পুনরুজ্জীবন করতে নীতিগত অসম্ভব হয়, তাহলে এর পুনরুত্থানে সভার মাধ্যমে সম্ভাবনার সাধারণের সম্মতিতে ভিত তৈরী করা দরকার । তবে একই সময়ে যদি নিয়ম লঙ্গন না করে পুনরুত্থান করা যায়, তাহলেও পুনরুত্থানকৃত ভিক্ষুণী সংঘ প্রত্যাখ্যানের সত্যিকার কোন ভিত্তি থাকেনা ।
ইহা স্মরণ রেখে আমি এখন এর বৈধ সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে (Legal Aspects) দৃষ্টিপাত করছি । আমার আলোচনার মুখ্য মনোযোগ মূল বিনয় পিটকের নীতিমালা সমূহ যা সামন্ত পাসাদিকায় একই ভাবে নির্দেশিত হয়েছে । অট্ঠকথা পরম্পরার নিজেদের মতামতের চেয়ে মূল বিনয় পিটকের নির্দেশিত (Canonical Injunction) নীতি অধিকতর গুরুত্ব বহন করে । মূল বিনয়ের নির্দেশাবলীই চুরান্ত মুল্যাঙ্কন হবে যদি থেরবাদ পরম্পরায় ভিক্ষুণী সংঘের পুনরুত্থান হয় তা বৈধতা দেওয়া সম্ভব হবে কি হবে না ।
কারো নিজস্ব অভিমতের চেয়ে ঘটনাবলী সম্পর্কে প্রত্যক্ষ বিনয়ের বর্ণনা আমি অধিকতর মূল্যবান বলে অবশ্যই বিবেচনা করতে পারি । অনুরূপভাবে অনেক যুক্তিগ্রাহ্য বর্ণনাও মূল বিনয়ে অর্ন্তভূক্ত হয়ে থেরবাদ পরম্পরার বৈধ সিদ্ধান্তের ভিত্তি রচিত হয়েছে । আমরা দেখে আসছি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিবিধ কারণে বিনয়ের বিধান সমূহ প্রজ্ঞাপ্ত হয়ে এসেছে । এ ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মত আলোচ্য বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে প্রাসঙ্গিক হওয়ার প্রশ্নই আসেনা ভিক্ষুণী উপসম্পদার বৈধ ভিত রচনা করতে । পর্য্যাপ্ত বৈধ যুক্তি - প্রমাণই কেবল ভিক্ষুণী উপসম্পদার বৈধতায় ভিত্তি হওয়া সম্ভব । বর্তমানে আমাদের সম্মুখে পালি বিনয় পিটকই হচ্ছে এ প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রামাণ্য দলিল । অতএব, বিনয়ের বর্তমান আলোচ্য বিষয়ে আমাকে পালি পিটকীয় মূল গ্রন্হের মাপকাঠির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে । অন্যান্য স্হানে স্বতন্ত্রভাবে কোথায় কি আছে না আছে তা ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয় ।
৩) ষষ্ট গুরুধর্মঃ-
'গরুধম্ম' বা গুরুধর্মের বাংলা অর্থ বিনয়ে যা প্রদত্ত হয়েছে তা হলো ' শ্রদ্ধার সাথে পালনীয় নীতি (Principle to be respected)' । সাধারণভাবে গুরু বা গরুর দু'টি অর্থ করা যায় । 'গুরু' মানে 'ভারী' (Heavy), যা হল হালকার বিপরীত অথবা 'শ্রদ্ধেয়' তুলনায় (In contrast) যা অশ্রদ্ধার বিপরীতার্থক ।
বিনয় পিটকের চুলবর্গে 'গুরু' শব্দের প্রথম অর্থবোধে যা দেওয়া হয়েছে তা হল একজন ভিক্ষুণী গুরুধর্ম পালনের শপথ গ্রহণ করলে তাঁকে পনর দিবসের জন্য উভয় সংঘের (ভিক্ষু-ভিক্ষুণী) কাছ হতে 'মানত্ত 'ব্রত (Penance) নিতে হয় । এখানে এ গুরুধর্ম 'সংঘাদিশেষ' আপত্তিকেই নির্দেশ করছে । ইহা বিনয়ের প্রাতিমোক্ষ শীলে গুরুত্বের দিক হতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিবেচিত হয় -যে নিয়ম লঙ্ঘিত হলে মানত্তব্রত গ্রহণ করার বিধান আছে । গুরু শব্দের পরবর্তী অর্থ প্রকাশ করতে দেখা যায়, সংঘাদিশেষ আপত্তিগ্রস্তকে পুনর্বাসনে (Rehabilitation) সংঘ কর্তৃক যে সাজা দেওয়া হয় তা হল 'অব্বান ' । সংঘাদিশেষ হল গুরু আপত্তি (Grave Offence) যা সংঘের নিয়মানুসারে আপত্তিগ্রস্তকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখে । অতএব, এখানে গুরুধর্মের অর্থ দাঁড়ায় 'গম্ভীর অপরাধ (Grave Offence)' ।
গুরুধর্ম শব্দ সমান অর্থবোধক প্রদর্শন করেনা চুলবর্গের একই অংশে । তবে এ শব্দ তখনই অষ্ট ধর্মের জন্য ব্যবহার করা হয় যখন মহাপ্রজাপতি গৌতমী উপসম্পদা গ্রহণ করেছিলেন । দেখানো নিকটস্হ অর্থবোধক শব্দ 'গুরু' এখানে সংঘাদিশেষ পর্যায়ের মধ্যে গণ্য হয় না ।
বিনয়ে নীতি প্রকাশে অন্যত্র একাধিক অষ্ট গুরুধর্মের পুনরুল্লেখ করা হয়েছে । তবে সে গুরুধর্ম সমূহের কোনটিও সংঘাদিশেষ আপত্তি পর্য্যায়ে অন্তর্ভূক্ত হয়নি । অন্যত্র ব্যবহৃত গুরুধর্ম শব্দ সংঘাদিশেষের পরিবর্তে 'পাচিত্তিয' ' ( Forfeiture) পর্য্যায়ে ব্যবহার হতে দেখা গেছে । 'পাচিত্তিয' হল অপেক্ষাকৃত লঘু আপত্তি (Lighter Class offence) যে নিয়ম সমূহ লঙ্ঘিত হলে ভিক্ষুরা অন্য ভিক্ষুর কাছে আপত্তি দেশনার মাধ্যমে সেগুলো উন্মোচন করে তার প্রতিকার করতে পারেন ।
দ্বিতীয় গুরুধর্ম শর্ত অনুসারে একজন ভিক্ষুণীকে নিয়ম মানতে হয় যে তিনি ভিক্ষু বিহীন স্হানে ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস (Rainy Retreat)) যাপন করতে পারবেন না । গুরুধর্মের এ শর্তটি 'ভিক্ষুণী বিভঙ্গের' ভিক্ষুণীদের ৫৬ নম্বর পাচিত্তিয বর্ণনায় দৃষ্ট হয় (বিনয় চতুর্থ খণ্ড, পৃ-৩১৩, P.T.S.)।
গুরুধর্মের তৃতীয় যে শর্ত আরোপিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে-ভিক্ষুণীদেরকে প্রত্যেক পক্ষে (Every Forthnight) ভিক্ষু সংঘের নিকট উপস্হিত হয়ে ওবাদ বা ধর্মোপদেশ (Exhortation) নিতে উপোসথের (Observance Day) দিন, তারিখ, ক্ষণ প্রভৃতি জেনে রাখতে হবে । এ গুরুধর্মের নিয়মটিও ভিক্ষুণী বিভঙ্গের ভিক্ষুণী শীলের ৫৯ সংখ্যা পাচিত্তিয শ্রেণীভূক্ত (বিনয় চতুর্থ খণ্ড, পৃ- ৩১৫, P.T.S.) ।
চতুর্থ গুরুধর্মের শর্তে উল্লিখিত হয়েছে- ভিক্ষুণীকে দৃষ্ট, শ্রুত ও পরিশঙ্কিত বিষয়ে আহ্বান বা নিমন্ত্রণ (Invitation) জানাতে ভিক্ষু-ভিক্ষুণী উভয় সংঘের নিকট উপস্হিত হয়ে প্রবারণা করতে হবে । ইহা ভিক্ষুণী বিভঙ্গের ভিক্ষুণী শীলের ৫৭ নাম্বার পাচিত্তিয শ্রেণীর অন্তর্গত (বিনয় চতুর্থ খণ্ড, পৃ-৩১৪, P.T.S.) ।
গুরুধর্মের সপ্তম শর্তে আরোপিত (Stipulate) হয়েছে- ভিক্ষুণী কদাপি কোন ভিক্ষুর প্রতি আক্রোশ বা দুর্ব্যবহার (Abuse) করতে পারবে না । ভিক্ষুণী বিভঙ্গের পাচিত্তিয পর্য্যায়ের ৫২ নাম্বার শীলে রয়েছে এ শিক্ষাপদটি (বিনয় চতুর্থ খণ্ড, পৃ-৩০৯, P.T.S.) ।
অতএব, ইহা আমাদের নিকট দিবালোকের মত সুস্পষ্ট যে বিনয় চুলবর্গোল্লিখিত এ গুরুধর্ম সমূহ অপেক্ষাকৃত লঘুতর শীল 'পাচিত্তিয' শ্রেণীভূক্ত । এগুলো সংঘাদিশেষ শ্রেণীর মত গুরু (Grave) আপত্তি বা শীল নয় ।
এখন বিষয়টি আমাদের আরো গুরুত্ব সহকারে (Noteworthy) লক্ষ্য করতে হবে যে, বুদ্ধের সঙ্গে মহাপ্রজাপতি গৌতমীর চুক্তিবদ্ধ (Agreement) এ অষ্ট গুরুধর্ম লঙ্ঘন (Violate) করলে তার নির্দ্দিষ্ট বা যথাযথ কোন শাস্তি (Appropriate Punishment) অথবা প্রতিকারের ব্যবস্হার কথা বিনয় পিটকে কোথাও উল্লেখ নাই । বিশেষতঃ এ অষ্ট গুরুধর্ম বিনয়ের অন্যান্য শিক্ষাপদ হতে সম্পূর্ণ পৃথক । কারণ বিনয়ের অন্যান্য শিক্ষাপদ সমূহ যেমন কোন ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুদ্ধ কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত হয়েছে, এ অষ্ট গুরুধর্ম সে নিয়মে হওয়ার পরিবর্তে ঘটনা ঘটবার পূর্বেই অগ্রিম চাপিয়ে (Pronounce in Advance) দেওয়া হয়েছে । অধিকন্তু এ নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ার সময় বিধি সম্মতভাবে তখনও কোন উপসম্পন্ন ভিক্ষুণীর অস্তিত্ব ছিলনা । চুলবর্গ অনুসারে, বুদ্ধের দ্বারা অষ্ট গুরুধর্ম ঘোষিত হলে মহাপ্রজাপতি গৌতমী সেগুলি পালনের স্বীকৃতি (Decided to Accept) দান করার মাধ্যমেই তাঁর উপসম্পদা কার্য্য সম্পন্ন হয় । অতএব, অষ্ট গুরুধর্ম বিনয়ে প্রজ্ঞাপ্ত অন্যান্য শিক্ষাপদ বা নিয়মাবলীর সাথে স্পষ্টতঃই স্বভাবগত ভিন্নতা রয়েছে ।
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে ধারণা আরো ঘণীভূত বা শক্তিশালী (Strengthened) হয় যখন পাচিত্তিয় সম্পর্কিত গুরুধর্ম গভীরভাবে সুক্ষ্মাণুসুক্ষ্মরূপে (Very minutely) পরীক্ষা করা হয় । কোন ভিক্ষুণী যখন এ জাতীয় কোন দোষ করে থাকে তা নিবারণার্থে বুদ্ধ পাচিত্তিয় শ্রেণীর নিয়মাবলী প্রজ্ঞাপ্ত করেছেন বলে বিনয়ের গ্রন্হ 'ভিক্ষুণী বিভঙ্গ' সাক্ষ্য দেয় । বিনয়ের এ দৃষ্টিকোণ হতে বলতে গেলে এ ঘটনা সমূহ অষ্ট গুরুধর্ম জারির পরেই সংগঠিত হয়েছে । যার মাধ্যমে ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব সূচিত করে ।
ইতিমধ্যে বর্ণিত প্রত্যেক পাচিত্তিয় নিয়মের সংখ্যা ৫২, ৫৬, ৫৭ ও ৫৯ বিনয়ের যে কোন শিক্ষাপদের মত সাধারণভাবে প্রযোজ্য যে 'আদিকম্মিক' (Perpetrator) বা যার দুষ্কৃতির কারণে যে শিক্ষাপদ প্রবর্তন করতে হয়েছে তিনি সে আপত্তি হতে মুক্ত থাকেন অর্থাৎ তাঁর সে আপত্তি হয় না (অনাপত্তি) । এখানে ইহাই বুঝায় যে, পাচিত্তিয আদেশ লঙ্ঘনকারী (Transgressor) যা গুরুধর্মের অন্তর্ভূক্ত সংখ্যা ২, ৩, ৪ ও ৭ এগুলি যাঁরা প্রথম লঙ্ঘন করেছিলেন তাঁদের আপত্তি হয়নি । কেবলমাত্র গুরুধর্ম সমূহ প্রবর্তনের পরে যদি কেহ সেগুলো লঙ্ঘন করেন তিনি দোষী সাব্যস্ত হন (Considered Guilty) ।
বিনয় পিটকের দৃষ্টিকোণ (Viewpoint) হতে আমাদের ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, অষ্ট গুরুধর্ম কোন শিক্ষাপদই নয় । এগুলোকে শিক্ষাপদের মধ্যে গণ্য করা যায় না । অন্যতায় এগুলি ঘোষিত হওয়ার পরে লঙ্ঘন করাই অসম্ভব হত এবং এখনও গুরুধর্ম লঙ্ঘনকারী সাজামুক্তই রয়েছে । দুষ্কৃতি সমূহ সুনির্দ্দিষ্ট পাচিত্তিয় আপত্তির পর্য্যায়ে প্রজ্ঞাপ্ত হওয়ার (Laid Down) পরেই আদেশ লঙ্ঘনকারী আপত্তিগ্রস্ত হন ।
সারমর্মে (In sum) ইহাই বলা যায় যে অষ্ট গুরুধর্ম বিনয়ের এমন কোন শিক্ষাপদ নয় যা লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে (Entails a Punishment) । এগুলিকে শিক্ষাপদের পরিবর্তে সুপারিশই (Recomendations) বলা ভাল । বিনয় চুলবর্গের প্রত্যেক অষ্ট গুরুধর্মের বর্ণনায় নির্দেশিত হয়েছে এগুলি হল এমন কিছু বিষয় যে গুলোকে সৎকার (Revered) করতে হবে, গৌরব (Respected) করতে হবে, মানতে (Honoured) হবে এবং শ্রদ্ধা (Esteem) করতে হবে (সক্কত্বা, গরুকত্বা, মানেত্বা, পূজেত্বা) । সংক্ষেপে বলতে হলে 'গুরুধর্ম হচ্ছে গৌরব করার নীতি' (Principle to be respected) ।
গুরুধর্ম স্বভাবের এ মুখ্য গুরুত্বের আলোকে এখন ষষ্ট চুক্তির (Sixth Garudhamma) দিকে দৃষ্টিপাত করছি । ষষ্ট এ গুরুধর্মে উল্লিখিত হয়েছে- একজন ভিক্ষুণী উপসম্পদা প্রত্যাশীকে প্রথমে দু'বছর পর্য্যন্ত শিক্ষানবীশরূপে (Probationer) অবশ্যই অপেক্ষা করার (Undergone) পর ভিক্ষু-ভিক্ষুণী উভয় সংঘের নিকট উপসম্পদা গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করতে হবে ' (দ্বে বস্সানি ছসু ধম্মেসু সিক্খিতসিক্খায সিক্খামানায উভতোসংঘে উপসম্পদা পরিযেসিতব্বা' )। (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ-২৫৫, P.T.S)
শিক্ষামানা বা শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জনের এ আদেশটিও (Requirement) ভিক্ষুণী বিভঙ্গের ৬৩ সংখ্যা পাচিত্তিয় শীলের অন্তর্ভূক্ত । যাহোক, উভয় সংঘের অন্তর্ভূক্তিকরণের (Involvement) অনুরূপ (Counterpart) যে নিয়ম আছে তা বিনয়ের অন্যত্র দেখা যায় না ।
৪) বুদ্ধগয়া উপসম্পদায় মহিলা প্রার্থীঃ-
ষষ্ট গুরুধর্মে যে শর্ত (Stipulation) আরোপিত হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বুদ্ধ গয়ায় সম্পন্ন ভিক্ষুণী উপসম্পদায় দু'টি প্রশ্নের অবতারণা করে । প্রশ্ন দু'টি হলঃ-
১) দু'বছর যাবৎ শিক্ষামানারূপে অপেক্ষা করে এ মাতৃজাতি উপসম্পদা প্রত্যাশীরা (Female Higher Ordination Candidates) কি ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণের যোগ্যতা (Qualifed) অর্জন করেছিলেন ?
২) উপসম্পদায় অংশ গ্রহণকারী উপাধ্যায় ও কর্মবাচা আবৃত্তিকারী চীনা ভিক্ষুণীদের দ্বারা কর্মবাচা পাঠ ও তাঁদের উপাধ্যায় গ্রহণ করা থেরবাদ পরম্পরার দৃষ্টিকোণ হতে (From Theravada Viewpoint) তা কতটুকু অনুমোদনযোগ্য ?
এ দু'টি প্রশ্নের আলোকে প্রথম প্রশ্নে বলতে হয়, বুদ্ধগয়ায় উপসম্পদা প্রত্যাশী মাতৃজাতিরা এসছিলেন শ্রীলঙ্কা হতে । তাঁদেরকে অতীব সতর্কতার সাথে যোগ্য নির্বাচন (Carefully Chosen) করা হয়েছে যাঁরা দীর্ঘকাল নিষ্ঠার সঙ্গে দশশীল অনুশীলনের মাধ্যমে শীলমাতা রূপে পরিচিতি লাভ করেছিলেন । এরপরেও ভিক্ষুণী উপসম্পদার জন্য তাঁদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণের (Special Training) আওতায় আনা হয়েছিল । যেহেতু তাঁরা দীর্ঘ বছর যাবৎ দশশীল অনুশীলন করে শীলমাতারূপে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ও পস্তুতি গ্রহণ করেছেন, সেহেতু তাঁদের এ সাংঘিক জীবনের (Monastic Life) প্রশিক্ষণ ষষ্ট গুরুধর্মের শিক্ষামানারূপে অবস্হানের শর্ত পালনের পক্ষে প্রশ্নাতীতভাবে যথেষ্ট । তবে তাঁরা নিয়মমত অধিষ্ঠানকৃত শিক্ষামানারূপে অবস্হান করেননি ।
আমি ইতিমধ্যে উল্লেখ (Mentioned above) করেছি যে শিক্ষামানা বা প্রশিক্ষণার্থীরূপে অবস্হানের যে প্রয়োজন তা পাচিত্তিয় শীলের ৬৩ সংখ্যার অন্তর্গত । বিনয় পিটকের ভিক্ষুণী বিভঙ্গের ব্যাখ্যানুসারে, যদি উপসম্পদা প্রত্যাশী মাতৃজাতি শিক্ষানারূপে দু'বছর পর্য্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করা সত্বেও তাঁকে উপসম্পদা প্রদান করা হয় সে ক্ষেত্রে উপসম্পদা দানকারী ভিক্ষুণী উপাধ্যায়গণের পাচিত্তিয় আপত্তিগ্রস্ত হতে হয় । বিনয়ে ইহা সর্ব মান সম্মত যে নির্দ্দিষ্ট কোন শিক্ষাপদ বিষয়ে আলোচনার সম্ভাব্য অবকাশ রাখা । এ প্রথানুসারে ভিক্ষুণী বিভঙ্গে এরূপ কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে আলোচনার অবকাশ দেখা যায় যাতে শিক্ষমানা প্রশিক্ষণের শর্ত পরিপূর্ণ না করেই মাতৃজাতি উপসম্পদা গ্রহণ করেছেন । এরকম তিনটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে যেখানে উপসম্পদাকেই (ধম্মকম্ম) বৈধ রাখা হয়েছে, অন্য তিনটি ঘটনায় উপসম্পদাকে অবৈধ (অধম্মকম্ম) বিবেচিত হয়েছে (বিনয় চতুর্থ খণ্ড, পৃঃ ৩২০, পি. টি. এস. সংস্করণ) । প্রথম তিনটি ঘটনা নিম্নে উপস্হাপন করা হলঃ-
১) ধম্মকম্মে ধম্মকম্মসঞ্ঞা বুট্ঠাপেতি- '' তার কর্ম ধর্মতঃ হওয়ায় (Being Legal) উপসম্পদা কর্ম ধর্ম সম্মত হয়েছে বলে গ্রহণ করা (Perceiving) হয়েছে '' ।
২) ধম্মকম্মে বেমতিকা বুট্ঠাপেতি - ''কর্ম ধর্মতঃ হওয়ায় তিনি অনিশ্চিত হয়ে (Being Uncertain) তাঁকে উপসম্পদা দিয়েছেন'' ।
৩) ধম্মকম্মে অধম্মকম্মসঞ্ঞা বুট্ঠাপেতি - ''কর্ম ধর্মতঃ হওয়ায় অধর্ম (Illegal) সংজ্ঞা জ্ঞানে তাঁকে উপসম্পদা দেওয়া হয়েছে'' ।
এ তিনটি হল বিসদৃশ (Differ) ঘটনা । কারণ এ বিষয়ে উপাধ্যায়ের ভিন্নতর সংজ্ঞা রয়েছে (Different Perception) । তিনি হয়তো মনে করতে পারেন কর্ম বৈধ হবে (১), ইহার বৈধতা বিষয়ে তাঁর সংশয় থাকতে পারে (২), অথবা তিনি মনে করতে পারেন কর্ম অবৈধ হবে (৩) । এ তিনটি ঘটনার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে উপাধ্যায় (Preceptor) পাচিত্তিয় আপত্তিগ্রস্ত হয় ( আপত্তি পাচিত্তিযস্স ) । তবে এ ঘটনা তিনটির প্রত্যেকটিতে উপসম্পদা প্রত্যাশী মাতৃজাতি দু'বছর সময় পর্য্যন্ত শিক্ষামানাকাল পরিপূর্ণ না করলেও তাঁর উপসম্পদা কর্মকে (ধম্মকম্ম) বৈধতা প্রদান করা হয়েছে । সুতরাং ইহা স্পষ্টীকরণ হয়েছে (Clearly Implies) যে উপসম্পদা প্রার্থী শিক্ষামানা প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল অপূর্ণ থাকলেও এ অপূর্ণতার দ্বারা তাঁর ভিক্ষুণী উপসম্পদা অবৈধ হবে না ।
অতএব, বিনয় পিটকের দৃষ্টিকোণ থেকে উপসম্পদা প্রার্থী মাতৃজাতি যদিও তিনি দু'বছর সময়কাল পর্য্যন্ত শিক্ষামানারূপে অতিক্রম নাও করেন, তথাপি তাঁর উপসম্পদা অকার্য্যকর (Invalid) বা অবৈধ হবে না । সুতরাং আমরা এখন নিশ্চিত যে বুদ্ধগয়ায় মাতৃজাতির উপসম্পদা দীক্ষা (Higher Ordination) বা ভিক্ষুণী উপসম্পদা তাঁদের দ্বারা দু'বছর সময়কাল যাবৎ শিক্ষামানারূপে অতিবাহিত না করায় বিপন্ন (Jeopardized) বা অবৈধ হবে না । কেননা তাঁরা বিধিবদ্ধভাবে শিক্ষামানারূপে দু'বছর অবস্হান না করলেও তার সমমানের প্রশিক্ষণ অনুশীলন করেছেন দীর্ঘ বছরকাল পর্য্যন্ত যা আমি পূর্বেই উল্লখ করেছি ।
৫) চীনা উপাধ্যায়গণঃ-
পঞ্চম শতাব্দীতে শ্রীলঙ্কা হতে ভিক্ষুণী সংঘেরা চীনে গিয়ে যে ভিক্ষুণী সংঘ স্হাপন করেছিলেন তথায় বর্তমান ভিক্ষুণী সংঘ (Present Chinese Bhikkhuni Preceptors) তাঁদেরই উত্তরসুরী বা উত্তরাধিকারী (Heirs) । তবে চীনে বর্তমানে যে ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব রয়েছে তাঁরা ভিন্নতর প্রাতিমোক্ষ শীলের (Different Code of Rules) অনুশীলন করেন । অর্থাৎ তাঁদের অনুশীলিত বিনয় হল ধর্মগুপ্তক প্রাতিমোক্ষ । এ প্রাতিমোক্ষ অনুশীলন করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছে অষ্টম শতাব্দীতে চীনে সম্রাজ্য শাসকদের নির্দেশে (Imperial Order) । থেরবাদ সম্প্রদায়ের ভিক্ষুণীদের চেয়েও ধর্মগুপ্তক পরম্পরার ভিক্ষুণী সংঘের রয়েছে অধিক সংখ্যক প্রাতিমোক্ষ শীল । দু'টি বিনয় তুলনা করলে এখানে কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু শীলের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় । এরপরেও দু'টি বিনয়ের আলোকে কিছু সমাধানসূত্র (Formulations) খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে । উপসম্পদার জন্য ধর্মগুপ্তক বিনয় আনুষ্ঠানিক সীমারূপে (Ritual Boundery) ব্যবহার করে সমাধান করার চেষ্টা করলে তা যেমন বিসদৃশ হবে না তেমনি উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হবে ।
চীনা ভিক্ষুণী সংঘ ভিন্ন পরম্পরার অন্তর্গত (নানাসংবাস) যেরূপ থেরবাদ সংঘ পরম্পরা । ভিন্ন পরম্পরা হওয়া অর্থে তাঁদের পক্ষে বিধি সম্মত উপসম্পদা সম্ভব নয় যা থেরবাদ সংঘ পরম্পরার দ্বারা গ্রহণযোগ্য হবে ।
বিনয় পিটকে নানাসংবাস বা 'ভিন্ন পরম্পরা (Different Community)' বলতে উল্লিখিত হয়েছে বিনয় শিক্ষাপদে ভিন্নমত পোষনকারী । এখানে একজন পূর্ণ উপসম্পন্ন সংঘ সদস্য তাঁর অনুসৃত পরম্পরার সাথে ভিন্নমতালম্বী সংঘ পরম্পরার মধ্যে নির্দ্দিষ্ট কোন বিনয় কার্য্য সম্পন্ন করলে তিনি আপত্তিগ্রস্ত হবেন । এ বৈসাদৃশ্যতা (Discord) বা বিনয় শীলের নিহিতার্থ অনুশীলন ভিন্নতা পোষন করার কারণে সংঘ সদস্যের সাথে একত্রে উপসম্পন্ন সংঘ সদস্যগণ সংঘ হতে স্বতন্ত্রভাবে বৈধ কর্ম সমূহ সম্পাদন করে । সংঘ সদস্যেরা তাঁকে বা তাঁদেরকে সাময়িক বহিস্কার করে কোন বৈধ কর্মের অংশগ্রহণ হতে বিরত (Suspenion) রাখেন ।
এরূপ নানাসংবাস সংঘ পরম্পরা অস্তিত্বের সূচনার কারণ হল বিনয় শীলের ব্যাখ্যার মতভেদ (Dispute) । অতএব, মতভেদ দুরীকরণের মাধ্যমে ইহার সমাধান করা যেতে পারে । এক সময় বিনয় শীলের মতভেদ করতে সংঘ সদস্যদের মধ্যে সমযোতা হয়েছিল । যাঁরা ভিন্নমত পোষন করার পর নানাসংবাস করে আবার সমযোতায় আসলে সবাই একই সংঘ সদস্যভূক্ত হয়ে গিয়েছিল অর্থাৎ 'সমানসংবাস' (Same Community) করার পর্য্যায়ভূক্ত হয় ।
বিনয় পিটকের মহাবর্গের অনুসারে দু'প্রকারের 'সমানসংবাসক ' হতে দেখা যায় । প্রথমটি হল নিজেই নিজের মত পরিবর্তন করে একই সংঘভূক্ত অর্থাৎ সমানসংবাসক হওয়া (অত্তনা বা অত্তানং সমানসংবাসকং করোতি) বিনয় প্রথম খণ্ড, পৃ-৩৪০, P.T.S) । এখানে প্রদর্শিত সমানসংবাস বা একই সংঘভূক্তকরণ হচ্ছে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে । ইহা তখনই সম্ভব হচ্ছে যখন তিনি তাঁর পূর্ব অনুসৃত মত Earlier View) ত্যাগ করে (Give up) অবশিষ্ট সংঘ সদস্যেদের অনুসৃত বিনয়ের শিক্ষাপদ গ্রহণ করেন ।
সমানসংবাসক হওয়ার দ্বিতীয় পদ্ধতি (Second Way) হল - সংঘ সদস্যদের দ্বারা সাময়িক বহিস্কৃত হয়ে তাঁর আপত্তি না দেখে (Not seeing an offence), ইহার জন্য প্রতিকার না করে (Not atoning for it) , ইহা পরিত্যাগ না করে (Not giving it up)আবার সমানসংবাসকের অন্তর্ভূক্তি করা ।
ভিক্ষুণী উপসম্পদার বর্তমান উদ্ভূত পরিস্হিতে দ্বিতীয় পদ্ধতির প্রয়োগ এখানে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় না । কেননা থেরবাদীদের দ্বারা অথবা অন্য কোন উপায়ে ধর্মগুপ্তক ভিক্ষুণীরা বহিস্কৃত হয়েছিলেন অতীতের এরকম কোন প্রামাণ্য নথি বা দলিল নাই (No record) । কেবলমাত্র ভৌগোলিক বিভাগই (Geographical Separation)এ দু' পরম্পরার আবির্ভাব হয়েছে ।
সুতরাং এখানে উপরোক্ত দু'টি পদ্ধতির বিকল্পরূপে (Alternatives) প্রথমটির প্রয়োগ প্রযোজ্য (Relevant) হতে পারে । দু'টি বিকল্পের প্রথম পদ্ধতিটি অনুসরণ করে সম্ভবতঃ শীলের ভিন্নতা দুরীকরণ হয়ে সমস্যার উত্তরণ হতে পারে যদি নব উপসম্পন্ন ভিক্ষুণীগণ থেরবাদ বিনয়ের শিক্ষাপদ অনুশীলনের সিদ্ধান্ত নেন । বিনয় সম্মত এ পথা অনুসরণে তাঁরা সমাসংবাস ভূক্ত হতে পারে ।
বুদ্ধগয়ায় দ্বৈত উপসম্পদার (Dual Ordination) পর থেরবাদী ভিক্ষুদের দ্বারা কৃত উপসম্পদা থেরবাদী বিনয় মতে সে নব ভিক্ষুণী উপসম্পদা বৈধতা দানের সিদ্ধান্ত স্বীকৃতি দেওয়া বা গৃহীত হওয়ারই নামান্তর (Expression of acceptance) । সাংঘিক বিনয়ে নানাবাস সম্পর্কিত নিয়মাবলীর আলোকে এখানেই আমাদের চলমান মতভেদের সমাধান পদ্ধতি স্হাপিত হয়েছ ।
এভাবে থেরবাদী ভিক্ষুদের দ্বারা সম্পন্ন উপসম্পদা আধুনিক পরম্পরায় প্রচলিত ব্যবস্হা 'দল্হীকম্ম' (Making Strong) বা দৃঢ়ীকরণ কর্মের মাধ্যমেও কার্যকর করা যেতে পারে । এ 'দল্হীকম্ম' হল কোন একজন বা একাধিক ভিক্ষু সংঘের ভিন্ন পরম্পরায় উপম্পন্ন হয়ে ভিক্ষুত্ব গ্রহণের পর সে পরম্পরা ত্যাগ করে তাঁর বা তাঁদের মনোনীত সংঘের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিনয় বিধানের ব্যবস্হা । আলোচ্য পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাদের দেশের চলমান নিকায়ভেদ সমস্যার সমাধান খুঁজে প্রত্যেকের সদিচ্ছা থাকলে সংঘের মিলনের জটও খুলতে পারে ।
যেহেতু সমস্যা সমাধানের ইহাই একমাত্র সম্ভাব্য উপায়, সুতরাং ইহা সুস্পষ্ট যে এতে বাধ্য করার (Compelling) প্রয়োজন নাই । কিভাবে সমানসংবাসভূক্ত হতে হয় এ সম্পর্কিত বিনয়ের আলোকে শিক্ষাপদের ভিন্ন ভিন্ন মতভেদই কেবল বিবেচিত হতে পারে । যাহোক, এখানে শিক্ষাপদ সমূহের মধ্যেই ভিন্নতা রয়েছে । সেকারণে আমাদের নিশ্চিত Ascertained) হতে হবে যদি থেরবাদী ভিক্ষুণী সংঘ পুনরুত্থাণ করতে হয় তাহলে চীনা ভিক্ষুণী সংঘের সহযোগিতা অপরিহার্য্যতা (Indispensible) অনস্বীকার্য্য । এ বিষয়টিকেই আমি পরবর্তী বিভাগে 'ভিক্ষুদের দ্বারা একক উপসম্পদা' বিষয়ক চর্চার প্রধান উপাদান প্রস্তুত করছি ।
৬) ভিক্ষুদের দ্বারা ভিক্ষুণীদের একক উপসম্পদাঃ-
কেবল মাত্র ভিক্ষুদের দ্বারা একক উপসম্পদা (Single Higher ordination by Bhikkhus) প্রথম দর্শনেই (At first sight) মনে হবে তা ষষ্ট গুরুধর্ম বাতিলের মাধ্যমেই হয়েছে । এখনও ইহার বৈধতার মাপকাঠিতে আমাদের স্মরণ রাখতে হয় যে, এ অষ্ট গুরুধর্ম কেবলমাত্র সুপারিশ (Recommendations), এগুলি শিক্ষাপদ নয়, যা লঙ্ঘিত হলে সুনির্দ্দিষ্ট (Explicitly) সাজা বা পরিণতি ভোগ করতে হবে । এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সমস্ত গুরুধর্ম সম্পর্কে পরিস্কারভাবে বলা যায় যে, এগুলিকে সহজেই এড়ানো যায় (Easily Overlooked) । কেননা গুরুধর্ম সমূহ শিক্ষামানা অথবা ভিক্ষুণীদের দ্বারা অনুকরণের বিষয় বা তাঁদের সম্বন্ধিত সুপারিশ । এ গুরুধর্ম ভিক্ষুদের অনুশীলনের জন্য প্রদত্ত হয়নি (Rules are not given to Bhikkhus) ।
চুলবর্গ সাক্ষ্য (Reports) দেয় যে, নব উপসম্পন্ন ভিক্ষুণীগণ কিভাবে প্রাতিমোক্ষ পাঠ করতে হয়, আপত্তিগ্রস্ত হলে কিভাবে আপত্তি দেশনা (transgression of Confess) করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে কিছু জানতেন না (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ-২৫৯, P.T.S.)। এতে প্রমাণিত হয়, ষষ্ট গুরুধর্মের অনুসরণে তখন ভিক্ষুণী উপসম্পদা হয়নি । যদি দু'বছর শিক্ষানারূপে অবস্হানের পর তাঁরা উপসম্পদা গ্রহণ করতেন তাহলে প্রাতিমোক্ষাদি পাঠ প্রভৃতি না জানার কারণ নাই । অতএব নব গঠিত ভিক্ষুণী সংঘের সম্পন্ন উপসম্পদা ভিক্ষু সংঘের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মতানুসারে যে হয়েছে উক্ত যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যাই তা আমাদের সুনিশ্চিত করে । শর্তসমূহ এমনভাবে জুরে দেওয়ার কারণ স্বাভাবিকভাবে আমাদের নিকট পরিস্কার হয়েছে যে, ভিক্ষুর অন্তর্ভূক্তি ছাড়া ভিক্ষুণী উপসম্পদা যাতে না হয় । অন্যভাবে বলতে গেলে, ভিক্ষুণীগণ তাঁদের নিজেদের উপসম্পদা দানে নিজেদের বিরত রাখতেও ষষ্ট গুরুধর্ম সূচিত করে । ভিক্ষুদের উপস্হিতি বিনা ভিক্ষুণীরা এককভাবে ভিক্ষুণী উপসম্পদা না দেওয়ার জন্যই ষষ্ট গুরুধর্মের উদ্ভাবন মনে হয় ।
যাহোক, একই গুরুধর্ম ভিক্ষুগণের আচরণ করার মত নিয়ম নয় । কাজেই ইহা বলা নিষ্প্রয়োজন (Needless to say) যে, বিনয়ে ভিক্ষুণীদের জন্য বহু সংখ্যক শিক্ষাপদ প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে যেগুলি কিন্তু ভিক্ষুদের জন্য প্রযোজ্য নয় । এ পার্থক্য বা বৈশিষ্ট্য বিনয় চুলবর্গে পরিস্কারভাবে প্রদর্শিত হয়েছে । এখানে বুদ্ধ মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে ভিক্ষুণীদের যথাযথ আচরণ সম্পর্কিত দু'প্রকার শিক্ষাপদের উল্লেখ করছেন । প্রথম প্রকার হল, যে সমস্ত ভিক্ষুণী শিক্ষাপদ সমূহ ভিক্ষুদের মত একই রয়েছে, এবং দ্বিতীয়টি হল, যে শিক্ষাপদগুলি কেবল ভিক্ষুণীদের জন্য প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে, ভিক্ষুদের জন্য নয় (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ-২৫৮, P.T.S) । এ উভয় প্রকার শিক্ষাপদ সমূহ গৌতমীর অনুগামী ভিক্ষুণী যাঁরা ভিক্ষু-ভিক্ষুণী উভয় সংঘের দ্বারা উপসম্পদা গ্রহণ করেছেন তাঁদের জন্য গৌতমীকে মুচলেকাবদ্ধ করা হয়েছে ।
বিনয়ের চুলবর্গ অনুসারে ষষ্ট গুরুধর্ম জারি করার (Promulgate) পর মহাপ্রজাপতি গৌতমী নিম্নোল্লিখিত প্রশ্ন নিয়ে বুদ্ধের কাছে উপস্হিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন (বিনয় পিটক খণ্ড দ্বিতীয়, পৃ-২৫৬, P.T.S.):-
''ভন্তে! আমি কিভাবে এ শাক্য নারীদের সাথে সম্পর্ক রেখে অগ্রসর হব Proceed in Relation) ?'' ( কথাহং ,ভন্তে , ইমাসু সক্যিয়নীসু পটিপজ্জন্তী'তি )?
চুলবর্গোক্ত মতানুসরণে এ প্রশ্ন ষষ্ট গুরুধর্ম সম্পর্কিত দেখা যায় । এ প্রশ্নোত্তরে বুদ্ধ গৌতমীকে দ্বৈত উপসম্পদার সুপারিশ করেছিলেন । এ গুরুধর্মের বিষয় জ্ঞাত হয়ে অতঃপর গৌতমী এখন এ সম্পর্কিত বিধি (Pocedure) কেমন হবে তা জিজ্ঞাসা করছেন । তিনিই কেবল ভিক্ষুণী হয়ে তাঁর অনুগামীদের দ্বৈত উপসম্পদা দিতে নির্ধারিত সংখ্যাপূর্ণ (Quoram) করা তখন অসম্ভব দেখা দিচ্ছিল । এ অবস্হার নিরিখে মহাপ্রজাপতি গৌতমী বুদ্ধের মার্গ দর্শন (Guidance) কামনা করছেন । বিনয়ের নির্দেশনানুসারে এ সম্পর্কিত বুদ্ধের খুবই পরিস্কার ব্যবস্হাপত্র (Prescription) হল- ' অবশ্যই ভিক্ষুরা ভিক্ষুণী উপসম্পদা প্রদান করবে (বিনয় ২য় খণ্ড, পৃ- ২৫৭, P.T.S.)' ।
''অনুজানামি, ভিক্খবে, ভিক্খূহি ভিক্খুনিযো উপাসম্পাদেতুং'তি'' - (ভিক্ষুগণ! আমি অনুজ্ঞা (Permission) প্রদান করছি, ভিক্ষুদের দ্বারা ভিক্ষুণীদের উপসম্পদা হবে) ।
ষষ্ট গুরুধর্মের বিসদৃশ (Unlike) এ প্রজ্ঞাপনটি ভিক্ষুদের জন্যই করা হয়েছে এবং ভিক্ষুণী উপসম্পদার জন্য ভিক্ষুদের প্রতি ইহা হল এরূপ জারিকৃত প্রথম প্রজ্ঞাপন ।
এখানে ইহাও উল্লেখযোগ্য যে, মহাপ্রজাপতি গৌতমীর অনুগামীদের বুদ্ধ নিজেই উপসম্পদা দিয়েছেন কিনা সে সম্পর্কিত বিবরণও বিনয়ে স্পষ্ট দৃষ্ট হয় না । বুদ্ধ শাসনে (Buddha's dispensation) উপসম্পদা গ্রহণ করতে সমগ্র দলের জন্য বুদ্ধ কর্তৃক সরল অনুমতি দান আমাদের নিকট পরিস্হিতি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়েছে যে- যেহেতু যখন কোন ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্বই ছিলনা তখন ভিক্ষু সংঘই কেবল ভিক্ষুণী উপসম্পদা প্রদান করেছেন ।
বর্তমান সময়ের ইহাই হল বিনয় পিটকের উল্লেখের সমর্থনে কার্য্যকরী গ্রহণীয় ব্যাখ্যা । অনুগত অনুসারীদের প্রতি তাঁর সম্পর্ক বিধি কেমন হবে মহাপ্রজাপতি গৌতমীর দ্বারা এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হলে বুদ্ধ নির্দ্বিধায় ভিক্ষুদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেছিলেন, 'ভিক্ষুগণ ! তোমরাই ভিক্ষুণীদের উপসম্পদা প্রদান কর' । ইহা এখানে বিনয় পিটকে উল্লিখিত ঘটনার উজ্জ্বলতর প্রমাণ ।
থেরবাদ বিনয়ের উল্লিখিত তথ্যানুসরণে দেখা যাচ্ছে, ষষ্ট গুরুধর্ম জারী করার পরেই বুদ্ধ ভিক্ষুদেরকে প্রথম ব্যবস্হাপত্র (First Prescription)দিয়েছিলেন ভিক্ষুণীদেরকে উপসম্পদা প্রদান করতে । গৌতমীর উপসম্পদা প্রার্থনায় বুদ্ধ কর্তৃক যে উভয় সংঘের (ভিক্ষু-ভিক্ষুণী) দ্বারা দ্বৈত উপসম্পদা (Dual Ordination) গ্রহণের শর্ত আরোপিত হয়েছিল তা স্বীকারের মুচলেকা আদায়ের পরেই বুদ্ধ আবার কেবল ভিক্ষু সংঘ দ্বারা উপসম্পদা কার্য্য সম্পাদনের ব্যবস্হাপত্র দিচ্ছেন ইহা আমরা দিবালোকের মত পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি । এর অর্থ ইহাই প্রকাশ করছে যদিও দ্বৈত উপসম্পদা ব্যবস্হাকে অধিকতর মান্যতা (Preference) দেওয়া হয়েছে তথাপি যদি ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব না থাকে তাহলে কেবল একক ভিক্ষু সংঘের দ্বারাও ভিক্ষুণী উপসম্পদা হতে বাধা নাই এবং তা বৈধও হবে । ইহাই হল ভিক্ষুণী সংঘ পুনস্হাপনায় বিনয়ের বিধি সম্মত পদ্ধতি (Proper way to revive) ।
আধুনিক কাল তথা বর্তমান সময়ের পরিস্হিতির মত একই অবস্হাতেই ( Same situation) ভিক্ষুণী উপসম্পদার মূল ব্যবস্হাপত্র বুদ্ধ দিয়েছিলেন : একদল মাতৃজাতি ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন । কিন্তু কোন ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব না থাকায় সে উপসম্পদা কর্ম সম্পন্ন হতে পারছে না । আমরা যতদূর দেখতে পাচ্ছি তখন মহাপ্রজাপতি গৌতমীই কেবল একমাত্র উপসম্পন্ন ভিক্ষুণী । আধুনিক সময়ের পরিস্হিতিতে যদি ধর্মগুপ্তক পরম্পরার ভিক্ষুণীগণ থেরবাদের মানদণ্ডে উপসম্পদা দানের অযোগ্য বিবেচিত হয় তাহলে অনুরূপ পরিস্হিতিরই (Predicament) উদ্ভব হচ্ছে : একদল মাতৃজাতি ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করছেন, উপসম্পন্ন ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব না থাকায় উপসম্পদা কার্য্য সম্পন্ন হতে পারছে না ।
বুদ্ধের প্রথম ব্যবস্হাপত্র হচ্ছে যে, ভিক্ষুরা নিজেরাই ভিক্ষুণী উপসম্পদা দিতে পারবে । এ নব উপসম্পন্ন ভিক্ষুণী সংঘ গঠিত হবে এ মর্মে বুদ্ধ কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সুস্পষ্ট বিবৃতি (Second explicit statement) অনুসরণের মাধ্যমে (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ - ২৫৭, P.T.S.) ।
''ভগবতা পঞ্ঞত্তং ভিক্খূহি ভিক্খুনিযো উপসম্পাদেতব্বাতি'তি'' ভগবান প্রজ্ঞাপ্ত করেছেন যে, ভিক্ষুদের দ্বারা ভিক্ষুণীগণের উপসম্পদা গ্রহণ করা উচিত ।
আলোচ্য নিবন্ধের বিনয়ের এ উক্তি ভিক্ষুণী উপসম্পদায় ভিক্ষু সংঘের অংশ গ্রহণের গুরুত্ব আরো বেশী শক্তিশালী করে (Reinforces the importance) । ভিক্ষুণী উপসম্পদায় ভিক্ষুর অংশ গ্রহণের সহযোগিতা আবশ্যক । মাতৃ জাতিকে উপসম্পদা প্রদান করতে ভিক্ষুর ইচ্ছার গুরুত্ব বিনয় পিটকের মহাবর্গের একটি অনুচ্ছেদেও উল্লেখ করা হয়েছে । এ অনুচ্ছেদে অনুমতি প্রদান করেছেন, বর্ষাবাসব্রত অনুশীলনের সময়ও ভিক্ষু সাতদিনের অবকাশ নিয়ে (leave up to seven days) বাসস্হান ত্যাগ করে ভিক্ষুণী উপসম্পদায় অংশ গ্রহণ করতে যেতে পারবেন ( বিনয় প্রথম খণ্ড, পৃ-১৪৬, P.T.S.) ।
ষষ্ট গুরুধর্ম এবং পরবর্তী নিয়ম সমূহের কেন্দ্রবিন্দু (Central Point) হল ভিক্ষুগণ উপসম্পদা প্রত্যাশী মাতৃজাতিকে উপসম্পদা দিতে পারবেন । যদি ভিক্ষুণী সংঘ বিদ্যমান থাকে তাহলে ভিক্ষুগণ ভিক্ষুণী সংঘ সহযোগে তাঁদের উপসম্পদা প্রদান করতে পারেন অথবা ভিক্ষুণী সংঘ বিদ্যমান না থাকলে ভিক্ষু সংঘ নিজেরাই মাতৃজাতিদের ভিক্ষুণী উপসম্পদা দিতে পারবেন । ভিক্ষুণী উপসম্পদার সর্বত্র ভিক্ষু সংঘের উপস্হিতি অপরিহার্য্য্ (Indispensable) । এখানে ইহা সুবিদিত যে ভিক্ষুণী উপসম্পদায় ভিক্ষুর অংশ গ্রহণ অপরিহার্য্য হলেও যদি ভিক্ষুণী সংঘের অস্হিত্ব না থাকে তাঁদের উপস্হিতি অনিবার্য্য নয় । আরো স্পষ্ট বললে এমনকি ভিক্ষুণী সংঘ বিদ্যমান থাকলেও তাঁদের অংশ গ্রহণ করতে হবে এমন শর্তও অনিবার্য্য নয় (Not an indispensable requirement) ।
চুলবর্গ সাক্ষ্য দেয় যে, যখন মাতৃজাতি উপসম্পদা প্রার্থীকে পরস্পর সাক্ষাতকার নিতে সমস্যা উদ্ভব হচ্ছিল তখন বুদ্ধ সংশোধিত বা পরিবর্তিত ব্যবস্হাপত্র প্রদান করেন । পরিবর্তিত এ শিক্ষাপদ অনুসারে মাতৃজাতি নিজেই যদি ভিক্ষুদের সম্মুখে প্রশ্নোত্তরের বা অনুশাসনের সম্মুখীন হতে না চান তথাপি ভিক্ষুসংঘ মাতৃজাতিকে উপসম্পদা প্রদান করতে পারবেন । তৎপরিবর্তে তাঁকে পূর্বেই ভিক্ষুণী সংঘের নিকট প্রশ্নোত্তর পর্ব সম্পন্ন করে আসতে হবে (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ- ২৭১, P.T.S) । পরিবর্তিত জারি করা শিক্ষাপদটি হল নিম্নরূপ :-
''অনুজানামি, ভিক্খবে, একতো-উপসম্পন্নায ভিক্খুনীসঙ্ঘে বিসুদ্ধায ভিক্খুসঙ্ঘে উপসম্পদং'তি''-ভিক্ষুগণ ! আমি অনুজ্ঞা প্রদান করছি, যিনি এক পক্ষে (One Side) অর্থাৎ ভিক্ষুণী সংঘে প্রশ্নোত্তর পরিস্কার করে বা প্রশ্নোত্তর পর্ব সমাধা করে ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণ করেছেন তাঁকে উপসম্পদা প্রদান করতে' ।
আলোচ্য বিষয় আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে (Indicates) ভিক্ষু সংঘ দ্বারা মাতৃজাতি উপসম্পদাকাঙ্খীরা প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হলে তাঁদের লজ্জিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুদ্ধ পরিবর্তিত ব্যবস্হাপত্র বা অনুজ্ঞা প্রদান করেছেন । উপসম্পদা বিধির প্রশ্নোত্তর (Interrogation) বা অনুশাসন পর্বের অংশটি একারণে বুদ্ধ ভিক্ষুণী সংঘের উপর ভারার্পণ করেছেন অর্থাৎ ছেড়ে দিয়েছেন । এ আদেশ অনুসারে ভিক্ষুসংঘ অনুশাসন ছাড়াই মাতৃজাতিদের উপসম্পদা দানের সক্ষমতা (Enable)) অর্জন করেছেন । ''ভিক্ষুণী সংঘে প্রার্থী নিজেই অনুশাসিত হয়েছে '' এবং ''এক পক্ষে উপসম্পদা সম্পন্ন হয়েছে'' একারণে মাতৃজাতি যিনি উপসম্পদা প্রার্থী শিক্ষাপদ তাঁকেই নির্দেশ (Refer) করছে ।
ভিক্ষুদের উপসম্পদা কর্মে নির্দেশমূলক আইনি ব্যবস্হাপত্র সময়ানুসারে প্রয়োগ এখানে লক্ষ্যণীয় শিক্ষাপূর্ণ । মহাবর্গের উল্লেখ অনুসারে, ধাপে ধাপে বিভিন্ন স্তরে ভিক্ষুদের উপসম্পদার নিয়ম প্রবর্তিত হয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে । সর্ব প্রথমে কেবল ত্রিশরণ (Three Refuges) গ্রহণের মাধ্যমে উপসম্পদা সম্পন্ন হত । পরে তা পরিবর্তিত হয়ে 'ঞত্তি ' বা জ্ঞপ্তি (Motion) ও 'কর্মবাচা' তিনবার ঘোষনার (Three times Proclamations of Procedure) (ঞত্তি চতুত্থ কম্মবাচা) মাধ্যমে উপসম্পদার প্রথা প্রচলন হয়েছে । যখন হতে ঞত্তি এবং তিনবার কর্মবাচা পাঠ করে ঘোষনার উপসম্পদা বিধি চালু হয়েছে তখন থেকে ত্রিশরণ গ্রহণে উপসম্পদা প্রথা রহিত (Invalid) হয়ে যায় । পরে ত্রিশরণ গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল প্রব্রজ্যা কার্য্য হওয়ার প্রথা প্রচলন হয়েছে । অর্থাৎ এখন প্রব্রজ্যা গহণ পদ্ধতির অংশরূপে 'ত্রিশরণ' ব্যবহৃত হয়ে আসছে । সুতরাং বর্তমানে ত্রিশরণ গ্রহণ করে উপসম্পদার বৈধতা নাই । এ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও ধোঁয়াসা অপসারণ করতে বুদ্ধ সুস্পষ্ট বিবৃতি প্রদান করে পূর্ব নিয়মের বিলোপ (Abolished) সাধন করেন (বিনয় প্রথম খণ্ড, পৃ-১৫৬, P.T.S.) । এ সম্পর্কিত বিনয়ের প্রজ্ঞাপন জারি নিম্নরূপ :-
" যা সা , ভিক্খবে, ময়া তী'হি সরণগমনেহি উপসম্পদা অনুঞ্ঞতা, তাহং অজ্জতগ্গে পটিক্খিপামি; অনুজানামি, ভিক্খবে, ঞত্তি চতুত্থেন কম্মেন উপসম্পাদেতুং"- ভিক্ষুগণ ! আমার দ্বারা ত্রিশরণ গ্রহণের মাধ্যমে উপসম্পদার আদেশ আমি আজ হতে বাতিল ঘোষনা করছি । ভিক্ষুগণ ! এখন হতে জ্ঞপ্তি (Motion) এবং তিনবার 'কম্মবাচা' ঘোষনার (Proclamation) অর্থাৎ ঞত্তি চতুত্থ কম্মবাচা'র মাধ্যমে উপসম্পদা প্রদান করবে "।
ভিক্ষুণী উপসম্পদা বিষয়ে ভিক্ষুদেরকে প্রথম ব্যবস্হাপত্র 'ভিক্ষুণী উপসম্পদা ভিক্ষু দিতে পারবে'- এ নিয়ম দ্বিতীয় নির্দেশ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে কিনা তা পরিস্কার নয় । ইহা কেবল পড়তে হবে - ''আমি অনুজ্ঞা প্রদান করছি, যিনি ইতিমধ্যেই একপক্ষে উপসম্পদা গ্রহণ করেছেন এবং ভিক্ষুণী সংঘের দ্বারা অনুশাসিত হয়েছে ভিক্ষু সংঘ তাঁকে উপসম্পদা প্রদান করবে'' ।
একইভাবে ভিক্ষুদের দ্বারা উপসম্পদার ক্ষেত্রে 'ভিক্ষুণীদের উভয় সংঘে উপসম্পদা গ্রহণ করতে হবে'- এ নিয়ম প্রবর্তন করার পূর্বে বুদ্ধ ঘোষনা দিতে পারতেন যে, আজ হতে কেবলমাত্র ভিক্ষুদের দ্বারা ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণ করতে হবে এ নিয়ম আমি বাতিল করছি - বুদ্ধ তা করেননি । ইহা রেখে দেওয়ার মানে হল প্রথম নির্দেশনা কেবল নিশ্চিত করতে যে, ভিক্ষুদের অনুমতি আছে ভিক্ষুণীদের উপসম্পদা দানে । তা আরো জোরদার করতে, দ্বিতীয় নির্দেশনায় ভিক্ষু-ভিক্ষুণী উভয় সংঘের মাধ্যমে উপসম্পদা দানের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে । ইহাই হল প্রথম ব্যবস্হাপত্র বা নির্দেশনার পরিস্কার বাতিল না করার পরিস্হিতির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা । 'এখন হতে ভিক্ষুণী উপসম্পদা একমাত্র ভিক্ষু-ভিক্ষুণী -এ উভয় সংঘ দ্বারা সম্পাদিত হবে' । ইহা বিনয়ে উল্লেখ মতে, উভয় সংঘের দ্বারা সম্পাদিত উপসম্পদা কর্ম অধিকতর দৃঢ় হয় ।
এরকম নির্দেশনার গুরুত্ব মনে হয় যেহেতু চুলবর্গে ভিক্ষুণীদের বৈধতা বিষয়ে একাধিক নিয়ম ঘোষিত হওয়ার প্রেক্ষিতেও হতে পারে । চুলবর্গ জানিয়ে দেয় যে, সর্ব প্রথমে বুদ্ধ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ভিক্ষুণীদের প্রাতিমোক্ষ (Bhikkhini Code of Rules) পাঠ, ভিক্ষুণীদের কৃত আপত্তির দেশনা (Confessioon of offences) এবং ভিক্ষুণীদের কর্মবাচা পাঠের দায়িত্ব ভিক্ষুরাই গ্রহণ করবে । পরে বুদ্ধ এ কার্য্যভার ভিক্ষুণীদের উপর অর্পণ করেন । বুদ্ধ ভিক্ষুণীদের এ কার্য্যভার অর্পণের পরেই আবার পরিস্কার নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দেন এ বিষয়ে ভিক্ষুদের আর দায়িত্ব রইল না । কেবল তা নয়, বুদ্ধ ইহাও পরিস্কার ঘোষনা দেন যে ভিক্ষুণীদের পক্ষে ভিক্ষুরা উক্ত বিষয়ে কার্য্য সম্পাদন করলে ভিক্ষুরা 'দুক্কট' আপত্তিগ্রস্ত হবে (বিনয় দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ-২৫৯, P.T.S.)।
ভিক্ষুণীদের উপসম্পদায় দ্বিতীয় অনুজ্ঞা বা ব্যবস্হাপনা সম্পর্কিত নির্দেশ অনুপস্হিত থাকার এরূপ কোন কারণ থাকতে পারে ? এখানে এরূপ কারণ সত্যিই এসে যায় : প্রথম নির্দেশনা বা অনুজ্ঞার তুলনায় দ্বিতীয় ব্যবস্হাপনার পরিস্হিতির মৌলিকভাবে ভিন্নতা নির্দেশ করে । এ বিধি সম্মত পদ্ধতি যথার্থই যে, ভিক্ষুণী সংঘ বিদ্যমান থাকলে ভিক্ষু সংঘ অবশ্যই ভিক্ষুণী সংঘের দ্বারা অনুশাসন করিয়ে মাতৃজাতির উপসম্পদার বিধি অনুসরণ করবে । এ রকম পরিস্হিতিতে পূর্বে মাতৃজাতি প্রার্থীরা ভিক্ষুণী সংঘ দ্বারা অনুশাসিত হয়ে থাকলে ভিক্ষু সংঘ বিনা অনুশাসনেই তাঁদের উপসম্পদা দান করতে পারবেন । তুলনায় প্রথম অনুজ্ঞা পরস্হিতির যথাযথ পদ্ধতি অনুযায়ী অনুসরণ করে, যেখানে উপসম্পদা প্রদান করতে সমর্থ ভিক্ষুণী সংঘ বিদ্যমান নাই ।
উক্ত দু' রকমের ব্যবস্হাপনা যেরূপ বিভিন্ন পরিস্হিতির নির্দেশ করে এগুলি পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব (Conflict) উৎপন্ন করে না । এরা উভয়ই বৈধ (Valid) । সেজন্য দ্বিতীয়টির বৈধতা নিশ্চিত (Ensure) করতে প্রথমটির রদ (Abolish) করার প্রয়োজন হয়না । একত্রে এ দু'টি প্রজ্ঞাপন আইনসিদ্ধ (Lagislate) করা হয়েছে দু' সম্ভাব্য পরিস্হিতির জন্য যা ভিক্ষুণী উপসম্পদা বিষয়ে ভিক্ষুর জন্য উদ্ভব হতে পারে ।
১) প্রথম অনুজ্ঞায় সম্ভাব্যতার অন্তর্গত হল তাঁরা কোন ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব না থাকার কারণে তাঁদের সহযোগিতার প্রশ্ন আসেনা । ভিক্ষুরা নিজেরাই মাতৃজাতিদের উপসম্পদা প্রদান করবে ।
২) দ্বিতীয় অনুজ্ঞার অন্য সম্ভাব্যতার অন্তর্গত হচ্ছে ভিক্ষুদের দ্বারা উপসম্পদার পূর্বচুক্তি (Precondition) অনুসারে ভিক্ষুরা বিদ্যমান ভিক্ষুণীদের সহযোগে সে সব মাতৃজাতিদের উপসম্পদা দান করবে যে সকল মাতৃজাতি পথমে ভিক্ষুণীদের দ্বারা অনুশাসিত ও উপসম্পদা গ্রহণ করেছে ।
এভাবে বিনয় পিটকের আলোচনা যতদূর পরিলক্ষিত হচ্ছে এতে সুস্পষ্ট ধারণা হয় যে, পরিস্হিতির অনুরূপ পরিস্হতি করতে ভিক্ষুণী উপসম্পদার অনুমতি ভিক্ষুদেরকে প্রদত্ত হয়েছে যখন প্রথম অনুজ্ঞায় বলা হয়েছে- 'ভিক্ষুগণ ! আমি অনুজ্ঞা প্রদান করছি ভিক্ষুদের দ্বারা ভিক্ষুণীগণের উপসম্পদা প্রদত্ত হবে' । এর মানে হল ভিক্ষুণী সংঘ অবিদ্যমানতার (Not Existence) কারণে ভিক্ষুণী উপসম্পদা দানে অসমর্থ হলেই কেবল ভিক্ষুরা এককভাবে উপসম্পদা দিতে পারবে ।
এ আলোচনার অনুসরণে বুদ্ধগয়ায় সম্পন্ন ভিক্ষুণী উপসম্পদা থেরবাদী বিনয়ের প্রয়োজনীয় আইনি সমস্ত শর্তই পরিপূ্র্ণ হয়েছে বলতে হয় । মাতৃজাতি উপসম্পদা প্রার্থীগণ ষষ্ট গুরুধর্মে আরোপিত 'উভয় সংঘের নিকট উপসম্পদা প্রার্থনা করতে হবে' এ শর্তটি অধিক পরিমাণে যথাসাধ্য তাঁরা আন্তরিকতার সাথে (With best of their abilities) সম্পন্ন করেছে । যদি তাঁদের চীনা ভিক্ষুণীদের দ্বারা উপসম্পদা অস্বীকৃত হয় (Unacceptable), তাহলে ইাহাই প্রতীয়মান (Implies) হয় যে বর্তমানে ভিক্ষুণী উপসম্পদা দেওয়ার মত থেরবাদ পরম্পরায় কোথাও ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব নাই । এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আদেশকৃত কেবল থেরবাদী ভিক্ষুদের দ্বারা প্রদত্ত ভিক্ষুণী উপসম্পদা বৈধতা লাভ করবে । ইহার বৈধতার অগ্রগণ্য ভিত্তি হল যে, বিনয় পিটক অনুসারে বুদ্ধ স্বয়ং ভিক্ষুদেরকে মাতৃজাতিদের উপসম্পদা দিতে নির্দেশ জারি করেছেন যখন মহাপ্রজাপতি গৌতমী বুদ্ধের নিকট তাঁর অনুগামীদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন ।
১৯৯৮ সালে বুদ্ধগয়ায় সমন্বয়ের ভিত্তিতে সম্পন্ন উপসম্পদা পদ্ধতির সর্বৈব বৈধতা রয়েছে । ভিক্ষুণী সংঘের পুনরুত্থান (Revive) আইনত সিদ্ধ বা সম্ভব হয়েছে । তাঁদের ভিত্তি সুদৃঢ়ভাবে (Firmly) স্হাপিত হয়েছে এবং থেরবাদী ভিক্ষুণীরূপে পরিচিতি (Recognition) লাভ করার দাবী প্রতিষ্ঠাপিত হয়েছে ।
''ভবতু সব্ব মঙ্গলং, সব্বে পঞঞায পরিসুজ্জন্তু''
'সকলের মঙ্গল হোক, সকলে প্রজ্ঞা দ্বারা পরিশুদ্ধ হোক'
সাধু সাধু সাধু

নিবন্ধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত সহায়ক গ্রন্হাবলীর সূচী: সমস্ত গ্রন্হই পালি টেক্স্ট সোসাইটি, লণ্ডন সংস্করণ।
১) দীঘ নিকাযো
২) দীপবংশ
৩) কথাবত্থু অট্ঠকথা
৪) সামন্ত পাসাদিকা (বিনয় অট্ঠ কথা)
৫) সুমঙ্গল বিলাসিনী ( দীঘ নিকাযো অট্ঠকথা)
৬) বিনয় পিটক (মহাবগ্গ, চুলবগ্গ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.