নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লকডাউনের ফলে রোজকার রুটিন চৌপট হয়ে গেছে। ঘুম ভাঙছে বেলা দশটায়। ব্রেকফাস্ট এগারোটায়। দুপুরের খাবার খেতে খেতে তিনটে বেজে যাচ্ছে। এই দেরির কারণে কাল যা রুদ্ধশ্বাস কাণ্ড ঘটল!
.
দুপুরে এখন সবার দিবানিদ্রার অভ্যেস হয়ে গেছে। কাল দুপুর তিনটেয় খাওয়া সেরে চারটার দিকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বউও কখন এসে শুয়ে পড়েছে জানি না।
.
ঘুম ভাঙল বাথরুমের তাড়নায়। ধড়মড় করে উঠে আলো জ্বাললাম। তারপর ঘড়ির দিকে চোখ যেতে ভিরমি খেলাম। সাড়ে বারোটা বাজে। বউও পাশে অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি ডেকে তুললাম। কিছুক্ষণ সময় লাগল বউয়ের ধাতস্থ হতে। জোর করে ঘুম ভাঙিয়ে দিলে যা হয় আরকি!
ধাতস্থ হয়ে বউ মাথা চাপড়ে বলল, "ইস সন্ধ্যে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। যাই আগে সন্ধ্যেটা দিয়ে দিই। তারপর রুটি করি।"
আমি বললাম, "এই মাঝরাতে আর সন্ধ্যে দিয়ে কাজ নেই।"
বউ বলল, "তা হয় নাকি!"
অতঃপর বউ গিয়ে সন্ধ্যে দিল। অর্থাৎ ধুপ প্রদীপ জ্বেলে তিনবার শাঁখ বাজাল।
.
রেওয়াজ আছে ভূমিকম্প হলে শাঁখ বাজিয়ে অন্যদের সতর্ক করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। বাড়ির বয়স্করা জানেন।
আমাদের ঘরে শাঁখ বাজার পরেই পাশের মিত্তিরদের বাড়িতে বাজল। তারপর শর্মাদের বাড়িতে। তারপর মন্ডলদের বাড়িতে। তারপর পাড়ার সব বাড়িতে শাঁখ বাজতে শুরু করল।
.
হঠাৎ এই সম্মিলিত শঙখধ্বনিতে মধ্যরাতে যেন কী একটা হইহই রইরই ব্যাপার শুরু হয়ে গেল।
আমার বউয়ের মাঝরাতে সন্ধ্যে দেওয়ার ইরাদায় ব্যাপারটা যেদিকে গড়াল তার গুরুত্ব বুঝে ওর মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেল। আমারও অবস্থা তথৈবচ।
.
পাড়ার সবাই বোধহয় ভূমিকম্পের কারণে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমরা ঘরে বসে ঠকঠক করে ভয়ে কাঁপছি।
হঠাৎ দরজায় জোর ধাক্কা। ভজহরিদার গলা শুনতে পেলাম, "বেরিয়ে এসো, ভূমিকম্প হচ্ছে।"
বউ ভয়ে আমার হাত ধরে বলল, "এখন কী হবে?"
আমি বললাম, "স্বাভাবিক থাকতে হবে এখন। চলো বেরোই, নইলে সবাই বুঝতে পেরে যাবে যে আমরাই প্রথম বাজিয়েছি। আর তার পরিণাম কী হবে বুঝতেই পারছ!"
আমরা মুখে মাস্ক পরে দুরু দুরু বক্ষে বাইরে বেরোলাম। বেরিয়ে আমাদের পিলে চমকে গেল। সারা পাড়া রাস্তায় নেমে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কয়েকজন ভলান্টিয়ার হয়ে সবাইকে দূরে দূরে সরে দাঁড়াতে বলছে। সোশ্যাল ডিসটেন্সিং মেনটেন করতে বলছে।
.
একটু পরেই পুলিশের গাড়ি এল। এক অফিসার ভ্যান থেকে নামলেন হ্যান্ড মাইক নিয়ে।
মাইকে বললেন, "বাইরে এত ভিড় কেন? সবাই ঘরে চলে যান। এক্ষুনি।"
কেউ একজন বলল, "ভূমিকম্প হচ্ছে যে। কেউ শাঁখ বাজিয়ে এলার্ট করেছে।"
অফিসার মাইকে গর্জন করলেন, "ভূমিকম্প-টম্প কিচ্ছু হয়নি। কেউ বদমায়েশি করে শাঁখ বাজিয়ে দিয়েছে। আপনারা এক্ষুনি সবাই ঘরে যান।"
ভজহরিদা কোথায় ছিলেন কে জানে, হঠাৎ কোথা থেকে এসে পুলিশ অফিসারকে কিছু বললেন। তারপরেই একজন কনস্টেবল লাঠি দিয়ে ধাঁই করে মেরে দিল ভজহরিদাকে।
আমরা উদ্বিগ্নচিত্তে দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেলাম।
.
বউ ভয়ে চুপ করে বসে আছে। বলল, "আমারই দোষে এই কেলেংকারিটা হল! আসলে মা মারা যাওয়ার আগে বলেছিল, 'আমার ছেলেটা তো কিছুই মানে না, তুমি যেন রোজ সন্ধ্যেটা অন্তত দিও'।"
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ভজহরিদার ফোন। ধরতে বললেন, "আচ্ছা তুমি জানো কোন নচ্ছার প্রথম শাঁখটা বাজিয়েছিল?"
আমি আকাশ থেকে পড়ে বললাম, "না না আমি জানি না দাদা।"
ভজহরিদা বললেন, "শালা বেফালতু পুলিশের ডান্ডা খেলাম। কী ব্যথা মাইরি! একেই মাল খেতে পাচ্ছি না বলে দিমাগ গরম হয়ে আছে তার মধ্যে শালা এইসব ক্যাওড়ামি! তোমাদেরকে ডেকে দিয়েই আমি সোজা চলে গিয়েছিলাম ফরেন লিকার দোকানটার কাছে। যদি ভূমিকম্পে ঘরটা ভেঙে পড়ে তাহলে আগে কটা বোতল নিয়ে সটকে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। উল্টে...যদি জানতে পারি কে এটা করেছে তাহলে তাকে উল্টো গাধায় চড়াব।"
যদিও আমি বুঝতে পারলাম না এখন গাধা কোথায় পাবে ভজহরিদা। শুধু বললাম, "ব্যথায় কিছু লাগিয়েছেন দাদা? ভোলিনি টোলিনি কিছু?"
ভজহরিদা বললেন, "হ্যাঁ বউ চুন-হলুদ গরম করছে। লাগিয়ে দেবে। আচ্ছা তোমাদের বেরোতে এত দেরি হল কেন বলোতো?"
সেরেছে, ধরা পড়ে গেলাম নাকি! আমি তাড়াতাড়ি বললাম, "মানে ওই মাস্ক খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই।"
আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, "আচ্ছা কী বলেছিলেন পুলিশ অফিসারকে, যে আপনাকে ঠেঙাল?"
ভজহরিদা গভীর দুঃখের সঙ্গে বললেন, "আমি শুধু বলেছিলাম, 'স্যার মদের দোকান বন্ধ করে রেখেছেন, ভূমিকম্প তো হবেই!' তখন অফিসার , 'এই ব্যাটাই শাঁখ বাজিয়ে ঝামেলা পাকিয়েছে' বলে কেলিয়ে দিল!"
ফোন কেটে দিলেন ভজহরিদা। কালশিটেতে লাগানোর জন্য চুন-হলুদ বোধহয় রেডি হয়ে গেছে।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৫১
গেছো দাদা বলেছেন: হা হা হা । কাজেই সাধু সাবধান !!
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২২
সোহানী বলেছেন: হাহাহাহা........ আমি হাসতে হাসতে ভিমড়ি খাবার অবস্থা
২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:০১
গেছো দাদা বলেছেন: আমারও ..... হা হা হা ।
৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুপাঠ লেখা
৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৪৩
মা.হাসান বলেছেন: পেটিকোট পরিয়য়াই কি বাহিরে আসিয়াছিলেন? নাকি লুঙ্গি ম্যানেজ হইয়াছে?
৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২০
পুলক ঢালী বলেছেন: হা হা হা দারুন রম্য। পড়ে মজা পেলুম।
৬| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:১৪
ইসিয়াক বলেছেন: বরাবরের মতো দারুণ লাগলো। আচ্ছা সেদিন আপনার শ্বশুর মশাই কোথায় ছিলো?
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: উফ আল্লাহ!!!
সামান্য ভাতঘুম কি থেকে অবস্থা!!!