নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমাব না পণ করেছি। এই তো আর কদিন পরেই লকডাউন উঠে যাবে। তখন চূড়ান্ত সমস্যায় পড়ব। ঢুলতে ঢুলতে অফিসের টেবিলে মাথা-ফাথা ঠুকে কেলেঙ্কারিয়াস কাণ্ড হবে।
বউ রান্নাঘরে বাসন মাজছে। লকডাউনের দুপুরে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দূরে কোনো বাড়িতে টিভিতে পুরানো সিরিয়াল চলছে।
হঠাৎ "বাঁচাও বাঁচাও" চিৎকার! বউয়ের গলা না? নির্ঘাত বিপদ হয়েছে কিছু! ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠল।
দৌড়ে রান্নাঘরে গেলাম। দেখলাম বউ দুলে দুলে বাসন মাজছে আর গাইছে, "বাঁচাও কে আছ মরেছি যে প্রেম করে..."
বাব্বা ধড়ে প্রাণ এল!
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, '"বাঁচাও বাঁচাও' বলে চেঁচাচ্ছিলে কেন?"
বউ বাসনে সাবান ঘষতে ঘষতে বলল, "এই গানটার শুরুটা এইরকমই, সেদিন সারেগামায় গৌরব গাইল!"
আমি বললাম, "উফফ ভয় খাইয়ে দিয়েছিলে!"
বউ বলল, "এত ভয় খাওয়ার কী আছে? শুধু ভয়েই মরে যাচ্ছে!"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার করলে ভয় পাব না?"
বউ গান গাওয়া থামিয়ে বলল, "সবসময় এত ভয়ে ভয়ে থাকো কেন? ভীতুর ডিম!"
.
ফিরে এসে গল্পের বই খুলে বসলাম।
কিছুক্ষণ পরে আবার বউয়ের চিৎকার 'বাঁচাও বাঁচাও' শুনতে পেলাম।
উরিব্বাস আজ তাহলে দারুণ মুডে আছে। গান গেয়ে গেয়ে বাসন মাজছে!
একটু পরে আবার 'বাঁচাও বাঁচাও' চিৎকার।
ওহ্ ভাল শুরু করেছে তো আজকে! কাউকে এমন পিলে চমকে দিয়ে গান করতে শুনিনি কখনো!
বউয়ের 'বাঁচাও বাঁচাও' চিৎকারে খান খান হয়ে যাচ্ছে নিস্তব্ধ দুপুর। নাহ্ এটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। বারণ করে দিয়ে আসি।
.
গিয়ে যা দেখলাম তাতে হতবাক হয়ে গেলাম। বউ রান্নাঘরের মেঝেতে শুয়ে আছে লম্বা হয়ে।
আমাকে দেখতে পেয়েই বলল, "কখন থেকে চেঁচাচ্ছি গ্রাহ্যই করে না! কেমন মানুষ তুমি?"
আমি বললাম, "আমি তো ভাবলাম তুমি গান করছ..."
বউ আমার কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, "শুয়ে পড়ো শুয়ে পড়ো। একটা বিরাট বোলতা এসেছে।"
দেখলাম একটা পেল্লাই বোলতা বোঁ করে রান্নাঘরের মধ্যে ঘুরছে। আমি দৌড়ে গিয়ে একটা চারশো পাতার উপন্যাস নিয়ে এসে সেটা দিয়ে চাপড়ে বোলতাটাকে নিকেশ করলাম। মোটা বইগুলো সংসারের আটপৌরে ক্রিয়াকাণ্ডে মায় বিপদে-আপদেও কাজে আসে। একবার ঘাড়ের সমস্যায় ডাক্তারবাবু বলেছিলেন মোটা বালিশ ব্যবহার করতে। তখন হাজার পাতার 'পূর্ব পশ্চিম' বইটা খুব কাজে লেগেছিল।
.
ওঠার পর দেখা গেল বউয়ের হাঁটু ফুলে বেলুন হয়ে গেছে। দড়াম করে শুতে গিয়ে হাঁটুতে আঘাত লেগেছে। হাঁটতে পারছে না। ধরে ধরে ঘরে নিয়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে দিয়ে বললাম, "এখন শুয়ে শুয়ে হাঁটুতে লাগাও।"
.
ঠিক এমন সময় জোরে দরজায় ধাক্কার আওয়াজ।
দরজা খুলে দেখলাম পাড়ার সব মাতব্বরেরা হাজির। এখন একসঙ্গে এতজন কেন? নিশ্চই সিরিয়াস কিছু। বগলাকাকু, মন্টুকাকু, ভুতুদা ভজহরিদা সবাই আছে।
বগলাকাকু মাস্কের মধ্যে থেকে ঘড়ঘড়ে গলায় বললেন, "বউমা কোথায়? কী হয়েছে বউমার?"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "কী হবে আবার? শুয়ে আছে।"
ভুতুদা বলল, "হাইলি সাসপিসাস বুঝলেন বগলাকাকু! এসবই হল লকডাউনের এফেক্ট। কালকেই বিবিসিতে দেখছিলাম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কত্ত বেড়ে গেছে!""
ভজহরিদা বলল, "রাখ তো তোর বিবিসি। ওতে মদের দোকান কবে খুলবে কিছু বলেছে? সারাক্ষণ বিবিসি দেখাচ্ছে শালা!"
মন্টুকাকু বললেন, "আজেবাজে কথায় সময় নষ্ট না করে কাজের কথায় আসা যাক। দেখো তোমার স্ত্রী 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে অনেকক্ষণ ধরে চিৎকার করেছে এটা পাড়ার সবাই শুনেছে। এখন তোমাকে আমরা সবাই ভাল বলেই জানি। কিন্তু মুনিনাঞ্চ মতিভ্রম বলেও তো একটা কথা আছে। তাই তোমার স্ত্রী বেঁচে আছে এবং সুস্থ আছে এইটুকু দেখেই আমরা চলে যাব।"
আমি আর একটু হলেই উল্টে পড়ে যাচ্ছিলাম! কোনরকমে বললাম, "এসব কী বলছেন! আর ও তো এখন কিছুতেই আসতে পারবে না। হাঁটার অবস্থা ওর নেই।"
বগলাকাকু হুঙ্কার দিয়ে বললেন, "যেরকম আর্তনাদ আমি নিজের কানে শুনেছি তাতে ঠিক এই ভয়টাই আমি পাচ্ছিলাম।"
সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়ে একটা পুলিশের জিপ যেতে যেতে দাঁড়িয়ে গেল।
.
এক দশাসই চেহারার পুলিশ অফিসার জিপ থেকে নেমে হেঁড়ে গলায় বললেন, "এখানে এত ভিড় কেন?"
আমি তাড়াতাড়ি বললাম, "কিছু নয় স্যার। আমার স্ত্রী অসুস্থ, তারই খোঁজখবর করছেন এঁরা।"
অসুস্থ শুনেই পুলিশ অফিসার লাফিয়ে উঠলেন, "জ্বর আছে? কাশি আছে? শ্বাসকষ্ট আছে? কোনও ফরেন কানেক্সান আছে? বা অন্য স্টেট থেকে এসেছেন? রিলেটিভের মধ্যে কেউ কোভিড পজিটিভ আছে?"
আমি বললাম, "না না ওসব কিছু নয়, হাঁটুতে আঘাত লেগেছে।"
শুনে পুলিশ অফিসার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, "আপনারা এখানে কেউ দাঁড়িয়ে থাকবেন না। সবাই যে যার ঘরে যান। একজন মহিলার হাঁটুতে লেগেছে, সবাই লাইন দিয়ে চলে এসেছেন দেখা করতে! যত্তসব..."
নাটক অসমাপ্ত রেখে কারুর যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ভুতুদা ফিসফিস করে বগলাকাকুকে বলল, "মেরে বউয়ের হাঁটুর মালাইচাকি ভেঙে দিয়েছে নাকি বলুন তো? একটা কিছু ঘটেছে সিওর!"
ঠিক এমন সময় গোটা পাঁচেক ম্যাগনাম সাইজের বোলতা কোথা থেকে এসে বোঁ করে উড়তে লাগল। নির্ঘাত আশেপাশে কোথাও বোলতা বাসা বেঁধেছে। আর কাউকে কিছু বলতে হল না। বগলাকাকু দৌড়াতে গিয়ে ভুতুদার সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুজনেই পড়ে গিয়ে আবার উঠে দৌড়াতে লাগলেন। মন্টুকাকু লিকলিকে শরীর নিয়ে পলকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ভজহরিদা ভয়ে পুলিশ অফিসারের পেছনে লুকাতে গিয়ে এক রদ্দা খেয়ে পড়তে পড়তে কোনওরকমে উঠে পিটটান দিল। পুলিশ অফিসারও জিপে উঠে চম্পট দিলেন। নিমেষে ময়দান ফাঁকা হয়ে গেল।
আমিও দৌড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:২৯
গেছো দাদা বলেছেন: হ্যাঁ দাদা । আমাদের এখানে লকডাউন চলছে। তুচ্ছ কারনেও পুলিশের মাতব্বরি ভালোই চলছে। মনে হচ্ছে যেন পুলিশ স্টেটে বাস করছি!! যদিও এটা রং মাখানো গল্প। হা হা হা ।
২| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:৪৯
সুপারডুপার বলেছেন: দাদা , আপনি দেখি প্রায়ই আপনার বৌ নিয়ে রম্য লেখেন। কিন্তু ঘটনার সময় আপনার বাচ্চা কাচ্চারা কোথায় থাকে ?
০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:৫৪
গেছো দাদা বলেছেন: ওরা আসলে গল্পের গরুর মতন । ঘটনার সময় কেবলি গাছে উঠে পড়ে। হা হা হা ।
৩| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:৫২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাঘ এলো বাঘ এলো বলে মস্করা করার ফল।
সত্যি যখন বাঘ আসবে তখন সাহায্য করার
কেউ থাকবেনা !!! বৌদিকে একটু সামলে
রেখ দাদা, !!
০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:৫৮
গেছো দাদা বলেছেন: হা হা হা । দুঃখের কথা আর কি বলবো ভায়া ! আপনার বৌদিই আমাকে সামলে রাখে শিশুর মতো।
৪| ০২ রা মে, ২০২০ ভোর ৪:১৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইবার বেঁচে গিয়েছেন
৫| ০২ রা মে, ২০২০ সকাল ১০:৪২
ইসিয়াক বলেছেন: আপনার গল্পগুলো বেশ মজার হয়। হা হা হা.....।
৬| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১২:৫৮
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আপনি একজন ভালো স্বামী।
৭| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ২:১৪
সোহানী বলেছেন: হাহাহাহা... গল্পের জন্য হাসি না হাসি হলো মোটা বইগুলো সংসারের কাজে লাগছে বলে ।
বোলতাকে ভয় পাওয়ারই কথা। এবার বৈাদীর সেবা করবেন লকডাউনে। সাথে রান্নাটাও...
৮| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ৩:১৩
শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: আপনার রম্য গল্প পড়ে পুলকিত হলাম। বইয়ের আরো নানাবিধ সাংসারিক কাজকর্মে লাগানোর উপায় জানতে পেরে খুব উপকৃত হলাম। একটা গান থেকে লঙ্কা কান্ড !
৯| ০৩ রা মে, ২০২০ দুপুর ১:২৭
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: দাদা, ফাটিয়ে দিয়েছেন জয়তু বোলতা।
হাঃ হাঃ হাঃ- হাসতে হাসতে জল বেরিয়ে এল দাদা চোখে।
চলছে চলুক,করোনা রংগ।
আর গেছো দাদা লিখুক করোনা রম্য ।আর আমরা পাই সেরহম মজা।
পুনশচ- লুংগি কিনেছেন দাদা ,না এখনো সায়া পরেই দিন যাচছে?
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:২২
রাজীব নুর বলেছেন: উফ---
এত তুচ্ছ ঘটনা কিন্তু কি অবস্থা। শেষমেশ পুলীশ পর্যন্ত এসে পড়েছে।
একটু আস্তে গান গাইলেই এত কাহিনি হতো না।