নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য : লকডাউন ও আমার মজুতদারী

০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:২০

..........লকডাউনে বাজার করা ঝাকমারির একশেষ। মাস্ক আঁটো, সবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখো। এমন দিন এলো যে বাইরে বেরোলেই প্রতিটি মানুষকে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এই বুঝি ফুস্ করে করোনা ভাইরাস স্প্রে করে দিল। তার ওপর আছে বাজার নিয়ে ঘরে ফিরে এসে ধোলাইপর্ব!
.
এমনিতে বাজার করা কোনও দিনই আমার পছন্দের ছিল না। তার একটা কারণ যদি ঠকে যাওয়া হয় আর একটা কারণ দরদস্তুরে পারংগম না হওয়া। পোকা বেগুন, বুড়ো পটল, তেতো শসা এসব তো জোটেই তার সঙ্গে দামেও ঠকায়। শুধু এই বাজারে ঠকে যাওয়ার কারণেই আমাকে কখনও বাবা কখনও মা কখনও বউয়ের কাছ থেকে বোকা ও তার যত রকম প্রতিশব্দ আছে সব শুনতে হয়েছে!
.
অনেক ঠকে, অনেক টাকা গুনাগার দিয়ে এখন আমি বাজার করার একটা বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করি। আমি ঘোড়েল টাইপের লোকজন খুঁজে তার পিছু নিই। সে যা কেনে তাই কিনি। কিন্তু তাতেও বিপদ আছে।
সেদিন যেমন মাছ বাজারে ঘুরতে ঘুরতে বেশ ধূর্ত টাইপের এক ভদ্রলোককে দেখলাম মাছ কিনতে। লোকটার মুখটা দেখলেই প্রত্যয় হয় এমন লোককে পৃথিবীর কেউ ঠকাতে পারবে না। তাই আমিও ওনার পিছু পিছু ওই একই মাছ পাঁচশো গ্রাম কিনে নিলাম। এবং যা ভেবেছি তাই! দামও অনেক কম পড়ল। সেয়ানাদের অনুসরণ করার ফল একেবারে হাতে গরম পেয়ে গেলাম।
গোল বাঁধল রান্না করার সময়। যেই কড়ায় দেওয়া হল মাছ, অমনি সারা বাড়ি মায় পাড়া পর্যন্ত পচা মাছ ভাজার দুর্গন্ধে ভরে গেল। বউ যা যা বলল সেগুলো আর এখানে লিখে সংস্কৃতিবান মানুষের বিরাগভাজন হতে চাই না।
পরের দিন সেই মাছওয়ালাকে গিয়ে চেপে ধরলাম। বললাম, "পচা মাছ দিয়ে লোক ঠকাচ্ছ? লজ্জা করে না?"
মাছওয়ালার মুখে লজ্জার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই, বলল, "আপনিই তো আলাদা করে রাখা খারাপ মাছগুলো থেকে দিতে বললেন। দেখে আমিও তো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কাল। আপনি সবসময় ফেরেশ মাল নেন!"
আমি গর্জে উঠলাম, "আমার আগে এক ভদ্রলোক যে এক কেজি নিলেন? তাঁকে দেখেই তো আমি নিলাম!"
মাছওয়ালা বলল, "উনি তো বেড়ালের জন্য নিয়েছিলেন। সেইজন্যই তো আমিও ভাবলাম আপনিও বেড়ালদের খাওয়ানোর জন্য নিচ্ছেন। আপনারা নিজেরা খাওয়ার জন্য নিচ্ছেন জানলে আমি দিতাম নাকি ওই মাছ? কত পুরনো খদ্দের আপনি!"
এই হল মুস্কিল! একই টেকনিক সব সময় কাজে আসে না।
.
সকালে মুখে বর্ম পরে পকেটে কেনাকাটির লিস্টি আর টাকা নিয়ে বাজার করতে বেরোলাম। প্রায় এক সপ্তাহ পরে বাজার যাচ্ছি। বেশি করে অন্তত দিন সাতেকের মতো সব কিনতে হবে।
বেরোতেই ভুতুদার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ভুতুদাও বাজার করতে যাচ্ছে।
বললাম, "আনাজ বাজার করবেন ভুতুদা?"
ভুতুদা বললেন, "আমি বুঝলে ঠিক ওভাবে বাজার করছি না। আমি হিসেব করে এক-দেড় বছরের জন্য স্টক করছি। বিবিসি নিউজ রেগুলারলি ফলো করে যা বুঝছি তাতে প্রচণ্ড ক্রাইসিস আসতে চলেছে সমস্ত কিছুর হোল ওয়ার্ল্ডে। ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ হবে। সমস্ত কল কারখানা বন্ধ। এরপর কিচ্ছু পাওয়া যাবে না।"
আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করতে লাগল, বললাম, "বলেন কী দাদা! আমি তো এক সপ্তাহের মতো কিনি।"
ভুতুদা ঘাড় নেড়ে বলল, "খুব বড় মিসটেক হচ্ছে। ভাল চাও তো আমার মতো সব জিনিস স্টক করা শুরু করো। আমার মতো এখন আর এতটা পারবে না বাট কিছুটাও যদি হয়!"
বলে পকেট থেকে একটা চার পাতার ফর্দ বের করে বললেন, "সবই প্রায় কেনা হয়ে গেছে, বুঝলে। তিন কুইন্টল চাল, দু কুইন্টল আটা, চল্লিশ কেজি সরষের তেল, তিরিশ কেজি মুগ ডাল, কুড়ি কেজি রিফাইন তেল, কুড়ি কেজি সার্ফ, চল্লিশটা সাবান, বারো বোতল নিমাইল, চব্বিশটা টুথপেস্ট, চল্লিশটা হেয়ার ডাই..."
আমার মাথা ঘুরতে লাগল। পড়ে যেতে যেতে কোন রকমে সামলে নিলাম।
বললাম, "তাহলে আমাদের কী হবে ভুতুদা?"
ভুতুদা বলল, "কী আর হবে! না খেয়ে থাকবে আর নইলে কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়ে কিনবে। আর ইনটেলিজেন্ট হলে আমার অ্যাডভাইস মতো কাজ করবে। আমার দুটো ঘর মালে পুরো ভর্তি। আমরা বারান্দায় শুচ্ছি। আর সামান্য কয়েকটা জিনিস কেনা বাকি আছে। আজ কিনব গোটা কুড়ি নারকেল, আমস্তত্ত্ব কেজি দুয়েক, আমশি এই সমস্ত জিনিস।"
বলে ফর্দের চতুর্থ পাতায় চোখ বুলিয়ে নিলেন ভুতুদা।
.
ভুতুদার কথা শুনে সব কেমন গোলমাল হয়ে গেল। ভুলভাল বাজার করলাম। ঝিঙে লেখা ছিল পাঁচশো গ্রাম, কিনে নিলাম পাঁচ কেজি। সম্মোহিতের মতো বাজার করে ফেরার মুখেই ভজহরিদার সঙ্গে দেখা।
আমার পেট ফুলে পুরো জয়ঢাক হয়ে গিয়েছিল। সব উগরে দিলাম ভজহরিদাকে। বলা উচিত হল কিনা জানি না কিন্তু ভুতুদা তো কাউকে বলতে বারণ করেননি বা বারণ করতে ভুলে গেছেন।
ভজহরিদা বলল, "যে রেটে ভুতুর ঘরে ট্রলি ভর্তি বস্তায় করে জিনিসপত্তর আসছিল কিছু একটা গড়বড় আছে আগেই বুঝেছিলাম। শালা কী মানুষ রে! ও একাই বাঁচবে আর আমরা সবাই না খেয়ে মরব! আচ্ছা দেখছি। শ দুয়েক টাকা থাকলে দে তো।"
আমি বিনা বাক্যব্যয়ে দুশো টাকা দিয়ে দিলাম।
.
সকালে ঘুম ভাঙতে খুব হইচই শুনতে পেলাম। তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে মাস্ক পরে বাইরে বেরিয়ে দেখি, ভুতুদার বাড়ির সামনে হুড়ুদ্দুম অবস্থা! বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে। দেখেই বোঝা যায় মানুষগুলো হতদরিদ্র।
খোঁজখবর করে যা জানলাম, স্থানীয় দৈনিকে আজ একটা বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে,
'শ্রী ভূতনাথ মন্ডল এই দুঃসময়ে দুস্থদের চাল আটা ও যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু বিতরণ করবেন আজ সকাল দশটা থেকে।'
হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে খবর তাই দীনদুঃখী মানুষজন এসে লাইন দিয়েছে।
খবরটা কাগজে বিজ্ঞাপনটা দেখেছেন ভুতুদা আর তৎক্ষণাৎ নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছেন।
.
পুলিশ এসে ভুতুদার স্ত্রীকে জিগ্যেস করতে তিনি থতমত খেয়ে কী বলেছেন কেউ জানে না। তবে পুলিশ ঘরের ভেতর ঢুকে দেখেছে বিপুল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য জিনিস মজুত করা হয়েছে দুস্থদের দান করার জন্য। গৃহকর্তার ইচ্ছানুসারে পুলিশই দায়িত্ব নিয়েছে স্যোশাল ডিসটেন্সিং মেনে বিলি করার।
এক পুলিশ অফিসার আবেগস্পন্দিত স্বরে বললেন, "বহু মানুষকে দান করতে দেখেছি। কিন্তু গরিব মানুষের পাকা চুলের কথা ভেবে হেয়ার ডাই দান করতে কাউকে দেখিনি। ইনি গ্রেট!"
.
ফিরতে গিয়ে দেখলাম বগলাকাকু আর ভজহরিদা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
বগলাকাকু উত্তেজিত হয়ে বললেন, "ভুতু ভেতরে ভেতরে যে এমন দয়ার সাগর তা কিন্তু জানতাম না। উল্টে ওকে কৃপণ বলেই এতদিন মনে করে এসেছি। মানুষ চেনা সহজ নয়! যাইহোক খুব বড় একটা কাজ করল ভুতু।"
আমি বললাম, "সবই ভজহরির কৃপা!"
বগলাকাকু অবাক হয়ে বলল, "ভজহরি! মানে?"
আমি বললাম, "না ইয়ে মানে হরির কৃপা।"
বগলাকাকু ভক্তিতে গদগদ হয়ে মাথায় হাত ঠেকালেন।
ভজহরিদা বলল,"নাহ্ যাই ভুতুটার জ্ঞান ফিরল নাকি দেখে আসি! পাড়ার গর্ব বলে কথা!"

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৩৮

বিষন্ন পথিক বলেছেন: রম্য চমৎকার হয়েছে :)

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৫০

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: পৃথিবীর সকল প্রাণীর মঙ্গল হোক, সবাইকে বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা ।

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৫২

গেছো দাদা বলেছেন: সর্বে ভবন্তু সুখীনহ, সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ । (উপনিষদ বানী)

৩| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৫

মা.হাসান বলেছেন: দুশো টাকার কাজ , কোটি টাকার আইডিয়া B-))
চমৎকার লিখেছেন।

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৫৫

গেছো দাদা বলেছেন: আমার বৌ এইটাই মানতে চায় না ! বড়োই দুঃখের জীবন আমার !!

৪| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: জয়তু ভজহরিদা।
যদিও রম্য গল্প।তবে, যদি এটি বাস্তবেও হত তবে এটি সবার পক্ষে ভাল হত।কেউ পেতেন শিক্ষা আর কেউ পেতে স্বস্তি সাথে
এই সংকট মুহুর্তে কিছু পণ্য ।
আর গেছোদাদা,ঝিংগে ৫ কেজি কি পোসত হয়েছিল না অন্য B-)) কাজে ও গেছোদাদী ব্যবহার করেছিল??

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০০

গেছো দাদা বলেছেন: গেছোদাদী নয় ওটা গেছোবৌদি অথবা গেছোভাবি হবে । ঝিঙে আনার পর আমাকে ২ ঘন্টা বাথরুমে পেট খারাপ বলে কাটাতে হয়েছিল !! হা হা হা ...

৫| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:০০

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনাকে অনুসারিত তালিকায় না রেখে পারা গেলো না বটে!

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০২

গেছো দাদা বলেছেন: আমি ধন্য, হে পাঠক ।

৬| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার । :D

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১২:২৩

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৭| ০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ওরে ভুতুরে ---------তোর মনে এই ছিলো !!!
নে বাপ এবার ওঠ, বেলাযে গড়িয়ে যায়
এবার একটু জল গ্রহণ কর!!

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৮

গেছো দাদা বলেছেন: আচ্ছা, ভুতুকে কি একটা প্রাইজ দেওয়া যায় না ? নিদেনপক্ষে "সমাজসেবক রত্ন" বা এই জাতীয় কিছু ??

৮| ০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:০৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সেইরাম :D

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৬

গেছো দাদা বলেছেন: কিরাম ?

৯| ০৬ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উলটা পাল্টা বাজার করে নিয়ে আসবেন বার বার। গিন্নি আর ভবিষ্যতে বাজারে পাঠাবে না।

১০| ০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৪২

সুপারডুপার বলেছেন: দাদা আপনি দেখি লকডাউনে প্রায়ই অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছেন !

১১| ০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১:৩২

এইচ তালুকদার বলেছেন: আমিও গতকাল বাজারে গিয়েছিলাম,প্রাপ্তনের বর্তমানের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল বেচারাও হেয়ার ডাই খুজছিলেন।উনাকে ভুতুদার ঠিকানা দিয়ে দেই কি বলেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.