নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লকডাউনের সকালবেলায় চা-বিস্কুট খেয়ে সবে সামু ব্লগ খুলতে যাচ্ছি, এমন সময় দরজায় জোর ধাক্কা।
দরজা খুলে দেখলাম ভজহরিদা আর ফ্যালাদা দাঁড়িয়ে আছে।
ফ্যালাদাকে দেখে কেমন লাগল। উশকোখুশকো চুল। চোখ বসে গেছে।
ভজহরিদা বলল, "একটু বাইরে আয়। তোকে একটা কাজ করতে হবে।"
আমি বললাম, "এখন আবার কী কাজ? সব কাজ তো বন্ধ!"
ভজহরিদা বলল, "ফ্যালা একটা গণ্ডগোল বাধিয়েছে।"
ফ্যালাদার অনেক দোষের মধ্যে একটা হল কথার মধ্যে যেখানে সেখানে ইংরেজি গুঁজে দেওয়া। ফ্যালাদার স্ত্রী খুব রগচটা আর তিরিক্ষি টাইপ। বৌদিই একটা স্কুলে চাকরি করে সংসার চালায়। ফ্যালাদা বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
.
ফ্যালাদা উত্তেজিত হয়ে আমার হাতদুটো ধরতে আসছিল। আমি ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। তখন ফ্যালাদার মনে পড়ল সোশ্যাল ডিসটেন্সিংয়ের কথা। দু পা পিছিয়ে গিয়ে বলল, "সরি ভাই। সব ফরগেট হয়ে গেছে। আমি ভেরি প্রবলেমে পড়েছি। কাল নাইটে বাড়ি ফিরিনি বলে আজ মর্নিংয়ে আর ওয়াইফ হাউসে এন্ট্রি করতে দেয়নি।"
ভজহরিদা বলল, "আসলে কাল অনেকদিন পর মদের দোকান খুলল তো। ফ্যালাকে এক বন্ধু ডেকেছিল ওর বাড়িতে। সন্ধ্যেবেলায় গিয়েছিল ফ্যালা। বন্ধুটা একাই থাকে। তারপর দুজনে এমন খেয়েছে পুরো আউট হয়ে গিয়েছিল। শেষরাতে সেন্স ফিরেছে। এদিকে ফ্যালার বউ মাল খাওয়ার ওপর হেব্বি খার। সকালে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। আমার শালা প্রচুর বদনাম আছে তাই আমি বললে কিছু হবে না। কিন্তু সবাই জানে তুই ভাল ছেলে। তুই ওকে এ যাত্রায় উদ্ধার করে দে।"
আমি বললাম, "আমি? আমি কী করে উদ্ধার করব! আর বউদি খুব বদরাগী আছে। দেখলেই বুক ঢিপ ঢিপ করে আমার। আমি পারব না ভজহরিদা, মাপ করো। আর ফ্যালাদার এটা ভারী অন্যায়, বউদিকে একা ফেলে বাইরে রাত কাটানো!"
ফ্যালাদা উতলা হয়ে আবার হাত ধরতে আসছিল। মনে পড়ে যেতেই জিব কেটে আবার পিছিয়ে গিয়ে বলল, "সরি।" তারপর বলল, "আর নেভার হবে না ব্রাদার। প্লিজ হেল্প করো এবার। হেল্প যদি না করো আমি রোডে ঘুরে ঘুরে পটল পিকআপ করব, মাইরি টেলিং।"
আমি ভজহরিদাকে বললাম, "আমি বউদিকে কী বলব? আর আমি বললেই বউদি ঘরে ঢুকতে দেবে ভাবছ কেন?"
ভজহরিদা বলল, "দেবে দেবে। বলে দিবি তোর শ্বশুর অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। তোর সঙ্গেই সারা রাত ছিল ফ্যালা।"
ফ্যালাদা হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। বউকে দরজাটা বন্ধ করতে বলে ফ্যালাদার সঙ্গে দুরু দুরু বক্ষে তার বাড়ি গেলাম। ভজহরিদা এখানেই থাকল।
.
ফ্যলাদার বাড়ি রাস্তার ওপর। বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেওয়ার অনেকক্ষণ পর বউদি এসে দরজা খুলল। আমি মাস্কটা একটু নামিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম যাতে চিনতে না অসুবিধা হয়।
বউদি হুংকার দিলেন, "মাস্ক নামানো কেন? মাস্ক তোলো। আর ও বুঝি তোমাকে ধরে এনেছে যাতে আমি ঘরে ঢুকতে দিই?"
আমি তাড়াতাড়ি মাস্ক টেনে বললাম, "না না বউদি সব আমারই দোষ। কাল শ্বশুরমশাইয়ের শরীর খারাপের খবর পেলাম ফোনে। শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলাম ফ্যালাদাকে পেয়ে গিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওখানেই সারা রাত..."
বউদি আমাকে থামিয়ে দিয়ে চোখ বড় বড় করে বললেন, "তোমার শ্বশুরমশাইয়ের করোনা হয়েছে?"
আমি বললাম, "না না ওই পাতি ডায়েরিয়া। পেটুক মানুষ, প্রচুর খেয়ে নেয় তাই মাঝে মাঝেই বাড়াবাড়ি হয়।"
বউদি তীব্র চাউনি দিয়ে আমাকে দেখতে দেখতে বললেন, "সত্যি বলছ? কিন্তু ওর গায়ে অমন মদের গন্ধ কেন?"
আমি ম্যানেজ দিলাম, "মদের? না না স্পিরিটের। বারবার স্যানিটাইজ করা হচ্ছিল তো, তাই।"
বউদি বললেন, "কিন্তু ও তো একথা বলেনি?"
ফ্যালাদা এতক্ষণে কথা বলল, "চান্সই পাইনি তো!"
বউদি বললেন, "এখন উনি কেমন আছেন?"
আমি বললাম, "একটু ভাল তবে সারারাত পটি করে খুব দুর্বল। বিছানাতেই শুয়ে আছেন। আজ কাঁচকলা সেদ্ধ খাবেন।"
বউদি বললেন, "এইরকম কাজে গেলে তো আর কিছু বলা যায় না। তবে একটা ফোন করে দেওয়া উচিত ছিল।"
ফ্যালাদার দিকে তাকিয়ে বললেন, "ঘরে যাও। সব ছেড়ে বাথরুমে ঢোকো। আমি দরজা বন্ধ করে যাচ্ছি।"
বাব্বা ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। যাক মিশন সাকসেসফুল! খাণ্ডার বউদি মেনে নিয়েছেন। যাই ভজহরিদাকে গিয়ে সুখবরটা দিই।
.
বউদি দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি "আসি" বলে রাস্তায় নামতে যাচ্ছি এমন সময়...
'যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়' প্রবাদবাক্যকে নির্ভুল প্রমাণ করার জন্য দেখি শ্বশুরমশাই যেতে যেতে আমাকে ফ্যালাদার ঘর থেকে বেরোতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
বললেন, "কী ব্যাপার? তুমি এখানে এখন?"
আমার বুকের মধ্যে ড্রাম বাজছে। বললাম, "আপনি ঘরে যান, আমি যাচ্ছি।"
বউদি বললেন, "উনি কে? তোমার শ্বশুরমশাই না? তোমাদের বাড়িতে তো প্রায়ই আসেন!"
আমি বললাম, "না না উনি মামাশ্বশুর। আমার শ্বশুরমশাই তো বিছানায় শুয়ে আছেন।"
তারপর শ্বশুরমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, "মামা আপনি যান, আমি যাচ্ছি।"
শ্বশুরমশাই রেগে টং হয়ে গেলেন, "কী মামা? আমি মামা?"
বলে ঝপ করে মাস্ক খুলে দিয়ে বললেন, "এইবার দেখে বলো, আমি মামা না তোমার স্ত্রীর বাবা! বাবা বলতে লজ্জা হচ্ছে তো বোলো না কিন্তু মামা বলবে না।"
বউদি সব বুঝতে পেরে গিয়ে রেগে ব্যোম হয়ে দৌড়ে ঘরে গিয়ে টানতে টানতে ফ্যালাদাকে বাইরে নিয়ে এলেন। ফ্যালাদা গামছা পরে আছে।
দাঁতে দাঁত ঘষে বউদি বললেন, "ঘরে ঢুকবে না, ব্যাস।"
.
শ্বশুরমশাই ততক্ষণে চলে গেছেন। ফ্যালাদা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড পরে বলল, "কী হবে এবার ভাই?"
আমি দেখলাম প্রচণ্ড ভয়ে ফ্যালাদা ইংরেজি বলতেই ভুলে গেছে।
ভজহরিদা কী হচ্ছে কিছু না বুঝে এগিয়ে এল। গামছা পরিহিত ফ্যালাদা বলল, "পোর্টে এসে শিপ ডুবে গেল ভজু।"
যাক ফ্যালাদা ইংরেজি ফিরে পেয়েছে। আমি ভজহরিদাকে সব বললাম।
সব শুনে ভজহরিদা বলল, "তোর শ্বশুরের দোষ নেই। হঠাৎ করে বাবা থেকে মামা হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু কিছু একটা করতে হবে, বুঝলি!"
তারপর ফ্যালাদার দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই শালা একটা মিনমিনে ভীতু। ওষুধ চাই। তোকে সাহসী বানাতে হবে। তোরা দাঁড়া আমি একটু আসছি।"
.
কিছুক্ষণ পরে ভজহরিদা ফিরল। ফ্যালাদাকে একটা রামের ছোট বোতল দিয়ে বলল, "এইটা স্যাট করে মেরে দে তো?"
ফ্যালাদা ভয় পেয়ে বলল, "না রে ভজু ডোন্ট টেল মি টু ড্রিংক। শালা যত হুজ্জুত ফর দিস।"
ভজহরিদা বলল, "না খেলে তোকে এই রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যা বলছি শোন। ঢক করে মেরে দে।"
আমি ভয় পেয়ে বললাম, "ভজহরিদা উল্টে কেস বিগড়ে যাবে না তো?"
ভজহরিদা বলল, "আর বিগড়ানোর কিছু নেই। এই ভাবে ও যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ ওকেই তুলে নিয়ে যাবে।"
'খাব না' খাব না' করতে করতে খেয়ে নিল ফ্যালাদা।
.
কিছুক্ষণ পর ফ্যালাদার হাবভাবে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হল
ফ্যালাদা নিজের দরজায় জোরে জোরে লাথি মারতে লাগল।
আমরা আড়ালে চলে গেলাম।
বউদি দরজা খুলে বলল, "কী হয়েছে? দরজায় অসভ্যের মতো ধাক্কা দিচ্ছ কেন?"
ফ্যালাদা হুহুংকার দিল, "হোয়াট? হোয়াট? আমি ডোরে কিক মারব না কিস করব মাই উইশ আন্ডারস্ট্যান্ড মিসেস করুণা নো নো মিসেস করোনা ঘোষ?"
বউদি রেগে গলার ভলিউম খানিকটা বাড়িয়ে বললেন, "এই সাতসকালে মদ খেয়েছ? অসভ্য, ছোটলোক!"
ফ্যালাদা ডবল জোরে বলল, "ইয়েস ইয়েস। খেয়েছি। হান্ড্রেড বার খাব। থাউজেন্ড বার খাব। আমি নট জেন্টেলম্যান... গামছা পরে আছি আর আফটার সামটাইম সেটাও থাকবে না...খুলে যাবে...আর আমার শালা আন্ডারে জাঙিয়াও নেই... ছোটলোক... স্মলম্যান নেকেড হয়ে রোডে রোডে ঘুরব।"
তারপর ফ্যালাদা গলা ছেড়ে গান ধরল, "চাই না মাদার কিং হতে..." (চাই না মা রাজা হতে... মান্না দের বিখ্যাত গান)
বউদি বলল, "আর মাতলামি করতে হবে না। ঘরে চলো।"
দুম্ করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। ফ্যালাদার সংগীতও সেই সঙ্গে মিলিয়ে গেল। আমরা সামনে গিয়ে দেখলাম বাইরে কেউ নেই।
ভজহরিদা বলল, "নেশার ঘোর কাটলে ফ্যালার কপালে বহুত দুঃখ নাচছে। শালাকে নীল ডাউন করে না রেখে দেয়!"
আমার খিদে পাচ্ছে খুব, বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম....
০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৭
গেছো দাদা বলেছেন: এইডা ত ভাবি নাই ! অহন মুই কি করুম !! আপনার কথাই মাইনতে হবে মনে হইচ্ছে ।
২| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দাদা আজ তোমার কপালে শনি্ ভর করছে।
ফ্যালাদাতে গামছা পড়ে লজ্জা নিবারণ করেছে
তোমার সেটুকুও জোটবেনা আজ।
শ্বশুর মশাইকে মামা!
বৌদি মুখে ঘষে দেবে ঝামা।
০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৭
গেছো দাদা বলেছেন: বৌ যদি আমায় কিছু বলে ,
নুরু দাদার বাড়ি যাব চলে ।
নুরুভাবির হাতে খাব আমি মুড়ি,
বৌ নিতে আসলে, বলব, "আমার মন গিয়েছে চুরি" ।
৩| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা---
মনে হলো যেন সঞ্জীব এর লেখা পড়লাম।
০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১:৩৬
গেছো দাদা বলেছেন: সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ? আমার প্রিয় লেখক ।
৪| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১:২১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমিও গিয়ে একই কথা বলেবো কিন্তু তারে
মন যে আমার আটকে গেছে ছয়টি বিণার তারে।
বৌদি আমার লক্ষী বড় দেখতে লাগে সুখ
দাদা তোমায় দেখলে কেন কালো করে মুখ !!?
০৮ ই মে, ২০২০ রাত ২:০৭
গেছো দাদা বলেছেন: নুরু দাদা, কবে, আসবে আমার বাড়ি ?
খাওয়াব তোমায় মনটি ভরে, যতটা আমি পারি।
কিন্তু তুমি মদ্যপানের কোরো নাকো আশা !
লোকে বলে, এটি নাকি নেশা সর্বনাশা !!
৫| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ২:৫৮
অনল চৌধুরী বলেছেন: মদে ভালো কিছু নাই।এর চেয়ে দুধ ডিম খাওয়া ভালো।
আমি প্রতিদিন শরীরচর্চা করি ,চারটা ডিম আর চারটা কলা খাই।
আপনারাও খান।
৬| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৩৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আগে একটা গল্প পড়ি ছিলাম । শাশুড়ী বউয়ের শাড়ী পরলে কি হয়। ইতিহাস । হা হা
৭| ০৮ ই মে, ২০২০ ভোর ৫:১৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: দাদা কি ভারত থেকে লিখছেন?রোজার মাসে মদনিয়ে বসা! রাম রাম কি সর্বনাশ! বোতল দেখে চেনা যায় না,রাম নাকি হুইস্কি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:২৯
মা.হাসান বলেছেন: বাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে কোন লাভ আছে? শশুরকে মামাশ্বশুর বানিয়ে ফেলেছেন, ভাবি কি আর ঘরে ঢুকতে দেবে? আপনি বরং ফ্যালাদার বন্ধুর বাড়ি চলে যান , রথ দেখা কলা বেচা সব হবে