নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : শাহরুখের ফ্যান কানু

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৪৯

সাতদিন পর জেল থেকে ছাড়া পেল কানু। এখন কী করবে সে? সাতদিন আগে দুপুরবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়েছিল কানু। মায়ের অত্যাচারে। মায়ের শুধু একটাই কথা, "কিছু কাজ কর, কিছু কাজ কর।"
.
কিন্তু কী কাজ করবে কানু? সে তো কিছুই জানে না। ছোট থেকে তো একজনকেই জানে সে। তার গুরু। শাহরুখ খান। সে মনে মনে শাহরুখ খানের সঙ্গেই থাকে সব সময়। খায় ঘুমায়। কেউ শাহরুখ নিয়ে আনসান কথা বললে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শাহরুখের ছবির ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখে। তারপরেও সেই সিনেমা বহুবার দেখে, তবে শুরুর একটু পর থেকে। সুজাতা হলের স্টাফেরা তাকে চেনে। সিনেমা শুরু হওয়ার একটু পরে ঢুকতে দেয়। ও পেছনে দাঁড়িয়ে গুরুর সিনেমা দেখতে দেখতে কখনও হাততালি দেয় সিটি বাজায়, আবার কখনও কাঁদে।
.
অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিল সে। কাজ যদি করতেই হয় শাহরুখের কাছেই করবে। ওর বাড়ি 'মন্নত'এ যাবে। গুরুর পা ধরে বলবে, "আমাকে তোমার চাকরবাকর যা হোক করে নাও।"
হ্যাঁ, মুম্বাই যাবে সে।
.
খোঁজ খবর নিল ট্রেনের। তারপর একদিন খড়্গপুরে গিয়ে গীতাজ্ঞলি এক্সপ্রেসে চড়ে পড়ল। পকেটে সাকুল্যে শ দেড়েক টাকা। এটাই হাতাতে পেরেছিল মায়ের ট্রাংক থেকে। আর মায়ের কাছেই বা কত থাকবে। করে তো লোকের বাড়িতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ।
.
পকেটে দেড়শো টাকা আর শাহরুখ খানের ছবি নিয়ে সোয়া তিনটের সময় ট্রেনে উঠে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট চেকারের হাতে ধরা পড়ে গেল। টাটানগর স্টেশনে জি আর পি'র হাতে তাকে তুলে দেওয়া হল। ফাইন দেওয়ার টাকা নেই তাই কোর্টে চালান হয়ে গেল। তারপর সাতদিনের জেল।
.
টাটানগর স্টেশনে একটা বেঞ্চে বসে ছিল কানু। মুম্বাই যাওয়া হবে না। বাড়িতেই ফিরতে হবে। পরে টাকার জোগাড় করে টিকিট কেটে যাবে।
.
ট্রেন এখনও অনেকটা দেরি আছে। পাশে একটা লোক এসে বসল। লোকটার একটা পা কাটা। হাতে ক্রাচ। পিঠে বড় একটা ব্যাগ আর এক হাতে রং-বেরঙের রুমাল। লোকটা বাঙালি। এখানে প্রচুর বাঙালি আছে।
কানুর কাছ থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব কথা জেনে নিল লোকটা।
.
তারপর বলল, "শালা গান্ডু। তোর মতন বয়স থেকে আমি ট্রেনে হকারি করি বুঝলি। বিন্দাস চলছিল। পাঁচ বছর আগে ট্রেনে একটা পা চলে গেল। তারপর শালা লড়াই। হাসপাতালের খরচ, সংসারের খরচ, সাহায্যের জন্য সব জায়গায় চিঠি লেখা হল। ওই হকাররাই সব করল। তোর ওই শাহরুখ, অমিতাভ, সালমন সবার কাছে, বুঝলি? সব শালা মুতে দিয়েছে চিঠিতে। রোজ হাজার হাজার চিঠি ওদের কাছে যায়, সাহায্য চেয়ে, সব ওজন দরে ওদের কাজের লোকেরা বিক্রি করে দেয়।"
কানু জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, "আমার গুরু এমন নয়।"
--"তুই কী জানিস রে শালা? শুধু রাঁচি থেকে আমাদের ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী দশ হাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিল। এক বছর ঘরে বসেছিলাম। কী করে বউ সংসার চালিয়েছে শুধু সেই জানে আর জানে ওপরওয়ালা। তারপর আবার নেমে পড়লাম লাইনে। কেউ শালা কিছু করবে না। নিজের হাত পা আছে। খেটে খা।"
একটা ট্রেন এসে দাঁড়াল। লোকটা সামনের কম্পার্টমেন্টে লাফিয়ে উঠে পড়ল।
.
মা কানুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই আকুল। একটাই কথা, "তোকে কোনও কাজ করতে হবে নে রে।"
কানু যেন ফিল্মস্টার। পাড়ার লোক তাকে ঘিরে বসে আছে। তারা চলে যেতে কানুর মা ছেলের প্রিয় মুরগির মাংস আনিয়ে রান্না বসাল।
কানু বলল, "মা আমি ট্রেনে হকারি করব।"
কানুর মা ভয়ে চিৎকার করে উঠল, "না না বাবা ট্রেনে-ফ্রেনে নয়। ও তুই পারবি নে।"
কানুর চোখের সামনে সেই সময় ভেসে উঠল একটা সীন, ক্রাচ নিয়ে একটা খোঁড়া লোক কী অবলীলায় এক কামরা থেকে আর এক কামরায় যাচ্ছে!
না এ তার গুরুর সিনেমা নয়। সত্যিকারের সীন।
দৃঢ় স্বরে কানু বলল, "আমি পারব মা।"

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ইচ্ছা আর একাগ্রতা থাকলে
সব কাজেই জয়ী হওয়া যায়।

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১:০২

গেছো দাদা বলেছেন: একদম সত্যি কথা ।

২| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: যাক কানু অবশেষে চরম সত্যটা বুঝতে পারলো।
এরকম লক্ষ লক্ষ কানু আছে সমাজে। এদের আল্লাহপাক হেদায়েত দিক।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'পূর্ব পশ্চিম' উপন্যাসে একটা চরিত্র আছে 'কানু'।

২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪

গেছো দাদা বলেছেন: //এরকম লক্ষ লক্ষ কানু আছে সমাজে।// ... ভারতে মনে হয় কোটি কোটি হবে !!

৩| ২৮ শে মে, ২০২০ ভোর ৪:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকতে হয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.