নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি প্রথম থেকে ব্রাজিলের সমর্থক ছিলাম না। পকাই-বউদি ছিল ব্রাজিলের সমর্থক।
.
সে অনেক কাল আগের কথা।
মাসির বাড়ি গেছি। আমরা ভাইয়েরা গল্প করছি দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর। সেই আড্ডায় যোগ দিয়েছে পকাইদার নব বিবাহিত বউ।
পকাইদা থাকত মাসির বাড়ির পাশেই। ঘ্যামা চাকরি করত। মাসির বাড়িতেই সারাক্ষণ আড্ডা মারত। পকাইদার অফিস থাকায় আড্ডায় ছিল না। ছিল পকাইদার বউ।
.
সেই সময় ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল। পকাইদার অপূর্ব সুন্দরী বউ আমাদের জিগ্যেস করল, "তোমরা কে কোন দেশের সাপোর্টার?"
.
আমি সেভাবে কোনো দেশের সাপোর্টার ছিলাম না। খেলা দেখতাম, আর কেউ জিগ্যেস করলে বলতাম, যে ভাল খেলবে তার সাপোর্টার আমি। নিজের দেশ খেললে আলাদা কথা ছিল। অন্য দেশকে সাপোর্ট করব কেন?
.
বউদির প্রশ্নের উত্তরে মাসতুতো ভাই-টাইদের কেউ বলল, আর্জেন্টিনার, কেউ বলল, জার্মানির। এমনকি একজন ইতালির সমর্থকও বেরোল।
বউদি সুন্দর মুখ কালো করে বলল, "যাহ! ব্রাজিলের ফ্যান নেই?"
রূপসী বউদির সেই বিষাদগ্রস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। হাত তুলে বললাম, "এই তো আমি আছি, ব্রাজিলের ফ্যান। আপনি আমাকে শুধু ফ্যান কেন ফ্যান-ফ্যানার-ফ্যানেস্টও বলতে পারেন।"
বউদির মুখ খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠল। আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করল।
আর সেই থেকেই আমি ব্রাজিলের ফ্যান হয়ে গেলাম।
ব্রাজিলের সাপোর্টার হবার সুফল তৎক্ষণাৎ পেয়েছিলাম। বউদি আমাকে পরের দিন দুপুরবেলায় তার বাড়িতে ডেকেছিল। প্রবল উত্তেজনায় সে রাতে আমার ঘুম হয়নি। ভরদুপুরে ডাক! কী হয়! কী হয়!
তেমন কিছুই হয়নি অবশ্য। বউদি আমায় রোনাল্ডিনহোর ছবি দেখিয়ে বলেছিল, "এই দেখো আমার প্রেমিক! আমার জান!"
আমি ফিসফিস করে বললাম, "পকাইদাকে বিয়ে করলে কেন তবে? তুমি যা ব্যাপক দেখতে রোনাল্ডিনহো জানতে পারলে তোমায় ঠিক বিয়ে করে নিত।"
বউদি গভীর গলায় বলল, "বিয়ে না করলেই বা কী! ও আমার বুকের মধ্যে থাকবে আজীবন।"
পকাইদা বাড়িতে ছিল, বলল, "ওকে ডেকে শুধু তোমার প্রেমিকের ছবি দেখিয়ে ভাগিয়ে দিও না। কাল যে মিষ্টি এনেছি তার থেকে দুটো দিও।"
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, "না না তার কোনো দরকার নেই। আমি আমার প্রিয় দেশ ব্রাজিলের ফুটবল নিয়ে একটু আলোচনা করেই চলে যাব।"
এর পর আমার মাসির বাড়ি যাওয়া বেড়ে গেল। আর পকাই-বউদির সঙ্গে ব্রাজিলের ফুটবল নিয়ে গভীর আলোচনাও চলতে থাকল। আমার এই ঘন ঘন আলোচনার জন্যই কিনা কে জানে, পকাইদা বউদিকে নিয়ে বিদেশে চলে গেল। না ব্রাজিল নয়, জার্মানি।
আমি দুঃখে-শোকে দুদিন এক রকম না খেয়ে থাকলাম।
.
কিন্তু আসল দুঃখের দিন তো শুরু হল তার পরে। চেনা-জানা মহলে আমার ব্রাজিলভক্তির 'বার্তা রটি গেল ক্রমে।' আমি অবাক হয়ে দেখলাম আমার পরিচিত জনরা সবাই যে দেশেরই সাপোর্টার হোক না কেন, তারা তীব্রভাবে ব্রাজিল বিরোধী। ব্রাজিল হারলে তাদের পৈশাচিক আনন্দ হয়।
আমি পকাই-বউদি থেকে ব্রাজিলের ফ্যানত্বে দীক্ষা নেওয়ার পর থেকেই ব্রাজিল হারতে শুরু করল। কোনো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে আবার কোনোটায় প্রি-কোয়ার্টারে।
আমার সামনে সে কী উল্লাস! আর্জেন্টিনা হয়তো আগেই হেরে গেছে তবু ব্রাজিল হেরেছে বলে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা আমার কাছে এসে লাফাচ্ছে। বাজি ফাটাচ্ছে।
.
সব কি শুধু খারাপই হবে? একদিন ভালও তো কিছু হবে!
এক সকালে মাসতুতো ভাইয়ের ফোন এল, "তোর ব্রাজিল-বউদি এসেছে, চলে আয়।"
এ ডাক অগ্রাহ্য করা যায়!
.
পকাইদা আর বউদি দুজনকেই চেনা যাচ্ছে না। ধবধবে ফর্সা হয়ে গেছে দুজনেই। বউদি সুন্দর তো ছিলই কিন্তু এখন সৌন্দর্যটা পুরো খুনখারাপি টাইপের হয়ে গেছে। বয়স বেড়েছে কিন্তু এখনও চোখের চাউনি দিয়ে মানুষ খুন করে দিতে পারে।
একা পেয়ে বউদিকে বললাম, "এখনও বুকের মধ্যে সে-ই আছে তো?"
বউদি বলল, "থাকবে না মানে! ওকে ছাড়া আমি বাঁচব নাকি! ও আমার জিগর-কা-টুকরা!"
এক মুহূর্তে সব অপমান ভুলে গেলাম। আমার হৃদয় সাম্বা নাচ শুরু করে দিল।
বউদি বলল, "আমি ওর জন্য সব করতে পারি জানো! আমি দেখা করেছি ওর সঙ্গে। সেলফিও নিয়েছি। দাঁড়াও দাঁড়াও তোমায় দেখাই।"
ছবি দেখে আমার ব্রেন-হার্ট-কিডনি-লিভার কয়েক সেকেন্ডের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিল!
রোনাল্ডিনহো কই? এ যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো!
বউদি বলে চলেছে, "আমি চাই এবার বিশ্বকাপটা পর্তুগাল জিতুক..."
পকাই-বউদি তুমিও? তুমিও!
২| ২২ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: মন্দ নয়।
৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রথমদিন তাহলে কার ছবি দেখিয়েছিল পকাই বৌদি?
৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৩
শেরজা তপন বলেছেন: মজা পেয়েছি- আগের ধারায় ফিরে আসছেন দেখে ভাল লাগছে।
ব্লগার অশুভ মনে হয় ব্রাজিলের ডাই-হার্ট সাপোর্টার!
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৪৯
অশুভ বলেছেন: অসাধারণ রম্য। শেষের টুইস্টা জম্পেস ছিল। শুধুমাত্র এই লেখায় মন্তব্য করার জন্য প্রায় ২ মাস পর লগইন করলাম।