নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

জিএম হারুন -অর -রশিদ

আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম

জিএম হারুন -অর -রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতৃঋণ -১২

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:০৮


খুব ছোট্ট বেলায়,
ঠিক মনে নেই তখন বয়স কত ছিলো আমার।
একদিন ব্লেড দিয়ে হাত-পায়ের নখ কেটে দিতে গিয়ে মা একটু অমনোযোগী হতেই
আমার আঙুলে হালকা ব্লেডের আঁচড় লেগে গিয়েছিল।
আর তাতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়তেই ব্যথা আর ভয়ে
আমি তীব্র স্বরে কাঁদতে শুরু করেছিলাম;
আমার দেখাদেখি মাও কাঁদতে লাগলো।
বাবা কাটা আঙুলে স্যাভলন লাগাতে লাগাতে বললো,
-“আমার ছেলেটা এত্তো বোকা কেন,
তুই না পুরুষ মানুষ,
ব্যাথা পেলেও পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই।"
বাবার সেই কথা শুনে
তারপর আমি হঠাৎ করেই যেন সেদিন সে‌‌ই শৈশব বেলাতেই পুরুষ মানুষ হয়ে গেলাম!
তারপর আমি অনেক বছর আর কাঁদিনি,
পেট ব্যাথা, ক্ষুধা, অপমান, অবহেলা,
কোনো কিছুতেই কাঁদিনি একবারের জন্যেও।
বাবা বলেছেন -পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই
তাই আমিও কাঁদতাম না।
কয়েক বছর পর যেদিন বড় বোনের বিয়ের রাতে বাবাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না,
খুঁজতে খুঁজতে ছাদের সিঁড়ির ঘরে গিয়ে দেখলাম আমার বাবা নিরবে কাঁদছেন,
আর বিড়বিড় করে বড় বোনের নাম ধরে ডাকছেন!
চাঁদের মায়ার আলোতে বাবার চোখের জল চিকচিক করছিলো তখন,
আমি শুধু নিরবে চলে এসেছিলাম।
সেদিন বুঝলাম পুরুষ মানুষও কাঁদে,
রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে।
আবার মা যখন প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিল,
বাবাকে দেখতাম হাসপাতালের মার বিছানায় পাশে বসে নিরবে কাঁদতে।
মা যেদিন মারা গেলো,
বাবাকে এই প্রথম দেখলাম চিৎকার করে কাঁদতে।
সেদিনও আমি কাঁদিনি,
শুধু চুপ করে বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে
আকাশের মেঘে মেঘে শুধু মাকে খুঁজছিলাম।
মা মারা যাবার পর প্রায়ই রাতে বাবার কান্নার শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যেতো,
একদিন কি মনে করে বাবাকে বলে ফেললাম,
-বাবা, পুরুষ মানুষের এভাবে কাঁদতে নেই।
বাবা খুবই আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেছিল অনেকক্ষণ।
এরপর থেকে বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন
শব্দ করে আর কোনোদিনই কাঁদেনি।
অনেকদিন পর আমিও একদিন চিৎকার করে কাঁদলাম,
যেদিন আমার বাবা পনেরো দিন হাসপাতালের বিছানায় থেকে
অচেতন অবস্থা থেকে আর ফিরলোনা,
সেদিনই আমার সারা জীবনের জমানো কান্না
একসাথে বুক থেকে বের হয়ে আশেপাশের সবাইকেও ভিজিয়ে দিচ্ছিলো।
হঠাৎ আমার এগারো বয়সের ছেলে আমাকে সেই সময় কান্নার জল থেকে টেনে তুলে বললো,
-“বাবা, পুরুষ মানুষের এভাবে কাঁদতে নেই”।
আমিই হয়তো কোনো একদিন আমার ছেলেকে এই একই কথা বলেছিলাম আমার বাবার মতো করেই,
- পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই।
———————————
রশিদ হারুন
র শি দ হা রু ন
০১/১০/২০২০

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:২৯

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: পুরুষ মানুষের কাঁদতে নাই। কিন্তু পুরুষ ও কাঁদে। কাঁদতেই থাকে। কখনো গোপনে । কখনো কখনো নিজেও জানে না কাঁদছে।

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৪

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বাবা হলো সন্তানের মাথায় ছাতা । সব বাবাকে শ্রদ্ধা

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৪

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: অতি মনোরম।

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৪

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:২৯

নাসরিন ইসলাম বলেছেন: দারুন লাগলো। কিন্তু পুরুষ মানুষ কাঁদলে কি সমস্যা এটা বুঝলাম না।

সামু পরিবারের নতুন সদস্যের পক্ষ থেকে শুভকামনা জানবেন। আমার ব্লগে স্বাগত জানাচ্ছি।

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৪

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৬

আমি সাজিদ বলেছেন: সব বাবাদের প্রতি ভালোবাসা।

০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:০৯

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.