![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার যেমন ইচ্ছে লেখার খাতা
কালো ফ্রেমের চশমা চোখে দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে নাজিয়া। এতোক্ষন পড়ায় মনযোগ ছিল কিন্তু এখন আর নাই। আগামীকাল কোচিং এ পদার্থ পরীক্ষা নাজিয়ার,কিন্তু তবুও মন বসছে না। আসলে জোর করে তো পড়ায় মন বসানো যায় না,বসানো গেলেও শাহরিয়ারদের বাসার খাচায় বন্দি পাখিটার মত ডানা ঝাপটানো আরম্ভ করে। ডানা ঝাপটানো গেলে তাও ভালো ছিল, একসময় না একসময় সুযোগ বুঝে উড়ে চলে যেতে পারত বন্দি দশা থেকে,যেমনটা শাহরিয়ারের কালো বুলবুলিটা করেছিল। যদিও নাজিয়া বন্দি দশা থেকে পুরোপুরি মুক্তি চায় না,আপাতত বাসার ছাদে যাওয়ার অনুমতি পেলেই চলবে। কারন বাইরে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। সারা বছর এই জিনিশটার জন্য কম অপেক্ষা করে না নাজিয়া আর সাফা। কিন্তু মায়ের ভয়ে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোয়ে দেখার চেয়ে বেশি কিছু আর করা হয়ে উঠে না। তবে নানুর বাসায় গেলে প্রায় ই বৃষ্টিতে ভেজা হয়, তবে সেটা অবশ্যই বাথরুমের শাওয়ার দিয়ে।
কলমটা কামড়াতে কামড়াতে ভাবছিল নাজিয়া। এর মাঝেই সাফা এসে নাজিয়ার পাশের চেয়ারটায় বসে নাজিয়াকে কিছু একটা ইঙ্গিত করল। এই দুই বোন প্রায়ই ইঙ্গিতে কথা বলে,আসলে এক সাথে থাকতে থাকতে এরকম হয়ে গেছে। সাফা চোখ নাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে যাওয়ার কথা জানাল,নাজিয়া আম্মুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে চুপসে গেলো। সাফা কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়ে মুখটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিল। এই মূহুর্তে নাজিয়াকে একটা ভীতুর ডিম মনে হচ্ছে সাফার কাছে। সাফার ইচ্ছে করছে, নাজিয়ার চোখ থেকে চশমাটা টান দিয়ে খুলে ফেলে জিজ্ঞেশ করবে যে, “আপ্পি তুমি এতো ভীতু কেনো,তুমি কি জানো যে তোমাকে সবাই শুধু শুধু ভীতুর ডিম বলে না?” কিন্তু এরকম সুন্দর সময়ে এরকম বিশ্রী একটা কাজ করতে সাফার মন সায় দিল না।
-আপ্পি...
-হুম,বল...
-চল আম্মুকে বলে দেখি,মন ভালো থাকলে অনুমতি দিতেও পারে
-নাহ!দিবে না মনে হয়
-তুমি কীভাবে বুঝলা দিবে না? সব কথার মধ্যে আগে ভাগে ভেটো দাও কেনো?
-আচ্ছা যা! তুই বলবি তাহলে
-আরেহ! বড় কে?
-ও মা! প্লান করছে কে?
-ওকে! কথা বলার সময় কিন্তু সাপোর্ট দিও!
-ওকে!
-চলো।
সাফা দরজাটা টান দিয়ে দেখল আম্মু কী করছে। সাফার আম্মু ফোনে কথা বলছে। সিদ্ধান্ত হলো যে,কথা শেষ হলেই জোরেশোরে আবেদন করবে।একদম ব্ল্যাকমেইল টাইপের আবেদন। ইমোশন দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা। নাজিয়া সাফা কে কয়েকটা ইমোশনাল ডায়ালগ শিখিয়ে দিল। সাফা দু-এক বার প্র্যাকটিস করে সরাসরি আম্মুর কাছে চলে গেলো। সাফা সামনে,নাজিয়া পেছনে। দুজনই আশাবাদী।
নাজিয়া আর সাফা দ্রুত দৌড়াচ্ছে। দু-তালা থেকে তিন-তালা,তারপর চারতলা। এক লাফে দু-তিনটি করে সিড়ি পার হচ্ছে, আর কথা বলছে।
-দেখছ আপ্পি... সাহস করে বলে ফেলার সুফলটা... আজকে কিন্তু আমার কারনেই...
-তোর কারনে কীভাবে? আমি যদি না শিখিয়ে দিতাম তাহলে...?
-আরে বাহ! এরকম দুই একটা কথা আমিও বলতে পারতাম।
-তো তখন বলার চেষ্টা করিস নি কেনো, তখন তো খুব আপ্পি আপ্পি করতেছিলি।
-আচ্ছা বাদ দাও, এখন বলো ছাদের কোনদিক দিয়ে ভিজবে?
কথা বলতে বলতে একসময় পাচ-তালায় পৌঁছে গেলো নাজিয়া আর সাফা। তারপর এক নিশ্বাসে বাকি পথটা উঠে গেলো।
এরকম একটা মূহুর্তের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না নাজিয়া আর সাফা। সাফার ১০ বছর বয়সী কচি চোখগুলো দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো কারন ছাদের গেইট বন্ধ। নাজিয়া আর সাফা দৌড়ে আম্মুর কাছে আসল। এসেই দুঃসংবাদটা জানাল। নাজিয়ার আম্মু কেয়ারটেকার বদি মিয়া কে ডাকতে গেলো,ছাদের গেইটের চাবির জন্য। কিন্তু দূর্ভাগ্য, বদি মিয়া নাজিয়ার আব্বুর জন্য অফিসে ছাতা নিয়ে গিয়েছিল।
রাতে নাজিয়া সাফাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।আজকের ঘটনাটা দুজনকেই দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে,সাঙ্ঘাতিকভাবে। সাফা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারে নি। রাতের খাবার খায় নি,আম্মুর সাথে কথা বলে নি।
-আপ্পি...
-হুম...
-আজকে আমরা ভিজতে পারি নি কেনো জানো?
-হুম, গেইট বন্ধ ছিল তাই।
-নাহ!আম্মুর কারনে!
-মানে?
-শোনো,বৃষ্টির সময় আম্মু কেয়ারটেকার দাদুর সাথেই কথা বলছিল। আর তাছাড়া আমি স্পষ্ট শুনেছিলাম যে, আম্মু কোনো কিছুতে তালা লাগাতে বলছিল......!!!!
.......................................................................
গল্পের নাজিয়া আর সাফা চরিত্র দুটি আমার দুইজন কাজিনকে ভেবেই সাজিয়েছি। ভালো লাগলেও মন্তব্য করবেন আর ক্রিটিসাইজ করার ইচ্ছা থাকলেও মন্তব্য করবেন।
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৪২
জিএম শুভ বলেছেন: অনুসরন এবং প্লাসের জন্য ধন্যবাদ। আর সমস্যাটা ঠিক করে দিয়েছি
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:১৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্প সুন্দর।
কিন্তু শেষের প্যারায় লেখকের কথাগুলো গল্পের মাঝে এসে পড়েছে, ওইটুকু ভাল লাগল না। ওই অংশ কমেন্টে দিলে ভাল হত।
প্রথম প্লাস। আপনাকে অনুসারিত করলাম।