নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় বিবেক

প্রিয় বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

“গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ আ-মা-র মন ভুলায় রে।“

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

আমরা যারা ৯০ এর দিকে জন্মগ্রহণ করেছি, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রূপ টি দেখেছি। বিশেষ করে যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা গ্রামের সবচেয়ে নগ্ন দৃশ্য দেখেছি আবার শহরের সবচেয়ে অত্যাধুনিক দৃশ্য ও দেখেছি।

-এখন তোমরা ঘরে বসেই টেলিভিশনে শত শত চ্যানেল ঘুরাও। মুহূর্তেই দেশ বিদেশের খবরটুকু পাচ্ছ। তেমন কোন চিন্তা নেই। আর তখনকার সময় শুধুই সাদাকালো টিভি ছিল। আশেপাশের কয়েক বাড়ির মধ্যে একটা। ডিশ নামক কিছু ছিল না। তাতে শুধু বিটিভি আর ইটিভি ছিল। তাও চালের উপরে থাকা এন্টেনা ঘুরাতে হত। প্রতি শুক্রবার দুপুরে বাংলা ছবি, আলিফ লায়লা কিংবা বড় কোন অনুষ্ঠান থাকলে সেই সাদাকালো টিভি বাড়ির উঠানে বসানো হত। আর ঐ বাড়ির পুরুষ-নারী সকলে উঠানে বসে টিভি দেখত।

-তোমরা এখন কোথাও গেলে হরদমছে সেলফি তুলে আপ কর, বিয়েতে ডিএসএলআর কিংবা ভিডিও করাও আরও কত কি। আর তখনকার সময়ে কি হত জানো? বড় বড় বিয়ের অনুষ্ঠান হলে তাতে বড়জোর “কোডাক” এর ফিল্ম সিস্টেম ক্যামেরা আনা হত। আর তাকে ঘিরে কত উত্তেজনা। ক্যামেরা থেকে ফিল্ম খোলার সময় অনেক বাড়তি সতর্কতা ছিল। কারণ রোদের তাপ লাগলেই ফিল্ম জ্বলে যেত। কারো কাছে ক্যামেরা থাকা মানে বিশাল ব্যাপার।

-এখন প্রতিটি ঘরে ঘরেই ফ্রিজ আছে। কারো কারো ঘরে একের অধিক আছে। আগে আমাদের তিন-চার বাড়ির মধ্যে কেবল আমাদের ফ্রিজ ছিল। আমার জানামতে আমাদের এলাকাতে আমাদের সর্বপ্রথম ফ্রিজ কেনা হয়। আমার মনে আছে আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি তখন আমার বন্ধুরা লেইজারে আমার বাড়িতে আসতো ঠাণ্ডা পানি খাবার বায়না ধরে। নিজেকে তখন খুব বড় মনে হত। তখন একটা গ্রুপিং ও চলত, কারো সাথে ঝগড়া লাগলে তাকে আর আমাদের ফ্রিজের পানি খাওয়াতাম না।

-আজ প্রত্যেকের হাতে হাতে সেলফোন। কিন্তু ২০০০ এর আগে সেলফোন কি জিনিস আমরা তা দেখি নই বললেই চলে। বাড়িতে ফোন থাকতো না বললেই চলে। বাজারে ফ্যাক্স এর দোকানে থাকতো মোবাইল। তাও স্মার্টফোন না। নোকিয়ার বড় সাইজের ফোন গুলো। তখন এতটা স্ট্রং নেটওয়ার্ক ছিল না। কথা বলার জন্য টিনের চালে উঠতে হত। এমনকি অন্য কোথাও থেকে ফোন করলে ফিরতি কোলের জন্য পে করতে হত।

-আজ কারো কাছে রেডিওর কদর নেই। তখনকার সময় এরকম এফএম ছিল না। ছিল শুধু বাংলাদেশ বেতার। বাড়িতে দুপুরে রকমারি গানের অনুষ্ঠান সবাই একসাথে শুনত। মা, চাচী, জেঠী, ভাবি সহ বাড়ির সকলেই উঠানে রোদ পোহাতাম আর রেডিও শুনতাম। সেই শো শুনে আমার দাদু তাঁর পোকলা দাতে হেঁসে দিত।

জানো, তখনকার সময় সকালে ঘুম থেকে উঠে কাছারি ঘরে হুজুরের কাছে পড়তে যেতাম। তারপর বন্ধুরা মিলে বিলের মধ্যে ফুটে থাকা শাপলা কুড়িয়েছি। ডুব দিয়ে শালুক তুলেছি, আগুনে পোড়া দিয়ে তা খেয়েছি। বৃষ্টিতে পিছলা পিছলা খেলতাম। বিকালে হাডুডু হাডুডু খেলতাম। পারতাম না তাও খেলতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে এখান থেকে সেখানে ছুটেছি। এর জন্য কত পিটুনি খেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।

এর ক্ষেত থেকে লাউ, ওর ক্ষেত থেকে মুলা চুরি করে বানানি খেতাম। পুকুরে ডুবিয়ে ডুবিয়ে মাছ ধরে জোলাবাতি খেলতাম বাড়ির সব পিচ্চিরা মিলে। আমের সময় পুকুরের পানিতে টুব করে সাথে সাথে পানিতে কয়েকজন একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়তাম কার আগে কে আম পাবো। তালের সময় ও এমন হত। পুকুরে ডুব দিয়ে মাটি তুলতাম, সাঁতারের প্রতিযোগিতা দিতাম। আম গাছের উপরে উঠে পানিতে লাফিয়ে পড়তাম, আবার উঠতাম আবার লাফ দিতাম। অন্য রকম সে অনুভূতি।

দিনের বেলা ভয় কি জিনিস আমরা জানতাম না। হ্যাঁ, এটা ঠিক তখন সন্ধ্যার পর কেউ বোম মেরেও আমাদের ঘোর থেকে বের করতে পারতো না। কারন ঝি ঝি পোকার ডাক শুনে ভয়ে গা গরম হ্যে যেত। আমাদের কে ভূতের গল্প শুনিয়ে আমাদের দাদি-নানিরা ঘুম পাড়াতেন। জীবনের সেরা কিছু সময় ছিল সেগুলো।

আমরা গলা উঁচু করে বলতে পারবো ৯০ এর দিকে জন্ম নেওয়া মানুষগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রূপ টি দেখেছি। আমরা গ্রাম্য জীবন দেখেছি আবার শহুরে জীবন দেখেছি। তোমরা আজ যারা স্কুল,গেমস, পিসি নিয়ে পড়ে থাকো, তোমরা তোমাদের পরবর্তী জেনারেশনের কাছে কি নিয়ে গল্প করবে, বল তো? অন্তত গল্প করার জন্য হলেও তোমাদের গ্রামে যাওয়া দরকার। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য লুকিয়ে আছে গ্রামে।

আমরা সব কিছু নিয়ে গল্প করতে পারবো। আমরা গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তাদের গেয়ে শুনাতে পারবো,

“গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।“

---গোলাম রাব্বানী

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:৫৮

মহা সমন্বয় বলেছেন: “গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।“

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:১৮

প্রিয় বিবেক বলেছেন: গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।“

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.