নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় বিবেক

প্রিয় বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার না বলা কিছু গল্প !

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪

বাবার চাকরির কারণে জন্মের পর কয়েক বছর আমদের কে চট্টগ্রামে থাকতে হয়েছে। আমরা যখন পারমানেন্টলি গ্রামে আসলাম তখন আমি সবে মাত্র ক্লাস টু তে উঠেছি। তখন আমার বয়স ছয়। ক্লাস টু তে আমার রোল নম্বর ছিল ২। যখন ক্লাস থ্রি তে উঠলাম তখন আমার রোল নম্বর হল ২। মায়ের বকুনির কারণে তখন পড়াশোনায় ভালোই মনোযোগী ছিলাম। দুষ্টামি ও কম করতাম না।

গ্রামের মানুষ যখন সিগারেট টানতো, তখন আমি অবাক হয়ে তাদের কে দেখতাম। আমার কাছে তখন মনে হত এটা একটা আর্ট। তা নাহলে একটা লাঠির মধ্যে আগুণ ধরিয়ে টানলে কি সুন্দর করে ধোঁয়া বের হয়। একদিন মনে হল আমিও চেষ্টা করে দেখি আমার মুখ থেকে ধোঁয়া বের হয় কি না!

প্রথম প্রথম যারা ধূমপান করতো, তাদের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতাম। সিগারেট টানা শেষে হাতের অবশিষ্ট সিগারেট ফেলে দিয়ে তারা প্রস্থান করতো, তখন আমি সেই সিগারেট মাটি থেকে উঠিয়ে টানতাম। তখন সব ধরণের সিগারেট ই টানতাম। মাটি তে অর্ধ জ্বলন্ত যেটা পেতাম সেটাই টানা শুরু করতাম।

আমার সিগারেট খাওয়ার সঙ্গী ছিল আমার বাড়ির একজন মানুষ। তার কল্পিত নাম অমি। একদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এখন থেকে মানুষের খাওয়া সিগারেট আর মুখে দিবো না।

সেজন্য আমরা ভিন্ন উপায় অবলম্বন করলাম। তখন দোকানে সুপারি কিনত। এক গোণ্ডা (৪ টা) ভালো সুপারি ১ টাকায় বিক্রি করা যেত। আর তখন আকিজ বিড়ির প্যাকেট ছিল ১ টাকা। পলিথিনে মোড়ানো প্যাকেটে ৮ টা বিড়ি থাকতো। তখন গ্রামে সবচেয়ে দামি সিগারেট ছিল নেভি সিগারেট। যার দাম ছিল ১ টাকা। আর মধ্যম মানের সিগারেট ছিল ডায়মন্ড সিগারেট। ১ টাকায় ২ টা পাওয়া যেত।

মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের বাড়ির এক জেঠার গাছ থেকে সুপারি চুরি করে তা দিয়ে সিগারেট এবং চকলেট কিনতাম। সুপারি গাছ ছিল আমাদের বাড়ির পশ্চিম ঘরে জেঠার। উনি বুঝতেন তাঁর গাছের সুপারি চুরি হয়ে যাচ্ছে, আর চোর কে কত যে গালাগাল দিতেন। আমরা শুনেও না শুনার ভান করে থাকতাম। চুরি করা সুপারি বিক্রি করে আমরা সিগারেট খেতে থাকলাম। দোকান থেকে সিগারেট আনতাম অন্য এক কাকার কথা বলে। এতে ধরা খাবার কোন চান্স ই ছিল না।

দুই দিন সুপারি চুরি করছি দেখে ঐ জেঠা গাছ থেকে কাঁচা পাকা সকল সুপারি পেড়ে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। আমরা পড়লাম মহা ফাঁপরে। আম্মু প্রতিদিন স্কুলের টিফিনের জন্য ২ টাকা করে দিত। তা তো টিফিনেই শেষ হয়ে যেত। শেষ অবধি আমরা কোন কূল কিনারা না পেয়ে আবার আগের পদ্ধতি অবলম্বন করতে লাগলাম। মানুষের ফেলে যাওয়া সিগারেট টানতে শুরু করলাম।

একদিন ঘাঁটে বসে সিগারেট টানছিলেন বাড়ির এক কাকা। তিনি আবার নেভি সিগারেট ছাড়া খান না। আমাদের সাথে তাঁর ভালোই ঘনিষ্ঠতা ছিল। খুব সখ হল তাঁর নেভি সিগারেট খাবার। কিন্তু কি যে করি বুঝতেছি না।

আমি আর অমি দূরে সরে গিয়ে প্ল্যান করলাম। কিছুক্ষণ পর আমি ঐ কাকাকে বললাম, ‘বাড়িত আম্মু আমনেরে ডাকে।’ তিনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন। আর এক টান দিয়ে হাতের অর্ধ জ্বলন্ত সিগারেট ফেলে বাড়িতে গেলেন। আমি আর অমি তো মহাখুশি। মাটি থেকে সিগারেট উঠিয়ে টানতে শুরু করলাম। আহ কি শান্তি! আমরা বরাবরই সিগারেট টানার পর কাঁচা সুপারি অথবা কাঁচা পেয়ারা মুখে দিয়ে চিবাতে থাকতাম। এতে সিগারেট এর গন্ধ ধরা যায় না।

কিন্তু কপালে শনি থাকলে যা হয় আর কি। পেছনে ঘুরে দেখি ঐ কাকা দাঁড়িয়ে আছে। আর কোন কথা না বলে আমাকে এবং অমিকে কান ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
বাকিটা শুধুই ইতিহাস। শুধুই ইতিহাস !

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

নীল-দর্পণ বলেছেন: "বাকিটা শুধুই ইতিহাস। শুধুই ইতিহাস !" হাহহাা জাতি ইতিহাস জানতে খুবই আগ্রহী ;)

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

ধ্রুবক আলো বলেছেন: হা হা হা !!! বাকি ইতিহাস শুধুই ইতিহাস, যদি জানা যেত

৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

প্রামানিক বলেছেন: হা হা হা বাকি ইতিহাস জানতে চাই?

৪| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৪

হাবিব বলেছেন: কাহিনি পড়ি আর হাসি।নিজের ও এমন গল্প আছে বিড়ি টানার মনে পরে গেল সেই অতিত
ইতিহাস টা লিখে ফেলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.