নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় বিবেক

প্রিয় বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছেলেটি কি আর ফিরবে?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:০৯

একদিন পাবলিক লাইব্রেরির সামনের বইয়ের দোকানগুলোতে আমি বই দেখছিলাম। বই দেখা শেষ করে আমি লাইব্রেরির সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম।

হঠাৎ, চোখ আটকে গেলো একটি মেয়ের দিকে। লাইব্রেরির পেছনের দিকে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি তাদের চেয়ে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি। ছেলেটি মেয়েটিকে শাসিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুক্ষণ পর পর টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছছে। কেন যেন খুব ইচ্ছে হল, তাদের কথোপকথন শোনার। আমি জানি, এটা অবৈধ। কিন্তু শুনতে খুব ইচ্ছে হল। আমি ফোনে কথা বলার ভান করে তাদের কিছুটা নিকটে গিয়ে হেডফোন কানে দিয়ে বসলাম।
এবার আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি তাদের কথা। সেই মুহূর্তে ছেলেটি আরও ঝাঁঝালো কণ্ঠে মেয়েটিকে তুই তোকারি করে অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ শুরু করে দিল মেয়েটিকে। ছেলেটি এমন ভাবে কথা বলছে যেন পাশের কাক-পক্ষীও টের না পায়। মেয়েটির বাবা-মা নিয়ে গালিগালাজ করছে তাও সে কোন প্রতিউত্তর করছে না। মেয়েটি কেঁদেই যাচ্ছে। সে মুহূর্তে মেয়েটির উপর আমার খুব রাগ হল। সে কিছু বলছে না কেন? সে কি কথা বলতে পারে না?

সবশেষে ছেলেটি বলল, ‘তুই আমাকে আর কখনও ফোন দিবি না, খবরদার।’ তখন মেয়েটি ছেলেটির দু’হাত চেপে ধরল। ছেলেটি সে হাত ঝেড়ে ফেলে দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু পারলো না। মেয়েটি তার সমস্ত শক্তি খরচ করে ছেলেটির দু’হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে চুপিচুপি বলছিল, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না প্লিজ! তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। তুমি চলে গেলে আমি বাঁচবো না।’ কথা শেষ করেই মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠল। এবার ছেলেটি জোর খাটিয়ে মেয়েটির হাত ঝেড়ে ফেলে দিল। সে মেয়েটিকে একা রেখেই হাঁটতে শুরু করল। আমি লক্ষ করলাম, ছেলেটি একবারের জন্যও আর পেছন ফিরে তাকালো না। কিন্তু মেয়েটি? সে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি চোখ মুছতে মুছতে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে চলে গেল।

আমি তাদের রিলেশন নিয়ে কোন জাজমেন্ট করবো না। আমি জানি না, কে সঠিক, কে ভুল? আমি জানি না, ছেলেটির চলে যাওয়ার পেছনে আসলেই কোন যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল কি না? আমি জানি না। আমি সত্যিই জানি না। তবে ছেলেটি এভাবে চলে না গেলেও পারতো। পাবলিকলি এভাবে মেয়েকে অপমান না করলেও পারতো।

আচ্ছা, সেই দিনটি কেমন ছিল? আমি তাদের প্রথম সাক্ষাতের কথা বলছি। যেদিন ছেলেটি নীল পাঞ্জাবী পরে হাতে গোলাপ নিয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করছিল। মেয়েটি হয়তো নীল শাড়ি, চোখে কাজল, কপালে টিপ, হাতে কাঁচের চুড়ি পরে ছেলেটির সাথে দেখা করতে এসেছিল। সেদিন দু’জনের চোখ ভর্তি ছিল অজস্র স্বপ্নের ফুলঝরি। এক ঘরে বসবাসের আকাঙ্ক্ষা। মিলনের জন্য সীমাহীন প্রতীক্ষা? কেমন ছিল সেই দিনগুলো? নিঃসন্দেহে রঙ্গিন স্বপ্নের মত ছিল? তখন তারা হয়তো সারারাত মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে যেত। একসাথে সূর্যের উদিত হওয়া দেখত। সূর্যের প্রভার মত করেই তাদের স্বপ্নগুলো ঝালিয়ে নিয়েছিল? তবে কয়েক বছর পর এসে সেগুলো বিপরীতমুখী হয় কেন? নিচ্ছয়ই কোন না কোন কারণ তো থাকে! কিন্তু এর পেছনে কারণগুলো কি?

একটা সময় তো মেয়েটি কান্না করলে ছেলেটি সান্ত্বনার সুরে বলতো, ‘কান্না করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো পাশে আছি। এত চিন্তা কিসের তোমার? আর একটুও কাঁদবে না। একটুও না।’ মেয়েটি হয়তো কান্না বন্ধ করে দিত। তারা আবার নিজেদের মাঝে হারিয়ে যেত! কিন্তু এবার মেয়েটিকে কি কেউ বলবে, ‘খবরদার আর একটুও কাঁদবে না, খবরদার। আমি তো পাশে আছি।’ কেউ হয়তো বলবে। কিন্তু সেই ছেলেটি কি বলবে? সে হয়তো আর কখনোই সেই আগে ‘সে’ হয়ে ফিরে আসবে না। কখনোই না!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:১০

সেলিম৮৩ বলেছেন: এমন ছেলে ফিরে না অাসাই ভালো।
মেয়েটি কিছুদিন কেঁদেকেঁটে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে মঙ্গল।
যে ছেলের বিহেভিয়ার এতটা ঘোটালে; তাকে নিয়ে ভবিষৎ চিন্তা করলে মেয়েটিকে হয়তো সারাজীবন কাঁদতে হতে পারে।
অাপটার অল, প্রেম-ভালোবাসার বিয়ে সিংহভাগ ভবিষৎ ভালো হয়না। মানে সুখকর থাকেনা।

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৪১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
মেয়ের কান্নার ধরণের বিবরণ শুনে তো মনে হয় তাদের ভালবাসাটা মিউচুয়ালই ছিল। একতরফা না। নিশ্চয়ই কোন কিছু হয়েছিল যার জন্য ছেলেটা হিতাহিত জ্ঞানই হারিয়ে ফেলেছিল।

ছেলে হয়তো ফিরতে চাইবে। কিন্তু, তার এমন রাগত আচরণের কারণে সে ই ফিরতে পারবে না। একটা সময় তো বুঝতে পারবে যে, পাবলিকলি ইনসাল্টটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি রকমেরই হয়ে গিয়েছিল। নিজের কাজের লজ্জায় নিজেই কষ্ট পাবে।

যেহেতু, পাবলিক লাইব্রেরীতে আনাগোনা আছে ওদের বললেন - তাতে তো দুইজনের মাঝে হালকা কিছু জ্ঞান থাকবে বলেই আশা করছি।

তবে, পাবলিক লাইব্রেরীতে এমন কিছু!!! এটাকেই তো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.