নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় বিবেক

প্রিয় বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আম্মু, কিভাবে পারো তুমি এতকিছু, কিভাবে পারো মা ???

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০১

আম্মু, কিভাবে পারো তুমি এতকিছু, কিভাবে পারো মা ???


এই শীতের সকালে ভোর ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে যাও তুমি। আব্বুকে ঘুম থেকে ডেকে দাও তুমি। তারপর ফজর নামাজ আদায় করে এতো ঠাণ্ডার মধ্যে চুলার কাছে যাও সকলের জন্য নাস্তা তৈরি করতে। হাঁড় কাঁপুনি ঠাণ্ডাতেও তোমার ঠাণ্ডা লাগে না। কারণ তোমার ঠাণ্ডা লাগলে তোমার সন্তানদের না খেয়ে থাকতে হবে। রান্না ঘরে যাবার আগে তোমার ছেলে নিভৃত আর মেয়ে নিনিতা কে ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে যাও। তারা দুজনই চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তাদের স্কুল ৯ টার দিকে।


৮ টার দিকে তোমার নাস্তা বানানো সম্পন্ন হয়। তারপর শোবার ঘরে এসে দেখ এখনও ঘুমিয়ে আছে নিভৃত-নিনিতা। তোমার খানিকটা রাগ হয় আব্বুর প্রতি। কেন আব্বু তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নি! আব্বুর সাথে রাগারাগি করতে করতে তুমি নিভৃত-নিনিতাকে ঘুম থেকে তোল। তারপর কোলে করে তাদের ব্রাশ করিয়ে স্কুল এর জন্য তৈরি করে দাও এবং নিজের হাতে তাদের নাস্তা খাইয়ে দাও। আব্বু ও একই টেবিলে বসে নাস্তা খায়, কিন্তু তুমি তখনও কিছুই মুখে দাও না। নিনিতা তোমাকে না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেও তুমি মিথ্যে বল যে তুমি আগেই খেয়েছ। কিন্তু তুমি আসলে খাও নি। কারণ হাতে সময় নেই বলে আজ রুটি কম বানিয়েছ। অবশেষে নিভৃত-নিনিতাকে ব্যাগে টিফিন আর আব্বুকে অফিসের জন্য খাবার দেওয়া হলে আব্বু নিভৃত-নিনিতাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসে।


তুমি তখনও মুখে কিছু দাও নি। আগের রাতের পুরাতন খাবার আছে ফ্রিজে। সেগুলো গরম করে নাস্তা বলে চালিয়ে দাও। এতে তোমার কষ্ট হয় না। ভালোই লাগে সন্তান দের সুখের কথা ভেবে। দুপুরের সময় তুমি আব্বু কে ফোন কর তিনি লাঞ্ছ করেছেন কিনা ! তারপর তুমি যাবতীয় কাজ সম্পন্ন কর। তখন দরজায় কড়া নাড়ে নিভৃত-নিনিতা। তারা স্কুলের পড়া পেরেছে কিনা সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস কর। তারপর নিজ হাতে তাদের গোসল করিয়ে তাদের দপুরের খাবার খাইয়ে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও।


ওরা ঘুমিয়ে গেলে তুমি কোনোরকম দুপুরে ভাত খেয়ে নাও। তোমার দুচোখে ঘুম লেগে আছে কিন্তু তুমি ঘুমাও নি। আগেরদিন রাতে নিভৃত পিঠা আর নিনিতা তোমার হাতে রান্না করা পায়েশ খেতে চেয়েছিল। নিজে না ঘুমিয়ে তাদের মুখে হাঁসি দেখার জন্য ঘুমকাতুরে চোখে তাদের পছন্দের জিনিস তৈরি কর। তারপর তোমার মানিক দের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুল। তাদের পছন্দের জিনিস খেতে দাও। তারা মুগ্ধ নয়নে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে, আর তুমি বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছো তোমার মানিকদের দিকে।


আম্মু, কিভাবে পারো তুমি এতকিছু, কিভাবে পারো মা ???


শেষ বিকেলে ওদের নিয়ে তুমি ছাদে যাও, একটু খেলাধুলা কর তাদের সাথে। মাগরিব এর আজান দিলে বাসায় চলে আস, তুমি মাগরিব এর নামাজ পড়ে তাদেরকে বাসার স্যারের পড়ার জন্য তৈরি করে দাও। রাত ৯ টার দিকে স্যার চলে যায়। তারপর তারা টিভি দেখতে থাকে। আর তখনই বাসায় আসে আব্বু। কিছুটা গম্ভির আজ আব্বু। কিন্তু সন্তান দের সেটা বুঝতে দেয় নি। নিভৃত-নিনিতা টিভি দেখছে, পাশে তাদের বাবা বসে আছে। এদিকে আম্মু এশার নামাজ শেষ করে রাতের খাবার তৈরি করতে গেলেন। আম্মু সব কিছু রেডি করে টিভির রুমে এসে দেখে নিভৃত-নিনিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। আম্মুর মাথায় যেন বাজ পড়লো। আর মানিক দের ঘুম থেকে ডাকতে যেয়ে কান্না চলে আসল আম্মুর আর অভিযোগ সব আব্বুর দিকে, ''তুমি একটু ওদের জাগিয়ে রাখতে পারলে না? এখন ওরা যদি রাতে না খায় তাহলে তোমার ও রাতে খাওয়া নেই।"


বাবা অধিকারের গল্পের কথা বুঝতে পেরে একটু চুপ থাকে। অবশেষে সবাই রাতের খাবার খেল। সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আম্মু খেতে বসল। খাওয়া শেষে মানিকদের ঘুম পাড়িয়ে দেয় আম্মু। আব্বু ও ঘুমিয়ে পড়ে। শুধু ঘুমায় না আম্মু। সমস্ত বাসা দেখে নেয় ঠিক আছে কিনা, কোন জানালা খোলা আছে কিনা, কিংবা অন্য রুম এর ফ্যান এর সুইচ অফ আছে কিনা ! অবশেষে সব কাজ সেরে আম্মু যখন বিছানায় শোবার জন্য যায় তখন ঘড়ির দিকে আম্মুর নজর যায়। ঘড়িতে সময় তখন রাত ১২.২০, আম্মু আর কিছু চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ পরের দিন সকালে আবারো ঘুম থেকে উঠতে হবে, মানিকদের জাগাতে হবে, ওদের স্কুলের জন্য তৈরি করতে হবে, তাদের পছন্দের খাবার তৈরি করতে হবে। এভাবেই এগিয়ে যায় আম্মুর দিন কাল। সবাই ক্লান্ত হয়। কিন্তু আম্মুর ক্লান্তি আসে না। আম্মু দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যায়।


আম্মু, কিভাবে পারো তুমি এতকিছু, কিভাবে পারো মা ???


২৫ বছর পরের কথা,
নিনিতার বিয়ে হয়েছে এক ব্যবসায়ীর সাথে। তারা দুজনেই দেশের বাহিরে চলে গিয়েছে, তাদের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ও আছে। মাঝে মাঝে দেশে এসে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে যায়। আর নিভৃত বড় কোম্পানিতে একটি চাকরি করে। বিয়ে করেছে সে কোম্পানির এমডির মেয়েকে। বৃত্ত এখন আর বাবা-মায়ের সাথে থাকে না। তার নাকি একটা প্রেস্টিজ আছে। সে এতো বড় মানের একজন চাকুরীজীবী, তো সে কেনই বা বাবার পুরনো ফ্ল্যাটে থাকবে? অফিস থেকে যে ফ্ল্যাট পেয়েছে সেখানেও বাবা-মা কে উঠানো নিষেধ আছে, হয়তো এটা শ্বশুরবাড়ির ইঙ্গিত। কারণ এই আধুনিক ফ্ল্যাটের সাথে ব্যাকডেটেড বাবা-মার যায় না।


ওদিকে বাবা-মা দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তাদের দেখার কেউই নেই। নিনিতা তো দেশে নেই। তাই টারা মুখিয়ে আছে কবে নিভৃতকে দেখতে পাবে? কবে তাদের মুগ্ধ নয়ন তাদের মানিকের দেখা পাবে? দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় কিন্তু নিভৃত বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে আসে না। এভাবেই সময় পার হয়ে যায় সময়ের আপন নিয়মে। শেষ অবধি বাবা-মার সঙ্গে নিভৃত কিংবা নিনিতা কারো দেখা হয়েছিল কিনা তা জানা যায় নি।


কি নিষ্ঠুর নিয়তি। কি না করেছেন বাবা-মা নিভৃত কিংবা নিনিতার জন্য? বুকের মাঝে দুঃখ চেপে সব কিছু করেছেন দুই সন্তানের জন্য। আসলে, প্রতিটি বাবা-মায়ের জীবনে এমন কিছু অসাধারণ ঘটনা আছে যা পৃথিবীকে নিস্তেজ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমাদের বাবা-মা পারেন আর না পারেন তাঁদের কলিজা টুকু ও আমাদের জন্য বিলিয়ে দেন।আমাদের সন্তানদের মুখের হাঁসি দেখবেন বলে সবকিছু বিসর্জন করে দেন। আর আমরা সন্তানরা বড্ড নিষ্ঠুর, বড্ড নিষ্ঠুর। আমরা বুঝি না, বুঝতে চাই না, আবার বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকি। একটা সময় ঠিক ই বুঝবো যখন বোঝার মত আর সময় থাকবে না।


এ পৃথিবীর সকল আব্বু-আম্মু তাদের নিভৃত-নিনিতাদের কাছে ভালো থাকুক। তাদের কলিজা ছেঁড়া ধনের কাছে শান্তিতে থাকুক। জগত টা হয়ে উঠুক ভালোবাসার বেলাভুমি। অনুভূতিগুলো হয়ে উঠুক পূর্ণ। জনম হয়ে উঠুক সার্থক। দিনশেষে প্রতিটি বাবা-মা তাদের সন্তানদের কাছে শ্রেষ্ঠ বাবা-মার সম্মান এবং ভালোবাসা পাক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৪

মানবী বলেছেন: সত্যিই কি এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমাদের সমাজে দুর্লভ নয়!

আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এসব শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, অথিকাংশ সন্তান বাবা মাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে, তাঁদের সেবা শুশ্রুষা করে!

মায়ের নিঃস্বার্থ কর্মমুখর দিনের বর্ণনা ভালো লেগেছে পড়ে।
ধন্যবাদ প্রিয় বিবেক।

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬

জাহিদ বেস্ট বলেছেন: আপনার লেখাটা ভালো লাগলো। পৃথিবীর প্রত্যেক মা বাবা তার সন্তানকে ভালোবাসে। প্রত্যেক সন্তান তার মা বাবা কে ভালোবাসে। আমিও তাদের একজন। আমার মা অসুস্থ্য। আমি বুঝি মায়ের দুধের যেমন বিকল্প নেই তেমন মায়ের ভালোবাসার ও কোন বিকল্প পৃথিবীতে নেই। এ পৃথিবীতে যার মা আছে সেই সবচেয়ে ধনী। প্লিজ কেউ মা-বাবা কে অবহেলা করবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.