নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় বিবেক

প্রিয় বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা টেরোরিস্ট!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:০০



মানুষটির হাতে বন্দুক। আমাকে দেখামাত্রই সে দৌড়াতে শুরু করল..................!

সময় তখন আনুমানিক রাত ৯ টা। আমি ব্যাচেলর মানুষ। চা খাওয়ার জন্য বাহিরে বের হলাম। গলি পার হতে গিয়ে মানুষটির দিকে আমার দৃষ্টি পড়ল। তার হাতে বন্দুক। সে খুব সতর্ক ভঙ্গিতে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল, যেন কেউ তাকে দেখতে না পায়। আমি তাকে দেখামাত্রই চিনে ফেললাম। সে এক মস্ত বড় খুনি। কয়েকদিন আগেই এলাকার নেতা আসিফ ভাইকে খুন করেছে। আমাকে দেখামাত্রই সে দৌড়াতে শুরু করল। ঘটনা কি তা বুঝতে পারলাম না। আমি তার পিছুপিছু দৌড়াতে লাগলাম। সে খুব দ্রুত গলি পরিবর্তন করছে। আমিও তাকে অনুসরণ করতে থাকলাম। আমার মাথায় একটাই চিন্তা, ‘যে করেই হোক খুনিকে ধরতে হবে। কিছুতেই তাকে ছাড়া যাবে না। কিছুতেই না!’

এতক্ষণ যে রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম তা ছিল আমার চিরচেনা। কিন্তু সমস্যা বাঁধল অন্য জায়গায়। এখন ছেলেটি যে গলিতে উঠল তা আমি চিনি না। প্রথমবারের মত এই রাস্তায় পা রাখলাম। আমার ভয় লাগতে শুরু হল। প্রচণ্ড ভয়। তাও আমি হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়াতে থাকলাম।

দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা নির্জনে চলে এলাম। এখানে মানুষজনের লেশমাত্র নেই। যে মানুষটিকে ধরতে এসেছিলাম, তাকেও দেখা যাচ্ছে না। চারপাশে অন্ধকার। আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলজ্বল করছে। এবার আমি ঘাবড়ে গেলাম। ঘটনা কি? কোন জিন-ভূত বা কোন পেতাত্তা আমাকে এখানে নিয়ে আসে নাই তো! যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মানুষটি কোথায় গেল? আমার শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। এখন আমি কি করবো? আমার খুব কান্না পাচ্ছে। খুউব!

তখনই মানুষটিকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখলাম। সে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কোমর থেকে বন্দুক বের করে হাতে নিল। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে আমার মাথায় বন্দুক ঠেকাল। আমার মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। এবার আমি সত্যি সত্যি হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করলাম। আমাকে কাঁদতে দেখে বন্দুক নামিয়ে ফেলল। দানবীয় কণ্ঠে সে কথা বলতে শুরু করল,

-কিরে কান্দস ক্যান? আমি কি তোরে মারছি নাকি?
-চুপিচুপি কান্না করতে করতে বললাম, ‘না’।
-না মারলে কান্দস ক্যান?
-ভয়ে!
-তোর তো ভালোই সাহস, আমার পেছন পেছন দৌড়াইয়া আইছস। বুকে পাঠা আছে তোর। আমার পিছে ক্যান দৌড়াইতেছিলি?
-এমনি, ভুল হয়ে গেছে। আমারে মাফ কইরা দেন ভাই। আর জীবনেও হইব না। জীবনেও হইব না। কথা দিলাম।

-হাহাহাহাহা...............। চিপায় পরছস, তাই এখন সাধু সাজস না? আমি জানি তুই ক্যান আমার পিছে পিছে আইছিলি?
-ক্যান ভাই?
-কারণ আমি খুনি। আমি তোর এলাকার আসিফরে খুন করছি। এইডা সবার গায়ে লাগছে। কিন্তু ঐ মাদার.........রে ক্যান খুন করছি তা কেউ জানতে চায় না। সব শালা স্বার্থপর।
-ক্যান খুন করছেন ভাই?

-‘ঐ শালা ছিল একটা হিরোইঞ্ছি, মাগি.........করতো। ঐডা নিয়া আমার কোন মাথাব্যথা ছিল না। মাইয়াগরে বইন ডাকতো, তারপর তার দলের পোলাপাইন মিল্লা --------- দিত। আবার ঐ মাইয়ার নামে স্কেন্ডাল বাইর করতো। শেষ পর্যন্ত মাইয়া মান সম্মানের ভয়ে আত্মহত্যা করতো।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে মানুষটি কেঁপে কেঁপে উঠল।
-তাই বলে আপনি তারে খুন করবেন? দেশে আইন আছে না? পুলিশের কাছে বিচার দিতেন?
-এই বালের কথা কবি তো গুল্লি কইরা তোরেও উড়াইয়া দিমু কইলাম। এই দেশের আইন? কিচ্ছু হয় নাই এই বা............ আইন দিয়া, আর হইব ও না। আইন ধনী মানুষের লাইগা, আমাগো মত গরীব মানুষের লাইগা আইন না।
-আমি চুপচাপ তার কথা শুনছিলাম।

-কয়দিন আগে যে কাশফিয়া নামে ইডেন কলেজের এক মাইয়া সুইসাইড করছে, তা জানস?
-জী ভাই। পেপারে দেখছিলাম।
-সে কেন সুউইসাইড করছে তা জানস?
-না ভাই।

-‘তোগ এলাকার নেতা আসিফ কাশফিয়ারে প্রথমে বোন ডাকছিল। কাশফিয়া সহজ সরল ভাইবা তারে ভাই বানাইছিল। আসিফ একদিন ঘুরার নাম করে তাকে এক জায়গায় নিয়া গেল। তারপর সবাই মিল্লা তারে রেপ করছে। তা আবার ভিডিও ও কইরা রাখছে। কাশফিয়ারে সে ব্ল্যাকমেইল করতো ঐ স্কেন্ডালের জন্য। শেষ পর্যন্ত কাশফিয়া সহ্য করতে না পাইরা আত্মহত্যা করছে।’
আমি লক্ষ করলাম কথা শেষ করেই লোকটি ক্ষোভে ফুঁসছে। সেই মুহূর্তে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
-কাশফিয়া নামের মাইয়াডা আমার কি হয় জানস?
-না ভাই।

তখন আমাকে অবাক করে দিয়ে লোকটি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, ‘কাশফিয়া আমার বইন হয়, আমার কইলজার টুকরা বইন!’ এই বলেই সে হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো। তার চোখের কোল বেয়ে বড্ড অদ্ভুতভাবে অশ্রুরা ঝরে পড়ছে। তখন আমি আবিষ্কার করলাম, আমার চোখের কোণে পানি জমে যাচ্ছে। তাহলে আমিও কি কাঁদছি? কিন্তু কেন কাঁদছি? সেই উত্তর আমার জানা নেই!

গল্পঃ দ্যা টেরোরিস্ট

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৪

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: গল্প হলেও সত্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.