![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-তুমি কবে আসবা?
-এইতো পরীক্ষা শেষ হলেই চলে আসবো।
-পরীক্ষা শেষ কবে?
-আর মাত্র ক'টা দিন বাকি।
-আমি জানি তুমি আসবানা। কতদিন থেকে বলতেছো আসবা আসবা। আজো আসো নাই।
-এইবার আসবো। পরীক্ষা শেষ হলেই চলে আসবো।
-আর কয়দিন বাকি?
-মাত্র এক সপ্তাহ। একটু সবুর করো।
-ক'দিন আগেই না বললা এক সপ্তাহ?
-পরীক্ষা আবার পিছাইছে।
-পরীক্ষা দিয়াই সোজা চলে আসবা। না হলে তোমার সাথে আর কথা বলব না।
-আচ্ছা।
-আসার সময় আমার জন্য লিচু আনবা।
-আচ্ছা। (কেমনে বুঝাই এইটা লিচুর সিজন না)
-আর আঙ্গুর আনবা।
-আচ্ছা। আর কিছু?
-চিপস আর বিস্কুট আনবা।
-আচ্ছা।
-আমার সাইকেল যেটা কিনে দিছিলা ওইটা নষ্ট হয়ে গেছে। আসার পরে ওইটা ঠিক করে দিবা।
-আচ্ছা।
-নাহিন আমারে মারে। তুমি আইসা তারে মারবা।
-আচ্ছা আমি বিচার করমু। তুমি কিন্তু তারে মাইরো না। আর সাহান এর সাথে মারামারি কইরো না। তারে আদর কইরো।
-সে আমারে ভাইয়া ডাকে না। নাম ধরে ডাকে।
-আমি আইসা তারে বুঝাইয়া কমু।
-তুমি কিন্তু পরীক্ষা শেষ হলেই চলে আসবা।
-এইবার দেইখো ঠিক ঠিক চলে আসবো।
-আর মন দিয়া পড়াশোনা করবা।
-আচ্ছা।
-ভালো করে পরীক্ষা দিবা।
-আচ্ছা। তুমি কি পড়াশোনা ঠিকমতো করো?
-করি। আমারে এখন ছোটমামা পড়ায়।
-স্কুলে আর মক্তবে যাও তো?
-যাই। এখন আমি একলা যাইতে পারি।
-একলা যাবা না,আম্মার সাথে যাবা।
-আচ্ছা।
-মামার জন্য দোয়া কইরো।
-করি তো।
-কি দোয়া করো?
-নিরুত্তর। (আমারে সম্ভবত তার দোয়া জানাতে চায় না।)
-নানু ভালো আছে? নানুরে ফোনটা দাও।
-এই নাও কথা বলো।
ছয় বছর বয়সী ভাগ্না রেদওয়ান ফোন আম্মার হাতে দেয়। মাকে সালাম দেই। সালামের জবাব দিয়ে মা জিজ্ঞেস করেন- কেমন আছিস?
আমি ভালো নেই এই কথা মাকে কিভাবে বলি? আমি তাই মিথ্যা করে বলি-ভালো আছি। মা তবু কিভাবে জানি বুঝে যান আমি ভালো নেই। ফোনের ওপাশে তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনি।
-আসবি কবে?
-পরীক্ষাটা শেষ হলেই চলে আসবো।
-তোর পড়াশোনা শেষ কবে? আর কয় বছর বাকি?
-এইতো মা আর মাত্র ক'টা বছর।
-ততদিন কি আমি বাচবো?
আমি কি জবাব দেবো ভেবে পাই না,কানে মোবাইল ধরে তাই চুপ করে থাকি।
ছাদে প্রচন্ড বাতাস। আজ হয়তো বৃষ্টি হবে।
ফোনের ওইপাশে মা কাঁদেন। কাঁদেন আর আহাজারী করেন।
-সারা জীবন কষ্ট করলাম। তোর বাপে সারাটা জীবন কষ্ট করতে করতে মারা গেলো। কোনদিন আমিও চইলা যামু। আমাদের কপালে আর সুখ নাই। পুড়া কপাল আমার।
দূর বহুদূর থেকে ফোপানির আওয়াজ শুনি। সে আওয়াজ ক্ষীন হয়ে আসে ক্রমে,প্রতিধ্বনি হয়ে আমার কানে বাজতে থাকে। বাতাসের বেগ বাড়ে,আমি আর কিছু শুনি না। শো শো শব্দে বাকি সব চাপা পড়ে যায়।
আকাশ ভেঙ্গে কখন যে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামে আমি টের পাইনা। ছাদের কোনায় আমি তখনো বসে থাকি। কানে ধরা মোবাইল ফোনটি তখনো ভিজতে থাকে। শব্দহীন পৃথিবীতে আমার অনুভুতিগুলি সব ভোতা হয়ে যায়।
আমার চোখে ওকি অশ্রু? না না ওটা অশ্রু হতে যাবে কেনো? ওটা নিশ্চয়ই বৃষ্টির জল।
আমি যে প্রতিজ্ঞা করেছি কাঁদবো না। আমার যে কাঁদতে নেই!
২| ২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৩
গুলজার আহমদ বলেছেন: হ্যা ভাই,আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাই গল্প আকারে দিয়েছিলাম। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম।
অবশেষে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কাল বাড়ি যাচ্ছি। দোয়া করবেন।
৩| ২০ শে মে, ২০১৪ রাত ২:১২
লিমন আজাদ বলেছেন: ধন্যবাদ গুলজার ভাই। মাকে আমার সালাম দিবেন। নাগরিক সব যন্ত্রণার দিন শেষ হোক। একদিন হবেই। দোয়া রইল...
৪| ২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:২২
নাজমুল হোসেন বলেছেন: যার শেষটা ভাল, তার অতিতটা আমরা ভুলে যাই। সময় কখনও কলকাঠি নেড়ে আমাদের বিভ্রান্ত করে, কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সঠিক সিদ্বান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। মা এর কষ্টের স্বান্তনা দেয়ার উপায় একটা আছে এখনও, তাকে অহরহ কিছু ভাল সংবাদ দেয়া।
শুভ কামনা সকল অশুভ ছায়া কাটিয়ে উঠার....
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩১
লিমন আজাদ বলেছেন: কি লিখছেন ভাই ! চোখে তো পানি চলে আসল। আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা কিনা জানিনা। তবে আমার খুব কাছের গল্প এটা। জীবন আসলেই খুব অদ্ভুত। এতো এতো বিচিত্র কষ্ট আমাদের। তবু বেঁচে থাকি...