নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে সব রঙের শিক্ষকগণ আজ এভাবে একাত্ম হতে পারতেন না....

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

প্রাইমারিতে পড়ার সময় দেখতাম, আমাদের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ স্যার তার ক্লাস শুরুর চার-পাঁচ মিনিট আগে বাতাসের বেগে সাইকেল সালিয়ে স্কুলে এসে হাজির হতেন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পাঞ্জাবির সব ক'টি বোতামও লাগাতে পারেন নি। কখনো কখনো দেখতাম, কানের লতির কাছে সামান্য কাদার মতো কিছু একটা লেগে শুকিয়ে আছে। স্যার বলতেন, "সকাল থেইকা ক্ষেতে কাজ করছি। ভালো মতো গোসল করার টাইম পাই নাই রে..."

ক্লান্ত দেহ নিয়ে স্যার মাঝেমধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় চেয়ারে হেলান দিয়ে পড়ে থাকতেন। স্যারের সেই চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে এখনো। চিৎকার করে বলতেন, "লেখ- তিন লক্ষ বিরানব্বই হাজার নয়শত তের। লেখ- বারো কোটি আটানব্বই লক্ষ চব্বিশ হাজার আটশত বত্রিশ.... কি লেখছস? এখনো হয় নাই গর্দভের দল? আজইকা তোগ কপালে শনি আছে রে......"
কেউ অংক না পারলে নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়ে চিকন জালি বেতের আঘাতে আঘাতে আধমরা করে ফেলতেন। স্যারের মার খেয়ে কতো জনের হাতের তালু ফেঁটেছে। নাকের জল চোখের জল এক হয়ে গিয়েছে...।

স্যার অংক শিখিয়েছেন। সেই অংক শিখে আজ আমি লক্ষ কোটির হিসেব কষছি। কিন্তু আমার সেই স্যার সেই হেদায়েত উল্লাহ স্যার চাকরি থেকে অবসরের পর বৃদ্ধ বয়সে এখনো জমিতে নিড়ানি দিতে দিতে জীবনের হিসেব কষছেন....।

ইউরোপ ও আমেরিকাতে একসময় জাতির সামনে প্রশ্ন ছিল উন্নয়নের সম্ভাব্য পথ কি? অনেক গবেষণার বিনিময়ে তারা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছেন যে, মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমেই জাতির উন্নয়ন সম্ভব। আর এই মানব সম্পদ তৈরিতে শিক্ষকরাই প্রধান ভূমিকা পালন করছেন কিংবা করতে পারেন। এর পর থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। উন্নত দেশসমূহে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকলেও শিক্ষাক্ষেত্রে তারা কোন বৈষম্য রাখেনি। এ কথা তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মানব সম্পদ তেরিতে শিক্ষকদের বিকল্প কিছু নেই। তাই শিক্ষকদের মর্যাদাবান করতে হবে এবং তাদের পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামোতে কীভাবে শিক্ষকগণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, কীভাবে তাদের পদায়ন করে নিচে নামানো হচ্ছে তা নিয়ে সরকারের দুয়েকজন দায়িত্বশীল সচিব বেশ কয়েকবার সংবাদপত্রে বলেছেন যে, ‘শিক্ষকরা বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। না-বুঝে আন্দোলন করছেন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ‘প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো’ বুঝেন না বিষয়টি হাস্যকর বটে।

বেশ কয়েকজন শিক্ষক একাধিকবার বলেছেন, এখানে অর্থের ব্যাপারটি মূখ্য নয়। মূখ্য হচ্ছে পদায়ন, অসম্মান, অমর্যাদা এবং আত্মমর্যাদায় আঘাত।

বিষয়টি না বুঝে, আমরা আমাদের নানা বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষকদের একের পর এক অসম্মান করে চলছি। আমাদের বুঝতে হবে আজকের যে আন্দোলন চলছে, সেখানে লাল নীল কিংবা সাদা হলুদের নির্দিষ্ট কোন ব্যানারে শিক্ষকগণ নামেন নি। তাঁরা নেমেছেন সম্মিলিতভাবে। দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে সব রঙ এক সাথে মিলে এভাবে একাত্ম হতে পারতেন না কখনোই...।

আপনাদের সিস্টেম বলছে, ক্লাসের ফার্স্ট সেকেন্ড রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীটিই শিক্ষক হবে- কিন্তু তাকে তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদাটুকু দিবেন না তা কী করে হয়?

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাজেটে তাঞ্জানিয়া ২৬ শতাংশ, লেসেথো ২৪ শতাংশ, বুরুন্ডি ২২ শতাংশ, টোগো ১৭ শতাংশ ও উগান্ডা ১৬ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখে শিক্ষাখাতের জন্য। অথচ এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির আকার অনেক বড়। সেই তুলনায় আমাদের বরাদ্ধ কতোটুকু?

আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভেবে দেখবেন....


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে সব রঙ এক সাথে মিলে এভাবে একাত্ম হতে পারতেন না কখনোই...।


যে আমরা "শিক্ষকের মর্যাদা" নামক অমর কবিতাটি পড়ে বড় হয়েছি- যেখানে বাদশা শিক্ষককে অনুযোগ করছেন তার ছেলে কেবলই কেন পানি ঢেলে দিচ্ছিল.. কেন নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধূয়ে দেয় নি!
সেই শিক্ষা কি কেবলই কবিতা মূখস্ত আর পরীক্ষার উত্তর দেবার জণ্য ছিল!

এখনকার কথিত শিক্ষিত সচিব আর আমলাদের কথায়তো তাই মনে হয়।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: সচিব আর আমলাদের কথা মতো তারাই সব বুঝেন..

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২

গেম চেঞ্জার বলেছেন: যে জাতি নিজের শিক্ষকদের সম্মান করতে পারে না সে জাতি অসভ্য হতে সময় লাগে না।


তবে সম্মানের মাপকাঠি কি টাকাই? বেতন স্কেলই? এখানেও কিছু কিন্তু রয়ে গেছে। আরও আছে শিক্ষকদের কিছু দলীয় বাণিজ্য, নির্লজ্ব দলবাজি, দুর্নিতি, যৌন নির্যাতনসহ অনেক অভিযোগ।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। এ পেশায় অধিক মেধাবীদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। মানব জীবনের প্রকৃত মুল্যবোধ জাগ্রত না হলে এ মহান পেশায় মেধাবীদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে যাবে, যাচ্ছেও।

শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করা উচিত সাধারণ মানুষের। শিক্ষকদের নয়। এতে তাঁরা নিজেদের মান খুইয়ে ফেলছেন। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়েও বেশি বেতন শিক্ষতায় থাকা উচিত। এবং এতে দেশের আমূল পরিবর্তনেরও একটা সম্ভাবনা আছে।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, গেম চেঞ্জার...ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.