নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যিকারের স্বাধীনতার খোঁজ কোথায় পাব!!

নিজের সম্পর্কে নিজে না বলাই ভালো।

ভুমিহিন জমিদার

নিজের সম্পর্কে না হয় নাই বললাম

ভুমিহিন জমিদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক জ্যঁ ক্যুয়ে ও ৭১ এর রাজাকার

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৮

দুপুর এগারোটা পঞ্চাশ, ফ্রান্সের প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে দাঁড়ানো পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের একটি বোয়িং ৭২০ বিমান। সালটা ১৯৭১; ডিসেম্বরের তিন তারিখ।
২৮ বৎসর বয়সী এক দু:সাহসী ফরাসী, নাম জ্যঁ ক্যুয়ে। ব্যাগে বোমা ও হাতে রিভলবার নিয়ে ঐ বিমানের ককপিটে উঠে পড়েন। পিআইএ-র বোয়িংটির ককপিটে গিয়ে পাইলটের গায়ে ৯ এমএম পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি দাবী তোলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে হবে। এই দু:সাহসী যুবক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এই বিমানকে পাঁচ ঘণ্টা রানওয়েতে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তার একটাই মাত্র দাবি ছিলো, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী যুদ্ধরত মানুষ, বিশেষ করে ভারতে আশ্রয়গ্রণকারী শরণার্থীদের সাহায্যার্থে কিছু ঔষুধ ওই বিমানটিতে তুলে পাঠাতে হবে। এই অসামান্য ঘটনা টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিলো এবং পরদিন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিলো।
আলোচনায় বসা হলো জ্যঁ ক্যুয়ে’র সঙ্গে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, ব্যক্তিগত কোনো লাভের ব্যাপার এখানে নেই। তিনি কেবল চান মুক্তিযুদ্ধরত বাংলাদেশে যেন ফ্রান্স সরকার ঔষুধ সরবরাহ করে সহায়তা করে। আর পিআইএর এই বিমানে করেই যেন সেই মালামাল বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয়।
জ্যঁ ক্যুয়ের দাবিও ফরাসী সরকার সহজে মেনে নেয়নি। কমান্ডো বাহিনী দিয়ে দিয়ে অর্লি বিমানবন্দর ছেয়ে ফেলে ফরাসী সেনাবাহিনী। তবু এক পর্যায়ে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে সরকার মেনে নেয় তার দাবি। ফরাসী রেডক্রস ও অন্য একটি সাহায্য সংস্থার সহায়তায় দ্রুত সংগ্রহ করে অর্লি বিমান বন্দরে আনা হয় ১ টন ঔষধ। শেষাবধি পিআইএ-র ঐ বিমানেই তোলা হয় ১ টন ঔষুধ এবং বাকী ঔষধ অনতিবিলম্বে প্রেরণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়। বিমানে ঔষধ বোঝাই করার মুহূর্তে মেকানিকের ছদ্মবেশে ২জন পুলিশ উঠে ককপিটে গিয়ে জ্যঁ ক্যুয়েকে আক্রমণ করে বসে এবং কিল-ঘুষিতে কাবু করে গ্রেপ্তার করে ফেলে।
হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় বিমান থেকে নামার সময় হাইজ্যাকার ছেলেটার ভাব ভংগী পাল্টে গেলো। যেই মুখে বিশাল দাপট নিয়ে কিছুক্ষন আগেই সে ২৮ জন যাত্রী সহ একটি বিমান উড়িয়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছিলো, সেই মুখেই সে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো – তার দাবীকৃত মেডিকেল সামগ্রী আর রিলিফ যেনো জায়গামত পৌছে দেয়া হয়। রিলিফটা সত্যিই দরকার। আট মাস হয়ে গেছে তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে – মেডিকেল এবং রিলিফ তাদের সত্যিই খুব দরকার।
অঁদ্রে দ্য মল্টা নামের একটি সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে সেই ঔষুধ অবশ্য বাংলাদেশে পৌঁছানো হয়েছিলো ঠিকই।
জ্যঁ ক্যুয়ের কাছে কোন বোমা ছিল না। যে বাক্সটি তাঁর হাতে ছিল তাতে কেবল কিছু বৈদ্যুতিক তার, বই, এক কপি বাইবেল এবং একটি ইলেকট্রিক শেভার পাওয়া গিয়েছিলো। তবুও বিমান হাইজ্যাকের অপরাধে আদালতে তার বিচার হয়েছিলো এবং তার ৫ বছর কারাদণ্ড হয়েছিলো।
সব গল্পের শেষ থাকে,
এই গল্পটার শেষটা নাহয় নাই লিখলাম......
জ্যঁ ক্যুয়ের এই গল্পটা হয়তো আমাদের অনেকেরেই জানা। আমি প্রথম পড়েছি উইকিপিডিয়াতে, সেখান থেকে উৎস নিয়ে নিজের ভাষায় গল্পটা লেখা। এরকম হাজারো গল্পে মুখোরিত ছিলো গোটা একাত্তর জুড়ে। কেউ জানতো না কবে শেষ হবে ইয়হিয়া খানের এই হত্যাযজ্ঞ। কেউ জানতো না লুকিয়ে থাকা অল্প কয়েকজন সাংবাদিক যতটুকু নিউজ করতে পারছে তার থেকেও বাস্তবতাটা কত নির্মম। লাইফ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক জন সার দেখেছেন শরণার্থী শিবিরে মৃত মানুষের সংখ্যা এত বেশী যে সেখানকার শকুন খেয়ে শেষ করতে পারছে না। শকুনদেরও খাওয়ায় অরুচি এসে
জন সার দেখতে পেয়েছিলেন একটি শিশুর মৃতদেহ। শিশুটির গায়ে একটি শাড়ির অংশ পেঁচানো। তাঁর হতভাগী মা পেঁচিয়ে পুটুলি বানিয়েছে। ট্রাকের চলার সময় অসুস্থ শিশুটি মারা গেছে। চলন্ত ট্রাক থামেনি। মৃত ছেলের জন্য ট্রাক থামানো কোনো মানেই হয় না। আরও অনেক মৃতপ্রায় মানুষ এই ট্রাকেই ধুঁকছে। আগে পৌঁছাতে পারলে হয়তো কোনো হাসপাতাল পাওয়া যেতে পারে। তাদের সুযোগ মিলতে পারে চিকিৎসার। বেঁচেও যেতে পারে। এই আশায় সময় নষ্ট করতে কেউ চায় না। শিশুটির পুটুলী করা মৃতদেহটিকে ট্রাক থেকে রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়েছে।
জন সার তো কেবল একটা শিবিরের কথা লিখেছিলেন, এরকম শত শত শরণার্থী শিবিরের গল্প কোনদিন কারো জানা হবে না...
২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করার আগে পাক আর্মি বিদেশি সাংবাদিককে আটকে ফেলেছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ভেতরে। এরপর সব সাংবাদিককে হোটেল থেকে সরাসরি বিমানে তুলে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম গণহত্যার কোনো সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারে। পাকিস্তানি সামরিক আইন অমান্য করে জীবনের ঝুকি সায়মন ড্রিং লুকিয়ে পড়েছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। এরপর ড্রিংয়ের জীবনের শ্বাসরুদ্ধকর ৩২ ঘণ্টা সময় কেটেছিল হোটেলের লবি, ছাদ, বার, রান্নাঘরে। তারপর ইতিহাস, তিনি ঘুরে ঘুরে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছিলেন গণহত্যার বিভীষিকাময় সেইসব হত্যাযজ্ঞের বাস্তব-চিত্র। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম খবর প্রকাশ করেন সায়মন ড্রিং। সেইসব ঘটনা নিয়ে একটা চমৎকার ডকুমেন্টারি আছে, সম্ভব হলে দেখে নেবেন...
ডেইলী টেলিগ্রাফের তরুন রিপোর্টার সায়মন ড্রিং কিংবা লাইফ ম্যাগাজিনের জন সার, বিটলসের জর্জ হ্যারিসন কিংবা ফরাসী যুবক জ্যঁ ক্যুয়ে এদের সবার একটা মিল আছে, সেটা হচ্ছে এই মানুষ গুলো বাঙালী ছিলেন না তবুও কেবলমাত্র বিবেকের টানে জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা এইসব কান্ড কারখানা করেছিলেন।
শুধু মাত্র এদেশের মানুষের জন্য জেল খেটেছিলেন 'জ্যঁ ক্যুয়ে'।
যদি জানতেন যেই মানুষগুলোর জন্য জেলে খেটেছেন তারা আসলে এই দেশটাকে চায় না, তাদের ওপর নিপীড়নকারীদের জন্য আস্ফালন করে। স্বাধীনতা বিরোধীর জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়...
তাহলে হয়তো দুবার ভাবতেন এতটা করার আগে...
জ্যঁ ক্যুয়ের মুক্তির জন্য সম্ভবত ব্রিটিশ সরকার কিংবা জাতিসংঘ কোন পদক্ষেপ নেয় নি। কিন্তু কামারুজ্জামানের মত খুনি ধর্ষকের জন্য তাদের মায়া-কান্নার অন্ত নেই...
নিরপেক্ষতার নামে এভাবেই মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয় যুগে যুগে..

তথ্যসূত্রঃ
১)bn.wikipedia.org/wiki/জ্যঁ_ক্যুয়ে
২)bn.wikipedia.org/wiki/সাইমন_ড্রিং
৩)জেনসাইডঃ লিও কুপার

-আরিফ রহমান অবলম্বনে ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৫৭

এনজেল_৭৭৭ বলেছেন: just heart touching article.....we will never be united unless we help ourselves.

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪৯

সরদার হারুন বলেছেন: যারা কাঠ কাটে তারা চিরদিনই পরের জন্য কাটে ।আবার যারা শয়তান তারা শয়তানই থাকে ।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: হাসিনার মত লৌহমানবীর জন্য জাতিসংঘ কোন ব্যাপার? এটা নিয়ে এত টেনশনের কি আছে। যাব তক মোদী বাবু কি ছায়া শির কি উপার, জাতিসাংঘা কো কুচ পারওয়া নেহি।

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৪

ভুমিহিন জমিদার বলেছেন: B:-) B:-) B:-) B:-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.