![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এরশাদের রাজনৈতিক অবস্হান বদল হয়, দলকানা দলদাসেরাও শুর পাল্টায়, আম জনতা অবাক হয়। স্বৈরাচার থেকে গনতান্ত্রিক, থুথু বাবা থেকে এক মুহুর্তে হয়ে যান পীর বাবা। আবার কারো কাছে রাতারাতি গনতান্ত্রিক এরশাদ হয়ে যান, ডিগবাজি বিশারদ। আমাদের সময় ডট কম, প্রথম আলোর পাঠকের কমেন্টসগুলো পড়ে গত কয়েকদিনের এটাই ছিল চিত্র। দুদিন আগেও এরশাদের পক্ষে যে মন্তব্যগুলো ছিল মাইনাসে মাইনাসে ভরা, সেগুলোতে এখন প্লাসের সমাহার। বলছেন এ মুহুর্তে তিনিই নাকি কান্ডারি। তিনিই পারেন সংকটের সমাধান করতে অর্থাৎ তিনি যে দিকে যাবেন সেদিকেরই নাকি জয় হবে।
তবে দুটো কথা আজ দিবালোকের মত সত্য। প্রথমতঃ ৯০ এ ছা্ত্র জনতার আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হলেও বিগত ২৩ বছরে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তি। তাকে নিয়ে যত টানাটানি, যত তৈল মর্দন, যত তোষামদি, যত চোখ রাঙানী, যত মামলা মোকদ্দমা জেল জুলুম সবই ছিল 'তোমাকে পাবার জন্য, হে এরশাদ।'
আর দ্বিতীয় সত্যটা হলো, এত কিছুর বিনিময়েও কিন্তু তার মামলাগুলো ঝুলিয়ে রাখা হবে, 'যদি দরকার হয়' এ কারনে। তাকে দিয়ে নিজেরা কিং কুইন হবেন কিন্তু তাকে তেমন কিছুই দেয়া হবে না, রাজনৈতিক সুবিধাতো দুরের কথা, মামলা প্রত্যাহারও নয়। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকার যেটা করলেন, তার জেনারেল মন্জুর হত্যা মামলার রায়ের তারিখ অধিকতর শুনানির নামে একেবারে ঠিক নির্বাচনের পরে পিছিয়ে দেয়া। এ মামলার সর্বশেষ তারিখে সরকারী প্রসিকিউটরও বললেন যুক্তি তর্ক শেষ, কেউ এরশাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন নাই, তিনি চেষ্টা করেছেন, কেউ স্বাক্ষী না দিলে, প্রমান না পাওয়া গেলে তার কিছু করার নেই। আগামী সপ্তাহেই আশা করি মামলার রায় হয়ে যাবে। অথচ শুধুমাত্র এরশাদের কাছ থেকে জোর করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্যই হঠাৎ করেই রায়ের তারিখটা পিছিয়ে দেয়া হলো। এখন কথা হলো, এরশাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে গায়ের জোরে, অস্ত্রের জোরে, অর্থের জোরেও যদি পাল্টাতে না পারেন সেক্ষেত্রে তাকে পাঠাবেন জেলখানায়। যারা তার সমালোচনা করেন, তারা কিন্তূ তখন তার জন্য একটা গাড়ীও ভাংগবেন না, একটা প্রতিবাদও করবেন না বরং পর্দার আড়ালে মুখ টিপে হাসবেন।
প্রশ্ন হলো যারা তাকে গতকাল বেহায়া বললেন, আজ তাকে পীর মানছেন, তাহলে তারা নিজেদেরকে কি বিশেষনে বিশেষিত করবেন, খুব জানতে ইচ্ছে করে।
আসলে আমরা নিজেরাই প্রত্যেকে এক একজন বড় ভন্ড, বড় স্বৈরাচার, বড় বেহায়া অথচ অন্যের ছিদ্রান্বেষন করি। নিজেকে প্রশ্ন করুন, নিজের পরিবারে ছেলে মেয়ে, স্ত্রীর সাথে, প্রতিবেশীর সাথে, দোকানদারের সাথে, রিকশাওয়ালার সাথে, মাছ তরকারী বিক্রেতার সাথে, শিক্ষকের সাথে, কোমলমতি ছা্ত্রের সাথে, অফিসের নীচের পদের সহকর্মীর সাথে, বাসার কাজের ছেলে মেয়ে, বুয়ার সাথে প্রতিদিন কি রকম স্বৈরাচারী আচরন করছেন একবার খেয়াল করে দেখেছেন!
আমি নিশ্চিত অনেকের গাত্রদাহ হয় এ কারনে যে বেটা স্বৈরাচার এরশাদ আবার কেন এত ভোট পায়, কেন বার বার, এমনকি জেলখানায় থেকেও পাঁচ পাঁচটি সীটে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে! ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬ সালে চেষ্টা করা হয়েছে তাকে তার এই জনপ্রিয়তার কারনে ক্ষমতাসীনরা তাকে হাতে রাখতে, না পেরে কি ই না করা হয়েছে তার সাথে! ঠিক নির্বাচনের পুর্বে এসে তাকে না পেয়ে তার মামলা পুনরজীবিত করা হয়েছে, ভুয়া বিচারপতি ফয়েজকে দিয়ে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো ইতিহাস বিশ্লেষন করলে তার দুর্ণীতি, তার স্বৈরাচারিতা, তার সময়ের হত্যাকান্ড বিগত কয়েক বছরে দুই নেত্রীর আমলে সব কিছু হাজার গুন ছাড়িয়ে গেলেও তাকে নিয়েই যত আলোচনা, সমালোচনা। তিনি অবশ্যই দোষী ছিলেন, তার শাস্তিও তিনি পেয়েছেন, কিন্তু বাকীরা? মাঝে মাঝে ভাবি, সত্য না বলার এ লজ্জা কার? কতদিন আর এ ভন্ডামী? তাই যারা সত্য, ন্যায় নিষ্ঠার বুলি আওড়ান, ভাব ধরেন, তাদেরকে বলি, আসুন, অপরাধী নিজের 'আব্বা' হলেও তাকে অপরাধী বলা প্রাকটিস করি, তারপর নিজেরা ভাব ধরি। সাদা চাদর গায়ে জড়ালেই সত্যবাদি হওয়া যায় না।
©somewhere in net ltd.