![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাধীনতার পর খুব কম সরকারই সত্যিকার সংস্কারে হাত দেবার সাহস পেয়েছে। প্রথমবারের মত এই সাহসটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, বাকশাল ব্যবস্হায় ততকালীন মহাকুমাগুলোকে জেলা ঘোষনা করে সেখানে একজন করে মনোনীত দলীয় গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়বার খুবই ক্ষুদ্র আকারে করেছিলেন জিয়াউর রহমান গ্রাম সরকার ব্যবস্হা প্রতিষ্ঠিত করে।
চতুর্থ বারে করেছিলেন ফখরুদ্দীন, মইনুদ্দীনের সময় ততকালীন নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা সাহেব ও তার টীম ঘুনেধরা নির্বাচনী ব্যবস্হায় কিছু আমুল পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন।
আর তৃতীয় সংস্কার করেছিলেন এরশাদ। যিনি উপজেলা ব্যবস্হা, ঔষধ নীতি, জেলা পরিষদ ইত্যাদি গুরুতর কিছু কাজে হাত দিয়েছিলেন। যদি তার পিছনে সেদিন রাজনৈতিক সাপোর্ট থাকতো তাহলে তিনি এই কাজগুলোকে আরো সমৃদ্ধশালী ও অর্থবহ করে তুলতে পারতেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মোহে এমনই বিভোর থাকেন যে বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করাই তাদের কাজ। যে কাজটা করলে শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতায় আসা ও থাকা পাকাপোক্ত করবে সেটার বাইরে তারা একচুলও নড়বে না।
আজ প্রশ্ন জাগে কেন তারা ১৯৮৫ সালের সেই ঐতিহাসিক উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছিলেন? কেন আমাদের বন্ধু সেলিম দেলোয়ারকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল? সেদিন তারা বললেন, সকল নির্বাচনের আগে সংসদ নির্বাচন দিতে হবে তারপর অন্য কথা। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেলে সামরিক শাষক এরশাদ তৃণমুল পর্যায়ে তার কিছু নিজস্ব লোকজন সৃষ্টি করে ফেলবে, সুতরাং এটা করতে দেয়া যাবে না। তারপরে চললো সেই তান্ডব। প্রার্থীদের বাড়ী বাড়ী হুমকি, বোমা, অপহরন। তারই ধারাবাহিকতাইতো চলছে আজও। সেই নির্বাচন কিন্তু বন্ধ করা গেল না। ১৯৮৫ সালে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানেরা পুর্ণ পাঁচটি বছর দায়িত্ব পালন করে গেলেন। তখন উপজেলায় কর্মরত থানার ওসি, নির্বাহী অফিসার সহ সকলেরই জবাবদিহিতা রাখার ব্যবস্হা করা হয়েছিল জনগনের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির কাছে। কিন্তু একটা প্রভাবশালী গ্রুপের চাপে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পুরো নির্বাচনটারই বিরোধিতার কারনে পুলিশের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বা এসিআর লেখার দায়িত্বটা সরিয়ে নেয়া হয় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। তারপরও রেখে দেয়া হয় কিছুটা দায়বদ্ধতা। বলা হয়, ঠিক আছে, উপজেলা চেয়ারম্যান লিখবে বার্ষিক পারফরমেন্স রিপোর্ট (এপিআর) এবং জেলা পুলিশ কর্মকর্তা (এসপি) লিখবেন বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর), দুটো মিলিয়ে উপজেলার ওসি সাহেবদের প্রমোশন বিবেচনা করা হবে। আর ইউএনও দের এসিআর লেখার পুরো দায়টাই ছিল একজন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের। এটা ছিল জনগনের ক্ষমতায়নের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আজও মনে পড়ে, ১৯৯১ সালে এক কলমের খোচায় যখন খালেদা জিয়া উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যানদেরকে বাতিল করে দিলেন, আমি শেষবারের মত যেদিন আমার কর্মস্হল ত্যাগ করে চলে আসছিলাম, সেদিনও আমাদের ডাকসাইটে আমলা, ইউএনও সাহেব দৌড়ে এলেন তার এসিআরে যেন আমি সর্বশেষ একটা স্বাক্ষর করে দিই। এটা ছিল সাধারন মানুষের বিজয়, তথা গনতন্ত্রের বিজয়। একজন নইমুদ্দি, কলিমুদ্দিনের বিজয়। আমলাতন্ত্রের উপর জনগনের বিজয়। কে করেছিলেন? দুঃখজনক হলেও সত্যি সেটা করেছিলেন এরশাদ, একজন সামরিক উর্দি পরা মানুষ, কোন সাইনবোর্ডওয়ালা রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা নন।
কেন এসব বলছি? কারন, আজ দেশে যে ধরনের তেলেসমাতিতে ভোটার বিহীন সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল, এখন কেন বিএনপি বললো না যে সবার আগে একটা অর্থবহ সংসদ নির্বাচন দিতে হবে, তারপরে উপজেলা ও অন্যান্য নির্বাচনের কথা চিন্তা করা যাবে। তাহলে সেদিন কেন করলেন? আজ যদি এরকম একদলীয় সংসদ নির্বাচনের পর আপনারা দৌড়ে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, তাহলে সেদিন কেন নাটক করে কিছু মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন? প্রশ্ন জাগে, কেনো আপনারা ক্ষমতায় থাকতে উপজেলা চালু করলেন না? কেন নাজমুল হুদা কমিশন, এই কমিশন সেই কমিশন করে মুল্যবান সময় ক্ষেপন করলেন? প্রশ্ন জাগে শুধুমাত্র অচ্ছুত এরশাদ করেছিলেন বলে এত শক্তিশালী উপজেলা ব্যবস্হাকে মেনে নিতে পারলেন না অথচ আজ নামকাওয়াস্তে চালু করা, ক্ষমতাহীন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ঝাপিয় পড়ে কি প্রমান করলেন না যে সেদিন ১৯৮৫ সালে আপনাদের সিদ্ধান্ত ছিল ঐতিহাসিক ভুল? যারা সেদিন প্রাণ দিয়েছিলেন তারা শুধু আপনাদের ভুলেই দিয়েছিলেন?
এরশাদের মত একজন সামরিক জান্তার সময় যদি দুইবার ডাকসু নির্বাচন হতে পারে, আপনাদের আমলে কেন বিগত ২৪ বছরে একটি বারের জন্যও ডাকসু নির্বাচন হলো না? কেউ যদি বলে দেশে আপনাদের ব্যাক্তি ও পারিবারিক শাষনের বাইরে আর যাতে কোন যোগ্য নেতৃত্ব তৈরী না হতে পারে সেজন্যই ডাকসু নির্বাচন দেয়া হয় না যুগের পর যুগ, সেজন্যই তৃণমুল পর্যায়ে উপজেলা ব্যবস্হাকে আমলাদের উপরে যথাযথ ক্ষমতা দিয়ে শক্তিশালী করা হয় না তাহলে সেটা কি ভুল বলা হবে? (চলবে)
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৪
আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: অবশ্যই এরশাদের অনেক দোষ ছিল, সমস্যা ছিল এজন্য সে যথাযথ সাজাও ভোগ করেছে। কিন্তূ এখন দেখা যাচ্ছে তাদের আন্দোলনটা ছিল শুধু এরশাদকে তাড়িয়ে নিজেরা ক্ষমতা দখল করা। তা না হলে বিগত ২৪ বছরে তারা এরশাদের চেয়ে অনেক ভালো আইডিয়া নিয়ে আসতো এবং সেগুলো ইমপ্লিমেন্ট করতো। এমনকি উপজেলা ব্যবস্হাটাকে আরো অনেক বেশী গনতান্ত্রিক ও জনমুখী করতো। দুঃখজনক হলো সেটা তারা করে নি, ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে হয় না।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৪
মিতক্ষরা বলেছেন: একই প্রশ্ন তো আপনাকেও করা যায়? এরশাদই বা কি কারনে বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনা না করে উপজেলা নির্বাচন করেছিলেন? তিনি বিরোধীদের ডাকতে পারতেন আলোচনার জন্যে।