নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিকহী প্রবন্ধ ও ফতোয়া সিরিজ

আসুন আমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলি।

মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী

মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী, মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।

মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মসজিদ স্থানান্তর

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫০

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
মুহতারাম মুফতিয়ানে কেরাম
আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মূঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
বিষয় : নিম্ন বর্ণিত মসজিদের সমস্যার শরয়ী সমাধান প্রদানের আবেদন প্রসঙ্গে।
মসজিদের নাম : চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার সাবরেজিষ্ট্রি অফিস আমিনিয়া জামে মসজিদ, লক্ষীপুর।
প্রতিষ্ঠা/নিমার্ণকাল : উক্ত মসজিদের মূল ভবন পূণঃ নির্মান ১৯৮৩ ইং ও ১৯৯০ইং, উক্ত মসজিদের স¤প্রসারিত দোতলা ভবন নির্মান ২০০৩ ইং সন হইতে ২০১১ইং পর্যন্ত।
ওয়াক্ফ দলিল : মুল ভবনের ওয়াক্ফ দলিল হয় ১৯৮৩ সনে মসজিদ ও নামাজ চলমান অবস্থায়।
সম্প্রসারিত দোতলা ভবন এর একটি দলিলের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৬ইং সনের, তাহাতে লেখা আছে মসজিদের কার্যার্থে ক্রয় দলিল।
মসজিদের চৌহদ্দি : উত্তরে আব্দুল কুদ্দুস গং এর নিজস্ব মালিকীয় মার্কেট ও তারই পরিচালনাধীন চন্দ্রগঞ্জ নিউ মার্কেট।
দক্ষিণে : ঢাকা-রায়পুর মহাসড়ক।
পূর্বে : মহাসড়ক থেকে মসজিদের দিকে আসার পথ ও নিউ মার্কেটের দিকে আসার পথ।
পশ্চিমে : প্রাইমারী স্কুল।
উক্ত মসজিদের জায়গা ওয়াক্ফকৃত, দীর্ঘ প্রায় ৫০ পঞ্চাশ বছর যাবৎ জুমা সহ নামায আদায় হয়ে আসছে। মুসল্লিগণের নামাজ আদায়ের স্থান সংকুলান হচ্ছে না বিধায় পার্শ্ববর্তী জায়গা নিয়ে মসজিদ স¯প্রসারন করা হয়েছে। উভয় নতুন ও পূর্বের ভবনের নীচ তলা ও দোতলা নামাজের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। উভয় ভবনের নীচ তলা ও দোতলায় নামায হয়েছে। উভয় অংশ মিলে একই মসজিদ।
উক্ত মসজিদের পিছনে ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেট বিধায় এবং মার্কেটের শোভা বর্ধনের জন্য মার্কেট কর্ত্তৃপক্ষ আইন কানুন ও মুসল্লিগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গায়ের জোরে দীর্ঘ অর্ধশত বছরের পূর্বের মসজিদ এর সাবেক ভবনে তালা দিয়ে দেয়। নামাজ আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং অজুর ব্যবহৃত ময়লা পানি ও অন্যান্য ময়লা পানি দিয়ে মসজিদ এর ফ্লোর ময়লা করে রাখে এবং অবশেষে মসজিদকে সংগোপনে রাত ১২ টার পর অশুভ শক্তির দাপট দেখাইয়া ভেঙ্গে গুঁিড়য়ে দেয়।
উক্ত মসজিদের স¤প্রসারিত ভবনের নীচ তলায় মার্কেট করার পায়ঁতারা করছে। কেননা পিছনে তাদের ব্যাক্তিগত মার্কেট রয়েছে। যাহাতে ক্রেতা সাধারণের যাতায়াত ও গমনাগমন এই মসজিদ এর ভিতর দিয়েই হলে তাদের মার্কেটের উন্নতি হয়। বর্তমান মসজিদ কমিটির সদস্য ও সাধারণ মসুল্লিগণকে তারা তোয়াক্কা করছে না।
সাধারণ মুসল্লি সকল ও বর্তমান মসজিদ কমিটি মসজিদের উভয় ভবনের নীচ তলা হইতে সকল তলায় নামায চালু রাখার পক্ষে এবং পার্শ্ববর্ত্তি ব্যক্তিগত মার্কেটের মালিক পক্ষ চাচ্ছে- “সাবেক ভবন ভাঙ্গার পরে ঐ স্থানে অজুখানা, ঈদগাহ, হুজরা, গণশৌচাগার ইত্যাদি করতে। এবং স¤প্রসারিত ভবনের নীচ তলায় মার্কেট করতে”।
প্রশ্ন
১। উক্ত মসজিদের সাবেক ভবনের সেজদার জায়গায় অজু খানা, ঈদগাহ, হুজরা, শৌচাগার, গণশৌচাগার ইত্যাদি করা যাবে কি না? ইহার শরয়ী হুকুম কি?
২। উক্ত মসজিদের বর্তমান স¤প্রসারিত ভবনের নীচ তলায় সেজদার জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করা/ দোকান বরাদ্ধ দেয়া শরীয়ত সম্মত কি না? উক্ত স্থানে নামাজ পড়তে বাধা দেয়া শরীয়ত সম্মত কি না? শরীয়তে উক্ত সমস্যাগুলোর হুকুম কি?
৩। নিজেদের ব্যক্তিগত মার্কেটের শোভা বর্ধনের জন্য মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া, মসজিদে তালা দিয়ে নামাযে বিঘœ সৃষ্টি করা, মসজিদের ভিতর ময়লা পানি দিয়ে ময়লা করে রাখা শরীয়ত সমর্থন করে কি না? শরীয়তে ইহার হুকুম কি?

আরজগুজার
ডা: মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান
আল-ফারাহ হোমিও ক্লিনিক
আল-ফারাহ শপিং কমপ্লেক্স
চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার
চন্দ্রগঞ্জ, লক্ষীপুর

শরয়ী সমাধান
حامدا و مصليا و مسلما، اما بعد
প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার সাবরেজিষ্ট্রি অফিস আমিনিয়া জামে মসজিদ,লক্ষীপুর পুরাতন ও স¤প্রসারিত নতুন ভবন সহ পুরোটিই একটি শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য। উক্ত স্থানে মসজিদের সকল হুকুম বলবৎ থাকবে। সুতরাং উক্ত মসজিদের কোন অংশ কারো ব্যক্তি স্বার্থে হোক বা মসজিদের স্বার্থেই হোক অন্য কোন কাজে লাগানো কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। কেননা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী যে স্থানে একবার শরয়ী মসজিদ হয়ে যায় তা কেয়ামত পর্যন্তই শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য। মসজিদের কোন অংশে ইমামের হুজরা বা শৌচাগার অথবা মার্কেট ইত্যাদী করতে চাইলে মসজিদ বানানোর পুর্বে শুরুতেই তা করতে হয়। কোন মসজিদ বা তার কোন অংশ ভেঙ্গে অন্য কোন কাজে লাগানো আদৌ জায়েয হবে না।
অতএব আপনার প্রশ্নগুলোর ধারাবাহিক উত্তর হলো -
১। উক্ত মসজিদের সাবেক ভবনের সেজদার জায়গায় অজু খানা, ঈদগাহ্, হুজরা, শৌচাগার, গণশৌচাগার ইত্যাদী বানানো কোন অবস্থাতেই জায়েয হবে না।তা কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই বাকী রাখতে হবে।
২। তেমনিভাবে উক্ত মসজিদের বর্তমান স¤প্রসারিত ভবনের নীচতলায় মার্কেট করা বা দোকান বরাদ্দ দেয়াও জায়েয হবে না। কেননা ইহাও ইতিপুর্বে শরয়ী মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয়ে তা মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
৩।নিজেদের ব্যক্তিগত মার্কেটের শোভাবর্ধনের জন্য মসজিদ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া মসজিদ অবমাননার শামীল। যা মারাত্মক গোনাহের কাজ। কোন মুসলমানের দ্বারা এমন কাজ আদৌ কল্পণা করা যায় না। মসজিদে তালা দিয়ে নামাযে বিঘœ সৃষ্টি করা ও মসজিদের ভেতর ময়লা পানি দিয়ে ময়লা করে রাখাও বড় অন্যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের কর্তব্য হলো মসজিদটিকে পুণরায় মসজিদ হিসেবে নির্মাণ করা ও তথায় সর্বসাধারণের নামাযের ব্যবস্থা করে দেয়া। এলাকাবাসীর কর্তব্য হলো উক্ত মসজিদ রক্ষা করতে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা। প্রয়োজনে মুসলিম আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে আইনানুগ সহযোগিতা নেওয়া। আল্লাহ তা’য়ালা সকলকেই দ্বীনের বুঝ ও তদনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
(আল-কুরআন,সূরায়ে বাকারা,আয়াত-১১৪,সহিহ মুসলিম,প্রশ্রাব ধৌত করণ ওয়াজিব অধ্যায়,ফাত্হুল কাদীর,রশীদিয়া-৫/৪৪৬,আদাবুল মাসাজিদ-৩৯, আশরাফুল ফাতাওয়া-৩/৩২৮)
প্রমাণাদী
(۱)وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُولَئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (سورة البقرة،১১৪)
(۲)-- قَالَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَىْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلاَ الْقَذَرِ إِنَّمَا هِىَ لِذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلاَةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ গ্ধ. (صحيح مسلم ، باب وُجُوبِ غَسْلِ الْبَوْلِ)
(۳)وَقَدْ ذَكَرَ الْمُصَنِّفُ فِي عَلَامَةِ النُّونِ مِنْ كِتَابِ التَّجْنِيسِ : قَيِّمُ الْمَسْجِدِ إذَا أَرَادَ أَنْ يَبْنِيَ حَوَانِيتَ فِي الْمَسْجِدِ أَوْ فِي فِنَائِهِ لَا يَجُوزُ لَهُ أَنْ يَفْعَلَ ؛ لِأَنَّهُ إذَا جَعَلَ الْمَسْجِدَ سَكَنًا تَسْقُطُ حُرْمَةُ الْمَسْجِدِ ، وَأَمَّا الْفِنَاءُ فَلِأَنَّهُ تَبَعٌ لِلْمَسْجِدِ- ( فتح القدير- فَصْلٌ لَمَّا اخْتَصَّ الْمَسْجِدُ بِأَحْكَامٍ تُخَالِفُ أَحْكَامَ مُطْلَقِ الْوَقْفِ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.