![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকার ছড়া মিঠে কড়া, লিখি শুধু ঢাকার ছড়া ।।
আজ বৃহস্পতিবার হওয়াতে ঢাকার রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম । এখন বিকাল অফিস ছুটি হয়েছে , কারো বা হচ্ছে । ্এখন আষাঢ় মাস, মাঝে মাঝে বৃষ্টি তার সাথে রোদ । দম বন্ধ করা এক ধরনের গরম সবাইকে অস্থির করে তুলেছে ।
ঘরমুখো মানুষ জন দির্ঘস্থায়ী এক জ্যামে গুলিস্থানের রাস্তাগুলোতে আটকা পড়েছে । কেউ বাসে, কেউ রিক্সায়, কেউ নিজের প্রাইভেটকারে। যারা নিজেদের কারে বা জিপে আছে তারা এসি ছেড়ে দিয়ে রবিন্দ্র
সঙ্গীত শুনতে শুনতে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে।
ঢাকার রাস্তার চিরচেনা এই জ্যাম নগরবাসির গাঁ সঁওয়া হয়ে গেছে। এই জ্যামের একটা ভালোদিক হলো বাঙালীর ধৈর্যের ব্যাপক পরীক্ষা হয় । তবে এই পরিক্ষায় পাশ করা ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই।
আর একটা ভালো দিক হলো ভ্রম্যমান হকারদের ব্যাবসাপতি হয় জমজমাট। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ঠান্ডা কোক, পানি, গরম গরম পপকর্ণ, বই , দাতের মাজন , টুথপেস্ট-টুথব্রাস । কেউ ফুলের মত সাজিয়ে আমড়া কিক্রি করছে । বাসের ভিতরে বাইরে, ফুটপাতে-রাস্তায় গলাছেড়ে হাঁক দিয়ে একদামে অথবা দরদাম করে সব কিছু বিক্রি করে যাচ্ছে।
তার সাথে যোগ হয়েছে বাসে বাসে সাহায্যপ্রার্থীদের আনাগোনা । ছোট-ছোট বাচ্চারা মলিন কাপড় পরে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দেয়া কথা করুন মিনতি মাখা সুরে বলে যাচ্ছে বাসের যাত্রীদের সামনে । মা নেই বাবা নেই,ঘরে তার চেয়েও ছোট ভাই বোন তাদের খাবার যোগাড় করার জন্যে সে সাহায্য চাচ্ছে ।আথচ ঐ মেয়েটির মা মেয়েটিকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে ফুটপাতে বসে অপেক্ষা করছে মেয়েটি কত টাকা নিয়ে আসে তার জন্যে। বোরখা পরা নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধ্া, বিভিন্ন ধরনের পঙ্গু ব্যক্তি বাসে থেকে বাসে গিয়ে প্রাইভেট কারের জানালার কাছে গিয়ে হাত পেতে সাহায্য চাচ্ছে ।
এই সব দেখতে দেখতে আমি আসছিলাম গোলাপশাহ্ মাজারের দিক থেকে, গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের দিকে । এই সময় গাড়ি,রিক্সা সব চলা শুরু করলো । তখন এক নারী কন্ঠ চিৎকার দিয়ে উঠলো ‘আমার চেইন,আমার চেইন বলে।‘ রিক্সার উপর বসা নারীটি তার একটি হাত উচিঁয়ে ক্ষিণ
স্বরে বলছে চেইন, চেইন।এই পথে যারা নিয়মিত যাতায়াত করে এবং যারা এই গুলিস্তানে বিভিন্ন কাজ কর্ম করে তাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না কি ঘটেছে ।
এক যুবককে দেখা গেল দৌড়ে পালাতে । ধর ধর বলে তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করছে কয়েকজন
লোক। লম্বা, কালো চিকন শরীরের ধাওয়া খাওয়া যুবকটি বেশীদুর যেতে পারলো না তার আগেই ধরা খেয়ে গেল। মাওলানা ভাষানী হকি স্টেডিয়ামের নিচে দোকানের সামনে যুবকটি পড়ে গেল ।
শুরু হলো মার । যে মার শুরু হলো তার নাম হলো ”ইচ্ছাপুরণ মার ”। যে যার ইচ্ছমত তাকে মারতে লাগলো । যুবকটি মার খাচ্ছে আর চিল্লাচ্ছে ”ও মাগো মইরা গেলাম, ও বাবাগো মইরা গেলাম । ও বাই ্আমারে আর মাইরেন না , মরে গেলাম বাই(ভাই)। আমি ছিনতাই করিনি বাই , আমি কিছু নিইনি বাই
মাপ করেন বাই , এই বাবে মারলে মরে মইরা যামু কিন্তু ।”
একজন বলল , “তোরে মাইরা ফালাইবার জন্যেই তো মারছি, আমার শ্বশুরবাড়ী থেইকা দেয়া হাত ঘড়ি তুই ছিনতাই করচোস, এই গুলিস্তানে এই হান থেইকা , আমার ঘড়ি তুই কাইড়া নিচোস।” শুকনা খিটখিটা মেজাজের এই পাতলা লোকটি চড়, লাথি মেরে যাচ্ছে আর বাকিরা মার থামিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে ।তার গায়ে যে শক্তি তাতে মনে হচ্ছে না, তার মারের কারনে ছিনতাইকারি যুবকটির কোন সমস্যা হচ্ছে । তবুও সে চিল্লাছে মরে গেলাম, মনে গেলাম বলে।
এবার আর একজন আসলো তার নাকি মোবাইল ছিনতাই হয়েছে । সে বাসের জানালার কাছের সিটে বসে কানের কাছে মোবাইল নিয়ে তার প্রেমিকার সাথে কথা বলছিলো। বাসে বসে জ্যামের ভিতর সময় কাটানোর জন্যে সবাই যেমন প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় সব কথা সেরে নেয় , সে রকম না সে তার জিবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছিলো সে সময় । আর সেই মূহুর্তে তার মোবাইল কানের কাছ থেকে ছো মেরে নিয়ে গেছে গুলিস্তানের বিখ্যাত ছিনতাইকারিরা । আর সে দিনই প্রেমিকার সাথে তার সম্পর্ক কাটাকাটি হয়ে গেছে।
উপস্থিত জনতাকে অত্যন্ত করুন সুরে এই কথা শুনিয়ে ধরা পড়া ছিনতাইকারিকে সে কিঞ্চিত মারার অনুমতি চাইলো । উপস্থিত জনতা লোকটির ব্যাথায় সমব্যাথী হয়ে উতলা হয়ে পড়লো ।
কেউ বলল,“মারেন ভাই ! মনের আশঁ মিটিয়ে মারেন ।যে আপনার এত বড় ক্ষতি করতে পারে তাকে আপনি মারবেননা তাই কি হয় ?
প্রেমিক লোকটি বলল,“ভাই আপনারা কি কেউ ওকে একটু বসিয়ে দিতে পারবেন ? আমি ওর গালে একটা চড় মারবো ।” এই কথা বলার পর মার খেয়ে শুয়ে থাকা লোকটি আশ্চার্যজনক ভাবে নিজেই কাছের দেবদারু গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলো।প্রেমিক লোকটি আস্তে আস্তে যুবকটির কাছে যেয়ে বিড় বিড় করে কি যেন বলল, তার পর আস্তে করে তার গালে একটি চড় মারলো । এ চড়ে ব্যাথা পাওয়ার বদলে যুবকটি হেসে উঠলো । চড় মেরে প্রেমিক লোকটি কোন দিকে না তাকিয়ে ঐ স্থান ছেড়ে সোজা চলে গেল।
আমি ভাবলাম, প্রেমিক হৃদয় বড়ই নরম হয়, নরম মনের কারনে সে এত বড় ক্ষতির পরও ছিনতাইকারিকে সে ভাবে মারলো না । প্রেমিা হৃদয় বড়ই মহান ।
হঠাৎ করে একজন এসে, ছিনতাইকারি যুবকটিকে লাথি মেরে ফেলে দিলো। মনে হচ্ছে দ্বিতীয়দফা মার শুরু হবে । সে বলল, আমার মানিব্যাগ গতকাল বাসের ভিতর থেকে খোয়া গেছে , এমন ভাবে নিছে আমি টের-ই পাইনি। শালা মানিব্যাগ নিছিস আজ তোর পকেটমারি ছুটাবো। তাই বলে, সমান তালে মারতে লাগালো ।
যুবকটি যতই বলে আমি পকেটমার না, ঐ রকম ছোট কাজ আমি করি না । মানিব্যাগ খোয়ানো লোকটি ততই জোরসে মারতে লাগলো ।যুবকটি জোর প্রতিবাদ জানাতে লাগলো যে সে পকেটমার না । তার ভাব দেখে মনে হলো, সে ছিনতাইকারি ঠিকই কিন্তু পকেটমারের মত কারো অজান্তে কিছু নিয়ে নেয়ার মত কাপুরুষ সে নয় । সে ছিনতাইকারি ! মোবাইল, মানিব্যাগ, চেইন এইসব টান দিয়ে নিয়ে সে দৌড়ে পালায় । অথবা রাত্রে চাকু বা ক্ষুর বাগিয়ে ধরে ভয় দেখিয়ে এটা ওটা কেড়ে নেয় । তাই বলে সে পকেটমার হতে পারে না ।
যার মানিব্যাগ গায়েব হয়েছে, সে মার থামালো । এরপর ভিড় ঠেলে মাথায় পাগড়ী পরা লম্বা পাঞ্জাবী গায়ে দাড়িওয়ালা নুরানী চেহারার এত ভদ্রলোক তার চরম রাগ সংবরন করে, বিস্ফোরক নয়নে মার খেয়ে
পড়ে থাকা যুবকটির দিকে তাকালো । সে দৃষ্টিতে যুবকটির ভষ্ম হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আগুন না বের হওয়াতে কিছুই হলো না । সিনেমার সুপারম্যান যেমন চোখের আলো দিয়ে কড়াইয়ের ডিম অমলেট করে ফেলে , লোকটি পারলে তাই করে ফেলত। কিন্তু তাতো সম্ভব না, কারন তিনি সুপারম্যান নন।
তার রাগের কারন তিনি উপস্থিত উত্তেজিত জনতাকে শুনালেন। দুইদিন আগে বায়তুল মোর্কারম মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ার সময় তার নতুন কেনা বাটার স্যান্ডেল জোড়া হারিয়ে গেছে মানে চুরি হয়েছে । খোদার ঘর থেকে জুতাচুরি ! এত মহা অন্যায়!
হুজুর এগিয়ে এসে বললেন, হারামজাদা নাফারমান বান্দা, খোদার ঘর থেকে জুতা চুরি করিস! তোর কি পরকাল বলে কিছু নেই ? এই বলে গোজরাতে লাগলেন ।
মার খেয়ে পড়ে থাকা যুবকটি ক্ষিনস্বরে বলল,“হুজুর আমি কোনদিন আমি কোনদিন মসজিদে যায়নি। অযু কি ভাবে করতে হয় তাই জানিনা । অযু ছাড়া কি আল্লাহর ঘরে গেলে অনেক গোনা হয় ? তাই কোন দিন আমি মসজিদে যায়নি । আমি জুতা চুরি করব কি ভাবে ? হুজুর আমি জুতা চুরি করিনি ।”
হুজুর আরও বেশী রেগে গেলেন, যে ও অযু পর্যন্ত করতে জানে না । নামাজ তো দুরের ব্যাপার । হুজুর নিতান্ত ভদ্রলোক বলে যুবকটির গাঁয়ে হাত তুললেন না । কিন্তু উপস্থিত জনতাকে আর সামলানো গেল না জনতা এবার জিহাদী জোসে যুবকর্টি উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাকে তৃতীয় দফা বেদম প্রহার করা হলো। যুবকটি আগের মতই চিল্লাতে লাগলো ,আর মারের যন্ত্রনায় কাতরাতে লাগলো ।
এখন তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে , চোখের নিচে কেটে গেছে , সেখান থেকে রক্ত হচ্ছে ।যুবকটি মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়েছে । একেবারে নিশ্চুপ মেরে পড়ে আছে, কোন নড়াচড়া করছে না, কোন শব্দ ও করছে না ।
উপস্থিত জনতার ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে , অতিত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই জগতে যত চুরি হয়েছে, যত ছিনতাই হয়েছে সব অপরাধের ভার এখন একাই তাকে বহন করতে হবে । তাই যে যার মত লাথি, চড় মেরে তার মনের ঝাল মিটিয়ে নিচ্ছে । মনের রাগ, ঘৃণা কমানোর একটা বস্তুু এখানকার জনতা হাতের পেয়েছে তার সদ্বব্যাবহার তো তাকে করতেই হবে ।
কেউ একজন এক বলল, “ও কিন্তু একা না, ওরা সঙ্ঘবদ্ধ দলের সদস্য এর মাথার উপরে কেউ আছে ।দেখবেন ঠিকই সে এসে একে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে , না একে বাচিয়ে রাখা যায় না ।” উপস্থিত জনতাও বলল, “না একে বাচিয়ে রাখা যাবে না ।”
কেউ একজন দৌড়ে লাঠি আনতে গেল ।তাকে বেশীদুর যেতে হলো না, সামনেই একটা ভাঙ্গা বেঞ্চীর পায়া দেখতে পেল । সে বিরদর্পে বেঞ্চীর পায়া হঠাৎ মাথার উপরে উঠিয়ে, উচিঁয়ে ধরে নিয়ে আসছে ।তার ভাবখানা এমন যে , সে সোজা এসেই শুয়ে থাকা ব্যাথায় কাতর মানুষটির মাথায় কষে একটা ঘাঁ বসিয়ে দিবে। আর ওটা দিয়ে মারলে একটার বেশী দুইটা আঘাত করা লাগবে না । একটাতেই কর্ম সারা হয়ে যাবে ।
সামনের পরে একটা মানুষ মারা যাবে ! সামান্য একটা কাজের জন্য আশরাফুল-মাখলুকাত তার নিজ সদস্যকে হত্যা করবে! উত্তেজিত জনতা আবেগের বশে অনেক কিছু করতে পারে । ঢেউ যে দিকে যায় জনতা সেদিকেই দোলে। কিন্তু আমি তো সাধারন মানুষ না, হিমু। যদিও নকল হিমু । তবুও আমাকে আবেগকে বশ করতে হবে । হিমুরা কারো ক্ষতি করে না, কারো ক্ষতি করতেও দেয় না ।
আমি ভাবলাম যে ভাবেই হোক একটু সময় ক্ষেপন করতে হবে । একটু সময় পাওয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়া যেতে পারে । আর সেটা করতেই হবে ।
বেঞ্চের পায়া হাতে মারতে উদ্যত লোকটি যখন গোল হয়ে ঘিরে থাকা মানুষের মাঝে প্রবেশ করলো । আমি হাত উচিয়ে উচ্চস্বরে বললাম, “থামেন ! এখনো অনেক কাজ বাকি । আমরা কিন্তুু এখনো তার দেহ তল্লাশী করিনি, সে স্বর্ণের চেইনটা কোথায় রেখেছে আমার এখনো সেটা পায়নি । তার দেহ চেক করতে হবে । আর তার দলবল কোথায়, কারা তার সাথে জড়িত, এর সাথে আর কে কে আছে সেটা জানতে হবে । আমরা যদি চেইনটা উদ্ধার না করতে পারি তাহলে যার চেইন ছিনতাই হয়েছে তাকে আমরা কি জবাব দেব। হয়তো সে ভাববে যে চেইনটা আমরাই গায়েব করে দিয়েছি ।”
আমার কথায় উপস্থিত যেন সম্বিত ফিরে পেল। তারা বলল, তাইতো আগে খুজতে হবে ও চেইন কোথায় রেখেছে। জনতা দ্রুত বুঝতে পারলো তারা একটা মহা ভুল করে ফেলছিলো ।
দুইজন লুঙ্গীপরা লোক মহাউৎসাহে ছিনতাইকারির শরিরে তল্লাশী শুরু করলো। প্রথমে প্যান্টের পকেটে, গাঁয়ে থাকা কালো টি-শার্টের ভিতরে , প্যান্টের ভিতরে নানান জায়গায় কায়দামত তন্ন, তন্ন করে খুজে দেখলো । যাকে বলে চিরুনী তল্লাশী । কিন্তুু কোথাও স্বর্ণের চেইন খুজে পাওয়া গেল না । পরনে থাকা
জিন্সের প্যান্টের পকেটে পাওয়া গেল এক টুকরো কাপড় যেটা মনে হয় রুমাল হিসাবে ব্যাবহার করা হয় । আর পাওয়া গেল কিছু বুটভাজা যার দানাগুলো খুব নরম হয়ে আছে । উৎসাহী দুই অনুসন্ধানকারী বড়ই অসন্তুুস্ট হলো ।
একজন পড়ে থাকা যুবকের পাছায় লাথি দিয়ে বলল, “শালা মনে হয় চেইন গিলে ফালাইছে, তা না হলে পামু না ক্যান ? যে ভাবে খুজছি তাতে দেহের যে কোন জায়গায় থাকলেই পাইতাম।”
উপস্থিত নেতা গোছের একজন বলল,“এই ওর মুখের ভিতর খোজ, আর মুখের ভিতর না পাইলে পেছনে খোজ ।”
পিছনে খোজা বলতে উনি মলদ্বারের ভিতরে খোজার কথা বললেন।
তল্লাশীর কাজে অংশ নেয়া ঐ দুইজন আবার তল্লাশীতে নেমে পড়লো। একজন ছিনতাইকারির মুখটা দুইহাত দিয়ে ফাক করে ধরলো, আর একজন আঙ্গুল দিয়ে মুখের ভিতরে, গলার ভিতরে ভয়াবহ ভাবে খুজতে লাগলো। একজন মানুষের মুখ মনে হচ্ছে যেন কোন পাহাড়ের গুহা। সেই গুহায় ধনরতœ খোজার কোন বিশাল মিশনে তারা নেমেছে । কিন্তু সেখানেও তারা ব্যার্থ হলো ।
এবার তারা গেল লোকটির পশ্চাতদেশের পাশে, এখন মলদ্বারে খোজার পালা । ছিনতাইকারি এবং পকেটমাররা ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকলে টাকা, স্বর্ণ অনেক সময় গিলে ফেলে অথবা গুহ্যদ্বার দিয়ে ভিতরে চালান করে দেয় । অনেক কষ্ট করে তাদের এই কৌশল রপ্ত করতে হয় ।
যেহেতু তল্লাশীর কাজে রত দুইজন, ছিনতাইকারির সারা দেহ তল্লাশী করেছে এমনকি মুখও তল্লাশী করেছে এখন মলদ্বার তল্লাশীর দায়িত্বও তাদের নিতে হবে ।কিন্তু ঘৃণায় নাকি লজ্জ্বায় তারা এই মহান দায়িত্ব পালনে অনিহা দেখাচ্ছে সেটা বুঝা গেল না । তাদের আগের সেই উৎসাহ আর দেখা যাচ্ছে না । তারা ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, ইতস্তত করছে ।
এমন সময় সেই নেতা গোছের বড় ভাই হঙ্কার দিয়ে উঠলো,“ওঔ ! ওর প্যান্ট খোল ! খুলে দ্যাখ ওর পাছার ভিতরে লুকায়ে রাখছে কি না ।খোল ! প্যান্ট খোল!”
একজন ঠেলামেরে ছিনতাইকারিকে উপুড় করে ফেলল । এখন তার প্যান্ট খোলা হবে। জনতার আগ্রহ ও উৎসাহ দ্বিগুন বেড়ে গেল। স্বর্ণের চেইন কি ওখানে আছে ? পাওয়া যাবে তো ? তুমুল উত্তেজনা এখানে দাড়িয়ে থাকা মানুষের মাঝে। যে সব ছেলেমেয়েরা দুইটাকার পত্রিকা বিক্রি করে , বাসে বাসে ঘুরে চকলেট , পানি বিক্রি করে তারা সব কাজ ফেলে এই রকম আনন্দময় বিশেষ ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে । তারা কেউ নড়ছে না । লুঙ্গীপরা লোক থেকে শার্ট,প্যান্টপরা ভদ্রলোকেরা ঠায় দাড়িয়ে আছে । যেন যাদুকর তার সব চেয়ে আকর্ষণীয় খেলাটি এখন দেখাবে ।
অবশেষে শুরু হলো সেই পর্ব। প্রথমে একটু কাত করে প্যান্টের বোতাম খোলা হলো । তারপর চেইন খোলা হলো । এবার আবার উপড় করে আস্তে আস্তে প্যান্ট নিচের দিকে নামানো হলো । ছিনতাইকারির উচুঁ হয়ে থাকা কালো নিতম্বের দিকে তাকিয়ে সবাই তাকিয়ে রইলো । ছিনতইকারি যুবকটি কোন নড়াচড়া করছে না । সে মাঝে মাঝে চোখ মেলছে আবার বন্ধ করছে । সে হয়তো ভাবছে পিছনে যা হয় হোক মার তো থেমেছে , এটাই শান্তি ।
এখন তার মলদ্বারে হাত দিয়ে খুজবে কে, দুজনের কেউ রাজি হচ্ছে না । অবশেষে আবার সেই বড় ভাইয়ের ঝাড়ি খেতে হলো দুজনকে ।
আমি ভাবছি, এই বড় ভাই না থাকলে এই এত বড় মহৎকর্ম, এই অনুসন্ধান কার্যক্রম এবং উপস্থিত জনতা যে ব্যাপক বিনোদন পাচ্ছে তার কিছুই হতো না । মনে মনে বড় ভাইকে ধন্যবাদ দিলাম ।
এই যুবকটিকে বাচানোর জন্যে আমি যে একটু সময় ক্ষেপনের চাল চেলেছিলাম তা কাজে লাগাতে ভালো লাগছে । এখন পুলিশ আসা পর্যন্ত যেভাবেই হোক একে বাচিয়ে রাখতে হবে ।
বড় ভাইয়ের ঝাড়িখেয়ে সেই দুইজন আবার কাজে লেগে গেল । একজন উপুড় হয়ে থাকা যুবকটির দুই ঠ্যাং একটু ফাঁক করে ধরলো, অন্যজন নাক সিটঁকাতে, সিটঁকাতে মলদ্বারের কাছে হাত নিয়ে একান্ত অনিচ্ছায় কিছু খুজতে লাগলো । অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে, মুখ কালো করে খোজার পর্ব চলতে লাগলো ।
উৎসুক জনতা অতি উৎসাহ নিয়ে এই সর্ব শেষ অভিনব খোজার পর্ব দেখছে । যেন মহাসাগরে অতি মূল্যবান কিছু হারিয়ে গেছে ডুবুরী নামিয়ে সেটা খোজা হচ্ছে । কিন্তু শত তল্লাশী, অনুসন্ধান সত্তেও কোন কিছু ঐ মানবের পশ্চাতদেশ থেকে উদ্ধার করা গেল না ।
অনুসন্ধানকারি দু,জন বড়ই হতাশ হলো । হতাশভাবেই তারা কাজে ইস্তফা দিলো । কিন্তুু পড়ে থাকা যুবকের প্যান্ট তারা যে খুলেছিলো তা আর উপরে উঠালো না । আধোঁ উলঙ্গ অবস্থায় সে মাটিতে সেই ভাবে উপুড় হয়ে পড়ে রইলো । চলবে.....
(পড়তে চাইলে আগামিতে আরও পোস্ট করার আশা রইলো)
©somewhere in net ltd.