নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকার পথে চলতে চলতে লিখে যায়। ঢাকার ছড়া, মিঠে কড়া। আর আছি একটা On-line পত্রিকার সাথে নাম www.valokhabor.com

হানিফুর রহমান হানিফ

ঢাকার ছড়া মিঠে কড়া, লিখি শুধু ঢাকার ছড়া ।।

হানিফুর রহমান হানিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নকল হিমু (সতর্ক বার্তাঃ পড়তে চাইলে নিজ দায়িত্বে পড়বেন, সমালোচনাতে বাধাঁ নেই )

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

গতকালের পর.......
কিছু না পাওয়া যাওয়াতে খোজার কাজে অংশ নেয়া দুইজনের সাথে উপস্থিত জনতাও হতাশ হলো । তাদের হতাশার অভিব্যাক্তি ঝবে পড়ছে বিভিন্ন কথায়।
কেউ বলছে, “বড়ই শেয়ানা মাল এইডা, ছিনতাইয়ের সাথে সাথে পাচার করে দিছে ।”
কেউ বলল,“এরা অনেক কৌশল জানে । ছিনতাইয়ের সাথে সাথে খেয়ে ফেলেছে । পরে বুটের ডাল দিয়ে ডাবল পেট ভাত খেয়ে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে পরে সেখান থেকে তুলে ধুয়ে নিবে। এদের কাজ কারবার তো জানেন ন! আমি জানি । এই গুলিস্তানে আছি আজ বাইশ বছর ধরে, এদের নাড়ী নক্ষত্র সব চিনি ।”
ছিনতইকারির দেহ তল্লাশী করা ঐ দুইজন তাদের ব্যার্থতা মানতে নারাজ। জগতের কেউ-ই ব্যার্থতার দায়ভার নিতে চায় না। এখন তাদের দৃঢ়হ বিশ্বাস, স্বর্ণের চেইন ছিনতাইকারির পেটের ভিতরে আছে, শুধু সেই কারনে তারা ওটা খুজে পায়নি। এই কারনে এখন যত রাগ ঐ ছিনতাইকারির উপরে ঢালার আয়োজন করতে তারা ব্যাস্ত। কিন্তুু কি করবে তারা তা বুঝতে পারছে না । তারা কি বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ঐ যুবকের পেট ফাড়ার অনুমতি নেবে ? না কি একটা রাম ছ্যাঁচা দিয়ে একেবারে ঘুম পাড়িয়ে দিবে ?
পরিস্থিতী বেশী ভালো মনে হচ্ছে না । হতে বেঞ্চির পায়া নিয়ে দাড়িয়ে থাকা লোকটি নড়েচড়ে উঠলো । মনে হয় সে আর সইতে পারছে সইতে পারছে না । ইদুঁর মারার কাজ যেমন মানব সম্প্রদায় অতি উৎসাহের সাথে করে, এই লোকটি মনে হয় সেই রকম উৎসাহ দেখাচ্ছে, পড়ে থাকা লোকটিকে মারার জন্যে । সে বড় ভাইয়ের কাছে অনুমতি চাইলো যে কষে কয়েকটা ঘাঁ দিয়ে ছিনতাইকারিকে শেষ করে দেবে কি না । সে ক্রমেই যুবকটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো । কিন্তু বড় ভাই হাত উচিয়ে তাকে থামতে বলল। থামতে বলে সে নিজেও চুপ করে রইলো । আসলে সে এখন কি করবে কি সিদ্ধান্ত দেবে সে নিজেও মনে হয় জানে না । চুপ করে থেকে একটু পরে বলল,“তোরা যা পারিস কর আমাকে এই ফ্যাকড়ার ভিতরে আর ডাকবি না । ” এই বলে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেল ।
ভাবছি আর মনে হয় যুবকটিকে রক্ষা করা গেল না। কিন্তুু কিছু একটা তো করতেই হবে । হিমু যে ভাবে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে হতবুদ্ধি করে দেয় আমি পারি কি না একটু চেষ্টা করে দেখি । আমি ভিড় ঠেলে পড়ে থাকা যুবকটির মাথার কাছে গিয়ে দাড়ালাম, তাকে ঘিরে থাকা মানুষদের উদ্দেশ্য কিছু বলার জন্যে ।
খুবই উচ্চস্বরে বলতে লাগলাম, ভাইসব অন্যায়কারিকে প্রতিরোধ করা ও শাস্তি দেয়া অতি উত্তম কাজ, বড়ই ছোয়াবের। এতক্ষন ধরে সেই মহান কাজ আপনারা করছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে । কবি বলেছেন “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে ।” আমরা যারা এখানে আছি একজনবাদে সবাই ন্যায়ের পক্ষে এবং আমরা কোন অন্যায় কাজ সহ্যও করব না । কিন্তুু আমরা যেটা করছি সেটা আইন হাতে তুলে নেয়া । চোখের বদলে চোখ, হাতের বদলে হাত, জানের বদলে জান নেয়ার নিয়ম আছে। আছে কিনা কন । জনতা সমস্বরে জবাব দিল হ্যাঁ নিয়ম আছে ।
আমি আবার শুরু করলাম, কিন্তু একটা স্বর্ণের চেইনের বদলে কি একটা মানুষের জিবন কি নেয়া যায় ? উপস্থিত জনতার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম । তারা কেউ কিছু বলছে না, সবাই মুখ চাওয়া-চায়ি করছে । এই সব প্রশ্নের জন্যে তারা প্রস্তুুত ছিল না তা বুঝা যাচ্ছে ।
আমি বললম, “একজন মানুষের জিবনের কাছে একটা স্বর্ণের চেইন খুবই তুচ্ছ। আমারা হাজার হাজার স্বর্ণের চেইন তৈরি করতে পারি একটা জিবন তৈরি করতে পারি না। আসুন আমরা একে পুলিশের কাছে তুলে দিই। পুলিশ তাদের আইনমত যারা পারে করবে । এই দেশে আইন আছে আদালত আছে, আইন তার বিচার করবে ।
ইতমধ্যে মারমুখী জনতা অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে । বেঞ্চের পায়া হাতে লোকটি তার জিনিসটা নামিয়ে রেখেছে । এখন একধরনের শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে ।
আমি বললাম,“যদি ও মারা যায় তাহলে কিন্তু আমরা জানতে পারব না কে ওর সাথে আছে।এর সাথে কোন রাঘববোয়াল জড়িত কি না। স্বর্ণের চেইনটারই বা কি হলো। তাছাড়া আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খারাপ করার জন্যে এটা বিরোধীদলের কোন ষঢ়যন্ত্র কি না তার রহস্যও বের করা অতিব জরুরী। লোকটি যদি কোন কারনে মারা যায় আমরা কোন কিছুই যানতে পারব না।
নেতাগোছের সেই বড় ভাই আবার কখন এসে এখানে দাড়িয়েছে আমি খেয়াল করিনি। সে বলল.“কথাডা আপনি ঠিক কইছেন, ওকে জানে মারলে আমরা কিছুই জানবার পারুম না কিন্তুু আপনি কে? আপনাকে তো চিনলাম না । বহুত বছর অয় গুলিস্তানে আছি মাগার আপনারে তো ঠিক দেখছি বলে মনে পড়ে না । খালি পাও দেহী, আবার পাঞ্জাবী পিন্দেছেন । বালা কইরা কন আপনি কে ?”
আমি দার্শনিকের মত বললাম,“আমি আর সবার মত মানুষ, আর কিছু না। আপনার যেমন দুইটা চোখ, দ্ইুটা পা, দুইটা হাত আছে আমার ও তাই আছে । তাই আপনার মত, সবার মত আমিও মানুষ”
হ হ দেখছি তো ঐ ছিনতাইকারির ও আপনের মত সবই আছে কিন্তুু ও ছিনতাইকারি আর ওডাই ওর পরিচয়, আপনার পরিচয় কি ? নেতা গোছের লোকটি বলল।
বেঞ্চের পায়া হাতে থাকা লোকটি ঐ বড় ভাইয়ের কাছে যেয়ে বলল, ভাই আমার কেমন যেন সন্দ হইতাছে । হলুদ পাঞ্জাবীপরা লোকটি মনে হয় ঐ ছিনতাইকারির গুরু ভাই। সেই কহন থেইকা ওরে বাচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। মনে লয় এই দলের ঐ গডফাদার। আপনে একটু ভাইবা দেইখেন কইলাম।
বড়ভাই বলল, বেক্কল তুই কি কবি, এইডা তো আমি আগেই টের পাইছি। খালি ভদ্দর লোকের মত চেহারা বলে কিছু কই নাই। এহন তল্লাশী ওরে ও করোন লাগব।তার আগে পলাশ ভাইরে ডাক, আমার পক্ষে আর সম্ভব না। এর পিছনে আরও বড় কেউ আছে । তাড়াতাড়ি যা পলাশ ভাইরে ডাক । আসি একটু চা খেয়ে আসি।
একজন দৌড়ে গেল পলাশ ভাইকে ডাকতে। পলাশ ভাই সাথে সাথে এসে হাজির । গুলিস্তান শপিংকমপ্লেক্সে তার দোকানেই ছিলো। সেখানে বসেই সে পুরো গুলিস্তান নিয়ন্ত্রন করে। চাঁদাবজি, শালিস বিচার সবকিছুই।
তার এলাকায় এতবড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, অথচ সে জানবে না তাই কি হয় ? তাকে সব বিষয়ে খোজ রাখতে হয়। পলাশ ভাই এসে হুংকার দিয়ে বলল, কি হচ্ছে এখানে? যে পলাশ ভাইকে ডাকতে গিয়েছিলো সে বিস্তারিত ভাবে এবং তার সাথে আরও রং চড়িয়ে ঘটনার সব কিছু পলাশ ভাইকে শুনালো। সে সব কিছু শুনে ছিনতাইকারি যুবকের পাছায় কষে একটা লাথি দিল। যুবকটি ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো ।
উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্যে করে পলাশ ভাই বললেন, আমি হলাম গুলিস্তান যুবলীগের নেতা, এখানে আমার কথাই শেষ কথা। ছিনতাইকারির দিকে ফিরে সে বলল, ছিনতাই করছোস ভালোকথা মাল কোথায় রাখচোস । বাইর কর তা না হলে তোর পেট চিরে বাইর করবো। খাইয়া ফালাইচোস? তোর পেটে এমন পাড়া দেব যে নাড়ী-ভুড়ী সব পিছন দিয়ে বাইর হয়ে আইবো। ক কার কাছে দিছোস ? কথা ক! এই বলে পলাশ ভাই যুবকটির পেটে মোটা-মুটি জোরে তার কেডস পরা পা দিয়ে একটা পাড়া দিল। সাথে সাথে যুবকটি সোজা অবস্থা থেকে ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেল। এর পর কাত হয়ে শুয়ে রইলো।
মাটিতে পড়ে থাকা যুবকটি কি ভাবে কথা বলবে? তার কথা বলার কোন শক্তি আর অবশিষ্ট আছে কি না বুঝা যাচ্ছে না। শুধু মাঝে মাঝে চোখ মেলে তাকাচ্ছে । হয়তো পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে ।
যে লোক পলাশ ভাইকে ডাকতে গিয়েছিলো সে বলল,“ভাই ঐ হলুদ পাঞ্জাবীওয়ালাকে সবাই সন্দেহ করছে । ঐ লোকটি মনে হয় ছিনতাইকারির গুরু।ওকে চটকানি দিলে সব হড় হড় করে বাইর হয়ে আইব। আর চেইনটাও মনে হয় ওর লগে আে ছ । ”
পলাশ ভাই আমাকে কায়দামত চেক করার আদেশ দিলেন। একজন কষাই টাইপ চেহারার কালো, বেটে মত লোক এসে বলল,“হাত উচু।” আমি আত্মসর্ম্পনের ভঙ্গিতে দুই হাত উচু করলাম । সে বার বার আমার পাঞ্জাবীর পকেট খুজতে লাগলো । কিন্তু আমার পাঞ্জাবীর তো কোন পকেট নেই।কারন হিমুদের পাঞ্জাবীর পকেট থাকতে নেই। শত চেষ্টা করেও সে আমার পাঞ্জাবীর পকেট খুজে পেল না। এবার সে আমার পায়জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। সেখানেও সে স্বর্ণের চেইন পেল না । কিন্তু জনতা এই তল্লাশী পর্বটাও খুব উপভোগ করছে । লোকটি চোখে মুখে হতাশ ভাব নিয়ে আমার সারা শরীর খুজে যাচ্ছে । সে অবাক হচ্ছে, এমন একটা লোক যার ভদ্র ধরনের চেহারা, কথাবার্তাও সুন্দর কিন্তুু পায়ে জুতা নেই, আবার পাঞ্জাবীর পকেটও নেই বড়ই তাজ্জব ব্যাপার । এমন সব ভাষা লোকটির মুখে ফুটে উঠছে ।
আমি তাকে আরও তাজ্জব ও বোকা বানানোর জন্যে অত্যন্ত ভারিগলায় বললাম,“কিছু পেলি বাছা ?”
লোকটি মনে হয় আমার কথা ঠিক মত শুনতে পায়নি । অথবা বুঝতে পারেনি কোথা থেকে শব্দটা আসলো। সেটা বুঝার জন্যে সে তল্লাশী বাদ দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল ।
আমি আবার বললাম,“শরীর খুজে কিছু পেলি না বাছা? উপরে খুজে কি পাবি, সবই তো ভিতরে। মনের চোখ দিয়ে ভিতরে খোজ, সেখানেই পাবি অমূল্যরতন।”
মানুষ প্রথমবার কোন কথা ঠিকমত শুনতে না বা বুঝতে না পারলে, দ্বিতীয়বার যখন শোনে তখন ভাবে কি বোকা আমি ! আগে তো ঠিকই শুনেছিলাম। দ্বিতীয়বার কেন শুনতে হলো ।
আমার শরীরে খানা তল্লাশী চালানো লোকটি শুুধু বোকার মত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তা না হতভম্বের মত স্টাচু হয়ে গেল । যেন সে এই মাত্র কোন দৈব-বাণী শুনলো, যে দৈব-বাণী তার একেবারে অন্তরে গিয়ে পশেছে ।
লোকটি এখন মনে হলো তার চেতনা ফিরে পেয়েছে। সে হঠাৎ করে আমার পায়ে লুটিয়ে পড়লো, আর অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো। বলতে লাগলো,“বাবা আমারে ক্ষমা করে দেন, আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই।” আমার পা জড়িয়ে ধরে বলল,“আমায় ক্ষমা করেছেন কি না বলেন বাবা।”
আমি তার হাত ধরে মাটি থেকে উঠালাম, আর বললাম,“যে তার ভুল বুঝতে পারে তার ক্ষমা এমনিতেই হয়ে যায় । চাইতে হয় না। যা তোর নিজ কাজে যা ।”
আমি ভাবলাম বেশেীরভাগ মানুষই বড়ই দুর্বলচিত্তের। তার স্বাভাবিকতার বাইরে কোন কিছু দেখলেই সেখানে অজানা কোন শক্তির উপস্থিতি অনুভব করে। আর দুই একটা ধোয়াশা সৃষ্টিকরা কথা তাতে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগায়। লোকটির এই অবস্থা দেখে পলাশ ভাই আর স্থির থাকতে পারলেন না ।
তিনি বললেন,“ঔ হাঁদারাম এই দিকে আয় । ওর দেহ খোজা বাদ দিয়ে ওর পায়ে পড়লি, আবার দেহী কান্দোস ব্যাপার কি?”
লোকটি বিস্ময়ের ঘোরে এক নাগাড়ে বলে চলল,“ভাই উনি কোন সাধারন লোক না, কোন পীর-আউলিয়া হবেন নিশ্চয়, আমি ঠিকই বুঝেছি। দেখেন উনার পায়ে কোন জুতা নাই । আমি বার বার খুজেও উনার পাঞ্জাবীর কোন পকেট পায়নি । কাছে মোবাইল, মানিব্যাগ, টাকা-পয়সা কিছুই নাই । আর উনার গাঁ দিয়ে এমন সুবাস আসতাছে, আমি জিবনে যা কোন দিন পাই নাই। আমারে কয় কি জানেন? উপরে কি খুজিস, সবইতো ভিতরে । আমারে মনের চোখ দিয়ে দেখতে কয় । ”
আমি আজ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমেরিকা থেকে মামার পাঠানো একটা দামি স্প্রে গায়ে মেখে বের হয়েছি। সেটা স্ট্রবেরী ফেভারের । একবার গায়ে মাখলে অনেক সময় তার সুবাস থাকে।
আমি ভাবলাম, এই সুগন্ধী ওর জন্মের পর থেকে ঐ লোকটির নাকের কাছে পৌছায়নি। ওর মস্তিষ্কের এই সুগন্ধী সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। তাই হঠাৎ ওর মস্তিষ্ক যখন সম্পূর্ণ অচেনা একটা সুবাসের সংকেত পেল তখন ওর মন বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাবলো এটা কোন স্বর্গীয় সুগন্ধ। মানুষ জন্মের পর থেকে যে স্বর্গের চিন্তা করে মস্তিষ্ক তার সাথে মিলিয়ে একটা ফলাফল হাজির করলো। যেটা আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌছাতে ওর মনকে প্ররোচিত করেছে ।
পলাশ ভাই ঐ লোকটার কথা শুনে ওর গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিল । বলল,“ ব্যাটা তুই আমারে পীর-দরবেশ- ভন্ড চেনাস, আমি সবই চিনি । আমি গুলিস্তানে গরু চরাই না, মানুষ চরাই।আমি ঘাশ খায় না, ভাত খায় । তুই আমারে আকাশ-পাতাল চেনাস। এই গুলিস্তানে পীর ফকিরের অভাব নাই, ভন্ডের ও অভাব নাই সবাই আমারে হুজুর হুজুর করে । তুই আমারে নতুর হুজুর চেনাস ব্যাটা? বলদ কোথাকার, ভাগ এখান থেইকা। ”
পলাশ ভাই খুব রেগে গেছেন। তার সামনে অচেনা একজনকে অন্য কেউ হুজুর মানে, এই গুলিস্তানের মাটিতে দাড়িয়ে এটা তার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না । পলাশ ভাই তাই রেগে অস্থির ।শরীরের ভাষা, চোখের চাহনি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তার অস্থিরতা ।
পলাশ ভাইয়ের ধমক খেয়েও লোকটা নড়লো না । সে আমার পাশে দাড়ালো । এমন ভাবে দাড়ালো যেন সে এখনি আমার শিষ্যত্ব বরণ করে নিয়েছে। তার কাছে আমি এখন মহামানবের পর্যায়ের কেউ বলে মনে হচ্ছে।
আমি যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম, সেখানেই থাকলাম । মার খেয়ে শুয়ে থাকা ছিনতাইকারি তার জায়গায় আছে। এত গ্যাঞ্জামের মাঝে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তার পালানোর কোন ক্ষমতায় নেই।কিন্তু তার জ্ঞান আছে বুঝা যাচ্ছে । কারন সে বার বার চোখ মেলছে ।
পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে, উপস্থিত জনতা নিজ নিজ বাসায় ফেরার তাগিদও অনুভব করছে না। তার চোখের সামনে যে নাটক দেখছে তাতে তারা আবিষ্ট হয়ে আছে । বুঝা যাচ্ছে এতে তারা খুব মজা পাচ্ছে।
আমি পলাশ ভাইয়ের দিকে তাকালাম, ফুল-পাতার ছাপ দেয়া হাওয়াই শার্ট পরা, মাঝারি সাইজের মানুষটির বয়স হবে পয়ঁতাল্লিশ মত। তার চোখে মুখে কতৃত্ত্বের ভাব ঝরে ঝরে পড়ছে। মনে হয় সে কঠিন টাইপের মানুষ।শুধু আদেশ করতেই জানে ।
পলাশ ভাই আস্তে আস্তে আমার সামনে এসে দাড়ালো। সে আমার দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলো,“এই তুই কে ? ঠিক করে বলবি, নো হাঙ্কি পাঙ্কি। কোন চালাকি করবি না । চালাকি করলেই ছ্যাঁচা খাবি । তুই কিন্তু এখন বাঘের গুহায় । এখান থেকে ফিরতে হতে হলে সব সত্যি বলবি। আসলে তুই কে?”
আমি জানি যে যারা রাজনীতি করে এবং তার ভিতরে যারা লিডার হয় তারা তাদের চেয়ে নিচের পদের লোকদের তুই বলে সম্বোধন করতে বেশী ভালোবাসে। আর কর্মিরাও এটা পছন্দ করে নেতার সাথে বেশী ঘনিষ্ঠতা বুঝাতে। এই নেতারা তার কম বয়ষী বা কোন কর্মির নিকট থেকে তুই সস্বোধন জিবনে কল্পনাও করতে পারেনা। আমি একটু চেষ্টাকরে দেখতে চাচ্ছি এই অতি ক্ষমতাশালী পলাশ ভাইয়ের সাথে তুই তুমারি করে কথা বললে কি দাড়ায়।
আমি বললাম,“তুই জানিস, তুই কে? বাস্তবে আমরা কেউই জানি না, আমি নিজে কে । তাই তো সক্রেটিস বলেছেন ‘শহড়ি ঃযু ংবষভ’ নিজেকে জানো। নিজেকে জানতে পারলে জগতের সব কিছু জানা যাবে। নিজেকে অনুসন্ধান কর, নিজের ভিতরে কি আছে সেটা খুজে বের কর তাহলে সব পাবি। আর সেখানেই নিজেকে পাবি।”
পলাশ ভাই এই গুলিস্তানে দাড়িয়ে, অপরিচিত কারো মুখ থেকে তুই সম্বোধন পাওয়ার জন্যে মোটেই প্রস্তুত নয়। প্রাথমিক ধাক্কাটা সে সামলে নিল। তারপা অত্যন্ত ভারি গলায় বলল,“আসলেই তুই কে ?”
আমি ছোট্ট একটা রহস্যময় বিভ্রান্তীকর হাসি দিয়ে বললাম,“আসলেই তুই জানিস না আমি কে?”
ইতমধ্যে দেখা যাচ্ছে ভাষানি হকি স্টেডিয়ামের নিচে অবস্থিত দোকান গুলোর সামনে ছোট বট গাছটার নিচে যারা সারাদিন ক্যারাম খেলে তারা পলাশ ভাইয়ের পাশে দাড়িয়ে যাচ্ছে। এরা পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে। বুঝা যাচ্ছে এরা পলাশ ভাইয়ের লোক। এই সব যুবকদের চোখ জ্বল জ্বল করছে। যারা নেশা করে তাদের চোখ নাকি জ্বল জ্বল করে। ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে কি না বুঝতে পারছি না । এখন নার্ভ শক্ত রাখতে হবে। একটু এলোমেলো হয়ে গেলে, গণপিটুনির মার একটাও বাইরে পড়বে বলে মনে হচ্ছে না । যায় হোক সব কিছুর জন্যে আমি প্রস্তুুত। চলবে....
আগের কিস্তি পড়তে চাইলে আমার ব্লগে দেখুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.