![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।
শাহবাগ চত্বর নিয়ে নতুন রাজনীতি শুরু হচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবিতে শাহবাগের মঞ্চ সাধারণ মানুষের নজর কাড়ে। তবে এ মঞ্চ বিরোধীদলীয় জোটের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এখন মহাজোট সরকারও চাচ্ছে না গণজাগরণ মঞ্চ অব্যাহত থাক। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম ভেঙে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ নেতারা। আর এ জন্যে দায়ী করা হয়েছে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের একটি বক্তব্যকে। এর মধ্যে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সময় প্রথমবারের মতো প্রজন্ম চত্বর প্রথম পুলিশের বাধার সম্মুখিন হয়েছে। এই অবস্থায় আমজনতা অপেক্ষা করছে, আগামীতে কি হচ্ছে?
তবে আমরা যারা আমজনতা, তারা চাই 'প্রজন্ম চত্বর বেঁচে থাকুক, শাহবাগ জ্বলে উঠুক'।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সরকারি দলের যথেষ্ট দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় ওই আন্দোলন আর হালে পানি পাচ্ছে না। তাছাড়া বিরোধীদলের পক্ষ থেকে অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত দাবি গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তোলার আহবান জানিয়ে প্রয়োজনে সমর্থন দেয়ার আভাস দেয়া হয়। বিষয়টি বুমেরাং হতে পারে কিংবা রাজনৈতিক সংকট নিরসনে অনেকটা পয়েন্ট অব নো রিটার্নের অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি শেষ পর্যšত্ম গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উঠলে তা কখনো পছন্দ করবে না সরকারি দল। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রী বিকল্প মঞ্চ বা জনগণের মঞ্চ গঠনা করার আগাম ঘোষণা দিয়েছেন।
গোড়ার কথা জানা যাক। শুরুতে গণজাগরণ মঞ্চ নজর কাড়ে সবার। জাতীয় সংসদে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারক লিপি পাঠালে তা প্রশংসা পায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যের। অবশ্য সংসদ থেকে গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করে এক মাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল হক আজিম ওয়াক আউট পর্যন্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ যে স্মারকলিপি দিয়েছে তা আমি পড়েছি এবং তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
এরপর গণজাগরণ মঞ্চ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মিশরের চার দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের দাবিতে দেশটিতে যে তাহরীর স্কয়ারে বিক্ষোভ হয় তার সঙ্গে অনেকে তুলনা হতে গণজাগরণ মঞ্চের। কেউ কেউ আবার এর বিরোধীতা করে বলেন, পুলিশ ও সরকারের সহায়তা নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা কখনো মিশরের তাহরীর স্কয়ারের সঙ্গে তুলনা হতে পারে না। তবে সুশীল সমাজের একটা বিরাট অংশ ও মিডিয়ার ব্যাপক সমর্থন পায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। এরই মধ্যে আšত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসীর রায় দিলে তা অনেকে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ফসল বলে অভিনন্দন জানান। বিদেশি মিডিয়াগুলো গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে সতর্ক প্রতিবেদন করলেও কোলকাতা থেকে প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কবীর সুমন ও প্রতুল মুখোপাধ্যায় ওই আন্দোলন নিয়ে একাধিক গানও লেখেন। ভারতীয় মিডিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ প্রশংসা পেলেও টাইমস অব ইন্ডিয়া এ আন্দোলনের পেছনে দেশটির সরকারের হাত রয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইতিমধ্যে গণজাগরণ মঞ্চ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাদের কর্মসূচি পালন করেছে। তবে মহাজোট সরকারের অংশীদার জাপা নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ মঞ্চ ভেঙ্গে দেয়ার আহবান জানান। মঞ্চে প্রথম দিকে বাম ঘরানার ত্যাগী নেতাকর্মীরা আন্দোলন চাঙ্গা করে তুললেও এক পর্যায়ে এর পরামর্শক করা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গণজাগরণ মঞ্চে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বেসরকারি টেলিভিশনগুলো সরাসরি সম্প্রচার ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন ও কলাম লেখার মধ্যে দিয়ে একটি পর্যায়ে এ আন্দোলন রহস্যজনকভাবে ঝিমিয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আর্ন্তজাতিক বিশ্বে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে তেমন সমর্থন পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি সমর্থন জানান। চট্টগ্রামে ঘোষণা দিয়েও গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা হেফাজতে ইসলামের বিরোধীতা করলে সেখানে শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারেনি ডা. ইমরান এইচ সরকার। ফেনী পর্যন্ত যেতে পারলেও পুলিশের বাধার মুখে ঢাকা ফেরত আসেন। এরই মধ্যে শোলাকিয়ার ঈমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ গণজাগরণ মঞ্চের আদলে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ আয়োজন করলে তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি। বেসরকারি টেলিভিশনগুলো অতি উৎসাহে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদের সমাবেশ সম্প্রচার করলেও গত শুক্রবার একই স্থানে ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্লাসফেমি আইনের দাবিতে ইসলামি আন্দোলন ব্যাপক সমাবেশ করে। তবে ওই সমাবেশ মিডিয়ার নজর কাড়তে পারেনি।
সরকারি দলের অনেক নেতারাও এখন মনে করছেন, সরকারের বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় সরকারের মত শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ যে সব ঘোষণা দিয়েছে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তারা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে দিয়ে শাপলা চত্বরে একটি ফ্লপ সমাবেশ ও এরপর ট্রেনে করে শান্তির লংমার্চ বা অন্যকোনো কর্মসূচি নিয়ে মোটেও আগ্রহী নন। ঠাট্টা করে কেউ কেউ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে তৃতীয় সরকার বলছেন। তবে ঢাকার বাইরে আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্যদের নিজেদের এলাকায় গিয়ে যে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছিলেন সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা।
এখন গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে মহাজোট সরকারের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ করতে ব্যর্থ হবার পর বরিশালে ওই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছ। জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিলসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ পরবর্তীতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই স্তিমিত হয়ে আসছে গণজাগরণ মঞ্চ।
এই মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের দেয়া একটি বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দলের নেতাদের তিনি জানিয়েছেন আবেগ দিয়ে দিয়ে আন্দোলন ও রাজনীতি হয় না। বাস্তবতা বুঝে রাজনীতি করতে হবে। রোববার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের করনীয় নির্ধারণ করতে শেখ হাসিনা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এই বৈঠকেই প্রসঙ্গক্রমে গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। গত ২৬শে মার্চ শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. এমরান এইচ সরকার তার বক্তব্যে বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, আমাদের দাবির ব্যাপারে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মনে হচ্ছে সরকারের টনক নড়েনি, সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে, যা প্রকারান্তরে গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করার শামিল। এ দাবি উপেক্ষা করে সরকার যে স্পর্ধা দেখিয়েছে, তা নজিরবিহীন’। এর পাশাপাশি বাম ঘরানার বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মহাজোট সরকারের আপোষ ফর্মূলা হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইমরানের এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সদস্য আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বক্তব্য রাখেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের স্পর্ধা নিয়ে প্রশ্ন তোলার স্পর্ধা গণজাগরণ মঞ্চ পায় কোথায়? তাদের বক্তব্য কারা লিখে দেয় খুঁজে বের করেন। এসময় প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, অনেকে মনে করেন আমি তাদের বক্তব্য লিখে দেই। আসলে তা সত্য নয়। আমিও মনে করে এখন আর এই মঞ্চ রাখা ঠিক না। দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী মঞ্চের কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ার যুক্তি দিয়ে বলেন, ব্লগার রাজীব হত্যার পর মঞ্চের কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হয়।
শাহবাগ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের অবস্থান পরিস্কার করুন। তৃতীয় প্রজন্মের যে ফ্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে, তা এভাবে নষ্ট হতে পারে না।
নীচের লেখা থেকে সাহায্য নিয়ে লেখা।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
©somewhere in net ltd.