নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান পুলক এর পাতা

'' অনেকের মত আমিও, কিন্তু আমি তারা নই। কিছু বাস্তব স্মৃতির কাছে আমি সর্বদা পরাজিত, এই বাস্তবতা গুলোই আমার কলুষতা। কিছু বিশ্বাসের উপর আমি অটুট, আর তা হলো আমার ভালবাসা। যেমনি সত্য আমার কলুষতা ঠিক তেমনি আমার ভালবাসা।''

হাসান পুলক

ভাল কিছু করার চেষ্টায় আছি....

হাসান পুলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূনের প্রস্থান - কেটে গেলো বছর

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৩৫

সৃষ্টিকর্তা যুগে যুগে মানুষের রূপ দিয়ে এমন কিছু প্রতিভা পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন যাঁদের দেখতে মানুষের মত স্বাভাবিক মনে হলেও তাঁরা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক গুণ বেশি মেধা সম্পন্ন। স্বীয় কর্মে দ্বারা লক্ষ-কোটি হৃদয়ে বেঁচে থাকেন চিরকাল। মানব কল্যাণে তাঁদের সৃষ্টিকর্ম, নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাঝে তাঁদের পরম সুখ। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা শুধুই অন্যের চিন্তায় মগ্ন থাকেন। কোন এক সময় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান কিন্তু কর্মই বাঁচিয়ে রাখেন তাঁদের যুগ যুগ ধরে। এমনই এক গুণীব্যক্তি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ’র প্রথম মৃত্যুবার্ষির্কী। তাঁর লিখা বই গুলো পড়লে বুঝা যায়, মৃত্যুকে তিনি কত সহজ করে তুলে ধরেছেন। তবুও বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছে ছিল তাঁর হৃদয়ে। ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’ বইয়ে লিখেছেন- ‘‘আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে। যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না।” ‘নি’ তে তিনি লিখেছেন- “ মৃত্যুতে খুব বেশি দুঃখিত হবার কিছু নেই। প্রতিটি জীবিত প্রাণীকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মরতে হবে। তবে এ মৃত্যু মানে পুরোপুরি ধ্বংস নয়। মানুষের শরীরে অযুত, কোটি, নিযুত ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস যেমন- ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এদের কোন বিনাশ নেই। এরা থেকেই যাবে। ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। ”







বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক বিবেচিত হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। তাঁকে বলা হয় বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ। বাংলা কাথাসাহিত্যের সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন।



ছোটকালে হুমায়ুন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শাসসুল রহমান; ডাকনাম কাজল। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। হুমায়ূনের ভাষায়, তাঁর পিতা ছেলে-মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। ১৯৬২-৬৪ সালে চট্টগ্রাম থাকা কালে হুমায়ূন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু।





বাবার চাকুরীর সুবাদে ছাত্রজীবন কেটেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্র“পে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।







নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে সমাদৃত হুমায়ুন কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এই অধ্যাপক।



লেখালেখি জীবনে ২০১১ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। অতুলনীয় জনপ্রিয়তা সত্বেও তিনি অন্তরাল জীবন-যাপন করেন এবং লেখালেখি ও চিত্রনির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন সর্বদা।







ছাত্রজীবনে নাতিদীর্ঘ উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ রচনার মধ্যদিয়ে সাহিত্যজীবনের শুরু। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও ১৯৭২ এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যেগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘শঙ্গনীল কারাগার’। তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো ‘গল্প-সমৃদ্ধি’। অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে লিখে যেতেন অতিবাস্তব ঘটনাবলী। যা এক ধরনের যাদু বাস্তবতা বলা যায়। সংলাপপ্রধান তাঁর গল্প ও উপন্যাস। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে; ফলে ভিলেইন চরিত্রও তাঁর লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। অনেক রচনার মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি লক্ষ্য করার মত। ঐতিহাসসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস ‘মধ্যাহ্ন’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত। ১৯৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে তিনি লিখেছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। এছাড়াও ‘বহুব্রীহি’ ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ‘মহাপুরুষ’ ‘কুটু মিয়া’ ইস্টিশন, ‘মেঘের ওপর বাড়ি’ উপন্যাস গুলো উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি লিখেছেন ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলী’ এবং ‘বাকের ভাই’ সিরিজ উপন্যাস। যার জন্য হুমায়ূন আহমেদ স্থান করে নিয়েছেন পাঠক হৃদয়ের বিশাল জায়গা জুড়ে।







লিখেছেন আত্মজীবনী মূলক বই ‘বলপয়েন্ট’, ‘কাঠপেন্সিল’, ‘ফাউন্টেইন পেন’, ‘রংপেনসিল’, ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’, ‘হোটেল গ্রেভার ইন’, ‘আমার ছেলেবেলা’ ও হিজিবিজি(২০১৩)।



১৯৮০- এর দশকে বাংলদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। এটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। তার অন্যতম ধারাবাহিক নাটক- ‘ এইসব দিন রাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অযোময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘তারা তিনজন’, ‘আমরা তিনজন’ ও মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম। এগুলোর বেশির ভাগই ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ দশকে নির্মিত। এছাড়াও তিনি বহু প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করেছেন।







টেলিভিশনের জন্য দর্শক নন্দিত নাটক রচনার পর তিনি ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর পরিচালনায় ১৯৯৪ সালে প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ‘আগুনের পরশমণি’। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’। ২০০৩ সালে নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’। ২০০৮ এ ‘আমার আছে জল’ ও সর্বশেষ ২০১২ সালে তিনি পরিচালনা করেন ‘ ঘেটুপুত্র কমলা’।



এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘দুরত্ব’, বেলাল আহমেদ পরিচালিত ‘নন্দিত নরকে’ এবং আবু সাইদ পরিচালিত ‘নিরন্তর’। ২০০৭ এ শাহ আলম কিরণ পরিচালিত সাজঘর এবং তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘দারুচিনি দ্বীপ’।



নিজে গান রচয়িতা বা গীতিকার না হলেও তাঁর সব চলচ্চিত্রের জন্য তিনি নিজে গান রচনা করেতেন। নাটক ও চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত তাঁর অনেক গুলো গান বেশ জনপ্রিয়।



লেখালেখি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), শিশু একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক (১৯৯৪), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার( শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলা ১৯৯৪), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৯), মাইকেল মধূসুদন পদক(১৯৮৭), বাচশাস পুরস্কার(১৯৮৮), হুমায়ুন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০) ও জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক উল্লেখ্য যোগ্য।





ব্যক্তিজীবনে এই গুণী মানুষটির খুব ভোর বেলা ওঠার অভ্যাস ছিল। ভোর বেলা থেকে লিখতেন। স্বাচ্চন্দ্য বোধ করতেন মাটিতে বসে লিখতে। কখনো অবসরে ছবি আঁকতেন। পছন্দ করতো গল্প বলতে ও রসিকতা করতে। নিরবে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করায় তাঁর শখ ছিল। জীবনের শেষ যুগে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে ৯০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাগান বাড়ি ‘নুহাশ পল্লীতে থাকতে ভালবাসতেন।







হুমায়ূন আহমেদের প্রথমা স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে। বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ আহমেদ। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূনের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তিও অবসানকল্পে ২০০৫ এ গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলে মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। ছেলে নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।



২০১১ এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তাঁর আন্ত্রীয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে স্থানীয় সময় ১১.২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদ পুরুষ পরলোকগমন করেন। অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে তিনি চিরবিদায় নিলেন। এই কৃর্তিমান লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মিতাকে তাঁর প্রিয় নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়।





মৃত্যু নিয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর বইয়ের কিছু লাইন-



* মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না, এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই। শেষ বিদায় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার। নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যায় না, যাওয়া উচিত নয়। এটা হৃদয়হীন ব্যাপার( বই: দেবী)

* মৃত্যু টের পাওয়া যায়। তার পদশব্দ ক্ষীন কিন্তু অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ( বই: তোমাকে)

* বেঁচে থাকার মতো আনন্দের আর কিছু নেই। ( আগুনের পরশমনি)

* অসম্ভব ক্ষমতাবান লোকেরা প্রায় সময়ই নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যায়( বই: আকাশ জোড়া মেঘ)

* যে মানুষ মারা যাচ্ছে, তার উপর কোন রাগ বা ঘেন্না থাকা উচিত নয়। ( বই: নবনী)

* মৃত মানুষের জন্য আমরা অপেক্ষা করি না। আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্য। ( বই: অপেক্ষা)

* মৃত্যু হচ্ছে একটা শ্বাশত ব্যাপার। একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমরা যে বেঁচে আছি এটাই একটা মিরাকল। ( বই : কবি)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.