নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান পুলক এর পাতা

'' অনেকের মত আমিও, কিন্তু আমি তারা নই। কিছু বাস্তব স্মৃতির কাছে আমি সর্বদা পরাজিত, এই বাস্তবতা গুলোই আমার কলুষতা। কিছু বিশ্বাসের উপর আমি অটুট, আর তা হলো আমার ভালবাসা। যেমনি সত্য আমার কলুষতা ঠিক তেমনি আমার ভালবাসা।''

হাসান পুলক

ভাল কিছু করার চেষ্টায় আছি....

হাসান পুলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাল হরতাল!

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৪৩

সাব্বির দ্বিতীয় সেমিষ্টারের ছাত্র। স্কুল জীবন থেকেই বড় ভাইদের হাত ধরে রাজনীতি করছে। বেশ সাহসী। যেমন কথা; তেমনি কাজ। মিটিং-মিছিল, সভা-সেমিনারে সবার আগে। দিনে দিনে সংগঠনে সবার প্রিয় পাত্র বনে গেছে। সব কিছুতেই নেতার ভাব। হরতালের পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার জন্য হোস্টেলে সামনে দাঁড়িয়ে উপস্থিত কয়েকজনের উদ্দেশ্যে বললো- সন্ধ্যায় সবার উপস্থিতি চাই। কোন অজুহাত চলবে না। নিজ দায়িত্বে সব কাজ সাড়াতে হবে। দ্বিতীয় বারের অপেক্ষা বা নতুন করে বলা আমার পছন্দ না। নিশাত, রাব্বি, যিশু তোরা বারান্দায় দাঁড়া, সফিক আসলে সব তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ফেস্টুন, ব্যানার সফিকের কাছে থাকবে। সব কিছু বন্টনের দায়িত্বও তার। টার্গেট আনন্দকিল্লা থেকে জামালখান। লিডারের মত করে কতোগুলো কথা বলে দিয়ে বিদায় নিলো সাব্বির। সফিকের অপেক্ষায় ছাত্র হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে সময় পার।



রিক্সায় চড়ে পূর্বদিকের সড়ক হয়ে সফিক মাহাদী এসেছে। সফিক খুব ভাল ছাত্র। এসএসসি ও এইচএসসিতে মেধাতালিকা দ্বিতীয় হয়েছিলো। গ্রামের ছেলে হলেও দলের জন্য বেশ খাটে। তার পরিশ্রমের পেছনেও অবশ্যই একটা কারণ আছে। গ্রাম থেকে এসে ডিপ্লোমা করার জন্য ভর্তি হয়েছে। শহরে থেকে পড়ালেখা চালানো তেমন কোন অবস্থা নেই বলেই চলে। যে ক’টা টিউশনি করে তাতে হাত খরচের পয়সাও হয় না। তার উপর রুম ভাড়া নিয়ে বা ম্যাচে থেকে পড়া তার জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে উঠেছিলো। শহরে কোন আত্মীয়-স্বজনও নেই। কারো বাসায় থেকে পড়া লেখা চালাবে এমনও সুযোগ নেই। রাত-দিন খেটে অনেক চেষ্টার পরও হোস্টেলের সিট নিতে ব্যর্থ। একটা সিট পাবার জন্য কত কি করলো! শেষে বড় ভাইদের দয়ায় একটা সিট মিলেছে। পড়ালেখার পাশাপাশি বড় ভাইদের ঋণশোধে সংগঠনে সময় দেয়া। তাকে বেশি কিছু করতে হয় না। শুধু বিভিন্ন পেপার তৈরী, সময় মত নেতা-কর্মীদের দাওয়াত দেয়া এসব হালকা কাজের দায়িত্ব পালন। তবে কিছুদিন ধরে তার উপর চাপ বাড়ছে। এখন কাজে কোন মনোযোগ নেই। দায়িত্ব দিতেই রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথা বলে। রিকশা থেকে নেমে আজো একই কথা বলা শুরু করলো-



আমি আর তোদের সাথে নেই। যে যার মতো করে বিদায় হ। নিজের জন্য বাঁচতে হবে; পরিবারের জন্য বাঁচতে হবে। প্রাণের মায়া নেই কারো ? তোদের না থাক আমার আছে। আমাকে বাঁচতে হবে। মা-বাবা আর ছোট বোনের জন্য বেঁচে থাকা জরুরী। আচ্ছা! কার স্বার্থে দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর হরতাল অবরোধের ডাক? কীসের মোহ তোদের। ক্ষমতা না সম্পদ! ভেবে দেখ, এসব অপ্রয়োজনীয়। আমরা এখনো ছাত্র। ছাত্র জীবন শেষ করে একটা ভাল চাকুরী পেলেই হবে। কোন রকম সংসার চালিয়ে নিতে পারবো। এমন নেতা হবার ইচ্ছে আমার কোনোদিন ছিল না। আজো নেই। তোরা অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে পারিস।



সফিক মাহাদীর কথা শেষ হতেই যিশু বললো- এমন কথা দ্বিতীয় বার মুখে আনলে বিপদ হবে। বড় ভাইদের কানে গেলে কী হবে ভেবে দেখ! হোস্টেলের সিট হারাবি, হয়তো শারীরিক ভাবেও লাঞ্ছিত হতে পারিস! আর তুই ছাড়া আমরা কী কিছু ভাবতে পারবো! তোর নেতৃত্ব না পেলে দলে থেকে কী লাভ! আমরাও রাজনীতি ছেড়ে দেবো। তুই থাকলে আমরা আছি, না থাকলে আমরাও নেই।



এক ধরনের অস্থিরতার ভাব নিয়ে সফিক- এসব তোমার আবেগের কথা। তোরা রাজনীতি ছাড়তে পারবি না। তবে আমাকে রাজনীতি করতে বলিস না। স্বাধীনতার পরেও শোকের বার্তা নিয়ে আজো ১৫ আগষ্ট ফিরে আসে। ঘাতকের হাতের চিহ্ন মাখা ৩০ মে পুনরাবৃত্তির আশংকায় সর্বদা। লাশের মিছিল সৃষ্টি করে ২১ আগষ্ট, ২৫ ফেব্রয়ারী। সে দেশে কীসের রাজনীতি করবো, বল? যে দেশের আইন আপন গতি হারিয়ে সরকারের মন মতো চলে। সাজানো নাটকে গ্রেফতার হয় সাধারণ মানুষ। সত্য ও ন্যায়ের কথা বলতে গেলে সাজতে হয় মিথ্যা মামলার আসামি। হতে হয় ফেরারী! সে দেশে তোরা বললেই কি রাজনীতি করতে হবে? এসব আমার দ্বারা হবে না। আমি পারবো না সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য দিয়ে ঢাকতে। নিজের স্বার্থের কাছে আপন মানুষদের বলি দিতে পারবো না।



এখন এসব বলে লাভ নেই। হরতালের প্রস্তুতি নিতে হবে। তুই দিক-নির্দেশনা দিবি, ব্যাস! চরম উত্তেজিত নিশাত কথা গুলো বলেই ব্যানারটা হাতে ধরিয়ে দিলো। অপ্রস্তুত সফিক হাত টেনে নিলেও তার মধ্যে ভয় কাজ করছে, তা স্পষ্ট।



হাত ধরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - কিরে, তোর কি হয়েছে? কথা বলার আগেই চোখে জল। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো- দেখো রাব্বি; আমি গরীব ঘরের ছেলে। মা-বাবা অনেক কষ্ট করে এতদূর এনে দিয়েছে। এখন যদি আমার কিছু একটা হয়ে যায়, তবে আমার বাবা-মাকে কে দেখবে! তাদের স্বপ্নের কী হবে? ছেলে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে। বড় চাকুরী করবে। ভাল বেতন পাবে। সংসারের হাল ধরবে। তারা তো এসব ভাবে! আমি তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে সংগঠনকে সময় দিচ্ছি। তারা ভাবছে শহরে শুধু পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত; অথচ প্রতিনিয়ত সংগঠনে ব্যবহার হচ্ছি। এভাবে আর কত? শেষবার গ্রামের গিয়ে পরিচিত হলাম যোদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে। একাত্তরে সবার মতো তাঁর অবদান ছিল। তখন তিনি রাজনীতিকে বেশ ভালবাসতো। কিন্তু এখন তিনি কি বলে শুনবি? কিছুটা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিলো সফিক—তিনি বলেন, তখনকার রাজনীতি ছিল নিঃস্বার্থে আর এখন লোভ-হিংসার রাজনীতি চলেছে। নাম মাত্র গণতন্ত্র। সংবিধান তাও লোক দেখানো। এসব শুধু আমজনতাকে ধোকা দেয়া। রাজনৈতিকরা এখন যে যার স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। তাই এখন রাজনীতিকে অপছন্দ করি। যে ক’দিন বাঁচি। দু’মুঠ খেয়ে, ঘুমিয়ে কাটাতে পারলেই হয়। তুমি শহরের হোস্টেলে থাকো। অনেকেই প্রলোভন দেখাবে। কারো লোভে পড়ে এই পথে পা দিবে না। যদি দাও এর ফল বড়ই ভয়াবহ! এখন তুমিই বলো আমি কি রাজনীতি করবো না মা-বাবার স্বপ্নপূরণ?



কথাগুলো শুনে কোন মন্তব্য করতে ভয় হলো। আমিও তার মতোই। শুধু বললাম- আমরাও তোর মতো পরিস্থিতির শিকার। লাভ হবে ভেবে কাজ করছি। কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারছি এখন, একটা পর্যায়ে ক্ষতির পাল্লাই ভারি হবে। আমাদের কথার মাঝে ফের নিশাত এসে বললো- ভাবনা চিন্তা বাদ; যা করবি কর। হরতালের পর বড় ভাইদের জবাব দিতে হবে। রাত কাটলো হোষ্টেলে।



খুব সকাল থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের সশস্ত্র অবস্থান। হরতালের ব্যানার নিয়ে হোস্টেল গেইট থেকে মিছিল বের হলো। দূর থেকে শ্লোগানের শব্দ শোনা যায়। মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছে সফিক মাহাদী। পিছন থেকে কে যেন একটি ককটেল ছুড়ে মারলো। বিস্ফোরনের আওয়াজ ধ্বনিত হতেই পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি। ফেষ্টুন, ব্যানার রাস্তায় ফেলে কোন রকম প্রাণ নিয়ে হোস্টেলে দিকে ছুটলাম। ছত্রভঙ্গ মিছিলের থেকে পালানোর সময় একজন ডেকে বললো সফিক মাহাদীর গুলি লেগেছে। রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে আছে। দৌড় থামিয়ে পিছু ফিরে তাকাতেই দেখি তিনজন পুলিশ সফিকের রক্তাক্ত দেহ টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.