নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান পুলক এর পাতা

'' অনেকের মত আমিও, কিন্তু আমি তারা নই। কিছু বাস্তব স্মৃতির কাছে আমি সর্বদা পরাজিত, এই বাস্তবতা গুলোই আমার কলুষতা। কিছু বিশ্বাসের উপর আমি অটুট, আর তা হলো আমার ভালবাসা। যেমনি সত্য আমার কলুষতা ঠিক তেমনি আমার ভালবাসা।''

হাসান পুলক

ভাল কিছু করার চেষ্টায় আছি....

হাসান পুলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্তান নিয়ে দৌড়ঝাপ: প্রাইভেট না পাবলিক

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪



কালের বিবর্তন, উন্নত চিন্তা, অজানাকে জানার কৌতুহলে পরির্বতন হচ্ছে জীবন-যাত্রা। হচ্ছে সমাজের রূপ পরিবর্তন। পাল্টে যাচ্ছে আমাদের ধ্যান-ধারণা, রুচি। কালের যাত্রায় যতটুকু আমাদের এগিয়ে যাওয়া শিশু-কিশোরদেরও সমানুপাতিক হারে যোগ করছি এই যাত্রায়। প্রথম সিঁড়ি থেকেই তাদের পাকা-পোক্ত করার প্রতিযোগিতা। এগিয়ে যাওয়ার মিছিলে কোমলমতি শিশুদের জন্য কত কি না আয়োজন! যে কোন অভিভাবক চান তার সন্তান একটি ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা সুযোগ করে দিতে। তবুও আর্থিক দিক বিবেচনায় কারো সন্তান যায় প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্যরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটে। বর্তমানে সামাজিক অবস্থান নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কার সন্তান কোথায় পড়ালেখা করে বা করবে ? এসব চিন্তা করে অধিক আগ্রহ ও বিশ্বাসের সাথে অভিভাবকরা শিশুদের নব-নব প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার জন্য করছেন যত দৌড়ঝাপ!



অভিভাবকদের সৎ ইচ্ছাই পূজি ও কোমলমতি শিশুদের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে কিন্ডার গার্ডেন, আইডিয়াল স্কুল, ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নামে ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র ভাবে নিত্যদিন বেড়েই চলেছে প্রাইভেট শিক্ষা নামের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। প্লে-পঞ্চম বা প্লে-দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশের ঘোষণা করা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায়ই সরকারী অনুমোদনহীন। তবুও থেমে নেই ব্যবসায়! ছাত্র/ছাত্রীদের নির্ধারিত বই, ডায়েরী, খাতা-কলম ও যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ নিজস্ব লাইব্রেরী থেকেই ক্রয় করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও ভ্যান/গাড়িতে যাতায়াতও সৌখিনতা আওতাধীন। সব মিলিয়ে প্রতি ছাত্র/ছাত্রীর মাসিক খরচ তিন হাজার টাকার মত। মূল্য-মান দেখা গেলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় সদ্য এইচএসসি পাশ বা এইচএসসি শিক্ষার্থীদের দিয়ে। এমন নজির অহরহ মিলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল সর্বত্রই প্রভাব সম-পরিমাণ।



অন্যদিকে, সকাল দশটা থেকে ক্লাশ শুরু করে বিকেল চারটা পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম চলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে। সরকারীতে শিক্ষকদের যোগ্যতাও স্নাতক(সমমান)। পাঠদানের ধরণও আলাদা। নেই কোন বাড়তি খরচ। উপরন্তু ছাত্র/ছাত্রীদের পড়ালেখায় উৎসাহ যোগানোর জন্য সরকারী ভাবেই উপভর্ত্তি দেয়া হয়। পাড়ায়-মহল্লায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় যাতায়াতেরও কোন দূরচিন্তা থাকে না।



প্রাইভেটের ছাত্র/ছাত্রীদের দিন শুরু হয় ব্যস্ততায়। সকাল আটটা থেকে শ্রেণী কার্যক্রম। তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তৈরী হতে হয়। এরপর যাত্রা, ক্লাশ, কোচিং, টিউটরের পড়া সব শেষে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফেরা। ব্যস্ততায় কাটে ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এরপর রাতে ক্লাশের পাঠ অনুশীলন, টিউটরের দেয়া নোটের চর্চা, কোচিংয়ের বাড়তি পড়া এসব চাপ সহ্য করে যেতে হয় প্রতিদিন। কিন্তু সরকারী বিদ্যালয়ের ছাত্রদের থাকে অনেক অতিরিক্ত সময়। সকাল দশটায় ক্লাশ শুরু বিকেল চারটায় ছুটি।



যারা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে একটা পর্যায়ে এসে সেই তারাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে আসা ছাত্র/ছাত্রীদের সাথেই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। হাজার হাজার টাকা খরচ করা ছাত্র/ছাত্রীদের থেকে সরকারী প্রাথমিকের ছাত্র/ছাত্রীরাও ফলাফলের দিক থেকে কম যায় না। শুধু অভিভাবকদের সঠিক তত্বাবধানের কারণেই একটু ঘাটতি থাকে। অন্যথায় তারাও সম মেধাবী বলা যায়। কারণ যুগে যুগে সরকারী প্রাথমিক থেকে পাশ করা ছাত্র/ছাত্রীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বড় বড় সরকারী কর্মকর্তার হয়েছে। এমন অনেক নজির আছে।



অভিভাবকের একটু সচেতনতাই বদলে দিতে পারে অনেক কিছুই। যে টাকা খরচ করে সন্তানকে প্রাইভেটে পড়ানো যায় এর তিন ভাগের এক ভাগও যদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রেখে খরচ করা হয় আমার বিশ্বাস সেই ছাত্র/ছাত্রী মেধা তালিকায় অনেকটাই এগিয়ে থাকবে; সাথে তার ধর্মীয় চর্চা, খেলাধূলা ও মনোরঞ্জন সবই সম পরিমাণ নিয়েই সে বেড়ে উঠবে। বিষয়টা খুব সহজ, সরকারীতে পড়লে সকালে অনেক সময় থাকে। সে সময় তার ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা; বিকেলে খেলাধূলা। আর খরচের খাত হচ্ছে একজন ভাল টিউটর রেখে সন্তানকে তত্বাবধান করা। এতে করে শিশুদের সময় ও নিয়মানুযায়ী স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগও থাকবে।



লক্ষ্যনীয় বিষয়, সরকারী বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের সুবিধা অসুবিধায় অভিভাবক হিসেবে বাবাকে সাধারণত ডাকা হয় অথচ প্রাইভেট ঐসব বিদ্যালয়ে মাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ, অভিভাবক হিসেবে উপস্থিত হওয়া মায়েরা বেশির ভাগই প্রবাসী ও বিত্তবানদের স্ত্রী! যাদের অতি উৎসাহের কারণের নিজের সন্তান সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সকালে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; খেলাধূলা ও বিনোদন পেতে অপেক্ষায় থাকতে হয় সপ্তাহ বা মাস; শৈশব আর কিশোর জীবন কি, এমন প্রশ্ন তাদের কাছে প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে! অথচ এদের বয়স মাত্র ৪-১০ বছর। স্বাভাবিক বয়স বিবেচনায় এরা শিশু। শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে এই সময়টাই যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে তারা কি পাওয়ার কথা আর কি পাচ্ছে ?



ভেবে দেখুন, আপনার সামাজিক ষ্ট্যাষ্টাস বজায় রাখতে গিয়ে কোমলমতি শিশুর মূলধারার শিক্ষা ও স্বাভাবিক বেড়ে উঠায় বিঘœ ঘটছে কি ? শিক্ষকদের আমন্ত্রণে প্রাইভেট স্কুলের অফিস কক্ষে আপনার খোস গল্পে সময় পার ও খায়েস মিটাতে সন্তানের মূল্যবান সময় নিজের হাতেই নষ্ট করছেন না তো ? প্রতিযোগিতার এই যুগে সন্তানকে প্রতিযোগি হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, অনুভূতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন না তো ?



বরং সেসব শিক্ষায়ও শিক্ষিত করা প্রয়োজনীয়। সন্তান যার ; ভাবনাও তার। মেধার সাথে স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রটাও অভিভাবককেই বিবেচনায় রাখতে হবে। স্বর্গ-নরক সবাই বুঝি। ভাল-মন্দের পার্থক্য খালি চোখেই দেখি। সামাজিক অবস্থান শক্ত রাখতে গিয়ে নিজের সন্তান আর দশজন সাধারণ কামার-কুমার, কৃষক-জেলে বা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের সাথে একই বিদ্যালয়ে কিভাবে পড়বে ? এমন প্রশ্নের জোরে দূরত্ব বাড়ানো মোটেও ঠিক নয়! হাজার প্রশ্নের ভিড়ে হারিয়ে গেলে অনইচ্ছা স্বর্ত্বেই সভ্যতার কাছে রীতিমত সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিতে হবে! তখন আর এ সময় ফিরে আসবে না। অতি উৎসাহী পরিবারের অভিভাবকরা এসব প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালকে বিবেচনায় রাখাও প্রয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.