নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
পুরাতন ঢাকা এমন একটা জনপদ যাদের প্রতিটি উৎসব পার্বনে তাদের আচার আচরণ আর আয়োজনে বৈচিত্র লক্ষণীয়। তা সেটা রমজানের রোযা আর ঈদ হতে শুরু করে মহররম, দূর্গাপুজা হোক আর সাকরাইন বা পহেলা বৈশাখ হোক, পুরাতন ঢাকা হল উৎসব উদযাপনের জনপদ। হাল আমলে ইংরেজী নববর্ষ উদযাপনে ফানুশ আর আতশবাজির আয়োজন পুরাতন ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকায় না দেখলে বুঝা যাবে না। তো “ধান ভানতে শিবের গীত” আর নাইবা গাওয়া যাক, যে প্রসঙ্গে আজকের লেখা, সেটায় সরাসরি চলে আসি। আমার ব্লগে আমি নানান উৎসবের স্মৃতিচারণ লেখা আগে লিখতাম। বহুবছর হলো এই ধারা বজায় রাখতে পারি নাই। মাঝে গত বছর একটা লেখা লিখেছিলাম। তো, গতকাল থেকে মনে হলো আমার জীবনকালে দেখা শবে বরাত নিয়ে একতা স্মৃতিচারণমূলক লেখা ব্লগে থাকা উচিত। আজকের স্মৃতিচারণ কিছু মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে হৃদয়ে গেঁথে আছে, সেগুলো হাইলাইট করেই করা যাক শবে বরাত এর স্মৃতিচারণ।
ইবাদত বন্দেগীঃ
ছোটবেলায় দেখতাম শবে বরাতের দুই তিন দিন আগে থেকেই একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ চারিধারে। মসজিদগুলোতে পরিস্কার পরিচ্ছনতার আয়োজন দেখা যেত, সেই আয়োজন দেখা যেত বাসা বাড়িতেও। নানান রকম পকেট সাইজ ইবাদতের বইয়ে শবে বরাতের নানান আমলের দোয়া, শবে বরাতের নামাজ সহ আরও অনেক দোয়া এবং ইবাদতের নিয়ম কানুন দেখে নিয়ে সারারাত ব্যাপী কে কত রাকাত নামাজ পড়বে, কে কত হাজার বার কোন কোন দোয়া ইস্তেগফার আর দুরুদ পাঠ করবে.... এগুলো নিয়ে পরিকল্পনা এবং শবে বরাত পরবর্তী পর্যালোচনা দেখা যেত কে কতটুকু তার প্ল্যান করা ইবাদতের বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। যদিও বর্তমানে এসে জানতে পারি যে, শবে বরাত এর ফজিলত এর বর্ণনা এসেছে, সুনির্দিষ্ট কোন ইবাদতের নয়। থাক সেসব আলোচনা, এটি কোন ধর্মীয় পোস্ট নয়, আর আমি নিজেও কোন ধর্মীয় আলেম ওলামা নই। তবে ছোটবেলায় মাতৃস্থানীয়দের দেখেছি শবেবরাতের সন্ধ্যাবেলায় গোসল করে চুল ভেজা রেখে একটা বিশেষ নামাজ আদায় করতে। খুব ছোট বেলায় একবার আজিমপুর দায়রা শরীফ (যা ঈদের সব শেষ ঈদ জামাতের জন্য ব্যাপক পরিচিত) এ গিয়েছিলাম নানুর সাথে, সেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কদম মোবারকের ছাপের অনুলিপি আছে তা দেখতে। উল্লেখ্য যে, এরকম বেশ কিছু জায়গা সারা উপমহাদেশের বোধহয় রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে কদম রসুল দরগাহ, কাশ্মীরে হযরত বাল মসজিদ আমার ভ্রমণ করা এমন দুটি জায়গা। যাই হোক, ছোট বেলায় আমাদের অবুঝ মন বড়দের সাথে ইবাদতের ফাইট করতে চাইতো, আর কৈশোরে হলো উলটো, নামাজ-মসজিদ ফাঁকি দিয়ে বাঁদরামির নানান আয়োজন চলতো।
কবর জিয়ারতঃ
শবে বরাত এর রাতে আজিমপুর কবরস্থান এ যে যায় নাই, তাকে বলে বোঝানো যাবে না কি পরিমাণ ভিড় সেখানে হয় শবে বরাতের বিকেল থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত। আর সেই ভিড়েকে পুঁজি করতে আগত হরেক রকম ভিক্ষুকের সমাহার! আমি নিজে দেখেছি, শবে বরাত এর একদিন আগে থেকে আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তাটি নানান জায়গা থেকে আগত নানান কিসিমের ভিক্ষুকদের দখল করে শবে বরাতে ভিক্ষা করার আয়োজন করতে। মানুষের ভীড়ে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হতো প্রবেশ পথে। আমি শেষ যে বার গিয়েছিলাম, ভীড়ের যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে কবর জিয়ারত না করেই ফেরত আসি। তারপর আর কখনোই শবে বরাতের রাতে কবরস্থান যাই নাই। যদিও সহীহ মাসায়েল অনুযায়ী এরকম কোন ইবাদতের কথা শবে বরাতের জন্য কোথাও উল্লেখ নাই। তবে এখনও শবে বরাতের রাতে আজিমপুর কবরস্থান একই চিত্র দেখা যায়, তবে ভিক্ষুকদের সেই জমিদারী আয়োজন এখন আর নেই। মনে আছে বিশাল একটা চাঁদর এর মাঝে হাত-পা বিহীন কদর্য একটা মানব দেহ বসে আছে, ক্যাসেট প্লেয়ারে তার কান্নাজড়িতে কণ্ঠে ভিক্ষার জন্য আকুতির রেকর্ডেড ভয়েস বেজে চলেছে; চাঁদর এর চারিপ্রান্তে চারটা হ্যাজাক লাইট আর সেই দেহের চারিপাশে বিভিন্ন টাকার নোট আর পয়সার কয়েন ছড়িয়ে আছে। সেই ছবি আমার চোখে এখনও ভেসে ওঠে চিন্তার জগতে বিচরণ করলেই।
মসজিদঃ
শবে বরাতে আগে প্রতিটি পাড়া মহল্লার মসজিদগুলো ধুয়ে মুছে পরিস্কার করা হতো; মসজিদের গুম্বজ/মিনার এবং পুরো মসজিদ বিল্ডিং মরিচবাতি দিয়ে আলোকসজ্জা করা হতো। এখনও দুয়েক জায়গায় দেখা যায়, যেমন গতকাল রাতে বাসায় ফেরার পথে দেখলাম ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এর লাগোয়া অনেক পুরাতন একটা মসজিদ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। মোবাইলে তোলা ছবি আপনাদের জন্য শেয়ার করা হলো-
আমাদের শৈশব-কৈশরের দিনগুলোতে আমরা রাতে এলাকার আশেপাশের সব মসজিদে মসজিদে ঘোরাঘুরি করে সারারাত কাটিয়ে দিতাম। এলাকার ডানপিটে ছেলেপেলেরা ভ্যানগাড়ী ভাড়া করে সেটা নিজেরা পালা করে চালিয়ে চষে বেড়াতো দূরের নানান গন্তব্য। এর আয়োজন চলতো শবে বরাতের অনেক আগে থেকে। লিস্ট করা, কে কে সুযোগ পাবে সেটা নির্ধারন, চাঁদা আদায় সহ কত্ত কত্ত আয়োজন ছিলো। আর ছিলো মসজিদের সিন্নির আয়োজন। শবে বরাতের আগের সকাল হতে শুরু হতো বিরিয়ানি রান্নার আয়োজন। আমার এলাকার মসজিদের আয়োজন খুব ইন্টেরেস্টিং ছিলো। উঠতি কিশোর যুবকেরা শবে বরাতের বিরিয়ানি রান্না থেকে বক্সে প্যাকিং এর মহা আয়োজনে ব্যস্ত থাকতো ভোররাত অবধি। কেননা, সিন্নি তথা তবারকের বিরিয়ানি বিতরণ হতো ফজরের নামাজের পরে দোয়ার মধ্য দিয়ে ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্যায়ে। এই বিরিয়ানির আয়োজনে শবে বরাতের দুই দিন আগে থেকে গরু কিনে আনা দিয়ে শুরু হতো। সেই গরু শবে বরাতের দিন সকালে জবাই করা, মাংস কাটা, বাবুর্চির রান্না করা, এরপরা সেগুলো প্যাকিং করা এসবে এলাকার ডানপিটে ছেলেপেলের একটা দল অংশগ্রহণ করতো। এদের খাবার জন্য আবার সেই গরুর কলিজার একটা তরকারী রান্না করা হতো যা নান রুটি বা পরোটা দিয়ে রাতের বেলা উৎসব উৎসব আমেজে ভক্ষণ করা হতো।
পরবর্তীতে বেশ কিছু বছর আগে নতুন ইমাম সাহেব এসে এলাকার মুরুব্বীদের বুঝাতে সক্ষম হন যে এগুলো বিদআত। তাই মসজিদে লাইটিং, সিন্নি এগুলো এখন আর আমাদের এলাকার মসজিদে হয় না। এই প্রসঙ্গে দুটি কথা বলে রাখি। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষনে আমি দেখেছি, আমাদের উপমহাদেশে হিন্দু থেকে কনভার্টেড হওয়া আমরা মুসলমানেরা হয়তো অতীতের আচার রেওয়াজ এর অনুকরণ, অথবা হিন্দুদের উৎসব কাউন্টার করা, অথবা হতে পারে কনভার্টেড মুসলমানদের মনের সান্ত্বনার জন্য এমন অনেক আচার আচরণ আমাদের ইসলাম ধর্মীয় উৎসবে প্রচলন করেছি বা আছে যার কোন যোগসাজোশ ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে আদৌ নেই। মহররমের তাজিয়া মিছিল আর রথযাত্রা তুলনা করে দেখেন; অথবা অতীতে শবে বরাতের পটকাবাজী, আতশবাজি’র সাথে দিওয়ালীর পটকাবাজী, আতশবাজি’র… এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। যাক, আমার এই পোস্ট কোন ধর্মীয় পোস্ট না, স্মৃতিচারণ পোস্ট। আমার কথায় কারও মনে কষ্ট লাগলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দিয়েন।
আতশবাজিঃ
আমার শৈশব কৈশোরের শবে বরাতের মূল আকর্ষন ছিলো আতশবাজি। একেবারে শৈশবে ছিলো “তারাবাতি” জ্বালানোর শখ। একবার তারাবাতি জ্বালানো শেষে গরম পোড়া তারাবাতিতে পা দিয়ে পুড়িয়ে ছিলাম পায়ের পাতা। তবে একটু বড় হওয়ার পর শবে বরাত শুরুর অনেক আগে থেকে শুরু হতো আতশবাজির আয়োজন, যার মূলে ছিলো “মোররা” নামক একটা আতশবাজি। ইঞ্চি দুয়েক লম্বা এই শলাকা আকৃতির আতশবাজি আমরা নিজেরা তৈরী করতাম। এর জন্য প্রথমে প্রয়োজন হতো বড়ই গাছের ডাল পুড়িয়ে তৈরী করা কয়লার। এর জন্য শবে বরাতের মাস খানেক আগে থেকেই অভিযান চলতো বড়ই গাছের ডাল সংগ্রহের। এরপর সেই সংগৃহীত ডাল রোদে শুকানো, সেটা পুড়িয়ে কয়লা তৈরী, আবার সেই কয়লা শুকানো। এরপর সেই কয়লা মিহি করে গুঁড়ো করে সেই গুঁড়ো আবার রোদে শুকানো। এরপর ‘গন্ধক’ এবং ‘সোররা’ কিনে সেগুলো গুঁড়ো করে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে ‘মোররা’র মশলা তৈরী করা এবং সেই মশলা আবার রোদে শুকানো। এরপর পাতলা বিশেষ ধরনের কাগজে চিকন খোল তৈরী করে সেগুলোতে মসলা ভরা। এরপর দরকার হতো ‘ঝিল্লি’, যা মূলত গরুর পরিপাক ও রেচন তন্ত্রের সরু নালী পথের চামড়া যা কিনতে ধরনা দিতাম গরুর মাংসের কসাইয়ের দোকানে। একান্ত পাওয়া না গেলে ছিলো হাজারিবাগ ট্যানারী এলাকা ছিলো শেষ ভরসা। সেই কাগজের বিশেষ খোলে মসলা ভরা হলে তার মুখ শক্ত করে এটে দিয়ে তা এয়ার টাইট করে ফের রোদে শুকানোর পর তাতে ঝিল্লি কেটে ঝিল্লি দিয়ে তার অর্ধাংশ র্যাপ করে দেয় হতো এবং তা ফের পুনরায় রোদে শুকানোর পর তৈরী হতো শবে বরাতের অন্যতম আকর্ষন ‘মোররা’। আমাদের এলাকায় একটা রিকশাচালক ছিলো, যার মোররা বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিলো। জ্বালানোর পর দুইতিনটা চক্কর মাটিতে ঘুরে সাঁই করে সোজা আকাশে উড়াল দিতো। সেই রিকশাচালক যেদিন ‘মোররা’ বানাতো, তা দেখতে আশেপাশের এলাকা থেকে ছেলেপেলের দল ভীড় করতো সেই মহাযজ্ঞ দেখতে। যারা নিজেরা তৈরী করতে পারতো না, তাঁরা অন্যদের কাছে থেকে উচ্চমূল্যে মোররা কিনে নিতো। আর পটকার জন্য ছিলো শাঁখারী বাজার এবং তাবিজ বোমা টাইপের কিছু নিজেরা তৈরী করে নিতো।
এই আতশবাজি পোড়াতে গিয়ে নানান রকম আঘাতপ্রাপ্ত হতাম অনেকেই। ‘মোররা’র পাশাপাশি থাকতো নানান রকম পটকাঃ তাবিজ বোম, চকলেট বোম, রকেট বোম, গজারি বোম, পুচকে মরিচ বোম সহ আরও কত কি। তো সেই সব আতশবাজিতে অনেকেই নানান রকম জখম হতো, একবার আমাদের সমবয়সী এক ছেলের তিন আঙ্গুলের নখ উড়ে গিয়েছিল পটকায় আগুন লাগাতে গিয়ে।
না বুঝে আতশবাজি নিয়ে আনন্দউল্লাসে মাতা সেই শৈশবের দিনগুলো মনে পড়ে যায় শবে বরাত এলেই।
হালুয়া রুটিঃ
শবে বরাতের অন্যতম অনুষঙ্গ হালুয়া রুটি। এখনও শবে বরাত এলে পুরাতন ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, সাতরওজা, নবাবগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় কনফেকশনারীগুলোতে বিশেষ ধরনের “শুবরাতি রুটী”র আয়োজন দেখা যায়। এই রুটিগুলোর ডিজাইন এবং আকৃতি একে স্বাতন্ত্রতা দিয়েছে অন্যান্য রুটি থেকে। এর পাশাপাশি বাসাবাড়িতে অনেকে তৈরী করে হাতে তৈরি আটা, ময়দা, চালের গুড়ার রুটি। সাথে থাকে হালুয়া, নানান পদের হালুয়াঃ বুটের হালুয়া, গাজরের হালুয়া, সুজির হালুয়া, ডিমের হালুয়া, পেপের হালুয়া, ফিরনি, পায়েস, ক্ষীর সহ আরও অনেক রকমের মিষ্টান্ন আইটেম। এখন বাসা বাড়িতে হালুয়া তৈরী হয় কম, অনেকটা উঠে গেছে এই প্রচলন। তবুও কিছু আদি ঢাকাবাসী এখনও সেই চল ধরে রেখেছে। বিদআত জানার পর থেকে অনেকে শবে বরাতের দুই তিন দিন আগে এগুলো তৈরি করেন; জানিনা এগুলোতে ‘বিদআত’ বৈধতা পাবে কিভাবে? কিন্তু সত্যি বলতে, রসনা বিলাসি মন শবে বরাতের হালুয়া রুটি খেতে ব্যাকুল থাকে। মজার ব্যাপার, ছোটবেলায় আমার ধারণা ছিলো বুটের ডালের হালুয়া শুধু শবে বরাতেই তৈরী হয় এবং শবে বরাতেই খাওয়া হয়… । আমার অতি প্রিয় ছিলো এই বুটের ডালের হালুয়া, এখন অবশ্য গাজরের হালুয়া (ঘিয়ে ভাঁজা গাজর কুঁচি দুধে জ্বাল দিয়ে যেটা তৈরী হয়) বেশী প্রিয়।
তো এই ছিলো আমার শবে বরাতের মনে পড়ে যাওয়া কিছু কথা। আপনার স্মৃতির অংশ কমেন্ট করে শেয়ার করতে কার্পন্য করবেন না আশা করি।
বোকা মানুষের আরও কিছু স্মৃতিচারণ লেখাঃ
সুবরাইত, মোররা, হালুয়া-রুটি আর সিন্নির কিসসা (শবে বরাত এর স্মৃতিচারণ গল্প)
পুরাই চাঁন রাইত!!!
বদলে গেছে আমার প্রিয় ঈদ
ফিরবে না মোর সেই ঈদের দিনগুলো
কোরবানির পশুর হাটের খোঁজে ঈদের ইতিহাসে পরিভ্রমণ এবং আমার আক্কেলগুড়ুম
স্মৃতির পাতায় পুরাতন ঢাকার “কুরবানীর হাট”
বকরির ঈদ!
চকবাজারের ঈদমেলা – হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি’র ডালা
সময়ের পরিক্রমা মহররমের তাযীয়া মিছিল এবং একটি শোকগাঁথা’র উৎসবে রূপান্তর
হারিয়ে যাওয়া শৈশবের মজার খাবারগুলো
ডানপিটে ছেলেদের হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলো...
আমার শৈশবের কিছু প্রিয় অর্থহীন ছড়া (পড়লে সময় নষ্ট, না পড়লে আমার কষ্ট)
আমার স্মৃতিবেলা - বিজয় দিবসের যাপিত দিনগুলো
বহুদিন পর দোলা দিয়ে গেল আমার প্রথম প্রেম
আমার স্মৃতিবেলা – ফুটবল বিশ্বকাপ
১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:১০
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যয়াদ ফুয়াদের বাপ। ফুয়াদরে নিয়া নামাজ পড়তে গিয়েছেন নিশ্চয়ই।
আর আমি মোটেও ডানপিটে ছিলাম না, সবচাইতে হাবাগোবা টাইপের ছিলাম।
২| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২
শায়মা বলেছেন: আহারে আমাদের ছোটবেলা!!
আগরবাতি, মসজিদ ধোয়া মুছা, সবাই মিলে নামাজ, জিকির, বিকাল থেকে রুটি তৈরী। হালুয়া বিতরন সুন্দর সব ডিজাইনের কুরশি কাটার নক্সায় না সুন্দর রেকাবীতে...........
তারা বাজী আহা আমাদের ছোটবেলা কেউ বুঝবেই না আজকের ছোটবেলার মানুষেরা.....
১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:০৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আগে যখন ছোট ছিলাম, নানী-দাদী'স্থানীয়দের মুখে তাদের সময়কার গল্প শুনতাম, অনেকটাই রূপকথা মনে হতো। আর তারাও বলতো, "তোরা তো আর সেই দিন দেখস নাই... আর সেই দিন পাবিও না..."। একই গল্প এবং কথোপকথন এখন হয়, শুধু আমরা এখন সাইড পালটে সিনিয়রদের জায়গায় চলে এসেছি।
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৫
শায়মা বলেছেন: একটা মজার গল্প শোনো।
একবার আমার দাদী চাচী ফুপু সবাই মিলে রুটি বানাচ্ছিলো। কিছু রুটি ফুপী পুড়িয়ে ফেললো। দাদী বকাঝকা দিয়ে ঐ পোড়া অংশগুলা খুঁটে তুলে ফেললো।
এর মাঝেই গেটের কাছে অনেক ভীড়। তারা হালুয়া রুটি দাও দাও দাও।
আমি দাদীকে বললাম। দাদী বলে যাও রুটি এখনও হয়নি বলো।
আমি আবার সারাজীবনের ক্রিয়েটিভ ও এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ। সেই পোড়া অংশগুলো নিয়ে দৌড় লাগালাম গেইটে।
ছোটবেলা নানা কিসিমের ভিক্ষুক দর্শন আর তাদের নানা রকম কথা ভিক্ষা স্টাইল নকল করা ছিলো আমার প্রিয় কাজ। কিন্তু এই কাজ করতে দেখলেই মা মাইর লাাগাতেন তবুও আমাকে দমায় কে?
যাইহোক আমি গেইটের কাছে দৌড়ে গিয়ে বললাম রুটি বানানো হয়নি হয়নি হয়নি।
ওদের মধ্যে কেউ কেউ বলে আরে দাদিকে বলো মাকে বলো যাও বাবা এমন করো কেনো?
আমি তবুও সেই মিথ্যে শিখিয়ে দেওয়া কথা সত্য বানানোর অভিপ্রায়ে বলি হয়নি সত্যি হয়নি?
একজন চতুর ভিক্ষুক মহিলা বললো, সত্যি হয়নি?
আমি সাধু মুখে হ্যা সত্যি হয়নি।
মহিলা বললো তুমি কি খাও বাবু?
আমি বললাম রুটি পোড়া খাই।
ব্যাস মহিলা বলে রুটি না হলে রুটি পোড়া আসলো কোথা থেকে।
আমি মহিলার বুদ্ধিমত্তায় চমকিত, অভিভূত, বিস্মিত ! তারপর বোকিত হইয়া ভ্যাাাাাাাাাাাাাাাাা করে এক দৌড়ে রুটি পোড়া ফেলে নিজের পোড়ামুখই লুকালাম।
১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৫৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এত্ত ছোট মজার কিসসা কইতে গিয়ে বিশাল উপসংসার থুক্কু ভুমিকা চাওলা নিয়ে আসলো আপুনিটা যে, আমি হাসবো কোন লাইন থেকে বুঝতে পারলাম না
আজকে ফানমুডে আছে। ফানি কমেন্ট এর জন্য দুঃখিত।
৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫০
শেরজা তপন বলেছেন: তবুও সুবরাইত, মোররা, হালুয়া-রুটি আর সিন্নির কিসসার বদৌলতে তবু আপনাকে পাওয়া গেল!!
১৯ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৫৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আমি ইদানীং হইছি আগের আমলের নষ্ট হওয়া টিউবলাইটের মত। থাকে থাকে, অনেকক্ষণ পর চমক দিয়ে আবার অফ যায় লম্বা একটা সময় ধরে।
প্রায় দুই সপ্তাহ পর পোস্টের উত্তর দেই, বুঝেন অবস্থা। শবে বরাত গিয়ে রমজান এলো বলে।
৫| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:২৩
ঢাবিয়ান বলেছেন: শবে বরাত শব্দটা আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি একটি পবিত্র দিন হিসেবে। ইবাদর বন্দেগীর সাথে দিবসটি আগে পালন করা হত কিছুটা উতসবের আদলে। বাসায় বাসায় হালুয়া রুটি বানানোর ধুম পড়ে যেত। প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজনদের বাসায় বিতরন ছাড়াও এই হালুয়া রুটির বিড়াট একটা ভাগ পেত দেশের দরিদ্র জনগন। অন্তত একদিনের জন্য হলেও তারা রকমারী হালুয়া খাওয়ার স্বাদ পেত।
শবে বরাত আমাদের শৈশবে অত্যন্ত প্রিয় একটি উৎসব মনে হওয়ার আরেকটি কারন ছিল সন্ধার পর তারাবাত্তি, পটকা ফোটানোর সুযোগ পাওয়া। দুরন্ত সেই শৈশবে এখনকার মধ্যদবয়সী ও বৃ্দ্ধরা যদি বলেন যে তারা এসব দুষ্টূমিতে অংশগ্রহন করেন নাই তাহলে সেটা ডাহা মিথ্যা হবার সম্ভাবনা।
এমন একটি চমৎকার ধর্মীয় উৎসব অযথাই উগ্র ধর্মান্ধতার ধুয়া তুলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
১৯ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৫৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সব কিছুর মূলে আছে ম্যানেজমেন্ট সাইন্সের একটা মূল কথা, "মানুষ পরিবর্তন পছন্দ করে না"।
অনেক ধন্যবাদ ঢাবিয়ান। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
৬| ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:০৭
অনামিকাসুলতানা বলেছেন: এমন একটি চমৎকার ধর্মীয় উৎসব অযথাই উগ্র ধর্মান্ধতার ধুয়া তুলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এক মত
২০ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ। পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৭| ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:১০
রানার ব্লগ বলেছেন: সবে বরাতের আনন্দ ও উদ্দম অনেকাংশ নষ্ট করে দিয়েছে কিছু মৌলোভীরা । তারা নিজেদের ক্যারামতি দেখাতে গয়ে এমন সব বিষাক্ত ভাষন দিয়েছে যা মানুষ কে সবে বরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। এর বড় উদাহারন আমার ঘরেই আছে। আমি যুখন ছোট ছিলাম তখন আমি বলেছিলাম সবে বরাত বলে কিছু নাই( অন্যদের কাছ থেকে শুনে) এই কথা বলায় বাসায় মোটামুটি বয়কটের মধ্যে পরেছিলাম তো সেই ঘরেই আজ বলছে সবেবরাত বলে কিছু নাই । আমি হাসি কষ্টের হাসি। হালুয়া , বরফি, গরুর মাংস, চালের রুটির শোক আমি ভুলতে পারছি না। ধর্মীয় ফজিলতের কথা নাই বা বললাম ।
২০ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:১২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৮| ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:০৮
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
একটা সময় শবে বরাত ছিল উত্সবের মতো। সামাজিক একটা বন্ধনের মতো ব্যাপার। পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে তর্কে যেতে চায় না। একটা সময় ছিল দিনটি নিয়ে কোন বিতর্ক ই ছিল না! দুপুর থেকে রুটি বানানো শুরু হতো একটার পর একটা চাউলের রুটি পাহাড় তৈরী করতো, আমরা ছোটরা রুটি গুনতাম আশি... একাশি...বিরাশি...
আমরা অপেক্ষায় থাকতাম আমাদেরকে কখন বাড়িতে বাড়িতে রুটি আর হালুয়া বিতরণ করতে পাঠাবে! বাড়ি বাড়ি থেকে রুটি আসা শুরু হয়ে যেত এরই মধ্যে সুজির হালুয়া, ডালের হালুয়া, ময়দার হালুয়া... আলাদা আলাদা পাত্রে তুলে রাখতাম আমরা। কত কাজ আমাদের... এরপর আমরা বেড়বো রুটি আর হালুয়া বিলি করতে, গোসল করে পাঞ্চাবী পড়ে আমরা প্রস্তুত।
ডিমের হালুয়া বরাবরই আমার খুব পছন্দ । অল্প করে রান্না করা হতো আমার জন্য, ছোটদের জন্য আর দাদার জন্য ।
ইতিমধ্যে ফকির মিসকিন দরজায় ভীড় শুরু করছে.. ওদিকটাতেও নজর রাখতে হচ্ছে! কত কাজ আমাদের...
ইশার আগে থেকেই মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি। দল মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি। কেউ তখন আমাদের বলেনি ফরজ বাদে নফল নিয়ে টানাটানি। তখন সময়টাই আলাদা ছিল।
কয়েকবছর ধরে এই সব আর ঘটে না। দেশের মানুষ ধর্ম নিয়ে অনেক জ্ঞান রাখে( !) তাই নিয়ম রীতি পাল্টে গেছে। এই সব নিয়ম রীতি অনেক কিছুই বদলে দেয়, সামাজিক বন্ধন... আন্তরিক বন্ধন কিংবা আমাদের শৈশব!
এই উদযাপন গুলোতে ধর্মের কি কি ক্ষতি সাধিত হয় আমার জানা নেই। আল্লাহ কেন বেজার হবেন তাও জানা নেই। আমার আল্লাহ কে আমি অন্যভাবে চিনি। যেই আল্লাহ শবে বরাতের রাতে রোজা আর নামাজ পড়লে অনেককে মাফ করে দেন। বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিলে আল্লাহ খুশি হবেন ছোটবেলায় তেমনটাই ভাবতাম। তবে ছোটবেলায় যেমন ভাবতাম তেমনই আমার আল্লাহ তেমন ই।
২০ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌরভ। নিজের স্মৃতিরোমন্থন করে মন্তব্যে ভালো লাগা রইলো। ভালো থাকুন সবসময়।
৯| ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:০৯
শায়মা বলেছেন: বুঝা যাচ্ছে তুমি বুড়া হয়ে গেছো। হাসি আসছে না তাই।
১৯ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৫৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বয়স আমার তিন কুড়ি
আম্মু বলে শুধু কুড়ি
আর আমি বলি?
ধুত্তুরি...
১০| ২০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:০৭
শায়মা বলেছেন: তুমি তো ঠিক তোমার প্রোপিকের মত থুত্থুড়া।
২০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন:
১১| ২০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৫৫
আরোগ্য বলেছেন: আহা কি স্মৃতি জাগানিয়া পোস্ট।
সেই কি শৈশব পার করেছি। সুবরাইত মানেই অন্যরকম আনন্দ ছিলো। পরের দিন স্কুলে কে কত রাকাত নামাজ পড়েছি তা নিয়ে আলোচনা হতো। তারাবাতি, রকেট, ঝর্ণা, হালুয়া রুটি সব মিলিয়ে অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হতো। তবে কয়েক বছর যাবৎ এ দিন পালন করা বাদ দিয়েছি যখন জানতে পারলাম বিদাত।
২০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৪৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মুছে যাওয়া দিনগুলো আমায় যে পিছু ডাকে...
ধন্যবাদ আরোগ্য, পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
১২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৭:৩৬
আমি সাজিদ বলেছেন: মোররা বানানোর কায়দা পড়ে অবাক হলাম। এমন আতশবাজি সম্বন্ধে এই প্রথম জানতে পারলাম। এখনও কি মোররা বানানো হয় ? ইবাদত, খাওয়া-দাওয়া, উৎসবের আমেজ সবকিছুই সুন্দর বর্ণনা আমাকে যেন আমার শৈশবের শবে বরাতের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো। পোস্টের পাশাপাশি সবার মন্তব্য পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। কৈশোরের শবে বরাতে একশত রাকাত নফল নামাজ পড়েছি কয়েকবার, তখন মন ভাবতো যে, এই দিনে সব কিছু নতুন করে শুরু হয়, আল্লাহ সব মাফ করে দেন।
১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এখন আর চোখেই দেখি না মোররা, কেউ বানায় কি না জানা নেই। তবে আমি গত পনেরো বিশ বছরে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। আর এসব তৈরীর উপাদান এখন নিশ্চয়ই আগের মত সহজলভ্য হবে না। স্মৃতিচারণ পোস্টগুলো লিখে রাখছি, আগত দিনে নিজে পড়ে যেন নস্টালজিক হতে পারি। ইচ্ছে আছে বাকী রোজার মধ্যেই রোজা আর ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে দুটো স্মৃতিচারণ পোষ্ট লেখার। দেখা যাক কতটুকু করা যায়।
আবারো ধন্যবাদ রইলো ভ্রাতা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৭
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: পোষ্ট পড়েই বুঝা যাছে কেমন ডানপিটে পাবলিক ছিলেন। পটকা কিনে ফাটানো, একাধিক মসজিদ ঘুরে ঘুরে নফল নামাজ পড়া, রাত জেগে কোরআন পড়া, মিলাদ-জিলেপি, ঘরে হালুয়া-রুটি - স্মৃতি তাড়িত করে।