![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তারিখঃ১৭/০৫/২০১২
রাত ২ টাঃ রুপার ফোন.........
---কিরে এত রাত্রে তুই ফোন দিলি? এখনও ঘুমাসনি কেন?
---ঘুম আসছে না তাই ফোন দিলাম, কোনও প্রবলেম আছে তোর???
---না না,তা কেন হবে??? বল কি বলবি বল।
---তোর কি কিছুই মনে নেই?
---আরে, মনে রাখার মত কিছু হয়েছে নাকি আজ???
---না হয়নি।
---তাহলে কি মনে রাখবো?
---ও, আচ্ছা, এটা তো তোর মনে রাখার কথা না।
---কি আবোল তাবোল বকছিস!!!! কি মনে রাখবো,
সেটা তো বলবি নাকি???
---না কিছু না, এমনিতেই। আচ্ছা রাখি।
---ঘুম হচ্ছে না বলে উল্টা পাল্টা বকা শুরু করেছিস, যা ঘুমা। আমার
বহুত কাজ আছে এখনও।
একথা বলেই ফোন টা রেখে দিল অনি। আর কিছু
চিন্তা ভাবনা না করে নিজের কাজে মন দিল ও।
তারিখঃ ১৭/০৫/২০১২
রাত ১২ টা ১ মিনিটঃ
একটার পর একটা ফোন, মেসেজ আসতেই থাকে। আজ যে রুপার
জন্মদিন। বাড়ির বাইরে আজই প্রথম জন্মদিন পালন করছে ও। মিশুক
স্বভাবের জন্য ক্লাসমেটদের কাছে জনপ্রিয় আর সিনিয়রদের
কাছে বেশ পরিচিতি রুপার ফেসবুক ওয়াল জন্মদিনের
উইশে ভরে যায়, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষের টা না পাওয়ার বেদনাও
তাকে কম আহত করে না। সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়
ফোন দিতে।কিন্তু......
তারিখ: ৩০/০১/২০১২
নবীন-বরন অনুষ্ঠানের অনিকে দেখে রুপাকে আর পলক
ফেলতে হয়নি চোখের। শ্যামলা মেয়ে আর কারই বা চোখে পড়বে,
তাছাড়া তেমন কিছু তো ও করেনি অনুষ্ঠানে। অনি কালো রঙের
স্ট্রিপ দেয়া একটা পাঞ্জাবী পরে এসেছিলো, হাতে ছিল
কবিতার বই। কেউ যে এত সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করতে পারে,
সেদিনই বিশ্বাস করেছিল রুপা। পারতপক্ষে ও
নিজে কখনো কবিতার ভক্ত ছিল না। কি থেকে কি হয়ে গেল।
রুপার রুমমেট একজন এসে ওর কাছে অনির সুনাম করলে ও হয়ত তার
দিকে তেড়ে আসেনি, কিন্তু মনে মনে তার চৌদ্দ-গোষ্ঠী উদ্ধার
করে ফেলেছিল।
তারিখ: ২৩/০২/২০১২ থেকে ২৬/০২/২০১২
একই বিষয়ে একই ক্লাসে থাকলেও অনির সাথে কথা বলার সুযোগ
একেবারে পেত না বললেই চলে। অনি সর্বদায় ব্যস্ত,
তবে সেটা কোনও কাজে না, অকাজে। হয়তো কোনও মেয়ের
সাথে ছেলের খাতা এক্সচেঞ্জ করে দেয়া, যে স্যার আগের দিন
ক্লাসে খারাপ ব্যাবহার করবেন তিনি ক্লাসে আসার
আগে বোর্ডে তার একটা “স্টপ জেনোসাইড” টাইপ
প্রতিকৃতি এঁকে রাখা। তবে একটা জিনিস অনির সবাই পছন্দ করে,
সেটা আবৃত্তি। অনির দিকে কেউ খেয়াল করে নিয়মিত তা দেখার
সুযোগ কোথায়। চলছে একুশে বইমেলা, চারটা কবিতার বই
কিনে ক্লাসের ফাঁকে দুইটা বই অনির ঝুলফি ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয় ও
সবার অজান্তে। নাম লিখে দেয়নি বই এর উপর। তাতে যদি আবার
উপহাসের পাত্রী হয়ে যায় ও, অনি যে রকম ফটকা, করতেই পারে।
শুধু লিখে দিয়েছিল “১০০ টা নীল গোলাপ দিতে পারবে আমায়”??
দুইদিন ধরে খেয়াল করেও রুপা বুঝতে পারে না আসলে বই
দানকারী খুঁজছে কিনা ও। কিন্তু হতাশ।
তারিখ: ১৭/০৫/২০১২
সকাল ৬ টা
ফোনটা অনেকক্ষণ ধরেই বেজে চলছে। এত সকালে তো অ্যালার্ম
দেবার কথা না। কোনরকমে একচোখ খুলে দেখে অনির ফোন।
তড়াং করে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে ও।
---এত সকালে ফোন দিছিস ক্যান?
---ভাল লাগছিলো না, রাত্রে ঘুমায়নি, তাই তোরে একটু ফোন
দিলাম। রাগ করলি???
কাল রাতের কথা মনে হতেই জ্বলে ওঠে রুপা, কিন্তু পরক্ষনেই
নিভে যায়, একটা সহানুভুতি তৈরি হয়নির জন্য।
--- কি বলবি বল, আরেকটু ঘুমাবো আমি। ৮ টায় ক্লাসে যেতে হবে।
---আমার একটা কথা রাখবি??
---তোর কথা রাখতে হবে?? আচ্ছা বল, রাখার মত হলে রাখবো।
---একটু বাইরে আসবি?
---এখন?? কেন??( বিস্ময়ে হতবাক হবার মত অবস্থা হয়ে যায় রুপার)
---আয় না। তোর সাথে ভোর দেখতে ইচ্ছে করছে।
অনির কণ্ঠটা অনেক অপরিচিত লাগছে, তারপরেও
বেরিয়ে আসে রুপা।অনির চোখ দেখেই বোঝে ঘুমায়নি ও।
ভেবেছিল উইশ করবে জন্মদিনের কিন্তু করেনি দেখে একটু মন
খারাপ হলেও সামলে নিয়েছে নিজেকে। অনির
হাতে একটা ময়লা প্যাকেট। জন্মদিনের উপহার হলে তো এমন হত
না ।পাশাপাশি হাঁটছে দুজন, ধীরে ধীরে। তখনও রাস্তায় লোকজন
চলাচল শুরু করেনি। রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে হঠাৎ
রুপাকে দাড়াতে বলে অনি---
---ওই, একটা কথা শোন।
---কি???
---চোখটা বন্ধ কর।
---কেন???
---আরে কর না বাপ। তোকে খেয়ে ফেলব না আমি। বন্ধ কর চোখ।
কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রুপা।
---এবার চোখ খোল।
চোখের সামনে এতগুলো নীল গোলাপ। হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে...
---৯৯ টা আছে রে। ১০০ টা হয়নি।
চোখ তখন থইথই করছে। কিছুই বলতে পারছে না রুপা। অনির
মুখে দুষ্টামি ভরা হাসি।
---তুই এটা কি করলি অনি।
---আরে বোকা, ভয় পাচ্ছিস কেন???
আমি তো তোকে ১০০টা দেয়নি। যদি দিতাম তাহলে কিছু হত।
---আরেকবার বোকা হয়ে যায় ও। কিছুই বুঝতে পারে না কি হচ্ছে।
হলের দিকে পা বাড়ায় ও। কিছুদূর যাবার পর পিছন থেকে ডাক দেয়
অনি। একটা নীল গোলাপ হাতে বলে, এটা নিবি না রে????
ভোর থেকে সকাল হচ্ছে, দুজন পাশাপাশি হাঁটছে। অনি আর রুপা,
রুপা আর অনি। অনির হাতের সেই ময়লা প্যাকেটটা এখন আর নেই...
©somewhere in net ltd.