নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের সব পরিচয়ের মধ্যে \'মা\' পরিচয় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি

বডটজসৃ

কন্যা, জায়া, জননী

বডটজসৃ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী ও আমার নিরর্থক অপলাপ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫

বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততা ও অভূতপূর্ব অগ্রগতি। নারী সমাজের অর্থনৈতিক ভূমিকায় আসন সম্পর্কে বলতে গেলে যেই খাতটি সবার আগে নজরে ভেসে ওঠে তা হল- পোশাক শিল্প। তবে এর মধ্যই ধারণাকে সীমাবদ্ধ রাখলে ভুল হবে। বাংলাদেশের নারী সমাজ ইতোমধ্যেই শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাংস্কৃতিক অংগন, ক্রীড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ নানাবিধ খাতে রেখে চলছে তাদের গুরুত্বপূর্ন পদচারণা। ক্রমেই ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ শব্দটি ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সর্বত্র তাদেরই অনবদ্য অবদানে/ কল্যাণে। তবে যুগযুগান্তরের পুরুষ পর্বের আধিপত্য, পুরুষপুরাণ, এবং বাংগালী সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত পুরুষতন্ত্র নারীর ক্ষমতায়ন কে প্রভাবমুক্ত করেনি।

মানব সমাজ ও মানসিকতার জরিপে স্বতঃসিদ্ধ ‘নারীর অধঃস্তন’ অবস্থান থেকে মুক্তি দিতে; পক্ষান্তরে উন্নয়নে নানান সময়েই নেয়া হয়েছে নানান প্রচেষ্টা । বেশিরভাগ সময়ই এই প্রচেষ্ঠা গুলো সমাজে নারীকে টেইলারিং, কুটির শিল্প কিংবা তৎসংক্রান্ত ক্ষুদ্র পদক্ষেপে অনুপ্রাণীত করে, আর্থিক আপাত স্বচ্ছলতা আনবার ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবার নামে সাধারনত বেশির ভাগ সংগঠনগুলোই সমাজে নিজস্ব গবেষণা বা পলিসির বার্ষিক পরিকল্পনা পরিপূরণ করে থাকে। আবার নারীকে তার সমস্যাগুলো থেকে মুক্তিদানের নামে পরিবার ও নানাবিধ সংগঠনগুলো ‘বিচ্ছেদ’, বিচ্ছেদকরনের পর কতখানি পাওনা-খোরপোশ আদায় হল; সন্তান কার সাথে অধিকার পেল এই রকম নিড বেসড কিংবা আপাত সমাধানের দিকেই বেশি নজর দিয়ে থাকে। সাধারনত এই সকল পদক্ষেপগুলো সমাজের নিচের দিকে অবস্থানরত নারীদের জন্য গ্রহন করা হয়ে থাকে।

এদিক থেকে মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষিত ও কর্মজীবি তথা ক্ষমতায়িত নারী সমাজ বেশ খানেকটা পিছিয়ে। তাদের আর্থ-সামাজিক ও মানসিক চাহিদা স্বাভাবিক ভাবেই ভিন্ন। অন্যদিকে, নিপীড়ন বা সহিংসতা থেকে মুক্তি পেতে আইনী আশ্রয় গ্রহনের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনন্য সব ধকল এবং দীর্ঘসূত্রীতা। ‘মধ্যবিত্ত’ শব্দটাই যেন একটি বড় বাঁধা; যেখানে যুক্ত হয় মা-বাবা/পরিবারের সম্মান, সন্তান, ও সামাজিক মুখ রক্ষার মত বিষয়গুলো। তাই দেখা যায় ক্ষমতায়ন শব্দটি খানেকটা কর্মক্ষেত্রে তেলেস্মতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমার গবেষণার উদ্দেশ্য ‘ক্ষমতায়ন’-এর প্রকৃত অর্থ ‘কর্ম’ ও ‘ব্যক্তি জীবন’ দুই ক্ষেত্রেই যথার্থ হোক- পরিবারের পুরুষ সদস্যর সাথে আলোচনা ও অবস্থানের যথার্থ পরিবর্তনের মাধ্যমে।



চলে আসি জনসংখ্যা তত্ত্বে-

জুলাই, ২০১২ সালের সমীক্ষানুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি, ১০ লক্ষ, ৮৩ হাজার, ৪ জন। সূক্ষ্ণ ভাবে আমার আলোচ্য বয়স সীমার নর-নারীর গণনা পাওয়া না গেলেও যেই সমীকরণটি উঠে এসেছে তা এরকম-

• ২৪ থেকে ৫৪ বছরের নারী ৩ কোটি ১৬ লক্ষ ২৫ হাজার ৭ শত ৭৭ জন এবং

• পুরুষ ২ কোটি ৮৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৬ শত ২৮ জন।



লিঙ্গীয় অনুপাতঃ

জন্মকালীন : ১.০৪ পুরুষ / মহিলা

১৫ বছরের নিচে : ১.০৩ পুরুষ / মহিলা

১৫ থেকে ৬৪ বছর : ০.৯ পুরুষ / মহিলা

৬৫ বছর এবং অধিক : ০.৯৬ পুরুষ / মহিলা

মোট জনসংখ্যা : ০.৯৫ পুরুষ / মহিলা



ধর্মীয় গাথুনির দিকে তাকালে দেখা যায় এদেশে মুসলিম ৮৯.৫%, হিন্দু ৯.৬%, অন্যান্য 0.৯% এটা ২০০৪ সালের নজির। যাহোক। আমাদের গবেষণা কাজে ধর্ম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বলেই প্রারম্ভেই গুণতিটা আলোচনা করা হল।



সহিংসতা কি?



সাধারণত সহিংসতা সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয় – এটি হল এমন কিছু শারীরিক ও মানসিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ যা কোন ব্যক্তিকে আঘাত দেয়া, ক্ষতি সাধন করা, ভীতিপ্রদাণ করা বা হত্যা করার জন্য প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

পারিবারিক সহিংসতাঃ

যুক্তরাজ্যের ম্যাসাচুসেট এ অবস্থিত ওয়েলটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কারস্টি এলিস ইয়েল এর মতে –

পারিবারিক সহিংসতা মূলত আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার একধরনের ফর্ম বা পদ্ধতি যা পরিবারের একজন সদস্য অন্যের উপর আরোপ করতে চায়। এটি সাধারণত বৈষম্যপূর্ন বিবাহ থেকে উদ্ভব হয় এবং নারীর অধঃস্তন অবস্থানের উপর পুরুষের আধিপত্য কে প্রতিষ্ঠা করে থাকে –ঘরে এবং বাইরে।

ঘনিষ্ঠ সংগীর থেকে সহিংস আচরণ হল সেই সমাজে বসবাসের ফল যেটা পুরুষদের আক্রমণাত্মক আচরণকে গুরুত্ব দেয় না অন্যদিকে নারীকে সমাজে বসবা স করবাঁর পূর্বশর্ত হিসেবে অহিংস হতে বলে। (পেন্স ও পেয়মার, ১৯৯৩)



• শুরুতেই বলে নিয়েছি বিগত বছরগুলোতে নানান বিষয়ে নারীদের অগ্রগমণ চোখে পরবার মতন। মধ্যবিত্ত সমাজের বহুলপ্রচলিত ‘ভালো বরের আশায় ভালো ডিগ্রী অর্জন’ এর গন্ডি থেকে থেকে ইতিমধ্যে কিঞ্চিত সরে এসেছে পরিবার কিংবা আমার টার্গেট সদস্য। অথবা বলা চলে, জীবন ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার টানেই হয়তবা। যা হোক! মধ্যবিত্ত সমাজ বলবার সাথে সাথেই টাকার হিসেবটা করবার একটা প্রয়াশ আপনাতেই চলে আসে। মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে খাবি খেতে হয় বড় বড় অর্থণীতিনির্ধারকদেরই। এই শব্দের মূর্ত/ কংক্রিট সংজ্ঞার নির্ণয় নিজেই হবে একটি ল্যান্ডমার্ক। তাই সরাসরি ওদিক না যেয়ে ধরে নিচ্ছি এই সদস্যাগণ উঠে এসেছেন সেইসব পরিবার থেকে যাদের মাসিক আয় ৩০,০০০- থেকে ৫০,০০০ এর মাঝামাঝি এবং তিনি নিজেও এর অংকের মাঝখানে বিচরণ করেন উপার্জনের ক্ষেত্রে।



• উচ্চ শিক্ষা, উন্নত বা গড়পড়তা মানের আয়সম্পন্ন চাকরী ছাড়াও এই গোষ্ঠীর রয়েছে অসম্ভব রকমের সম্ভাবনাময় ও শক্তি-স্পৃহার বয়স – চব্বিশ থেকে তেত্তিশ।

সাধারনত এই সময়টি নিম্নলিখিত কারনে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য-

I. শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতম অর্জনের সময়।

II. শারীরিক ভাবে কর্মচঞ্চলতার অধ্যায়।

III. বিবাহের আদর্শ সময়।

IV. সন্তান গ্রহনের উপযুক্ত সময়।

V. কর্মক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়।

VI. কর্মক্ষেত্রে উন্নতির আদর্শ কাল।



সাধারণত আমার টার্গেট গ্রুপের সদস্যাগণ উপরোক্ত সকল বিবেচ্যগুলোকে ইতোমধ্যেই সম্পন্ন বা অর্জন করে ফেলেছেন। বাগড়াটা বাধেঁও তখনই। শিক্ষাজীবন শেষ। কর্মক্ষেত্র ও পরিবার জীবনে অনেকটা পাশাপাশি অবতরণ। অনেকে হয়ত বিয়ের গণ্ডিতে পরেননি, অথবা অনেকের সুতোও হয়ত বা ইতোমধ্যে ছিড়ে গেছে- অনভিপ্রেতভাবেই।





যেভাবে সমস্যাগুলো ঘণীভূত হয়-



প্রথমেই দেখা যাক অবিবাহিত নারীর চালচিত্র। এই গোষ্ঠী পিতৃ পরিবারে বিচরণ করে। ক্ষেত্র বিশেষে জেষ্ঠ ভাই-বোন কিংবা নিকট আত্মিয়ের বাড়িতে প্রতিপালিত হয়ে থাকেন। তাদের সংসারে আর্থিক অবদান অবশ্যক- তা ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা জোড়পূর্বক, অথবা নিতান্তই দায়িত্বশীলতার কারনেই হোক না কেন। অবদান সমর্পণের সাথে সাথে অতি প্রায়শই অথবা বলতে গেলে বেশির ভাগই দেখা মেলে স্বাধীনভাবে চলাফেরা কিংবা ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্বাধীনতাকেও সমর্পণ করতে হয়।



আবার বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা খানিকটা – সংসারে অন্নপূর্না, বিদ্যায় স্বরস্বতী, অর্থে লক্ষী, অন্তরে মায়াদেবী –এর মতন। অর্থাৎ, অর্থকরীর সাথে সাথে তাকে হতে হবে সংসারী, সন্তানে সম্পূর্না, উভয় জীবনে পারদর্শী এবং স্বামী সংসারের একান্ত বাধ্যগত। যেখানে তার মত- অমত, খরচ-জমার নীতি নির্ধারক হবেন স্বামী। তখনই কেবল উক্ত নারী পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে হবেন আদর্শ; অন্যথা তাকে মেনে নিতে হবে অধঃস্তন সমাজের পরিচয়, অকথ্য বাক্যালাপ, শারীরিক ও মানসিক পীড়ন, এবং সামাজিক অসৌজন্য।



একজন নারী যতই কর্মক্ষেত্রে নিপুণা হোন না কেন, সংসারের প্রতি যতই যত্নবান হোন না কেন, তাকে অতি আপন পৃথিবীর কদর্য রূপটি দেখতে হয় যদি কিনা-



I. কোন কারণে স্বামী/ ভাই –এর মাসিক আয় উক্ত নারী সদস্যের চেয়ে কিঞ্চিত বেশি হয়।

II. আয়-ব্যয়ের সমীকরণ ও অধিকার কর্তাব্যক্তি/পুরুষ সদস্যের হাতে না থাকে।

বেশ কিছু নারীর সাথে কথা বলে জেনেছি; তারা তাদের আয়ের সত্য হিসাবটা তাদের স্বামীর কাছে গোপন রাখেন। এ বিষয়ে নানাবিধ মত পেয়েছি-

I. স্বামী বেহিসেবি।

II. পুরো অংকটা জানা থাকলে স্বামী অনর্থক অধিকার ফলাবেন।

III. তিনি জানলে পুরো টাকাটাই হাত ছাড়া হয়ে যাবে।



নিম্নোক্ত দুটি পয়েন্টেই তাদের বেশি সমর্থন পেয়েছি।

এইতো গেল আর্থিক পীড়ন। এবারে আসি অন্য প্রসঙ্গে-

বিবাহিত নারীর জীবনে সন্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি আবেগীয় অধ্যায়। আমার আলোচ্য নারীরা এই অধ্যায়ের একেবারে আদর্শ সময়ে বিচরণ করেন। মুদ্রার ওপিঠে দেখলে- এসময়টি কর্মজীবনের জন্যও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও এই নারী সমাজ তাদের মূল্যবান ইচ্ছা, পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পান না। যদিও আর্থিক কলের বেগ তার উপরও নির্ভরশীল বা আপাতভাবে তিনি নারী ক্ষমতায়নের সীমা রেখার ভিতরেই অবস্থান করেন।



তাই পারিবারিক জীবন ও কর্মজীবন কোনটিই গুছিয়ে ওঠা হয়না। অনেক নারীর সাথে কথা বলে জেনেছি তারা সন্তান রেখে কাজে যাবার সব রকমের সুবিধা (সুবিধা এ কারণেই- সন্তান লালন পালনের মত আপনজনের সান্নিধ্য রয়েছে) থাকবার পরও তাদের আর পরবর্তীতে কাজে ফিরবার সুযোগ হয়নি। আমার উদ্দেশ্য সংসার- সন্তান পালন কে হেয় করা নয়। তা নিঃসন্দেহেই মহৎ।

আবার ফিরলেও তা এত দেরিতে যে তার সম্ভাবণাময় সময়টি হয়ত পেরিয়ে গেছে- তাতে যুক্ত হয়েছে লম্বা সময়ের ব্যবধান, চাকরী বাজারে উত্তোরত্তর প্রতিযোগিতা এবং মানসিক – আবেগীয় জড়তা।



বিপরীতটিও পরিলক্ষিত-



অর্থকরী নারী সন্তান গ্রহণের পর চাকুরীবাজার ফিরতে না চাইলেও তাকে বাধ্য করা বা বাধ্য হওয়ার নিদর্শনও বিরল নয়।

কাজের সাথে জড়িত এই নারীগণ কলুর বলদের মতন অনেকটা জীবন পার করে দেন। কর্মী হয়েও তাদের আর্থিক অধিকার নেই, সংসারী হয়েও সংসারে মূল্যায়িত নন। সংসারে যেহেতু খারাপ পারফরমেন্স দেখাবার সুযোগ নেই তাই এর প্রভাবটা কর্ম জীবনেই পরে। আর এই প্রভাব আরো বেশি প্রভাবক হয়ে এই নারীদের অবস্থান আরো বেশি জটিল করে।



প্রতিকারে নারী পদক্ষেপ ও অবমূল্যায়ন



একদিকে পরিবার অন্যদিকে কর্মক্ষেত্র- দুই’র চাপে যখন এই নারী সদস্য প্রতিকার পেতে প্রথমে নিজে পদক্ষেপ নেন, তখন পুরুষতন্ত্রের অন্ধ বিচারে তার দিনান্তিপাত অনিবার্য, তা আরো বেশি ঘণিভূত হয় যদি যৌথ পরিবার থেকে থাকেন।

অন্যথা না দেখে উক্ত নারী পরিবারের আশ্রয় চাইলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের সাহায্য পান না। কারন হিসেবে যেগুলো উঠে আসে তন্মধ্যে-



I. স্ত্রী হিসেবে স্বামীর আদেশ পালন অনিবার্য,

II. ধর্মীয় অনুশাসন,

III. প্রচলিত প্রথা- ‘স্বামীর সংসার থেকে লাশ হয়ে ফেরা’

IV. আর্থিক অসংগতি

V. দায় এড়ানো

VI. অভিভাবক না থাকায় উপায়ন্ত না থাকা

VII. সামাজিক লজ্জাবোধ

VIII. সন্তানের প্রতি দায়িত্ববোধ উল্লেখযোগ্য। উপসংহার হিসেবে বিবাহ বিচ্ছেদ কিংবা আলাদা থাকা না পৌছিয়ে পারস্পরিক সমঝোতায় উপনিত হবার মধ্য সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াস নারী পক্ষ থেকে আসলেও এরুপ আরোপিত কারনগুলো অবলোকিত হয়।



উপরন্তু, এই শিক্ষিত কর্মজীবী নারী সমাজ নিজেরাও বিভিন্ন কর্মরত নারীসেবী সংগঠন, আইনী সহায়তা বা নিকটবর্তী সাহায্য সংগঠনগুলো সম্পর্কে জেনে থাকলেও মদদ গ্রহণ করতে পারেন না। কেননা, সেই পরিমাণ সাহসিকতা কিংবা শক্তি সংকুলান তারা করতে অপারগ হন; আবারো উপরোক্ত কারণ- বিশেষত-‘সামাজিক সম্মান’ ও ‘সন্তানের ভবিষ্যত’ বিবেচনা করে। এছাড়াও সাম্পর্কিক নির্ভরতা, ক্ষেত্র বিশেষে সুপ্ত ভালোবাসা, অধিক্ষেত্রে ভয়-ভীতিও প্রণিধেয়।



সমাজের মানুষ সাধারণত এগিয়ে আসেন কম কেননা; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরূপ সহিংসতাকে পারিবারের ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হইয়ে থাকে। আবার নারীর প্রতি সহিংসতা হলে পূর্বেই উক্ত নারীর স্ত্রী হিসেবে অকৃতকার্যতা বা চাকুরীর সুবাদে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারাকে ধারণা করে নেয়া হয়। সমাজে সহিংসতার শিকার নারীও তখনই তার প্রকাশ বা রিপোর্ট করে থাকে যখন তা সহ্যের সীমা লংঘন করে থাকে বা জীবনের প্রতি ঝুকিঁরূপে অবতীর্ণ হয়। জাতীয় কিছু দৈনিকের হিসেব মতে-

বাংলাদেশ নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় ২০০২ সালে ২য় (দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ২০০২), ২০০৩ সালে ৪র্থ (ডেইলি স্টার, ২০০৪) স্থানে ছিল। স্ত্রী কে প্রহার করা কে বাংলাদেশী ৬৫% পুরুষই সমর্থণযোগ্য বলে মনে করে থাকে (কানাডা ইমিগ্রেশন এবং উদ্বাস্তু বোর্ড, 2004 সালে বিবৃত)। হিউম্যান রাইটস কোয়ালিশন গ্রুপ, বাংলাদেশের সমীক্ষা মতে ২০০৩ সালের প্রথম ৯ মাসের মধ্যে ১৮৪ জন নারীকে যৌতুক সহিংসতায় হত্যা করা হয়, ২০ জন আত্মহত্মা করে, শারীরিক নির্যাতন করা হয় ৬৭ জনকে এবং ১১জন এসিড সন্ত্রাশে শিকার হয় (আই.বি.আই.ডি-২০০৪)। তার কাগজে ফারুক (2005) জাতিসংঘের বিভাগের বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর সভার জন্য তার যে গবেষণা পত্রটি প্রস্তুত করেন তাতে তিনি সারসংক্ষেপে তুলে ধরেন বাংলাদেশের ৯টি দৈনিক সংবাদপত্রের রিপোর্ট যাতে বলা হয় – ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩০ থেকে ১১৬৪ হইয়েছে। তাছাড়া 2000 সালের বাংলাদেশ সমাজবিদ্যা ই-জার্নাল. ভলিউম 9, সংখ্যা 2. 2012 22 অনুযায়ি বাংলাদেশ স্ত্রী-প্রহার প্রথম স্থানের অধিকারী।

আন্তর্জাতিক ডায়ারিয়াল ডিজিজ রিসার্চ কেন্দ্র, বাংলাদেশ (২০০৬) এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী

বাংলাদেশের নারীদের ৬০ শতাংশই তাদের জীবনের কোন না কোন সময় গৃহ সহিংসতার নানাবিধ ফর্মের সম্মুখিন হয়ে থাকে।

এই নিপীড়ণ গুলো শুধু এখানেই থেমে থাকেনা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এইগুলো প্রবাহিত হয়ে থাকে প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে। অর্থাৎ, কন্যা শিশুটিও প্রভাবিত হয় মানসিক দাসত্ব নিয়ে এবং বেড়ে ওঠে সংকুচিত হয়ে। ফলশ্রুতিতে তার একই রকমেই বিপর্যয় ঘটে প্রেক্ষাপট, অদৃষ্ট কে মেনে নিয়ে।



অন্যদিকে ওই পুরুষ ঘরানার পুত্র সন্তান বেড়ে ওঠে নারী সমাজের প্রতি অবজ্ঞা নিয়ে। এর নিদর্শন পথ ঘাটে মিলে প্রায়শই। কিছু দিন পূর্বেই রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত শিশুমেলায় গিয়ে দেখতে পেলাম- ঘোড়ায় চড়বার লাইন অতিদীর্ঘ হওয়ায় ২য় বারের মতন মা ব্যর্থ হলেন তার আদরের পুত্র কে ঘোড় সওয়ার করতে। এতে ক্ষুদ্ধ ওই বালক (৮-১০ বছর) তার মা কে সকলের সামনে নির্দিধ্বায় লাথি মেরেই চলছে। এতে পাশেই থাকা বাবার কোন ভ্রুকুটি নেই, মায়ের কোন আক্ষেপ নেই কেবল লোক দেখা লজ্জাবোধ ছাড়া আর ওই বালকের বড় বোনটির চেহারায়ও কোন পরিবর্তন নেই।



এভাবেই সমাজের চিত্র বদলায় না। শুধু নারী ক্ষমতায়ন শব্ধটি একটা অন্তঃসার শুন্য, বিদীর্ণ, নিরর্থক অপলাপ হিসেবেই রূপান্তর হয়। নারীর ভাগ্যে অযথার্থ পরিবর্তন হলেও নারীর ক্ষমতায়ন শব্ধ দুটি কেবল দুটি শব্দেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়, ওদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটে না।



আমরা নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছি নিরন্তর। শুধু গুছাবাব বাকি থেকে যায় মানসিক মানবিকতা, যেখানে নারী শুধুই বিধাতার সৃষ্ট নিকৃষ্ট ‘মেয়ে জাতি’; ভোগ বিলাশের উৎস। আমার অভিমান হয়ত ব্যাখা ছাড়াই ঢের বেশি- মানুষ বদলায় না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৪৪

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
পোস্টটা ফেবুতে শেয়ার দিলাম। সবার পড়ে দেখা দরকার।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:১৩

বডটজসৃ বলেছেন: ধন্যবাদ নাজিম ভাই

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩

আহমেদ ফয়েজ বলেছেন: আপু আপনার: এই আলাপটি নিরর্থক নয়।
তবে আমি একটু অন্যভাবে বলতে চাই: নারী এসব দাবী দাওয়া কার কাছে করে? কৌশলে কিন্তু ওই পুরুষ এর কর্তৃত্বটাই চলে আসে। নারী এসব দাবী দাওয়া না করে এবং অধিকার আদায় টাদায় না বলে অধিকার নিয়ে কাজ করে গেলেই তো পারে। অধিকার দেবে কে? কার কাছে নারী অধিকার চায়? অধিকার দেওয়ার মালিক কি পুরুষ? পুরুষ তাহলে কার কাছ থেকে অধিকার পেল?
আর ধর্মীয় বিষয়টি যদি বলতে চাই তাহলে তাকেও নিজেদের সুবিধার্থেই ব্যবহার করছে কাঠ মোল্লারা। যদি আমরা দুনিয়া সৃষ্টি এবং মানুষ সৃষ্টির অংশটুকু পাঠ করি তাহলে দেখব- “.. তারপর আল্লাহ বললেন, আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশে পাখী, পশু, বুকে হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত দুনিয়ার উপর রাজত্ব করুক। পরে আল্লাহ তাঁর মত করেই মানুষ তৈরী করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে।” (আল তৌরাত ১:২৬-২৭ আয়াত)। এই অংশে কিন্তু আল্লাহ তার মত করে দুজনকেই সৃষ্টি করলেন। যদি আমরা আরো অগ্রসর হই তাহলে দেখব তিনি মানুষকে সমান দায়িত্বও দিলেন। আবার কোরআন শরীফেও যদি দেখি: “And certainly We created man of an extract of clay” সূরা মুমিনুন ১২ আয়াত। এখানে মানুষ। স্ত্রী ও পুরুষ আলাদা কিছু নয়। এবং উচ্চ নিম্নও কিছু নয়।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৯

বডটজসৃ বলেছেন: ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই। আপনার মন্তব্যের রেফারেন্সগুলো আমার পরবর্তী আয়োজনে সত্যি কাজে লাগবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.