![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক কথায় ভাবুক! বহুকথায় আমি একজন স্বাধীন মানুষ, রোবট নই! তাই কারো কথায় সহজে প্রভাবিত হই না,সবার কথা শুনি, সবার লিখা পড়ি, হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি , কেন তিনি এমন করে ভাবছেন!বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গ খুব উপভোগ করি,তাদের সাথে মতের মিল হলে ভাল, না হলে আরও ভাল, গলায় জড়াজড়ি করে বলি, আসেন আপনার কাছ থেকেই নতুন কিছু শেখা যাবে!
১
:ভাইজান আপনেরে বাবায় ডাকে।
:ক্যান?
:আইজ গঞ্জে যাইতে হইব হাটবার।
:পারুম না, দেখস না কি করি!
:বাবায় কইসে দুই মিনিটের ভিতরে বাড়িত আইতে, নাইলে ধুনা দিব!
এই বলে চুপচাপ মিতু হাঁটা দিল।তার বলার দরকার ছিল সে বলেছে, আসা না আসা ভাইজানের বিষয়। ধুনা খাইলে সে খাবে তার কি!
ভর দুপুর, একটু আগে একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। স্কুল পালিয়ে মিতুল বন্ধুদের সাথে কাদায় গড়াগড়ি করে ফুটবল খেলছিল ,এর মধ্যে বেরসিক পিতার জরুরী তলব।
নাহ বাবারে নিয়া আর পারা গেল না, সব সময় কঠিন মুহূর্তেই তার তলব করতে হয় আমারে? দুইটা গোল হজম করছি, একটাও শোধ করতে পারি নাই, এখন চইল্যা গেলে মান ইজ্জত থাকে কারো! ক্ষেত্র বিশেষে মনে হয় তার লগে আমার শত্রুতা আছে,যাকে বলে একে বারে সাপে নেউলে সম্পর্ক, মনে মনে ভাবে মিতুল।
সাপে নেউলে বাগধারাটা আজই বাংলা পিরিয়ডে শিখেছে সে। তার যেই বয়স সেই বয়সে বাবা আর হাই স্কুলের শিক্ষক হল একনম্বর শত্রু। বড়ই শক্ত বাংলা শিক্ষক নীতেন স্যার,না শিখে উপায় কি ।সেইবার পড়া না শিখে মার খেয়ে দুইদিন ঠিকমত সাইকেল চালাতে পারেনি। বাংলা বিষয়টার আসলে হাই স্কুলে কোন প্রয়োজনীয়তা আছে বলে সে মনে করে না,অবশ্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ও মাঝে মাঝে সন্দেহে ভুগে সে। শিক্ষা মৌলিক প্রয়োজনীয় নাকি বিলাসবহুল বিষয়,এই নিয়ে বিতর্ক হলে নির্ঘাত প্রথম হত।যার চরাঞ্চলের দরিদ্র মাঝি পরিবারে জন্ম, তার পক্ষে এমন চিন্তা ভাবনা অমুলক কিছু নয়।
:ওই তোরা খেল, আমারে বাবার লগে গঞ্জে যাইতে হইব মজু চৌধুরীর মাল-সামান লইয়্যা।
:তুই প্রত্যেকদিনই এমন করস, কাইল থেইকা তুই বাদ।
:হ, কে কারে বাদ দেয় দেহা যাইব। আমারে বাদ দেয় এমন সাইধ্য এই গেরামে কারো নাই।
পরনের লুঙ্গির গোছ খুলে, গেঞ্জি হাতে নিয়ে সে ঘাটের দিকে হাঁটা দেয়, কাদা শুকিয়ে শক্ত হয়ে গায়ে লেগে আছে। ঘাটে বসে গোসল করতে করতেই বাবা চলে আসবে।তিব্বত-৫৭০ মাথায় লাগান মাত্র জ্বলুনিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসে,এর মাঝেই বাবার কণ্ঠ শুনতে পায় সে :কিরে আইজ বলে ইস্কুল পালাইছস?
:কে কয় আপনেরে এইসব আজগুবি কথা? চোখ বন্ধও রেখেই উত্তর দেয় সে।
:আমিও তো কিছু খোঁজ খবর রাখি, নাকি আমার কোন গোয়েন্দা নাই? সব গোয়েন্দা তোর।
মিতুল আর উত্তর দেয় না, নিরবতাই ভাল।নিশ্চিত ছোট বোন মিতুর কাজ এইটা।ছোট বোনগুলারে আল্লাহ্ কি দিয়া বানায় কে জানে? সে তাড়াতাড়ি পানিতে ডুব দেয়।
বাবা দাঁড় টানছে, আর সে বসে বসে ভাবছে আজকে হাট থেকে রুনুর জন্য একটা কিছু কিনে নিবে কি না? হঠাৎ করে উপহার পেয়ে রুনুর চেহারা কেমন হবে? চিন্তা করতেই ভাল লাগছে তার, ভয় পাবে নাকি লজ্জায় লাল হয়ে যাবে, খুব জোরে নিশ্বাস নিলে রুনুর নাক লাল হয়ে যায়,কানের দুলগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে। আচ্ছা রাগলে কেমন লাগে রুনুকে? সে জানে না।জানবে কি ভাবে,রুনু সামনে আসলে তো সে চোখ তুলেই তাকাতে পারে না।
:হইছে আর গুনাইয়া গান ধরন লাগব না, আইসা পরছি। নাও টাইন্যা ঘাটে লাগা, মালমাল নামা। টক বেগুনগুলা উপরে থুইস!
:জি আব্বা লাগাইতাছি।
মিতুল লজ্জা পেয়ে যায়, কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সে। রুনুর সাথে ভয়ে ঠিক মত কথাইতো বলে সে নাই কোনদিন ।
মালামাল বেচাকেনা শেষ, ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় সদাইপাতি খরিদ করে বাপ-বেটা মিলে চা খেতে বসেছে,গঞ্জের চায়ের স্বাদই আলাদা। টুন টুন টুন শব্দ শুনতে মিতুলের বেশ লাগে ।তার ইচ্ছা বড় হয়ে সে এই গঞ্জে বড় একটা চায়ের দোকান দিবে,বাবার মত নৌকা চালাবে না। সিনেমা চলছে বিটিভিতে ,কালার টিভি। পর্দায় ছবি লাফালাফি করছে নায়ক নায়িকার সাথে তাল দিয়ে।সিনেমার নায়কের কয়েকটা ডায়ালগ তার খুব ভাল লাগল, বিশেষ করে ধনী-গরীবেরটা, সে নিজেও একদিন নায়কের মত মজু চৌধুরীর সামনে দাড়িয়ে এইভাবে রুনুর উপর তার অধিকার দাবি করতে চায় !
মিতুল আটআনা দিয়ে ছোট বোনের জন্য নাবিস্কো লজেন্স কিনল,ঘরে গেলেই জানতে চাইবে,ভাইজান কিছু আনছ আমার জন্য?লজেন্সের সাথে একটা গোল রিং ফ্রি। রিং টা সে পকেটে রেখে দিল। কে জানে হঠাৎ কাজে লেগে যায় যদি?
২
বোনের জন্মের দু বছর বয়সেই আপন মা মারা যায় মিতুলের,এরপর বাবা আরেকটা বিয়ে করেন।মায়ের স্মৃতি বলতে একজন মহিলা তাকে জোর করে ধরে পুকুর ঘাটে, সবার সামনে ন্যাংটো করে গা ডলে ডলে গোসল করাচ্ছেন এমন একটা দৃশ্য মনে পড়ে, এর বেশি কিছু মনে নাই।মায়েরা বোধহয় মনে করে বাচ্চাদের লজ্জা শরম নাই। যদি তার বোন মিতু পুরো মায়ের মত দেখতে না হত, এতটুকু ও মনে থাকত কি না সন্দেহ! সৎ মাকে আসলেই বেশি খারাপ ভাবে মিতুল,স্যারদের চোখ এড়িয়ে স্কুল ফাঁকি দিলেও সৎ মার চোখ ফাঁকি দেয়া যায় না,ঠিকই বাবাকে নালিশ করবে মহিলা। এই নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই, তার কপাল খারাপ, সে দুনিয়াতে পয়দা হয়েছেই বাবার হাতে ধুনা খাওয়ার জন্য!
স্কুলে আসলে মিতুলের যেতে ইচ্ছেই হয় না।শুধু রুনুকে একটু দেখবে বলেই প্রতিদিন স্কুলে যায়। তার একমাত্র কাজ হল সেকেন্ড বেঞ্চে বসে চুপচাপ রুনুর দিকে তাকিয়ে থাকা।
নন্দী স্যারতো একদিন ধরেই ফেলেছিলেন।
:এই যে মিতুল মিয়া,বিশিষ্ট ভাবুক সাহেব কোন দিকে খিয়াল?
:না স্যার ঘুমাইতেছিলাম!
:তোকে না বলেছি ক্লাসে শুইদ্ধ বাংলায় কথা বলবি!
:বল কি করছিলি?
:চোখের পাতা খুলে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম স্যার।
:কী কইলি?
:না স্যার,ওই যে ওইদিন আপনি কইলেন, কোন একটা প্রাণী চোখ খুলে ঘুমাইতে পারে,সেইটা চেষ্টা করে দেখছিলাম একটু, মানুষের অসাধ্য তো কিছুই নাই।
পুরা ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেল।
স্যার আরও কঠিন গলায় বললেনঃতা এখন কি সফল হয়েছ? এক সপ্তাহের ভিতরে সফল না হতে পারলে খবর আছে। চক্ষু খুলে রেটিনা হাতে ধরিয়ে দেব, ঘুমানোর প্রাকটিস করা হচ্ছে,ফাজিল কোথাকার! এই পরিশ্রম গনিতের পিছনে করলেও তো পাশ নাম্বারটা তুলতে পারতি, প্রত্যেক পরীক্ষায় অঙ্কে ডিম পাস।লজ্জা করে না ঠেলে ঠেলে উপরের ক্লাসে উঠতে?
:স্যার কিন্তু কথাটা ভুল বললেন ক্লাস থ্রিতে আমি অঙ্কে ৬৬ পাইছিলাম।
পুরা ক্লাসে আবারো হাসির তুফান,নন্দী স্যরের ক্লাসতো তাই।অন্য স্যার হলে এতক্ষনে দুই তিনটা বেত ভেঙ্গে ফেলা হত!
মার খেতে মিতুলের তেমন খারাপ লাগে না। তিন চার ঘণ্টা সময় পড়ার টেবিলে নষ্ট করার চাইতে, দশ বারটা বেতের বাড়ি খাওয়া খুব খারাপ কিছু না। তাকে বেত্রাঘাত করার সময়ও কানা চোখে তাকিয়ে দেখে রুনু কি করছে, মাঝে মাঝে নীতেন স্যার যখন খুব জোরে বেত্রাঘাত করেন তখন রুনু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে, উফ বা ইশশ জাতীয় শব্দও বের হয়ে যায় মনের ভুলে।মিতুল বাড়িরকাজ না শেষ করার অন্যতম একটা কারণও হতে পারে এটা। আঘাত পাচ্ছে সে অথচ কষ্ট পাচ্ছে রুনু, জীবনের কাছে এর চেয়ে বেশী পাওনা মিতুল আশা করে না!
রুনুও মাঝে মাঝে ভুলে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, সেই দিনটাই তার অন্য রকম যায়।খুশিতে আল্লাহ্র সারা দুনিয়ায় দৌড়াদৌড়ি করতে মন চায়। তাছাড়া ছাত্র হিসেবেও মিতুল যে খুব খারাপ তা কিন্তু না, অঙ্কে ফেল করেও রোলঃ ৭!আর রুনুর রোল:১! তবুও রুনু একদিন তার অংক খাতাটা চাইল মিতুল লজ্জায় আস্তে করে খাতাটা বাড়িয়ে দিল!
সেই রাতে তার ঘুম হয় নি, নৌকায় শুয়ে সারারাত আকাশের দিয়ে তাকিয়ে ছিল। শেষ রাতের আকাশে ছিল নীল চাঁদ ।তার অপক্ষার প্রহরকে দীর্ঘায়ীত করে তিনদিন পর রুনু খাতা ফেরত দিল।খাতায় রুনুর গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ লেগে ছিল।সেই ঘ্রাণ নাকে লাগলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। পুরো ক্লাস খাতা নাকের কাছে নিয়ে বসে ছিল মিতুল। টিফিন পিরিয়ডে স্কুল পালিয়ে মাঝনদীতে নৌকায় বসে খাতা খুলল সে।মাঝের পাতায় হাতে ঝাড়ু বিশিষ্ট একটা দজ্জাল মহিলার ছবি আঁকা, পাশে লিখা-তোমার বউ।
সেই থেকে সে রুনুর কথা ভুলতে পারে না , সারাক্ষন একজন মানুষের কথা তার মাথায় কীভাবে ঘুরে সে নিজেও জানে না। সবই আল্লাহপাকের ইচ্ছা, তার মাথায় তার বউয়ের চিন্তা ঘুরবে না তো কি অন্য কারো চিন্তা ঘুরবে? আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ! সে এই রকম মানুষ না।
৩
মাঝে মাঝে তার খুব ইচ্ছে হয় রুনুর সাথে একা একা হেঁটে ঘরে ফেরার। কিন্তু রাস্তায় দেখা হলে রুনুতো এমন ভাব ধরে যেন তাকে চিনেই না, আবার কখনও সে যদি বিকালে হাঁটতে হাঁটতে রুনুদের বাড়ির কাছে যায়, রুনু বারান্দায় বসে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে,যেন সে বুঝতেই পারে নি মিতুল যে এতক্ষন দাড়িয়ে আছে ।মাঝে মাঝে তার খুব কান্না আসে,রাগও হয় রুনুর উপর।বাবাকে এত ভয় পেলে হয় ? হোক না তার বাবা চৌধুরী , জামাই তো খেয়া ঘাটের মাঝি।
মজু চৌধুরীর ব্যাপারে লোকজন যা বলে তার কতভাগ সত্যি আল্লাহ্ই জানেন,যার রুনুর মত একটা কন্যা থাকে সে কি সামান্য চর দখলের জন্য দিনে দুপুরে মানুষ খুন করাতে পারে?কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা তা দিয়ে তার দরকার কি, সে তো আর চৌধুরীর সাথে ঘর বাঁধবে না ।
তার পরদিনই স্কুলে নন্দী স্যারের কাছে পড়তে গেলে আবার সেই রুনু,চিরচেনা মুচকি হাসি।খালি হাসলে কি সব সময় হয়, একটু বুঝি কথা বলতে মন চায় না? মিতুল অনাস্থায় ভুগে,রাতে ঠিকঠাক ঘুম হয় না। ঠিক করে সে আর রুনুর দিকে তাকাবে না।যেই কথা সেই কাজ, পরদিন থেকে সে আর একবারও রুনুর চোখে তাকায় না। চুপচাপ বসে অঙ্ক খাতায় অ্যাঁকিবুকি করছে , কি ব্যাপার? পায়ে নরম তুলতুলে অনুভুতি হচ্ছে কেন? সে ভয়ে একটু লাফিয়ে উঠে থু থু দেয় বুকে। নন্দী স্যার জিজ্ঞেস করেঃ কিরে মিতুল চোখ খুলে ঘুমাতে গিয়ে দুঃসপ্ন দেখলি নাকি?
মিটিমিটি হাসছে রুনু, মুহূর্তেই সে বুঝে ফেলে ঘটনা।এরপর প্রতিদিন একটু আকটু আলতো ছোয়াছুয়িতে মিতুলের কিশোর জীবনে নতুন রহস্যের সৃষ্টি হয়।মিতুল অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চায় রুনুর সাথে,প্রয়োজন হলে রুনুকে নিয়ে সে নৌকা করে দূরের কোন ভাটি অঞ্চলে সংসার বাঁধবে, যেখানে কেউ ওদের চিনবে না। কোন এক ঝড়ের রাতে সে রুনুকে নিয়ে নৌকায় ঘুমাতে চায়,ভয় পেলে রুনুর ভীত চোখ দেখতে কেমন লাগে জানতে চায় ,শোনাতে চায় মাঝ নদীতে বৃষ্টির নেশা ধরা ঝুম শব্দ ।আর চিন্তা করতে পারে না মিতুল, সুখের আবেশে তার দম বন্ধ হয়ে আসে।
৪
সেবার ফাইনাল পরীক্ষায় মিতুল প্রথম হয়,সবাই অবাক হয় কিন্তু মিতুল অবাক হয় না। বর সপ্তম হবে আর বউ প্রথম হবে এইটা কোন কাজের কথা হতে পারে না।
এক মাস পর স্কুল খুলেছে প্রথম পিরিয়ড প্রায় শেষ, রুনু এখনও আসে নি ক্লাসে। মিতুলের ভাল লাগছে না ক্লাস করতে,কতদিন দেখা হয়নি।সে রুনুকে একদিন না দেখেও থাকতে পারে না অথচ রুনু কিনা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘরে আরাম করছে, রুনুর এই স্বভাব গুলো নিয়ে মিতুল বড়ই চিন্তিত।সে সেকেন্ড পিরিয়ডে স্কুল পালায়, এক দৌড়ে হাজির হয় রুনুর বাড়ির সামনের উঠোনে।
উঠোনে আপন মনে খেলতে থাকা রুনুর ছোট বোনকে জিজ্ঞেস করেঃএই মিনু, রুনু কইরে?
:বড়াপুতো নাই, ক্যান?
:না, হেডস্যার পাঠাইছিল রুনুর খবর নিতে, সে আজকে স্কুলে যাই নাই তো তাই!
:হেডস্যার পাঠাইব ক্যান, উনি তো জানে বড়াপুর বিয়া হইছে গত সপ্তাহে!
:কি কস তুই এইগুলা?এইটাতো অসম্ভব,এইটা কেমনে হইল?
:নানুর বাড়িতে বেড়াইতে গেছিল না, সেইখানে নানুভাইর কাছে ভাল প্রস্তাব আসছিল,আব্বা-আম্মা যাইয়া বিয়া করাই দিছে, ছেলে বিদেশ থাকে, বড়াপুরেও নিয়া যাইব। তাই তাড়াহুড়া করল এত।
:এই মিনু সত্যি ? আল্লাহ্র কসম খা? না তুই আমার লগে মস্করা করস?
:বিয়াশাদি লইয়া কেউ মস্করা করে, আল্লাহ্র কসম!
:মিনু, তোরা খুব মজা করছস, হুম্ম?
:নাহ! বড়াপু খুবই অসুস্থ আছিল, বিয়ার দিনই কয়েকবার মাথা ঘুইরা পইড়া গেছে।
মিতুল সেইদিন বিকেলে তার বাবার সাথে গঞ্জে গেল মোল্লা বাড়ির পাট নিয়ে। তার বাবা ঘরে ফিরে এল, কিন্তু সে নৌকাতেই থেকে গেল।সবার জীবন ঠিকঠাক চলছে শুধু মিতুলের জীবন আটকে আছে ঠিক ওই সময়ে,সে প্রতিরাতে গঞ্জে যায়, শেষ ট্রেনের হুইসেল শুনলে ব্যস্ত হয়ে দেখার চেষ্টা করে ঘাটে কোন নতুন শাড়ি পড়া বউ এসেছে কি না? বলা তো যায় না রুনু পালিয়ে এসে যদি তাকে না পায়? অভিমানে হয়ত কেদেই বুক ভাসাবে। আচ্ছা কাঁদলে রুনুকে কেমন লাগে? দুধ হলদে ফর্সা মুখে কান্নায় কাজলের জলে ভেজা চোখের রুনুকে নিশ্চয়ই আরও বেশী আদর লাগবে।
ট্রেন আসে ফিরে যায়, মাঝনদীতে নৌকা ভাসিয়ে মিতুল চুপচাপ অচেতন হয়ে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঝাপটায় তার ঘুম ভাঙে,বিজলীর আলোতে সাদা চুল দাড়ি যেন চমকে উঠে, হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস লাগে গায়ে, মিতুলের নাকে ভেসে আসে সেই খাতায় লেগে থাকা অপরিচিত কারো ঘ্রাণ,বুকের কোথাও চিন চিন করে । সেই সুখের উৎস এই পৃথিবী নয়!
-সাচৌ
২০-৭-১৩ইং
©somewhere in net ltd.