![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক কথায় ভাবুক! বহুকথায় আমি একজন স্বাধীন মানুষ, রোবট নই! তাই কারো কথায় সহজে প্রভাবিত হই না,সবার কথা শুনি, সবার লিখা পড়ি, হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি , কেন তিনি এমন করে ভাবছেন!বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গ খুব উপভোগ করি,তাদের সাথে মতের মিল হলে ভাল, না হলে আরও ভাল, গলায় জড়াজড়ি করে বলি, আসেন আপনার কাছ থেকেই নতুন কিছু শেখা যাবে!
কোক্করোক্ক নাকি কুক-কু-রুক্কু! মোরগ ঠিক কিভাবে ডাকে এই বিষয়টা নিয়ে আজো বিতর্ক শেষ হয় নি মাহবুব সাহেবের !যেই বিতর্কের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী তার বউ অদিতি।বিতর্কে কে যে কোন পক্ষ নিয়েছিলেন তা শুরু করার কিছুক্ষনের মাঝেই গুলিয়ে ফেলেন দুজনই।কয়েকদিন পর বিষয় বদল হয় কিন্তু বিতর্কের যেন কোন সমাপ্তি নেই। একটা বিষয় নিয়ে মেতে থাকা আরকি। প্রতিদিন ঠিক এই সময় ঘুম হালকা হয়ে আসে দুজনেরই, আজ মনে হয় অদিতির ঘুম ভাঙে নি। ভাঙলে আলতো করে গায়ের উপর হাত রাখত এতক্ষনে।ঠিক করেছেন আজ ডাকবেন না তার টুনটুনিটাকে।প্রথম রোদের আলোয় টুনটুনিকে যেন কিশোরী বলে ভুল হয়। বয়স যত বাড়ছে তত চঞ্চল হয়ে যাচ্ছে পাখিটা, একেবারে গুটিসুটি মেরে বুকের কাছে শোয়! তার নাকি ভয় লাগে!ভোরের গোলাপি আলোয় চুল দিয়ে মুখ ঢাকা এই চেহারাটা যেন জনম জনম ধরে চেনা। কিন্তু অদিতি শ্রাবণ নামের মেয়ে মানুষটাকে আজো চিনতে পারেন নি। এমন কেন বউটা? পরিচয়ের প্রথম দিনে সেই যে চিনচিনে সুখ অনুভব করেছিলেন, আজো তার মুচকি হাসি দেখে তেমনই আকুল হয়ে উঠে হৃদয়টা!
টুনিটা আজকে বেশিই ঘুমাচ্ছে! ঠোঁট বাকা করে ঢং করছে এই ঘুমের মধ্যেও! এই ঠোঁট বাঁকানো দেখেই স্কুলে নতুন আসা মেয়েটার জন্য হৃদয়ের মাঝে সেইদিন কেমন যেন করেছিল। মেয়েটাকে ক্লাসে দেখে এসে বিকেলে আর খেলতে বের হয় নি সেই ক্লাস এইটের ছোট্ট বাবু! কেমন যেন লাগছিল বুকের মাঝে। ইচ্ছে হচ্ছিল ভেউ ভেউ করে কাঁদে, একটু আকটু জলও এসেছিল মনে হয় চোখের কোনে। সেই রাতেই ঘুমের মাঝে ওই নাম না জানা মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখেছিল ! রাতে ঘুম ভাঙ্গার পর আর তর সইছিল না স্কুলে যাওয়ার জন্য। এমনিতে পোশাক আশাকের বালাই না করলেও সেইদিন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে আট আনা ধার করে কাপড় ইস্ত্রি করিয়েছিল। কাদায় ভরা স্যান্ডেল জোড়া সর্বশক্তি দিয়ে ঘষেমেজে সাফ করে ফেলেছিল।মাথায় খুব যত্ন করে তেল লাগিয়ে,উত্তম কুমারের বেশভুশা নকল করার বেশ চেষ্টা করা হয়েছিল!
যদিও ক্লাস শুরু হত সকাল ১০.৩০ এ, বাবু নামক অবুঝ বালক সেইদিন নয়টার আগেই বিদ্যালয়ে হাজির হয়েছিল!তাই দেখে বন্ধু মহলের তো চক্ষু চডক আসমান!
জসীমতো বলেই ফেললঃ কিরে বাইব্বা! এত সকালে মাঠে , কাহিনি কি?
-যা তো সর, ফুটবল খেলব, ঝামেলা করিস না!বিরক্তি ঝরে ঝরে পড়ল বাবুর কণ্ঠে!
-ওমা কিয়ামত কি এসেই গেল তাইলে?হুজুর স্যারতো সেইটাই বলছিলেন, রোজ কিয়ামত ফুরুত করেই এসে যাবে!ওই সুরুজ কোন দিকে উঠছিল রে আজকে?
লেদুটা তো সন্দেহই প্রকাশ করেছিলঃএখন কেমনে বলি রে জইস্যা, সূর্য উঠার সময়ই লক্ষ্য রাখা উচিত ছিল। তুই টেনশান হইছ না, আমি তোরে কাইলকাই বলব!
নাহ আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবেঃ চল, বাজি লাগবি লেদু? কণ্ঠে রাগ বাবুর।
-কিসের বাজি?
- আমি আজকে দুইটা গোল দিব, যদি না দিতে পারি, তাইলে আমি হুজুর স্যারকে সেই ভয়ানক বিষয়ে প্রশ্ন করব!
-আর দিতে পারলে? জসীম জানতে চায়!
-তোরা প্রশ্ন করবি!
-ঠিক আছে,ওই লেদু তুই গোলকি দাড়া!
বাবু বুঝতে পারল তার কপালে আজকে নির্ঘাত সরিষার তেল দেওয়া কেরাত বেতের মাইর আছে!
প্রানপনে মাঠের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে দৌড়াচ্ছে বাবু, আর মাত্র পনের মিনিট বাকী খেলার, দৌড়ানই সার, একবারও বলে পা লাগাতে পারেনি!
এমন সময় স্কুলের বারান্দায় তাকাল সে, আরে সেই কালকের মেয়েটা না। খেলাই তো দেখছে মনে হয়। আর আঙ্গুল দিয়ে মাঠের দিকে ইশারা করেই কি যেন দেখাচ্ছে পাশের মেয়েটাকে!
বাবুর গায়ে যেন বাজ পড়ল, দম বন্ধ করে সে প্রানপনে ছুটে চলল বলের দিকে গোল তাকে করতেই হবে। তার একটা মান ইজ্জত আছে না! প্রায় ৭৫ মিনিট ফুটবল খেলেও যার গায়ে একফোঁটা কাদা লাগেনি সেই বাবু সারা গায়ে কাদা মেখে জীবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলের মালিক হয়ে গেল!খেলা শেষে তাকে কাধে নিয়ে ছোটখাট একটা মিছিল ও করে ফেলল লেদু! অবশ্য পুরটা সময় বাবু তাকিয়েছিল স্কুলের বারান্দার দিকে, নাহ ওকে তো আর দেখা যাচ্ছে না!
টিফিনের পরের পিরিয়ডই ছিল হুজুর স্যারের, স্যার ক্লাসে এসে বসতেই লেদু উঠে দাঁড়াল।
-কিরে লেদু মিয়া? কিছু বলবি?
-স্যার আমি না , জসীম আপনার কাছে একটা বিষয় জানতে চায়!
-জসীমের দরকার হলে জসীম বলবে, তুই কি ওর সাগরেদ? দাঁত চিবিয়ে কঠিন ঝাড়ি দিলেন হুজুর স্যার।
ধমকে জসীম ভয়ে আধমরা হয়ে গেল,তবুও প্রশ্ন করতেই হবে। বন্ধু মহলে তার কথার একটা দাম আছে!
-স্যার ইয়ে মানে,প্রশ্নটা হল!
-হুম্ম,বল!
- আপনি সাদা পায়জামার ভিতরে লুঙ্গি পড়েন কেন? হড়হড় করে এই কথা বলে জসীম ভাঙ্গা জানালা দিয়ে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল পালাল!
আজকে সবার কপাল খারাপ, জসীম পালিয়ে বেঁচেছে!আর সেই মেয়েটা সবাইকে চমকে দিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল!ক্লাসের সবাইতো ভয়ে অস্থির
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে হুজুর স্যার সেই মেয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন!
এরপর কতদিন চলে গেল,বাবু প্রতিদিন ভাবে আজই একটু কথা বলবে অদিতির সাথে ক্লাস নোট নেওয়ার নাম করে, কিন্তু সাহসে কুলোয় না! রাতে না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালি পড়েছে তার! কত চিঠি লিখেছে মনে মনে! আহা এমন যদি কোন ব্যবস্থা থাকত মন থেকে মনে চিঠি পাঠান যেত!
প্রতিদিন বিকালে অদিতিদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া বাবুর আর কোন কাজ ছিল না, মাঝে মাঝে যখন জানালা একটু নড়ে উঠত ! বাবুর গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে যেত! পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে এমন ভাব করত যেন খুব জরুরী কাজেই এইখান দিয়ে কোথাও যাচ্ছিল! কিন্তু বন্ধুদেরকে আর দমিয়ে রাখা গেল না, তাদের টিটকারি আর মস্কারিতে আর এই অদিতির অবহেলায় সে আত্নহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল! যার জন্য কতশত রাত না ঘুমিয়ে কেটেছে সে যদি চোখ দেখেই ঘটনা না বুঝতে পারে, তাহলে এই জীবন আর রেখে লাভ কি!
তাই বাবু ঠিকঠাক তওবা করে, একরকম মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত!
এর মাঝে একদিন জসীমকে কেঁদে কেটে জড়িয়ে ধরে মনের সব দুঃখ বোঝাল বাবু। জসীমকে নিয়ে ভয় নাই , সে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারে না, মেয়েরাতো তাকে বোবাই ভাবে! সব শুনে মুচকি হাসল জসীম!
পরদিন স্কুলে আসা মাত্র দেখল,ক্লাসরুমের পরিবেশটা কেমন যেন ছমছমে! ঠিক হেডস্যারের গণধোলাই দেওয়ার আগ মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেয়! সমস্ত মেয়েরা যেন তার দিকে অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে আছে!বই টেবিলে না রাখতেই পিছন থেকে তার কলার ধরে কে যেন টানছে, সে একটু পাশে সরতেইঃঠাশ! চোখে সরষে ফুল দেখছে বাবু ! কানটা মনে হয় বয়রাই হয়ে যাবে!
পিছন ফিরে দেখে, বড় বড় চোখ আর ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে যুদ্ধাংদেহী অদিতি তার দিকে চেয়ে আছে!
কিছু বোঝার আগেই আবার চড়! এই চড় খেয়েঃঅপমানে ভ্যা করে কান্না শুরু করল ক্লাসের সেকেন্ড বয় মাহবুবুর রশিদ ওরফে বাবু!
-বাথরুমের ওয়ালে লিখে রাখা হয়েছে না? আমার টুনটুনি পাখি অদিতি ! তুমি এই আমাকে ফিরিয়ে দিলে আমি ধানের বিষ খাব!
কিছু বোঝার আগে আবার চড়!
-আমি লিখি নাই, আমি জানি না তো, কসম আমি লিখি নাই! হিচকে কেঁদে উঠল বাবু! আমি তোমার সাথে বুড়ো হতে চাই, কুচকে গেলে তোমার চেহারা কেমন লাগবে দেখতে চাই, আর কিচ্ছু না! যখন তুমি ঘুমাবে রাত জেগে তোমার ঘুম দেখতে চাই! আর কিচ্ছু না। বলছে তো বলছেই বাবু!
-ঠাশ! অদিতি আবার চড় দিয়ে দৌড়ে বাসায় চলে গেল!
বিকেলে আবার চিরচেনা বাবু সেই গলির সামনে ! আজ যেন ওই উত্তর দিকের পর্দাটা একটু বেশিই নড়ছে! খুব ভাল করে খেয়াল করার পর কাজল টানা দুইজোড়া চোখ আবিষ্কার করল সে। ওইটা তো অদিতি কিন্তু পাশের তা কি তার বান্ধবী?
সেই দিন থেকেই পরিচিত সব কিছু কেমন যেন অপরিচিত লাগে বাবুর, আজো সেই অজানা অপরিচিত পৃথিবীটাকে চিনতে পারেনি সে!
বৃদ্ধ মাহবুব সাহেব নিঃশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, জোরে শব্দ হলে অদিতির ঘুম ভাঙে যদি! ঘুমের মাঝে কোন প্রকার শব্দ হলে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে যায় তার, আজ খুব কঠিন ঘুম দিয়েছে, কোন নড়াচড়া নেই! তাদের জন্মটা যদি এইযুগে হত কতই না ভাল হত, আজকালকার মেয়েছেলেরা কত রং বেরঙের প্রেম করে। কত ফুচকা খায়, কত ঘুরাঘুরি করে! অথচ তারা? কলেজে উঠার আগ পর্যন্ত একসাথে দাড়িয়ে এতটুকু কথা বলেন নি কোনদিন, যা প্রেম ছিল সব চোখের ভাষায় বোঝা হয়ে যেত, কত কথাই না বলতেন দুজনে, ক্লাসের ফাঁকে দূর থেকে লুকিয়ে স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে, চোখে চোখে। তবে প্রেমপত্রের কোন কমতি ছিল না। সপ্তাহে তিনচারটা পত্র আদান প্রদান না করলে যেন পেটের ভাত হজম হত না দুজনার।
টুনির একটা চিঠির কিছু কথা আজো মনে আছে...
“অ্যাই ভীতুর বাচ্চা শোন, তোমার জন্য একটা নাম ঠিক করেছি, তুমি যেমন আমাকে আদর করে টুনটুনি পাখি ডাক, আমিও তোমাকে আদর করে তোতো পাখি ডাকব। আচ্ছা তোতো নামে কি কোন পাখি হয়? না হলে নাই, আচ্ছা পাখি হলে কি সে উড়তে জানত? না জানলে আমি শিখিয়ে দিতাম কিভাবে চোখ বন্ধ করে আকাশে উড়তে হয়।জান? চোখ বন্ধ করলেই আমি তোমার সেইদিনের ভয়ে আর তোতলামিতে ভরা কণ্ঠ শুনতে পাই।
তুমি এইখানে আমার জন্য,আমি তোমারি-
তোমাকেই ভালবাসি!
ইতি-টুনটুনিটা”
তারপর কত সময় পেরিয়ে গেল, কত বাঁধা, কত যুদ্ধে শুধু তারা দুইজন লড়েছে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে! এখন শুধু একসাথে এই পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সুখস্বপ্ন দেখা! তিনি টুনিকে কথা দিয়েছিলেন কখনও কাঁদাবেননা, পুরোপুরি সফল হয়েছেন বলা যাবে না, কারন মাঝে মাঝে টুনির সুখের অশ্রুতে তার বুক ভিজে যায়!বিনিময়ে টুনির কাছে তোতো হিসেবে চেয়েছেন শুধু একটা জিনিস, টুনি যেন কখনও তাকে একা রেখে আগে ওপারে চলে না যায়!
কত কষ্টের শত সুখের সেই পালিয়ে বিয়ের বাসর ।কতরাত না খেয়ে থাকা, কেরানির চাকরী দিয়ে শুরু করে বস হয়ে রিটায়ার করা। প্রথম বেতন,প্রথম ইলিশ কিনে বাড়ি ফেরা,মাছ কাটতে যেয়ে টুনির আঙ্গুল কেটে ফেলা, তাই দেখে তোতোর চোখে শ্রাবণের অশ্রু ঝরা;হলে যেয়ে প্রথম উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা;প্রথম সন্তান টিয়াকে কে একসাথে বুকে জড়িয়ে ধরা, তাকে বিয়ে দেয়ার সেরাত দুজনার জড়িয়ে ধরে চুপচাপ থাকা। শহরের ব্যস্ত জীবন ছেড়ে শান্ত গ্রামে নিরিবিলি ভালবাসা!
গ্রামের অবসর জীবনে একটু চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া , বিবিসি শোনা না হলে কি চলে? তাও টুনিটা রাগ করে একটু রাত করে ঘরে ফিরলে। রাগ ভাঙ্গানোর জন্য পকেটে করে একটা পান নিয়ে আসেন তিনি,এই গ্রামে কি আর অন্য কিছু পাওয়া যায়? কিন্তু টুনি পান ছুয়েও দেখে না। তাই তিনি নিজেই পান মুখে দিয়ে ভাল করে চিবিয়ে টুনিকে আলতো করে খাইয়ে দেন ঠিক পাখির মত! টুনি গুনগুনিয়ে “আকাশের ওই মিটি মিটি তারার সাথে কইব কথা , নাইবা তুমি এলে” গায়! তিনি ওই দূর আকাশের পানে তাকিয়ে বিধাতাকে মনে মনে কিছু একটা বলেন, আর তিনিও যে গাইতে পারেন তা প্রমান করার ব্যর্থ চেষ্টা করেনঃ “হায় বরষা, এমন ফাগুন তুমি কেড়ে নিওনা ,আমার প্রিয়ার চোখে জল এনো না, মধুর স্বপন ভেঙে দিওনা!”
স্বপ্নের কথা মনে হতেই বাস্তবে ফিরে আসেন তিনি, আরে অনেক বেলা হল। রোদ প্রায় উঠোনে এসে পড়েছে। টুনিটা এতক্ষন তো কোনদিন ঘুমোয় না!
-এই পাখি, পাখি উঠো! নাহ একটু আকটু শীত পড়ছে মনে হয়, পাখিটার হাত পুরো বরফ হয়ে আছে!এইদিকে ওষুধের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে!পাখিটার মারাত্মক হাই প্রেশার!চিন্তিত হয়ে ভাবছেন মাহবুব সাহেব!
এখনও ঠোঁট বাঁকা করে রেখেছে ঢং করে! গা ধরে নাড়া দিতেই পাখিটার বাম হাত খাটের একপাশে ঝুলে পড়ল!
মাহবুব সাহেব অবাক হয়ে পাখির চোখে তাকিয়ে আছেন, সেই চিরচেনা পাখি! সেই বাঁকা ঠোঁট, কাল রাতেও বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। ঘুমের ঘোরে কখন বুকের মাঝখানটা চিরে ওই দূর আকাশে একলা পাড়ি দিল পাখিটা? পারবে তো তাকে ছেড়ে ওই আকাশের জান্নাতে একা একা উড়তে? এমন তো কথা ছিল না? খুব ভালো করে চেহারাটা আবার দেখলেন, একটু করে চোখদুটো খোলা ! ডান হাতটা দিয়ে মুট করে তার গেঞ্জি ধরে রেখেছে! আচ্ছা তাকে একা করে আজানায়, অচেনা পথে পাড়ি দেওয়ার আগে কিছুই কি বলতে চায়নি পাখিটা!
-এই পাখি অনেক দুষ্টুমি হয়েছে, আর দেরি করব না রাতে ঘরে ফিরতে,আমাকে ফেলে যেও না পাখি, আমি কাকে নিয়ে বাঁচব? আমি কিভাবে রাতে ঘুমাব পাখি? কথা রাখনি তুমি, আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না!
ছোট্ট কাজের মেয়েটা একটা ঝাড়ু হাতে ঘরে ঢুকে দেখে দাদু ভাইটা হাত পা ছুড়ে বাচ্চার মত কান্না করছে!
প্রতিদিন রাতে মাহবুব সাহেব কবর স্থানের পাশে বানানো টং ঘরটাতে বসে থাকেন, অপেক্ষা করেন একদিন টুনি এসে হাত ধরে তাকে ওই আকাশের তারার দেশে নিয়ে যাবে! টুনিটা আসে না। কি প্রমান চায় সে আর ভালবাসার? আর একটা বিয়ে করে কি না তা দেখতে চায়? নাকি এই পৃথিবী ছেড়ে ওই আকাশের দেশে উড়াল দিতে অনেক কষ্ট হয় বলে তাকে নিতে আসছেনা? মাঝেমধ্যে ভাবে নিজেই উড়াল দিবে ওই আকাশে কিন্তু টুনি খুব কঠিন করে বকে দিয়েছিল বাসর রাতে এই কথা শুনে! বলেছিলঃ তাহলে তো তোমাকে আমি নিতে আসব না, আমার সাথে দেখাও হবে না!
ডানা মেলে আকাশে উড়াল দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে তোতো, টুনি আসবে তো? বৃষ্টিতে ভিজে বা তীব্র শীতে
গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে থাকা তোতোর খালি গায়ে যখন ঝরা পাতা এসে পড়ে, টুনির স্পর্শ ভেবে লাফিয়ে উঠে তোতো, টুনিটা এতটা নিষ্ঠুর হল কিভাবে?
-সাচৌ
২১-০৯-১৩ ইং
©somewhere in net ltd.