![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেঘা চুপচাপ অন্ধকার ঘরে বসে আছে।একা যে বসে আছে তাও না।কাজের মেয়ে সুরাইয়াও ঘরে আছে।তবে বসে না।খাটের নিচে শুয়েঁ।
সুরাইয়ার একটা হাত খাটের ভিতর থেকে বের হয়ে আছে। মেঘার চোখ গুলো স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সুরাইয়ার হাতের তালুর দিকে।
ঘর অন্ধকার,তবুও মেঘা হাত খানা দেখতে পারছে।শুধু যে দেখতে পারছে তাই নয়,খুব ভালো ভাবেই দেখতে পারছে।
মেঘার মুভমেন্ট একদম নেই বললেই চলে।শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কেবল।
মেঘা হঠাৎ চমকে উঠলো।খাটের নিচ থেকে সুরাইয়া কথা বলে উঠলো।
-আফা!
-কে?
-আফা আমি সুরাইয়া।
সুরাইয়ার গলার আওয়াজ শুনে মেঘা নড়ে চড়ে খাটের এককোনে সরে বসলো।
ঘর এসি,তবুও মেঘার কপাল বেয়েঁ ঘাম চোখের উপর দিয়ে কাপড়েঁ পড়ছে।
-আফা আমি কি মইরা গেছি?
-কে ?
-আফা আমি সুরাইয়া।
-সুরাইয়া তুমি কথা বলছো কিভাবে?
-জানি না আফা।
-সুরাইয়া আমি ভয় পাচ্ছি।
-আফা অই কালা ব্যাটাডা আমারে যখন কোপ দিছিলো, তখন আফনে দেখছিলেন?
-জানি না।
-আফা আপনার হাত কাপঁতাছে কেন্?
মেঘার হাত কাপছে।এটা সত্য কথা।এবং খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।একটা মৃত মানুষ কখনো কথা বলতে পারে না।
আজ সকাল বেলার ঘটনা।মেঘা তার রুমে বসে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।
মেঘার বাবা আফজাল সাহেব টেবিলে বসে নাস্তা করছিলেন আর স্ত্রীর সাথে গল্প করছিলেন।
মেঘা বাথরুমে ফ্রেস হওয়ার জন্য ঢুকেছে মাত্র।এর কিছুক্ষন পরেই হঠাৎ মেঘার মা চিৎকার দিয়ে উঠে।মেঘা তৎক্ষনাত বাথরুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমের দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হতে যাবে এমন সময় দেখে একটা কালো করে লোক চাপাতি দিয়ে সুরাইয়া কে উলটা পালটা কোপাচ্ছে।
মেঘা ভয় পেয়ে আলমারির চিপায় দাঁড়িয়ে পড়ে।
এরপর আধা ঘন্টার মধ্যে মেঘার বাবার চিৎকার ও শুনতে পায়।এর কিছুক্ষন পরেই মেঘা আলমারির পিছন থেকে দাঁড়িয়ে থেকেই বুঝতে পারে যে দুজন লোক তার রুমে ঢুকে আলমারিতে এলোমেলো ভাবে তল্লাসি চালাচ্ছে।
কিছুক্ষন তান্ডবলীলা চালিয়ে লোক দুটা অন্য রুমে চলে গেলো।এরপর এক এক করে সব রুমের আসবাবপত্রের উপর ঝড় বইয়ে দিলো।কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে সুরাইয়ার ডেড বডিটা মেঘার খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে বের হয়ে গেল।
প্রায় এক ঘন্টা এমনি ভাবে চলার পর হঠাত বাসার মেইন গেইট বন্ধ হওয়ার শব্দ হলো আর এরপরেই প্রায় পিন পতন নিঃস্তব্ধটা নেমে এলো সারা বাড়ি ময়।
এরও কিছুক্ষন পর মেঘা আলমারির পিছন থেকে বের হয়ে এসে ভয়ে ভয়ে ডাইনিং স্পেসে যাচ্ছিলো।তার রুমের দরজার সামনে পর্যন্ত যাওয়ার পরপরই হঠাৎ লোকগুলো আবার মেইন দরজা দিয়ে ভেতর ঢুকে মেঘাকে দেখে ফেললো।
মেঘা এক পলকের জন্য লোক তিনটা কে দেখে সাথে সাথে রুমের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
কিছুক্ষনের মাঝেই রুমের দরজায় ওরা তিনজন জোড়ে জোড়ে কিছু দিয়ে আঘাত করতে লাগল।
মেঘা ওর বিছানায় বসে পড়ল।ওর সারা শরীর কাপঁছে।
এমন সময় সে আরো জোরে দরজায় আঘাতের শব্দ শুনলো।আর সাথে সাথে জ্ঞান হারালো।
জ্ঞান ফিরলো রাত ১০টায়।আর এখন রাত ১টা।
এতোক্ষন ধরে সে বসে বসে স্তব্ধ মনে সারাদিনের ভয়াবহতা ভাবতে লাগলো।যেই মাত্র খাটের নিচে থেকে সুরাইয়ার হাতের তালু দেখতে পেলো ঠিক তখন থেকেই মেঘার শরীর দূর্বল লাগছে।তার এখন প্রচুর পানির তৃষ্ণা পাচ্ছে।
সুরাইয়া এখন খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আলমারির পাশ ঘেষে বসলো।
মেঘা তার মাথার বালিশ টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে খাটের আরো কোনায় ঘিয়ে বসলো।
চাদেঁর আলোয় পুরো ঘরে আবছা আবছা ভাবে বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছিলো।
সেই আলোয় মেঘা একটা বারের জন্য মাত্র সুরাইয়ার দিকে চোখ ফিরে তাকালো।
সাথে সাথে তার শরীরের লোমের ফাকেঁ ফাকেঁ জমে থাকা ঘামকনা মনে হলো বরফকনায় পরিনত হয়েছে।
সুরাইয়ার গলার অর্ধেকটা ঝুলে বুকের উপর পড়ে আছে।মুখে রক্ত জমাট বেধে সারা মুখ ময় কালচে লাল হয়ে আছে।
মেঘা মাথা নিচু করে বসে কাপঁছে।সুরাইয়া কথা বলেই যাচ্ছে।মেঘাও ভাঙ্গা গলায় কথা বলছে।
-আফা!
-হু!
-আফনে ডরাইতাছেন?
-হু
-হিহিহিহিহিহিহি
মেঘা সুরাইয়ার কুৎসিত হাসির শব্দে আরো চমকে উঠলো।
-সুরাইয়া!
-যে আফা?
-তুমি মারা গেছো।
-আফনের তাই মনে হয় আফা?
-হু,,,তুমি মারা গেছো।
-তাইলে আমি মইরাই গেছি আফা।
-আমার উত্তেজিত মস্তিষ্ক তোমাকে হেলুসিয়েশনের কারনে দেখতে পাচ্ছে।
-হেলুসিয়েশন কি আফা?
-সুরাইয়া?
-জ্যা আফা?
-ওরা কারা ছিলো?
-জানি না আফা।
-ডাকাত?
-না আফা
-তাহলে?
-জানি না আফা।
-ও,,,
-আফা কি ভাবতাছেন?
-সুরাইয়া তুমি এই রুম থেকে যেতে পারবে?আমার ভয় করছে।
-হিহিহিহিহি,আফা আমি তো যাইতে পারমু না।আমি তো মইরা গেছি।
-তাহলে কথা বলছো কিভাবে?
-হেলুসিয়েশন আফা।
-আমার বাবা-মা কই সুরাইয়া?
-হেতেনরা মইরা গেছে আফা।
-তুমি কিভাবে জানলে?
-পাশের রুমে লাশ পইড়া আছে আফা।
-তুমি কিভাবে দেখলে?
-আমি সব দেখতে পাইতাছি আফা।মরনের পর থেইকা এই ঘরে বইয়া দুনিয়ার বেবাক দেখতাছি।
-সুরাইয়া,রান্না ঘরে কিসের শব্দ হচ্ছে?
-খালাম্মায় রানঁতেছে আফা।
-কিভাবে সম্ভব?মা না মারা গেছে তুমি বললে?
-মিছা কইছি আফা।
-তুমি এক্ষনি এই রুম থেকে বের হয়ে যাও।
-হেহেহেহেহে,,,আফা আমি এই রুম থেইকা বাইর হইতে পারমু না। আর কোনো দিনও বাইর হইতে পারমু না আফা।
সুরাইয়া কাদঁতে শুরু করেছে।সেই কান্নার শব্দ আস্তে আস্তে শিয়ালের ডাকের মতো রূপ নিচ্ছে।
মেঘা আবার জ্ঞান হারানো।
সকাল ৯টা।
-কিরে মেঘা আর কতো বেলো ঘুমাবি মা?এবার উঠ।
আফজাল সাহেব মেঘার মাথার উপর হাত রেখে ডেকে যাচ্ছেন।
আফজাল সাহেবের হাতের স্পর্শে মেঘা লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো।
-বাবা তুমি বেঁচে আছো?
-মানে কি মা?
মেঘা চোখ বড় বড় করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
-বাবা সুরাইয়া কোথায়?
-ওর ভাই গ্রাম থেকে এসে একটু আগে ওকে গ্রামে নিয়ে গেলো।
-বাবা!
-হ্যা রে মা বল!
-আমি একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম।
-কি স্বপ্ন মা?
মেঘা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে,এতোক্ষন সে স্বপ্ন দেখছিলো।সে এখন আর কথাও বলতে পারছে না।আমতা আমতা করছে।বড়ো বড়ো চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
-থাক বলতে হবে না। তুই ফ্রেস হয়ে আস, যা।
মেঘা ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলো।
রাত ১২ টা বেজে ১৩ মিনিট।
মেঘা এখনো স্বপ্নটার ধকল সামলে উঠতে পারে নি।স্বপ্নটা ভুলে থাকার জন্য সে সেই দুপুর থেকেই উপন্যাসের বই পড়ছে।
উপন্যাসের কাহিনীর ভিতর নিজেকে লুকিয়ে রেখে স্বপ্নটার ভয়াবহতার হাত থেকে পালানো আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
-আফা!
-কেএএএ?
মেঘা চমকে উঠলো।তার গলা ধরে এসেছে।
-আমি আফা।
-কেএ?আমি কেএএ?
-আমি সুরাইয়া আফা।
মেঘা মেঝের দিকে তাকালো।একটা হাত খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আছে।হাতে রক্তের শুকাঁনো কালচে দাগ।
♪________________♪
উৎসর্গ : সাহার আভেজ মেঘা(An unborn girl)
২| ২৩ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭
হলুদ পিঁপড়া বলেছেন: dhonnobad vaiya
৩| ০২ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯
উম্মে সায়মা বলেছেন: গল্প সুন্দর হয়েছে।++
শুভ ব্লগিং।
০৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ২:১১
হলুদ পিঁপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপু
৪| ০৩ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০৮
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
হলুদ পিঁপড়া নামকরনের কারণ কি?
শুভকামনা রইল।
০৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ২:১০
হলুদ পিঁপড়া বলেছেন: হলুদ পিঁপড়া আমার দেখা ভিন্নরকম সুন্দর একটি জিনিস,,,,সেই জন্যই ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:৫৮
নাগরিক কবি বলেছেন: সুন্দর। ব্লগে স্বাগতম।