নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখানে অনুরাগ নিয়ে খেলা হয়.........।

হলুদ পিঁপড়া

হলুদ পিঁপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মেঘ বরন

১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ২:৩২


রেনুর প্রচন্ড জ্বর এসেছে।এতোবেশি জ্বর এসেছে যে তার শরীর থেকে আগুনের ন্যায় উত্তাপ বের হচ্ছে।মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
অভ্র রেনুর মাথার কাছে বসে আছে।মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে।সেই পানি আবার রেনুর চোখে এসে পড়ছে।সংগে সংগে রেনু কেপেঁ উঠছে।অভ্র হাত দিয়ে সেই পানি রেনুর চোখ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।

অভ্রর প্রচন্ড রকমের মেজাজ খারাপ আজ।রেনুর জ্বরের কারনে আজ অর রিয়ার বিয়ে তে যাওয়া হলো না।রিয়া অভ্রের খুব ভালো বন্ধু।
ধীরে ধীরে অভ্রের রেনুর উপর রাগ বেড়েই যাচ্ছে।মেয়েটার জ্বর কমছে না।ধীরে ধীরে বাড়ছে আর সমানুপাতিক হারে অভ্রেরও মেজাজ চড়ছে।

রেনুর সাথে অভ্রের বিয়ে হয়েছে সাত মাস হলো।বিয়েটা একরকমের জোড় করেই হয়েছে,যদিও রেনু রাজি ছিলো কিন্তু অভ্র তুষ্ট ছিলো না।সে ভালোবাসত মিরাকে।

কিছু করারও ছিলো না সেদিন অভ্রের।বাবা মার মন রক্ষার্থে নিজের ইচ্ছাকে ফাসিঁতে ঝুলাতে হয়েছিলো।যদিও অভ্র রেনুকে কখনোই ভালোবাসেনি,তবুও কেনো যেনো মেয়েটি অভ্রের জন্য একপ্রকার পাগল হয়ে থাকে সারাক্ষন।
এইতো সেদিন,অভ্রের জ্বর এসেছিলো বলে টানা ২ দিন নিজের কোনো খোজঁ না রেখে রেনু এক নাগারে অভ্রের সেবা করে গিয়েছে।এক পলকের জন্যেও অভ্রের উপর থেকে চোখ সরায় নি।

রেনু এখন চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারছে, অভ্র তার উপর প্রচন্ড বিরক্ত।এর জন্য রেনু কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে।সে এখন নিজেকেই মনে মনে গাল দিচ্ছে।কি দরকার ছিলো জ্বর টা এখন আসার?

রেনু হঠাৎ উঠে বসলো।অভ্রের সিকে চেয়ে বললো,
-আমার জ্বর কমে আসছে,তুমি না হয় একাই চলে যাও? আমার সমস্যা হবে না।অইদিকে তোমার জন্য হয়তবা অপেক্ষা করছে অন্যরা।
অভ্র রেনুর কথায় চোখে রাগ প্রকাশ করে উঠে দাড়াঁলো।অতি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে রিয়ার বাসার দিকে রওনা দিলো।
রেনু আবারো শুয়ে পড়ল।রেনুর কেনো যেনো খুব কান্না আসছে। রেনু সত্যি সত্যি কেদেঁ দিলো।মেয়েটার গায়ের জ্বর ধীরে ধীরে বেড়েই যাচ্ছে।

রেনু চোখ বন্ধ করে দেখতে পেলো ঝুম বৃষ্টিতে সে দাঁড়িয়ে আছে।পেছন থেকে অভ্র তাকে ঝাপটে ধরেছে।বৃষ্টির পানিতে দুজনের শরীরের উত্তাপ দুজনার মাঝেই যেনো ভালোবাসার আবেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ করেই রেনু শুনতে পেলো কোথায় যেনো খুব জুড়ে বিদ্যুৎ চমকালো।আর সাথে সাথেই রেনুর চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেলো।নাহ! অভ্রও এখন আর রেনুকে জড়িয়ে নেই।চারপাশ শুধুই অন্ধকার।কোনো শব্দও নেই কোথাও।রেনু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে!

রাত ৮টা।অভ্র রিয়ার বাসা থেকে অনুষ্ঠান শেষে মিরার কাছে এসেছে।মিরাকে আজ অনেক খুশি খুশি লাগছে।অভ্র কে দেখেই মিরা হাসতে হাসতে বললো,
-জানো অভ্র,আমি বিয়ে করছি।ছেলে এমেরিকা থাকে।ইঞ্জিনিয়ার।
-মানে কি?
-মানে আমি বিয়ে করছি।
-হোয়াট? আর ইউ কিডিং উইথ মি?
- নাহ।আমি সিরিয়াস।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারব না।আর তুমি বিবাহিত।
-কিন্তু তুমি তো বলেছিলে রেনুকে ডিবোর্স দিলেই,,,,,?
- কিন্তু তা সম্ভব নয়।
-কেনো?
- জানি না।ভালো থেকো।আর আমার সাথে কানেকশন রাখতে ট্রাই করো না।

কথা গুলো বলেই মিরা চলে গেলো।অভ্র শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এরপর পিছে ফিরে হাটা শুরু করলো।খুব জুড়ে বাতাস বইছে।মনে হয় প্রচন্ড বৃষ্টি হবে।তবুও অভ্রের তাড়া নেই।সে ধীরে ধীরেই হাটতে থাকলো।
মিরা চলে যাবার সময় একটা বার শুধু পিছনে তাকালো।অভ্র মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে।
মিরা আজ প্রথম বারের মতো অভ্রের সাথে মিথ্যে বললো।

মিরা এমেরিকা চলে যাবে।তবে বিয়ে করে নয়।হায়ার স্টাডির জন্য।বিয়ে সে কখনই করবেনা।
বিয়ে তো তাকেই করা যায় যাকে ভালোবাসা দেওয়া যায়।কিন্তু মিরা যে তার সব ভালোবাসা এই একজনকেই দিয়ে দিয়েছে! আর অবশিষ্ট কিছুই নেই।বাকিটা জীবন একলা কাটিয়ে দিবে না হয়,তবুও নিষ্পাপ অন্য আরেকটা মেয়ের ঘর ভাংতে সে রাজি নয়।এ যে অন্যায়।অনেক বড় একটা অন্যায়।

মিরা কথাগুলো ভাবছে আর রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।বৃষ্টি নামছে।বৃষ্টির ফোটায় মিরার চোখের পানিগুলো মুছে যাচ্ছে।ফোটাগুলো যেনো বড়ই বেঈমান।বারবার অভ্রের সাথে বৃষ্টিতে ভিজার মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে।বৃষ্টি ভেজা ব্যস্ত রাস্তার আড়ালে মিরার চাপা কান্নার শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে।

রাত ১০টা। অভ্র রুমে এসে দেখে রেনু নিথর হয়ে পড়ে আছে।অভ্র রেনুকে ডাক দিচ্ছে।
রেনু কোনো শব্দ করছে না।অভ্র রেনুর পাশে বসে অর গায়ে হাত দিলো।সাথে সাথেই চমকে উঠলো।রেনুর বরফ শীতল শরীর অভ্রকে কাপিঁয়ে তুলছে।

অভ্র নির্বাক। রেনু মৃত।অভ্রের চোখ যেনো কোঠর থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।
পিছন থেকে হঠাৎ কাজের মেয়েটা অভ্র কে ডাক দিয়ে বললো,"কি হইছে ভাইজান? আফনে এমনে চাইয়া আছেন কেন?"
অভ্র এতোক্ষন রেনুর হাত টা ধরে রেখেছিলো।মেয়েটির ডাকে অভ্র রেনুর হাত ছেড়ে দিলো।

খুব ধীরে ধীরে অভ্র রুম থেকে বের হয়ে গেলো।যাওয়ার আগে মেয়েটিকে বললো,তোমার আপা আর নেই, বাসার টেলিফোন থেকে তোমার আপার বাবাকে কল দাও।
মেয়েটি যেনো আকাশ থেকে পড়লো।

অভ্র এখন ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।একাই দাঁড়িয়ে আছে।

প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।মেঘগুলাও প্রচুর জোড়ে আওয়াজ করে ডাক ছাড়ছে।
অভ্রের এখন কারো কথাই মনে পড়ছে না।তার এখন ভিজতেই খুব ভালো লাগছে।আর মেঘগুলোর গর্জন গুলোও খুব ভালো লাগছে।
অভ্রর চোখগুলোতে খুব তৃষ্ণা ছিল।ভালোবাসার তৃষ্ণা।

মেঘগুলোর দিকে অভ্র এক পলকেই তাকিয়ে আছে।মেঘগুলো যেনো অভ্রের সেই তৃষ্ণাগুলো কে বরন করে নিতে চাচ্ছে।
অবশেষে অভ্রের চোখে পানি নেই।তা সত্যি সত্যি মেঘগুলো বরন করে নিয়েছে।

বিঃদ্রঃ ভালোবাসা বেচেঁ থাকুক মেঘগুলোর কাছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.