![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈদের ছুটি।
অন্তুদের ক্যাম্পাসে লম্বা এক ছুটি দিয়েছে। অন্তু যে বাসায় থাকে সেই বাসার সবাই চলে গেছে নিজ নিজ বাসায়।শুধু অন্তু যায় নাই।
অন্তুর মন খারাপ। ভীষন ভীষন খারাপ। ভেবেছিলো সারারাত বসে বসে মুভি দেখবে। এইদিকে কারেন্ট নাই। এটা কিছু হলো?
অন্তু মন খারাপ করে তার রুম থেকে বের হলো,বাথ্রুমে যাওয়ার জন্য। বাথ্রুমের পাশের রুমটা নিশিতের। নিশিত ধর্মপ্রান হিন্দু বৈষব। নিয়মিত রুমে পূজা দেয়। পূজায় চলে আতরবাতির ধোয়া উড়ানো। রুমটা ১ সপ্তাহ হলো তালা বন্ধ হয়ে আছে। ১ সপ্তাহ আগেই নিশিত বাড়ি চলে গিয়েছে।
অন্তু সেই রুমের পাশে দাঁড়িয়ে বাথ্রুমের দরজা খুললো। ঠিক বাথ্রুমে যখন ঢুকতে যাবে,ঠিক তখনই অন্তু ব্যাপার টা খেয়াল করলো।আতরের ধোয়ার সেই পরিচিত ঘ্রান টা আসছে।
অন্তু থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। অন্তু আশে পাশে তাকিয়ে কোথাও আতরের ধোয়াটাও দেখতে পাচ্ছে না,অথচ ঘ্রান আসছে কোথা থেকে? অন্তু নিশিতের রুমের দরজায় হাত রাখলো। আর সেই সাথে অন্তুর চোখ চলে গেলো রুমের দরজার নিচের ফাঁকে। নিশিত চলে যাওয়ার আগে ভুলবসত রুমের লাইট অন করেই চলে গিয়েছিলো। লাইটের আলোয় অন্তু দেখতে পেলো দরজার ওপাশে কার যেনো দাঁড়িয়ে থাকার ছায়া পড়ে আছে। অন্তুর শরীরের লোমগুলো সব তৎক্ষনাত দাঁড়িয়ে গেলো। অন্তু কাঁপা স্বরে বলে উঠলো,"কে ভেতরে"? সাথে সাথে দরজার ওপাশে থাকা ছায়াটা নিমিষেই সরে গেলো। এইবার অন্তুর শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। অন্তু চিৎকার করতে চাইছে,কিন্তু পারছে না। একচুল পরিমাণ নড়াও অন্তুর সম্ভব হচ্ছেনা।
অন্তু রুমের দরজার উপর থেকে হাত সরালো আর ঠিক তখনই অন্তুর শরীরের উপর দিয়ে কেমন যেনো একটা গরম হাওয়া চলে গেলো। অন্তু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সে নিজের রুমে চলে আসলো। আর এসেই দরজা বন্ধ করে কাথা গায়ে দিয়ে শুঁয়ে পড়লো।
কিছু সময় যেতে না যেতেই অন্তু টের পেলো, আতরের গন্ধটা ও এখন এখানে শুঁয়েই পাচ্ছে। অন্তু এতোক্ষন চোখ বন্ধ করেই ছিল। আতরের ঘ্রানটা এতোটাই তীব্র হয়েছে যে সেটা এখন অন্তুর কাছে বিদকুটে গন্ধ মনে হচ্ছে। আতরের গন্ধে অন্তু চোখ মেলে তাকালো।
চোখ মেলার পর অন্তু যা দেখলো,তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। অন্ধকারের মাঝে আবছা ভাসা ভাসা আলোয় সে দেখলো, নিশিতের শরীরের মতোই একটা দেহ তার পাশের রুমমেটের বিছানায় শুয়ে আছে। সেই অবয়বের চোখ দুটো তার দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
জীবনে এই প্রথমবার অন্তু জ্ঞান হারাচ্ছে। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগ মূহুর্তে অন্তু দেখতে পেলো অবয়বটা বিছানা থেকে নেমে তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাথে সাথে তীব্র আতরের গন্ধ অন্তুর মাথার প্রতিটি কোষে গেঁথে যাচ্ছে।
একসময় অন্তুর চারপাশ সব নিশ্চুপ হয়ে গেলো। অন্ধকারময় ঘর আরো অন্ধকার হয়ে গেলো। এখন আর সে কাউকে দেখতেও পাচ্ছেনা।
কি অদ্ভুত? অন্তু এখন সম্পূর্ন অন্ধকারময় কোনো এক যায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
কোনো এক যায়গা বললে ভুল হবে। এতো পরম শূন্যস্থান। মহাশূন্য।
কোনো আলো,বাতাস এমনকি শব্দ পর্যন্তও নেই। সে কোথায় আছে, এটা নিয়ে যখন অন্তু ভাবতে লাগলো,ঠিক তখনই সে দেখতে পেলো, নিশিত অনেক অনেক অনেক দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে আসছে। নিশিতের হাতে একটা রক্তের মতো লাল রঙের বিড়ালের বাচ্চা।
নিশিত যখন আরো কাছাকাছি চলে এলো,অন্তু দেখলো, সেটা লাল বিড়ালের বাচ্চা না। বাচ্চাটার সাদা দেহ রক্তে ভিজে লাল হয়ে আছে।
অন্তু কি করবে সেটা যখন হাজার ভেবেও পাচ্ছেনা,ঠিক সেই মূহুর্তেই খেয়াল করলো নিশিত তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই নিশিত রক্তে মাখা মৃত বিড়ালের বাচ্চাটা দিয়ে অন্তুরে মাথায় আঘাত করে বসলো,আর তখনই অন্তুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অন্তু বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১১ টা বাজে। অন্তু খুব দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে।
বিছানা ছেড়ে উঠে মেঝেতে দাঁড়ানো মাত্রই অন্তুর মনে হলো সে ভারি আর ভিজা কিছুতে পা ফেলেছে। মেঝেতে তাকাতেই অন্তুর বিস্ময়ের সীমা রইলো না। একটা রক্তাক্ত বিড়ালের বাচ্চার উপর সে দাঁড়িয়ে আছে।
©somewhere in net ltd.