![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেয়েটার নাম সায়লা।হালকা গড়নের দেহ। শ্যামলা গায়ে নীল নকশা করা পুতির জামা পড়ে বসে আছে। পার্কের চারপাশে কেউ নেই।
শুধু সে একাই।
সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা, আজ ঈদের দিন অথচ পার্কের পাশের এই এলাকাটা এই ভরদুপুরে কেনো এতো নিস্তব্ধ। বাদামওয়ালা ছাড়া আর কেউ নেই পার্ক এলাকায়।
সায়লা মিনুদের বাসায় কাজ করে। মিনুরা সবাই মিলে কোথায় যেনো ঘুরতে গিয়েছে। একলা বাসায় সায়লার প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আর কিছুক্ষন বদ্ধ ঘরে থাকলেই মনে হয় তার বারোটা বেজে যেতো। পাশের বাসার ফিরোজ মিয়াকে সাথে নিয়ে তাই সে পার্কে চলে আসে।
এই ফিরোজ মানুষ টা যেনো কেমন! দেখলেই অদ্ভুত রকমের মায়া লাগে। সায়লার মাঝে মাঝে মনে হয়, এই মানুষটাকে নিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে। যেখান থেকে কেউ তাদের খুঁজে পাবে না। এমন কি শানুর বাবাও।
শানু সায়লার মেয়ে। গ্রামে থাকে। শানু আর শানুর বাবা একসাথে তাদের ভিটেবাড়িতে শিকড় গজিয়ে বসে আছে। শানুর বাবা সের আলী মানুষ হিসেবে যতোটা রাগী, পুরুষ হিসেবে ততোটাই কাপুরুষ। মদের আড্ডা তার জন্য রীতিমত জান্নাতপাড়া।
সায়লা ঢাকায় মিনুদের বাসায় কাজ করে যা পায় তার সবটাই শানুর বাবাকে পাঠিয়ে দেয়। মানুষটা কেমন যেনো! নিজে কখনো খেটে একটা টাকাও উপার্জনের নাম নেই। সায়লার টাকায় যেনো সে স্বর্গসুখ খুঁজে পায়।
সায়লা এখন ক্লান্ত প্রায়। ঢাকার এই অদ্ভুত চারদেয়ালের বন্ধীখানায় অরুচি চলে এসেছে তার। হঠাৎ একদিন দোকান থেকে সদাই কিনে আনার সময় ফিরোজের সাথে পরিচয়। মানুষটা যতোটা না লাজুক, তার থেকে বেশি দায়িত্ত্ববান।
সায়লা ফিরোজের সাথে বসে যখন গল্প করে তখন ফিরোজের চোখের দিকে তাকালে কেমন করে যেনো সায়লার বুকের ভিতর চিন চিন করে ব্যাথা করে। কি যেনো একটা নেই সায়লার জীবনে। সায়লা সেটা খুঁজে পায় না।
ফিরোজ যখন কোনো গল্পের মাঝে অট্টহাসিতে গড়িয়ে পড়ে, তখন সায়লার খুব ইচ্ছে হয় মানুষটার হাসিমাখা গালে ছুয়েঁ দেখতে। ইসস কি নিখুঁত হাসি! সায়লা কখনোই সেই হাসি ছোঁয়ে দেখতে পারেনা। খুব লজ্জা হয় তার। আবার পরক্ষনেই সায়লার শানুর বাবার কথা মনে পড়ে যায়। মানুষটা কে নিয়ে একসময় বাবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলো সে। নতুন গ্রামে নতুন করে ঘর তুলে সের আলী। ঘরে ভালোবাসা ছিলো। আনন্দ আর মিষ্টি খুনসুটিও ছিলো। হঠাৎ একদিন কেমন করে যেনো সায়লার সেই মানুষটা বদলে যেতে থাকে।
একদিন এই মানুষটা পুরোপুরি বদলে যায়।
এক সন্ধ্যায় সের আলী ঘরে এসেই মাতাল অবস্থায় সায়লার চুলের মুঠি ধরে বাড়ির উঠানের গাছের সাথে ধাক্কা দেয়। সায়লার অপরাধ, সে তার জমানো টাকাটা সের আলীর জান্নাত পাড়ায় দান করেনি।
এরপর চলতেই থাকে। হঠাৎ একদিন সায়লা কিভাবে কিভাবে যেনো ঠাই পায় এই মিনুদের বাসায়। মেয়ে শানু কে বাবার কাছে রেখে চলে আসে এইখানে। আজকাল মেয়ের ভবিষ্যত যে খুব বেশিই ভাবায় সায়লাকে।
সায়লা পা ঝুলিয়ে বসে আছে পার্কের একটা বেঞ্চে। প্রচন্ড রোদ পড়েছে আজ। ফিরোজ গিয়েছে ঠান্ডা শরবত আনতে। সায়লা তাই ফিরোজের অপেক্ষাতেই বসে আছে।
সময় বাড়তে থাকে। সায়লার অপেক্ষাও বাড়ে। শুধু ফিরোজের ফিরার নাম নেই। সন্ধ্যা যখন হয়ে আসলো প্রায়, সায়লার হঠাৎ করেই কেমন যেনো ভয় লাগা শুরু হলো। মানুষটা গেলো কোথায়? সামান্য শরবত আনতে এতো দেরি? ঘন্টাখানেক হয়ে এলো। সায়লাও এই নির্জন পার্কে কেমন যেনো বিব্রতবোধ করতে লাগলো।
নাহ! আর অপেক্ষা করা যায় না। সায়লা এইবার উঠে দাড়াঁলো। বাসায় যেতে হবে। ওদিকে মিনুরা চলে আসবে তাড়াতাড়ি। সায়লা পার্কের গেট দিয়ে বের হয়ে মেইন রাস্তায় চলে আসলো।
সায়লার প্রচন্ড রকমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ফিরোজ তো এমন নাহ! রাস্তায় একটা রিক্সাও নেই যে রিক্সায় করে বাসায় চলে যাবে।
সায়লা পার্কের পাশ দিয়ে বেশ কিছুদূর সামনে এগিয়ে গেলো। কিছুদূর যেতেই সায়লা দেখতে পেলো অনেক মানুষ রাস্তার মাঝখানে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কি যেনো দেখছে। মানুষগুলোর মাঝে কেমন যেনো একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সায়লা এগিয়ে গেলো সেই ভিড়ের মাঝে। কৌতুহল সহিত সায়লা সেই ভিড়ের মাঝে ঢুকে গেলো। ভিড়ের মাঝের উৎসাহিত বস্তুকে দেখে সায়লা প্রায় তাৎক্ষনিক অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। রাস্তার মাঝে ফিরোজের লাশ পড়ে আছে। ফিরোজের মাথা ফেটে মগজ রাস্তার সাথে মিশে আছে।
সায়লা দেখতে পেলো ফিরোজের এক পাশে একটা জুসের বোতল আর এক হাতে কিছু বেলী ফুলের মালা ধরা আছে। সায়লার শরীর কাপতেঁ শুরু করলো। কেমন যেনো বমি বমি ভাব হচ্ছে তার। সে কথা বলতেও ভুলে গেছে। খুব ধীরে ধীরে সে ভিড় থেকে বের হয়ে আসলো। পরমূহুর্তেই একটা রিক্সা নিয়া বাসায় চলে আসে সায়লা।
দরজায় নক করতেই দরজা খুলে দেয় মিনুর মা। কেমন একটা বিরক্ত সুরেই যেনো সায়লা কে বলে, "কোথায় ছিলে এতোক্ষন? তোমার জামাই এসে বসে আছে তোমার রুমে। " সায়লা যেনো এতোক্ষন পর হুশ ফিরে পায়। সে ধীর পায়ে তার রুমের দিকে হাটতে থাকে।
সায়লা রুমে ঢুকেই দেখে সের আলী বিছানার উপর পা তুলে বসে আছে।
সায়লা কে দেখে সের আলী অদ্ভুত সুন্দর একটা হাসি দেয়। সেই হাসিতে সায়লা চমকে উঠে। এতো সুন্দর করে মানুষ কিভাবে হাসে?
সায়লার কেমন যেনো মাথা খারাপের মতো হয়ে গেলো। সের আলী বিছানা থেকে নেমে সায়লার পাশে এসে দাঁড়ায় আর সায়লার হাতে কিছু নীল রঙের কাচেঁর চুড়ি দিয়ে বলে, " তোমার জন্য আনছি শানুর মা। আমি এখন মদ খাওয়া ছাইড়া দিছি। ঠিকাদারির কাজ করিগো শানুর মা। তুমি ফিরা যাইবা আমার সাথে?" সায়লা সের আলীকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ উঠলো।
সের আলী হতভম্ব হয়ে গেলো। এতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সে কখনোই পরে নাই। সায়লা কান্না থামিয়ে নীল চুড়ি গুলো দেখতে লাগলো।
আচ্ছা! ফিরোজ মিয়ার প্রিয় রঙও তো নীল ছিলো! তাই না? সায়লা নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকে। সে একবার চুড়ি গুলোর দিকে তাকায়, আরেকবার সের আলীর দিকে। তারপর টেবিলের উপর রাখা ফিরোজ মিয়ার দেওয়া নীল কানের দুল গুলোর দিকে সায়লার চোখ আটকে যায়।
সের আলী দেখতে পায়, সায়লার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সের আলী বুঝতেই পারেনা, মেয়েরা এতো আবেগী কেনো হয়। সামান্য চুড়ি পেয়ে মানুষ এতো খুশিতে বুঝি কেদেঁই ফেলে?
পরদিন সকালে সায়লা সের আলীর সাথে গ্রামে ফিরে যায়। বাকি ঈদের আনন্দটুকু শানুর সাথেই করবে। বাড়ি যাওয়ার পথে সায়লা সেই পার্কের পাশের রাস্তার মাঝে কিছু রক্তাক্ত পচেঁ যাওয়া বেলী ফুল দেখতে পায়। সায়লার চোখে ফিরোজের সেই হাসি ভেসে উঠে।সে খুব শক্ত করে সের আলীর হাত চেপে ধরে তার কাধেঁ মাথা রাখে।
বাস সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর সায়লার চোখ দিয়ে টপটপ করে ফোটায় ফোটায় পানি পড়তে থাকে। সেই পানিতে একই সাথে স্বপ্নভঙ্গ এবং স্বপ্নপূরনের নীল আভা ভেসে উঠে।
সায়লা বুঝতে পারেনা, প্রকৃতি কি অদ্ভুত একটি খেলা তার সাথে খেলেছে। সে সারাজীবন একই সাথে দুটি মানুষকে ভালোবেসে যাবে।
অথচ দুজনের কেউই তা কখনোই জানবে না।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৬
হলুদ পিঁপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
দোয়া রাখবেন.।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৭
কালীদাস বলেছেন: আপনার এক্সপেরিমেন্টগুলো ভাল হচ্ছে।
চালিয়ে যান