নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখানে অনুরাগ নিয়ে খেলা হয়.........।

হলুদ পিঁপড়া

হলুদ পিঁপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

উন্মাদ

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:১৬



বুক কেপে উঠলো হঠাৎ করেই। ওপাশের রুমে ফোন বেজেই যাচ্ছে। নীরা আছে,তবু কেনো যেনো ফোন ধরছে না। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। খুব ঝড় হচ্ছে। বৃষ্টি নামবে বোধ হয়। বৃষ্টির শুরুটা দেখার খুব ইচ্ছে। অনেকদিন বৃষ্টি দেখি না। আর বৃষ্টি দেখার লোভে বারান্দা থেকে সরতেও ইচ্ছে করছে না।

ফোন বেজেই যাচ্ছে। নীরা ঘুমিয়ে পড়লো নাতো! ইদানিং নীরা খুব সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ওষুধ খুব ভালো করেই কাবু করে ফেলেছে তাকে।

রূপাই মারা গেলো বেশ কিছুদিন হলো। রূপাই মারা যাওয়ার পর যতোটুকু খারাপ পরিনতির কথা কল্পনা করেছিলাম,তেমন কিছুই হলো না। শুধু নীরা ঘুম বাড়িয়ে দিলো। সারাদিন কারো সাথে কথা তেমন একটা বলে না। একা থাকতেই বেশি পছন্দ করে।

রূপাই আমার কেউ হয় না। নীরারও কেউ না। রূপাই ছিলো পাশের বাসার ছেলে। বয়স আর কতো হবে! ৭-৮!! এমনই হয়তবা।

বৃষ্টি নেমে গিয়েছে। মধ্যরাতের বৃষ্টি এতো সুন্দর হয় কি করে? ইসস! এক কাপ কফি থাকলে খুবই ভালো হতো। হঠাৎ বারান্দার দরজা খুলার শব্দ হলো। আমি পিছনে ফিরে দেখি নীরা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে কফির কাপ। কফির কাপটা আমার হাতে দিয়ে নীরা আমার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো।

নীরার মুখ গম্ভীর দেখে জিজ্ঞেস করলাম,'কে ফোন দিয়েছে?'
-'থানা থেকে ফোন এসেছে।'
-কি বলে?
- কাল যেতে বলেছে।
- আবারো?
-হুম
-তুমি কি বললে?
- আমি কিছুই বলি নি।
- আচ্ছা নীরা, তুমি কি সত্যি কিছু জানো না?

নীরা খুব অভিমানের চোখে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখে রাজ্যের পানি। আমি কিছুটা চমকে উঠলাম।

রূপাই সেদিন মারা যায় নি। রূপাই খুন হয়েছিল। নীরের চোখে পানি থাকলেও তা এখনো চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরেনি। মেয়েটা বড়ো অদ্ভুত। কি অদ্ভুত ভঙ্গিমায় চোখের মাঝেই পানি আটকে রাখতে পারে। আমি মাঝে মাঝে খুব অবাক হই।নীরা আমার দিকে তাকিয়েই আছে।

নীরা আর রূপাই খুব ভালো বন্ধু ছিলো। ছেলেটা নীরাকে ছোট আম্মু ডাকতো। কেনো ডাকতো জানি না। নীরাও ছেলেটাকে নিয়ে খুব বেশি রকমের আহ্লাদী করতো। আমার মাঝে মাঝে খুব বাড়াবাড়ি মনে হতো। কিছুটা বিরক্তও হতাম।

রূপাই যেদিন মারা গেলো,সেদিন সে সারাদিন আমাদের বাসাতেই ছিলো। আমি আবার বাচ্চা-কাচ্চা তেমন একটা সহ্য করতে পারতাম না। বেশ জ্বালাতন করতো ছেলেটা। যেদিন রূপাই মারা গেলো,সেদিন আমি বাসাতেই ছিলাম। নীরাকে খুব জ্বালাতন করছিলো সেদিন। হঠাৎ করে ছেলেটা আমার খুব প্রিয় কারুকাজ করা নীল কাচের বাক্সটা ভেঙ্গে ফেলে। খুব রাগ উঠেছিলো সেদিন। রেগে গিয়ে ওর গালে চড় বসিয়ে দিয়েছিলাম। সেটা আবার নীরা দেখে ফেলেছিলো। সেদিন নীরা আমার সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলো।

সন্ধ্যার দিকে খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ঝগড়া হলো নীরার সাথে। ঠিক রাত ১০ টায় খবর আসে রূপাইকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খুঁজাখুঁজির পর রাত ১২ টা নাগাদ বাড়ির ছাদে রূপাইয়ের মৃতদেহ খুঁজে পায় তার বাসার লোকেরা। নীরাও তন্য তন্য করে খুজেঁছিলো রূপাই কে। শুধু আমিই আমার রুমে বসে ছিলাম। নীরা শুধু একবার চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো। এরপর আর আমার রুমে এলো না।

সেই রাতেই পুলিশের ইনভেস্টিগেশন টিম চলে আসলো। ইদানিং সেই টিমের পুলিশ গুলো খুব জ্বালাচ্ছে। দিন নেই, রাত নেই যখন তখন থানায় যেতে বলছে। উদ্ভট আজগুবি প্রশ্ন করছে।

রাত প্রায় ২ টা বাজে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। আমার বুক ধক করে উঠেছে। এতো রাতে বৃষ্টির মাঝে কে আসতে পারে? আমি নীরার দিকে তাকালাম। নীরা গিয়ে দরজা খুললো।

আমি জানি কে এসেছে। এস আই কবির। আমাকে ধরে নিতে। কবির সাহেব সাথে করে আরো দুজন পুলিশ সঙ্গী নিয়ে সরাসরি আমার বারান্দায় চলে আসলো। আমি কফি হাতে বারান্দায় দাড়িতে আছি। বৃষ্টি হচ্ছে। প্রচন্ড দমকা হাওয়াও বইছে।

নীরা কবির সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে আমার দিকে নিঃষ্পান অভিমানের চোখে তাকিয়ে আছে। সেই চোখে শুধুই ঘৃনা। কি অদ্ভুত ব্যাপার! নীরার চোখে এখনো পানি আটকিয়ে আছে। আমার খুব অবাক লাগছে।এই মুহূর্তে ঠিক কি ঘটতে যাচ্ছে তা আমার মাথায় নেই। আমি শুধু নীরার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায় আছি।

বৃষ্টির বড় বড় ফোটা এখন আমার গায়ে এসে পড়ছে। নীরা এস আই কবিরকে তখন ফোনে সব বলে দিয়েছে। নীরা সব জানতো। আমার বাবা হওয়ার ক্ষমতা নেই। এই সত্যটুকু আমি কখনোই মেনে নিতে পারিনি। আর তাই অন্য কারো সন্তান আমার সহ্য হতো না। কিন্তু নীরা ছিলো পুরো উলটো। সে যখন অন্য বাচ্চাগুলোকে আদর করতো তখন আমার খুব ঘৃনা হতো নীরাকে। আমি সহ্য করতে পারতাম না। কেনো পারতাম না জানি না।

সেদিন রাতে আমিই রূপাইকে ছাদে ডেকে নিয়ে গলা টিপে মেরে ফেলি। কেনো করি জানিনা। তবে তখন কেনো যেনো আমার খুব আনন্দ হচ্ছিলো। আনন্দটা ঠিক কেমন যেনো পৈশাচিক।

ব্যাপারটা ২ দিনের ভিতর নীরা কিভাবে যেনো টের পেয়ে যায়। কবির সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন, "কফি শেষ করুন। আপনাকে যেতে হবে আমাদের সাথে।"

আমি খুব ধীরে ধীরে কফিটা শেষ করলাম। কফি শেষ করা পর্যন্ত নীরা এক বারের জন্যও আমার চোখ থেকে চোখ সরায় নি। আমি খুব আনন্দ পাচ্ছিলাম ব্যাপারখানায়। নীরা কতোটা অদ্ভুত! এখনো সে চোখে পানি আটকে রেখেছে।

কবির সাহেব আমাকে হাতকড়া লাগিয়ে নিচে নামিয়ে নিয়ে গেলেন। নীরাও আসলো পিছু পিছু। আমাকে গাড়িতে উঠানো হলো। বৃষ্টি তখন আরো বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের জিপে বসে আমি নীরার দিকে তাকিয়ে রইলাম। জিপ ছেড়ে দিয়েছে।

আমার হঠাৎ কেনো যেনো মনে হলো, নীরার চোখ বেয়েঁ পানি পড়ছে। নীরা এখন আর আমার দিকে তাকিয়ে নেই। আমি তৃপ্তির হাসি হাসলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.