![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঘ মাসের শীতের রাত। একদম জবুথবু অবস্থা। সঞ্জয় নতুন বিয়ে করেছে মাত্র। নতুন বউ কে নিয়ে রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাড়ি ফিরছে।
বিয়ে টা হয়েছে খুবই অদ্ভুত উপায়ে। সঞ্জয় গিয়েছিলো ঢাকার নিমতলায়। তার বাবার এক বন্ধুর বাসায়। কোনো না কোনো ভাবে তার বাবার সেই বন্ধু সঞ্জয়কে পছন্দ করে ফেললেন, এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই সঞ্জয়ের সাথে নিজের মেয়ে ঈশানীর বিয়ে দিয়ে দিলেন।
অগত্যা বর যাত্রী ছাড়াই এক প্রকার একা একাই বউকে সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে তাকে। যদিও মাঝ পথ পর্যন্ত ঈশানীর বড়দা তাদের পৌছিয়ে দিয়েছেন। বাস থেকে নেমে সঞ্জয় ঈশানীকে নিয়ে নৌকায় উঠলো,আর ঈশানীর দাদা ফিরে চললো।
নৌকার এক কোনায় দুজন একসাথে জবুথবু হয়ে বসে আছে।লজ্জায় একজন আরেকজনের মুখের দিকেও তাকাতে পারছেনা। চাঁদের আলোয় দুজন কে কি সুন্দর দেবশিশুর মতো যে লাগছে! মাঝি আড় চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে এই জোড়া দেব শিশুর মতো মানুষ দুটোকে দেখছে।
সঞ্জয় গলাইয় হালকা কাশি দিয়ে প্রথম কথা বলে উঠলো
-ঈশানী!
-জ্বী?
-কেমন বোধ করছো?
-বুঝতে পারছি না।
- ভালো লাগছে?
-হুম, আপনার?
- ভালো লাগছে কিনা জানি না, তবে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু তুমি আমাকে আপনি করে ডাকছো কেনো?
কথার এই পর্যায়ে এসে ঈশানী থেমে গেলো।লজ্জায় মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো।সঞ্জয় তা বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে উঠলো।সঞ্জয়ের কেমন যেনো একটা চাপা অনুভুতি হচ্ছে।ঈশানী হঠাত বলে উঠলো, নদীর পানি কি অনেক ঠান্ডা?
-কেনো?
-ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-নাহ, ছুয়ে দেখো।
ঈশানী সাথে সাথেই নদীর পানিতে হাত ডুবিয়ে দিলো। নৌকার সাথে সাথে ঈশানীর উজ্জল হলুদবর্ন হাতও পানিকে দুলাতে লাগলো।ঈশানীর মুখের কিশোরীসুলভ হাসির সাথে চাঁদের আলো মিশে কি যে এক মায়া সৃষ্টি করেছে! সঞ্জয় সেই মায়াটাকে গভীর দৃষ্টিতে একমনে গ্রহন করছে। সঞ্জয়ের যে কি ভালো লাগছে! হঠাত তার মনে হলো, সে বোধহয় এ জগতের সবথেকে সুন্দর মেয়েটির পাশে বসে আছে।
-ঈশানী
-জ্বী?
-তোমার মন খারাপ হচ্ছেনা?
-কেন?
-এই যে বাবা-মা কে ছেড়ে এসেছো?
-হুম তা হচ্ছে, কিন্তু আবার ভালোও লাগছে।
-ভালো লাগছে কেনো?
ঈশানী দ্বিতীয় বারের মতো লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ফিরে হেসে দিলো। ঈশানী তখনও পানিতে হাত ভাসিয়ে যাচ্ছে। সঞ্জয় ঈশানীর হাসিতে বারবার অভিভূত হয়েই যাচ্ছে।
হঠাত করে ঈশানীর মুখ কালো হয়ে আসলো। পানিতে হাত রেখেই ঈশানী সঞ্জয়ের দিকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। সঞ্জয় কিছুটা ধাক্কার মতো খেলো।
সঞ্জয় ঈশানীর অন্য হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে ঈশানী? মন খারাপ লাগছে?
-আমার হাত!
-তোমার হাত? কি হয়েছে?
ঈশানীর চোখে হঠাত ভয়ের আভা ফুটে উঠলো। সঞ্জয় আবার জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে?
-আমার হাত কে যেনো চেপে ধরেছে।
কথাটা বলেই ঈশানী হাত পানি থেকে উপরে তুলে নিতে চাইলো। সঞ্জয় দেখতে লাগলো, ঈশানী সত্যি সত্যি হাত পানি থেকে তুলতে পারছেনা। বরং তা আরো নিচে নেমে যাচ্ছে। ঈশানী ভয় পেয়ে চিৎকার দিলো। সেই চিৎকার নদীর এপার ওপার একসাথে কাপিয়ে তুললো।
নৌকার মাঝি ততক্ষনে নৌকা থামিয়ে দিয়ে ওদের কাছে চলে এসেছে।এদিকে সঞ্জয় ঈশানীর হাত ধরে রেখেছে।এই সময়, মাঝি খুব দুঃসাহসিক এক কাজ করে বসলো। নৌকা থেকে পানিতে ঝাপ দিয়ে নেমে পড়লো। নেমেই সে ঈশানীর হাতের কাছে চলে আসলো।এরপর পানিতে ডুব দিয়ে ভারি কি যেনো তুলতে লাগলো।
সঞ্জয় আর ঈশানী অতি বিস্ময়ের সাথে দেখতে লাগলো, একটা লাল বেনারশি সাড়ি পরা মেয়ের হাত ঈশানীর হাত ধরে আছে, মাঝি সেই মেয়েকে নদীর পানির নিচ থেকে তুলে আনছে। উপরে উঠে মাঝি সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, দাদাবাবু এ যে মরা লাশ।
ঈশানী একথা শুনা মাত্রই লাশটির দিকে তাকিয়ে মূর্ছা গেলো। মরা লাশটির হাতগুলো তখনো ঈশানীর হাত ধরে আছে। সঞ্জয় সেই হাতগুলো ধীরে ধীরে ছুটিয়ে দিলো। লাশটা এখন পানিতে ভেসে আছে। মাঝি আর সঞ্জয় একবার সেই লাশের দিকে আর একবার ঈশানীর দিকে তাকাতে লাগল।
পরদিন সকাল।
ঈশানীর জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষন আগে। সে দেখতে পায়, তার চারপাশে অনেক মানুষজন জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো মানুষ সে আগে কখনো এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেনি। সব অপরিচিত লোক। ঈশানী খেয়াল করলো তার হাতে শঙ্খবালা দুটা নেই। এরপর পরই সে আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
সে রাতে পরপর আরো দুটি ঘটনা ঘটেছিলো। প্রথমত ঈশানীর হাতের শঙখবালা দুটি উধাও হয়ে গিয়েছিলো আর দ্বিতীয়ত সঞ্জয় নিজে পানিতে নেমে গিয়ে মেয়ের লাশটিকে নৌকায় তুলে আনলো। এবং নদীর পাড়ে পৌছানোর পরপরই গভীর বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলো, নৌকায় কোনো লাশ নেই।
নদীর ঘাটে এসে মাঝি সঞ্জয়দের বাড়ি থেকে লোক এনে নতুন বউকে অজ্ঞান অবস্থাতেই বাড়ি নিয়ে গেলো। বাড়ি আসার পর সঞ্জয় তীব্র জ্বর নিয়ে বিছানায় গা মিলিয়ে দিলো।
ঈশানীর জ্ঞান ফিরলো দুপুরের দিকে। ঈশানী ঘুম থেকে উঠেই প্রথম যে কাজ টা করলো তা হলো, বিছানা থেকে উঠেই বাড়ির রান্না ঘরের দিকে এগুতে লাগল। তার পিছু পিছু সঞ্জয়ের মা ও দিদিরা যেতো লাগলো। কেউ কোনো কথা বলছেনা।
রান্নাঘরে ঢুকেই ঈশানী মাটির চুলার পাশ থেকে একজোড়া শঙখবালা কুড়িয়ে নিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করলো, ''এ বালা দুটি কার?'' কেউ উত্তর দিতে পারলো না।
ঈশানী আপন মনে করেই বালা দুটি নিজের হাতে পরে নিলো, যেনো কিছুই হয় নি।এদিকে সঞ্জয় ঘুমের মাঝে জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে শুরু করেছে।
সঞ্জয়ের জ্বর এক সময় বাড়তে লাগলো। ঈশানী বিকেলের পর থেকে একটা রুমে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। সারা রাত ঈশানী সেই রুম থেকে বের হলো না। পরদিন সকালে হাজার ডাকের পরও যখন ঈশানী দরজা খুলছিলো না, তখন বাধ্য হয়ে দরজা ভাঙতে হলো।
গভীর ভয় আর বিস্ময়ের সাথে সবাই দেখতে লাগলো, সেই বদ্ধ ঘরে কেউ নেই। শুধুমাত্র ঈশানীর হাতের শঙখবালা দুটি পাওয়া গেলো।এর পরপরই একজন খবর নিয়ে আসলো নদীতে একটা লাশ ভেসে পারে এসে বেধেছে, লাশটার মুখ হুবুহু ঈশানীর মতো নাকি দেখতে।
ততক্ষনে সঞ্জয়ের ঘুম ভেঙে গিয়েছে, সে প্রবল জ্বর নিয়েও সবার সাথে নদীর দিকে ছুটে চললো। নদীর পাড়ে তখন মানুষ জমে গেছে।
সঞ্জয় নদীরপাড়ে পরে থাকা লাশটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো, এ যে তারই ঈশানী। সঞ্জয় কিছু মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো, পরমুহূর্তেই সেই আগের রাতের লাশটার কথা মনে পরে গেলো তার।
কি আশ্চর্য! সেই লাশটার চেহারাও ঈশানীর মতোই ছিলো। এ কিভাবে সম্ভব! সঞ্জয় কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছেনা।
দুপুর নাগাদ লাশ নিয়ে তারা ঈশানীর বাড়ির দিকে রওনা হলো। সঞ্জয়ের পরিবারের কেউই তখনো পর্যন্ত ভাবে নি, যে কতো বড়ো আরেকটি ধাক্কা তারা খেতে যাচ্ছেন।
ঈশানীর বাড়িতে যখন তারা পৌছালো, ঈশানীর বাড়ির কেউই সঞ্জয়েকে তখন চিনতে পারলো না। ঈশানীর বাবা অবাক হয়ে ঈশানীর মৃত চেহারার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, এ কিভাবে সম্ভব! ঈশানী তো আরো মাস খানেক আগেই মারা গিয়েছে। তার শ্রাদ্ধও করা হয়েছে ভালো মতোই। সঞ্জয়ের বাবা ঈশানীর বাবার হাতে শঙখবালা দুটি দিয়ে বলল, 'এই বালাগুলো ছিলো ঈশানীর হাতে।'
ঈশানীর বাবা গভীর বিস্ময়ে সেই বালাগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো, এ যে ঈশানীরই বালা।
তারা কোনোকিছুতেই যেনো কিছুই মিলাতে পারছিলোনা। ঈশানী মারা গিয়েছে মাস কয়েক আগে, অথচ সঞ্জয় ঈশানীকে বিয়ে করে নিয়ে যায় মাত্র দু দিন আগে। কিন্তু এখানে ঈশানীর পরিবারের কেউই সঞ্জয়কে চিনে না। যখন কোনো কিছুই আর মিলানো যাচ্ছে না,তখন এক রকম হতাস হয়েই সঞ্জয়রা বাড়ি ফিরে গেলো।
তীব্র খটকার মাঝে সবাই যখন বাড়ি ফিরে আসলো, দেখতে পেলো বাড়ির রান্নাঘরে কে যেনো রান্না করছে।
সঞ্জয়ের মা ভাবলেন পাশের বাড়ির কেউ হয়তবা, আর এটা ভেবেই রান্নাঘরে ঢুকলেন এবং ঢুকেই বিকট চিৎকার দিলেন।
সবাই দৌড়ে রান্নাঘরে গেলো। গিয়ে যা দেখলো, তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলোনা।
সঞ্জয় চোখ বড় বড় করে দেখতে লাগলো, তার মা অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পরে আছে আর তার পাশে গভীর বিস্ময়ের চোখ নিয়ে ঈশানী দাঁড়িয়ে আছে।
সবাই কে ঈশানী বলতে লাগলো, "মা আমাকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।"
এই ধাক্কা সামলে নিয়ে সবাই সঞ্জয়ের মাকে বিছানায় নিয়ে গেলেন। সঞ্জয়ের মার জ্ঞান ফিরে আসলে ঈশানীকে ডাকা হলো। দেখা গেলো, ঈশানী তো নেইই, ঈশানীর গন্ধটুকুও বাড়ির কোনো কোণাতেও নেই। সবাই একসাথে যেনো আকাশ থেকে পড়ল।
এরপর থেকেই মাঝে মাঝে ঈশানীকে এ বাড়ির মধ্যে দেখা যায়। কখনো রান্নাঘরে, কখনো আঙ্গিনায়, কখনোবা রাতে সঞ্জয়ের পাশে ঘুমন্ত অবস্থায়। আবার পরক্ষনেই ঈশানী নাই হয়ে যায়।
তবে যতো বারই দেখা যায় ঈশানীর হাতে সেই শঙ্খবালাগুলোও দেখা যায়। বড়ই আশ্চর্য, বালাগুলো ঈশানীর বাবার কাছেই দিয়ে আসা হয়েছিলো।
এসবের কোনো উত্তরই তারা কখনো খুজে পেলো না। প্রকৃতি তে তো কতো কিছুই ঘটে, ঈশানীও না হয় অন্য কোনো ভুবন থেকে ভুল ক্রমে এ ভুবনে চলে আসে, কিংবা কে জানে, হয়তবা এ ভুবন থেকেই ভুল করে অন্য কোনো ভুবনে চলে যায়।
সবই প্রকৃতির খেলা।
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৭
হলুদ পিঁপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৫
কালীদাস বলেছেন: চমৎকার