নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হোমো'র হোম

হোমো'র হোমে স্বাগত। পা মুইছা ঢুকবেন কইলাম। নইলে কিন্তু ডান্ডা দিয়া গুতা মারুম। ;)

হোমো স্যাপিয়েনস

হোমো স্যাপিয়েনস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের জামা

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৩৭

১।

"বাজান, কাইলকা ঈদ। তুমি না কইছিলা এই ঈদে নতুন জামা কিন্যা দিবা। দিবা না?" মতিনের আকুতি ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেসা।

"হ বাজান। কিন্যা দিমু।" ছেলেকে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে পড়ল জয়নাল।



রাত ১১টা। সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেও মাত্র শ'দুয়েক টাকা পেল জয়নাল। মালিক বলেছিল আজকে বেশী করে কাজ করলে টাকা বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কাজ শেষে তাকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। বউ বাচ্চাকে নিয়ে নাকি মার্কেটিংয়ে গেছেন। কি আর করা। ঐ টাকা দিয়ে বাজারে গিয়ে ছেলের জন্য পছন্দ করে লাল রঙের একটা শার্ট কিনল। মতিনের আবার লাল জামার খুব শখ।



"বাজান লও। তোমার জন্যি লাল জামা আনছি। কাইল গায়ে দিও।" ঘরে ঢুকেই মতিনকে শার্টটা দিল জয়নাল। মতিন এত রাত পর্যন্ত জেগে ছিল বাবার অপেক্ষায়। নতুন শার্ট পেয়ে খুশিতে বাবাকে জড়িয়ে ধরল মতিন। ছেলের খুশি দেখে মতিনের মায়েরও মনটা ভরে গেল। কিছুক্ষন বাদেই মতিনের মা জয়নালের দিকে তাকিয়ে একটু ইতিস্ততঃ করতে লাগল।



"আতপ চাইল আনো নাই?" শঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করল মতিনের মা। "কাইল খাইবা কি?"

"পোলার লাইগা একটা ঈদে নাহয় ডাইল ভাতই খাইলাম। দেখ পোলাডা কত খুশি হইছে।" স্নেহার্দ্র কন্ঠে বলল জয়নাল। ছেলের আনন্দ দেখে মতিনের মার মলিন মুখে আবারো হাসি ফুটে উঠল।



২।

ফজল মিয়া আস্তে করে নাজুক দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকল। দূরের এক মসজিদ থেকে ফজরের আযানের সুর শোনা যাচ্ছে। ফজল মিয়া চেয়ে দেখল তার ছেলেটা মাদুর পেতে খালি গায়ে ঘুমিয়ে আছে। দুগালে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুজলের দাগ। অনেকদিন ধরে একটা নতুন জামার জন্য বায়না করছিল ছেলেটা। বোধহয় ঈদের নতুন জামার জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফজল আস্তে করে নতুন শার্টটা ছেলের মাথার কাছে রেখে আবার বাইরে বেরিয়ে গেল।







৩।

মতিনের সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গেই খুশি খুশি লাগছে তার। গত কয়েক ঈদে সে নামাজ পড়তে পারেনি নতুন জামা না থাকায়। সবাই নতুম জামা কাপড় পড়ে আসত কিন্তু সে পড়তে পারত না। খুবি লজ্জা লাগত। তবে এবারের কথা ভিন্ন। বাবাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,"বাজান উঠো। নামাজ পড়বা না? নামাজ শুরু হইয়া যাইব তো।" নতুন জামাটা নেবার জন্য বালিশের পাশে তাকাল মতিন। ঐখানে জামাটা নেই। মা অন্য কোনখানে রেখেছে ভেবে পুরো ঘর খুঁজল। হঠাৎ বুকটা ধ্বক করে উঠল তার। দেখল বেড়ার দরজাটা একপাশে বড় করে কাটা। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলল, "বাজান! চোরে আমার লাল জামা নিয়া গেছে!"





(এটা শুধুমাত্র একটা গল্প হলেও এরকম হাজারো মতিন আছে শহরজুড়ে। কারো কারো ঈদ পার হয়ে আরেক ঈদ চলে আসে তবুও নতুন জামার বায়না পূরন করতে পারে না অসহায় দিনমজুর বাবা-মা। কেউ কেউ ঈদের আগের রাতটা দু'গালে অশ্রুজলের ছাপ ফেলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নতুন জামার স্বপ্ন দেখে। আপনাদের কি সেই মুন্নী আর মানসুরের কথা মনে আছে? এইতো ২০১২রই তো ঘটনা। ঈদের জামা কিনে দিতে না পেরে ১০ বছরের মেয়ে মুন্নী আর ৫ বছরের ছেলে মানসুরকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন তাদের হতদরিদ্র বাবা। পরে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন।



কত খরচই না আমরা করি নিজেদের জন্য। আমরা কি পারি না এরকম দু'একটা শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে? অনেকজনকে না পারি, সামর্থ্য অনুযায়ী দু'একজন শিশুর ঈদকে আনন্দময় করে তুলতে কি পারি না আমরা প্রত্যেকে? একটা ঈদে একটু বাড়তি খরচ নাহয় নাইবা করলাম। এভাবে আমরা সবাই যদি আমাদের সামর্থ্য অনুসারে চেষ্টা করি তাহলে শহরের অনেক শিশুর নিরানন্দের ঈদটা একেবারেই বদলে যেতে পারে। তখন দেখবেন নিজের জন্য হাজার টাকায় কেনা জামা নয়, ঐ পথশিশুর জন্য শ'টাকায় কেনা ছোট্ট একটা লাল শার্টই আপনাকে দিতে পারে ঈদের আসল খুশি।)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

বোকামন বলেছেন:
ঈদ মানে খুশি ..... মতিনদের হাসিতে সে খুশি স্বর্গীয় সুধা হয়ে আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। একটুকরো হাসি .....।

লেখাটির জন্য আমার কৃতজ্ঞতা ও সালাম জানবেন।
ভালো থাকুন লেখক।।

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

হোমো স্যাপিয়েনস বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৪

আলোর পরী বলেছেন: খুব ভাল লাগল , আপনার মানবতাবাদী মনের জয় হোক । আমরা সবাই অন্তত এক জন দরিদ্র মানুষের নতুন জামার দায়িত্ত নেই ।

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৯

হোমো স্যাপিয়েনস বলেছেন: আমাদের অনেকেই আছে যাদের হয়তো নতুন জামা কিনে দেবার মত স্বচ্ছলতা নেই। তারা নতুন জামা না হোক, অন্ততঃ ব্যবহার করা হয় না এমন নিজের ভাল কাপড় গুলো গরীব মানুষ গুলোকে দিতে পারে। নাই মামার চেয়ে কানা মামা তো ভাল! .... ধন্যবাদ আপনাকেও।

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল লাগল আপনার মনোভাব।

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২১

হোমো স্যাপিয়েনস বলেছেন: ধন্যবাদ প্রোফেসর ভাই।

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:১১

রোহান মাকসুদ বলেছেন: ভাই আপনার লেখাটা পড়ে চোখে পানি চলে আসল।অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে
করে ওদের জন্য কিন্তু পারিনা....দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যতে কিছু করতে পারি।
ভালো থাকবেন।

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৯

হোমো স্যাপিয়েনস বলেছেন: পারবেন না কেন? ভবিষ্যতে অবশ্যই পারবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।

৫| ২৯ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১০

রবিউল ফকির বলেছেন: তিনটা গল্পের তিন যায়গাতে আমার চোখের কোনে পানি জমে উঠেছে।
আমার ছেলে আমাকে ফোনে বলে আমার জন্য কি কি কিনছ? তার অনেক বাজেট- সার্ট, প্যান্ট, টি-সার্ট, জোতা। আর মেয়ে আমাকে বলে আব্বু তুমি নতুন জামা কিনছ। মেয়েটা অবশ্য ছোট ৩ বছর সে তার বাবার কথাটা জিজ্ঞেস করে আমাকে স্মরন করিয়ে দিয়েছে।

২৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩১

হোমো স্যাপিয়েনস বলেছেন: ভাল লাগল। আপনার ছেলে মেয়ের জন্য শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.