![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লায়ন লিজার ছোটো ভাই, লিজা তাকে অ আ পরাচ্ছে, সন্ধ্যা এখন, দিনের একটা সুন্দর সময় লিজার চোখে, এখন দিন ও না, রাত ও না, অদ্ভুত আলো আধারির খেলা, এমন আরেক টা সময় লিজার জিবনে প্রতিদিন আসে, সেটা খুব সকাল, মসজিদের আযান দিবার ১ ঘন্টা আগেই ছোটো লিজা ঘর থেকে বের হয়, যখন ফুল ব্যাপারিরা দোকানে ফুল নিয়ে আসে, দোকানদার থাকেনা তখন, শাওন ফুল বুঝে নেয় ব্যাপারির থেকে, শাওন লিজার খুব ভালো বন্ধু, ওরা এক স্কুলেই পরে, লিজা শাওন এর থেকে অল্প দামে ফুল কিনে বাসায় যায় যখন তখন মসজিদের আযানের সুর ভেসে আসে, লিজা রান্না ঘরে বাবার জন্য রুটি বানাতে যায়, বাবা এখ নামাজ পরতে উঠবে তার পর গারি নিয়ে বের হবা, আটা গুলতেই বাবার কন্ঠ শুনা যায়, লিজা মারে অজুর পানি দিবিনা আজ? বাবা পানি তো দিয়েছি, লিজার বাবা ও জানে মেয়ে অজুর পানি দিয়ে রেখেছে তবু সকাল বেলা মেয়েটার সাথে কথা না বললে কি আর চলে, অজু করে নামাজ পরতে যায় লিয়াকত মিয়া, (লিয়াকত লিজার বাবা)।
লিজার রুটি বানানো শেষ, এক টুকরা গুর এর সাথে বাবাকে রুটি দেয় লিজা, পাশেই বসে পরে ফুলের মালা বানাতে, বাবা খেতে খেতে লিজার মুখেও পুড়ে দেয় একটু করে রুটি, লিজা খাচ্ছে আর মালা বানাচ্ছে, কষ্টে বুক ফাটা কান্না আসে লিয়াকত মিয়ার, সারাদিন রিক্সা চালায় সে, রিক্সার জমা দিয় দিন শেষে ৩০০ টাকা ঘরে আনতে পারে, কিন্তু প্রতিদিন রিক্সা চালানো যায়না, ঘুমে ক্লান্তিতে শরির দুর্বল হয়ে পরে, ৭ কি ৮ দিন চালানোর পর টানা ৩ দিনের বিশ্রাম দরকার হয় তার, লিজার মা অসুস্থ, প্যারালাইসিস রোগি, বিছানায় শুয়ে বসে দিন কাটে তার, কি ব্যাপার বাবা তুমি কাদসো কেনো? নারে মা কাদিনা, চোখে কিছুগেলো হয়তো, চোখ মুছে ঘর থেকে বের হয় লিয়াকত মিয়া, আজ লিজার মায়ের ঔষধ কিনতে হবে ৫০০ টাকার, টাকা আছে পকেটে ১০০ আবার ঘরের কিছু বাজার ও করতে হবে, দ্রুত হাটতে থাকে রহিম মিয়ার গ্যারেজের দিকে, যত তারাতারি রিক্সা নিয়ে বের হবে টাকা ততই বাড়বে, তা ছাড়া আজ হরতাল, দেশে কি জানি কি হইতাছে, দুই নারি আর আমাগো শান্তিতে থাকতে দিলোনা, আবিজাবি বলতে বলতে রহিম মিয়ার গ্যারেজে পৌছায় লিয়াকত মিয়া,
ভোর ছয় টা,
ছোটো ভাই লায়ন এর ঘুম ভেঙ্গে গেছে, লায়ন কে কোলে করে খালার ঘরে যায় লিজা, খালাগো লায়ন রে থুইয়া আমি ফুল লইয়া গেলাম দেইখো, আইজকা তারাতারি আহুম, হরতাল তো, অল্প ফুল আনছি গেলাম
লিজারে লিজা ও লিজা শোন পিছন থেকে খালার ডাকে লিজা দারায় সেখানে,
কি গো খালা কিছু কইবা?
কইতাছি যে দেশের পরিস্থিতি ভালানা, আইজকা না গেলে কি হইবোনা রে মা, আমার কাছে ১০০ টেকা আছে এইডা নিয়া তোর মার ঔষধ কিনতে পারবিনা?
খালাগো মায়ের ঔষধ কিনতে ৩০০ টেহা লাগবো, ঘরে বাজার নাই, আমি কাইলকা দেখছি আব্বার পকেটেও ১০০ টাকা আছে এইগুলান দিয়া হইবো না, আর আমার কিছু হইবো না খালা, তুমি চিন্তা কইরোনা, আমি ঠিক টাইমে আইসা পরুম, বলেই তার নিজের ঘরে যায় লিজা, মাগো খাইবা? নারে মা, ভালা লাগেনা, তুই কি যাবি অহন? হ মা যাই একটু পেপারের দোকান থেইকা কিছু টেহা দিবো আইজকা, আর ফুল অল্প বেচলে বেচুম নাইলে নাই, সকাল সকাল আইয়া পরুম আর তুমি খাইবানা আমি গেলে তোমারে খাওইয়া দিবো কিডা, হ্যাঁ লউ খাও, মায়ের মুখে রুটি তুলে দেইয় লিজা, সাথে নিজেও খায়, খাওয়া শেষ করে মাকে ঔষধ খাইয়েয়ে লিজা বের হয় বাসা থেকে, মগবাজার আসতে আসতে ৭ টা বেজে যায়, লিজা পেপার এর দোকানে কাম করে, মানুষের বাসায় পেপার নিয়া যায়, মাসে লিজারে দোকানদার ৩০০০ টাকা দেয়, আর ফুল বেইচা যা পায় লিজা তাতে সংসার মোটামুটি কষ্ট কইরা চইয়া যায়, আইজ দোকানদার লিজারে ৫০০ টাকা দিবে, লিজা মায়ের কথা বলে কিছু টাকা মাস শেষ হবার আগে চেয়েছে, দোকান এর সামনে এসে দেখে দোকান বন্ধ, কাকার বাসায় যায় লিজা, যেয়ে দেখে কান্নাকাটি, দোকানদার কাকার মা মারে গেছে, নাহ টাকা পাওয়া যাবেনা আজ, ফুল গুলু নিয়ে স্কুলের সামনে যায় লিজা, ৯০ টাকার ফুল বিক্রি করে সে, কিন্তু এখনো আরো ২০০ টাকা দরকার না হলে মায়ের ঔষধ কিনা যাবেনা, রাস্তায় যায় লিজা নাহ আজ কিছু নেই রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার বালাই নেই কোথাও, দু চার টা গাড়ি আসছে কিন্তু কেউ থামছে না, দুপুরের কড়া রোদ্দুরে রাস্তায় জ্যাম লেগে থাকলে কিছু বিক্রি হয় লিজার না আজ আর তার বালাই নেই, বাসায় ফিরে লিজা, যাবার পথে বাবার সাথে দেখা, বাবা তার হাতে ৫০ টাকা দেয় নে মা, কিছু টুকটাক কিনিস, ঘরে কি চাল আছে? আইজকা ভাত রানতে পারবি? কেনো বাবা তোমার কাছে আর টাকা নাই? আছেরে মা আর ১৫০ টাকা আছে, তোর মার ঔষধ কিনতে আরো ১৫০ টাকা দরকার, বাসার দিকে পা বাড়ায় লিজা, ৯০ আর ৫০ মিলে একশ চল্লিশ টাকা হলো না ঘরে চাউল নাই, দুই কেজি চাল আর কিছু বাজার করে ঘরে ফিরলো লিজা, রান্না বসাতে বসাতে ১২ টা বেজে গেলো একটু পর বাবা আসবে তাকে খেতে দিতে হবে, বাবা নামাজ পরেই বাসায় আসে, এর ভিতর রান্না করতে হবে খুব তারাতারি করছে লিজা, লিজা লিজা ওয়ি লিজা লিজারে কই তুই? চিল্লাইতে চিল্লাইতে ঘরের দরজায় আইসা দাড়ায় শাওন, কি হইসে চিল্লাস কেন? তোর বাবারে মারছে হে মনে হয় বাচবো না, কি কস শাওন তুই কই দেখছস? কাকা অহন আমারো দোকানের সামনে, এক দৌরে ঘর থেকে বের হয়ে যায় লিজা, শাহাবাগের সেই টি এস সির মোড়ে পরে আছে লিয়াকত , রিক্সা সাইডে রেখে নামাজ পরতে আসে সে, নামাজ থেকে বের হয়ে যাবার পথে পুলিশ ও জনতার মাঝে একটা গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি হয়, আর মাথায় ইট লেগে রাজপথে শুয়ে আছে লিয়াকত আলি,
লিজা তোর মারে দেখিস বলেই মেয়ের হাত ধরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন লিয়াকত মিয়া, বাবাকে সে কি করবে লিজার চোখ দিয়ে কান্না পরছে, এর মাঝে কিছু পুলিশ তার বাবাকে টেনে হেচড়ে গারিটে উঠায়, লিয়াকত এর জীবন নেই তখন, একটা পুলিশ তখন বলতেই থাকে শালা শিবির মুখ ভরা দারি, নৈশ স্কুলে পড়ে লিজা, সে দেখতে পায় পুলিশের নেম প্লেট নাম গৌর দাস,
আর কিছুই মনে পরেনা লিজার লিজা জ্ঞান হারায়
(১ম পর্ব চলবে)
©somewhere in net ltd.