নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ভ্রমনকারী মানুষ। ভ্রমন করতে এবং করাতে ভালবাসি। ফেসবুকে আমিঃ https://web.facebook.com/IAbuMuhammad

আবু মুহাম্মদ

কাউকে অতিক্রম করতে চাইনা, ব্যতিক্রম হতে চাই।

আবু মুহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (দ্বিতীয় পর্বঃ ভৌগলিক অবস্থা ও ভূ-প্রকৃতি)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০০




বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারধৌত গরান বনভূমি (mangrove forest)। কর্কটক্রান্তির সামান্য দক্ষিণে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০´-২২°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´-৮৯°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী স্থানে এ বনের অবস্থান। নানা ধরনের গাছপালার চমৎকার সমারোহ ও বিন্যাস এবং বন্যপ্রাণীর অনন্য সমাবেশ এ বনভূমিকে চিহ্নিত করেছে এক অপরূপ প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে। সুন্দরবন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে পুর্বে বলেশ্বর ও পশ্চিমে হাড়িয়াভাঙ্গা নদের মধ্যবর্তী অংশে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে অবস্থিত। এর মধ্যে তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা রয়েছে।
সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও সুন্দরবন পশ্চিম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।



সুন্দরবনের দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি (ইংরেজি: Sundarbans South Wildlife Sanctuary) বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বন, যা ৩৬৯৭০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন এলাকার উপর বিস্তৃত। এটি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্কের পাশে অবস্থিত। সুন্দরবন তিন সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্যে অন্যতম।



সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (ইংরেজি: Sundarbans East Wildlife Sanctuary) বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ২০১৭ সালের ২৯ জুন এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২২৯২০.৯০ হেক্টর জমি নিয়ে এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি গঠিত।
এছাড়া খুলনা অঞ্চলে অবস্থিত আরেকটি হলো সুন্দরবন পশ্চিম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (ইংরেজি: Sundarbans West Wildlife Sanctuary)। বাঘসহ অন্যান্য প্রাণীর নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের আরও ১৮ টি কম্পার্টমেন্ট যুক্ত করে সুন্দরবনের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে অভয়ারণ্য এলাকার আয়তন নতুন করে বেড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৮৪ হেক্টর। এর আগে ১০টি কম্পার্টমেন্ট নিয়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকার আয়তন ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর। যা পুরো সুন্দরবনের ২৩ শতাংশ। নতুন ১৮ টিসহ বর্তমানে কম্পার্টমেন্ট এর মোট আয়তন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ দশমিক ৮ হেক্টর। যা পুরো সুন্দরবনের ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। যার ফলে সুন্দরবনের প্রায় অর্ধেক এলাকা অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।





রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, ৬ প্রজাতির ডলফিনসহ বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ-বংশবিস্তার ও জীববৈচিত্র্যে সংরক্ষণে নতুন করে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ৭টি, চাঁদপাই রেঞ্জের ৪টি, পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের ৪টি ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৩টি কম্পার্টমেন্টকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন এই ম্যানগ্রোভ বনের ৫, ৬, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৪৩ ও ৪৪ নম্বর এই ৮টি কম্পার্টমেন্ট এলাকাকে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ অভয়ারণ্য নাম দিয়ে বিশ্বের ৫২২তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) ঘোষণা করে। ‘বিলুপ্তপ্রায়’ তালিকায় থাকা ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন রক্ষায় ২০১২ সালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ৩টি এলাকার নদ-নদীকে ‘ডলফিন অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে। একইভাবে সুন্দরবনের মত্স্য সম্পদ রক্ষায় ১৮টি নদ-নদী ও খালে মাছসহ সব ধরনের জলজপ্রাণী আহরণও নিষিদ্ধ করা হয়। বন অধিদফতর এবার সুন্দরবনে নতুন করে আরও ১৮টি কম্পার্টমেন্টকে অভয়ারণ্য করার মধ্য দিয়ে সংরক্ষিত এই বনের ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ৩৩৪ প্রজাতির চিরসবুজ বৃক্ষরাজি, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, ৩১৫ প্রজাতির পাখি ও জলভাগে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন এবং ২১০ প্রজাতির সাদা মাছের সুরক্ষা সহজতর হবে। এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিবেশবাদীরা। নতুন করে অভয়ারণ্য ঘোষণার পর পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ১২টি কম্পার্টমেন্টের মধ্যে ৯টি অভয়ারণ্য হয়ে যাবে। অভয়ারণ্যের জল-স্থলের সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে একমাত্র ইকো-ট্যুরিস্ট ছাড়া অন্য কেউ এসব এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। এর ফলে সুন্দরবনের এসব অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ-বংশবিস্তার ও জীববৈচিত্র্যে সংরক্ষণ করা বন বিভাগের পক্ষে সহজ হবে।



ভূতত্ত্ব উৎপত্তির দিক থেকে সুন্দরবনের ভূভাগ সাম্প্রতিককালের এবং হিমালয় পর্বতের ভূমিক্ষয়জনিত জমা পলি থেকে এর সৃষ্টি। ভূগঠন প্রক্রিয়াটি সাগরের জোয়ারের কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে। এর নিম্নস্তর প্রধানত কোয়াটারনারি যুগের (Quaternary) তলানিতে গঠিত, যার সংমিশ্রণ ঘটেছে বালি, পলি, সামুদ্রিক লবণ এবং কাদামাটির সঙ্গে। ভূতত্ত্ববিদগণ এখানকার ভূগঠনবিন্যাসে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সামান্য ঢালের সন্ধান পেয়েছেন এবং সেসঙ্গে টারসিয়ারি সময়ে সংঘটিত বাংলার অববাহিকার (Bengal Basin) ঝুকানো অবস্থা শনাক্ত করেছেন। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে সংঘটিত নব্য-ভূগঠনিক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বেঙ্গল বেসিন পূর্বমুখে ঝুঁকে পড়ে। সন্ধানমূলক কূপ খনন (borehole) গবেষণা থেকে প্রতীয়মান হয় যে সুন্দরবনের পশ্চিম এলাকা অপেক্ষাকৃত সুস্থিত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব কোণার অংশ একটি সক্রিয় পলিজ এলাকা এবং ক্রমে তা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। উপমহাদেশের বৃহত্তম নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর কর্তৃক হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে আনা এই নুড়ি, বালি ও পলিমাটি জমে সমুদ্র উপকূলে জেগে উঠা চর সৃষ্টি হয়েছে। কালক্রমে সেই চরগুলো বৃদ্ধি পেয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। ক্রমে ক্রমে এই সকল ভূখণ্ডে গাছে ছেয়ে গিয়ে বনের সৃষ্টি হয়েছে। এই বনে অসংখ্য ছোটো বড় নদী জালের ছড়িয়ে রয়েছে। খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের তীরে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতার চেয়ে সুন্দরবনের ভূমি ০.৯ মিটার হতে ২.১১ মিটার উচু। বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগের অন্যান্য মৃত্তিকার তুলনায় সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমির মৃত্তিকা পৃথক ধরনের এবং এ বনভূমিতে জোয়ারভাটার কারণে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার প্রভাব সুস্পষ্ট। সমগ্র বন এলাকায় প্রতিদিন দুই বার করে জোয়ারের পানিতে এই বনের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। আবার ভাটার সময় সমুদ্রের পানি নেমে গেলে নদীর মিষ্টি পানি লবণাক্ত মাটিকে সিক্ত করে। ২৪ ঘণ্টায় দুই বারের জোয়ারভাটায় এই অঞ্চলের মাটি এবং পানি একটি বিচিত্র বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে। এরই ভিতরে গজিয়ে উঠছে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদরাজি।



মাটির লবণাক্ততা পূর্ব এলাকায় সামান্য থেকে পরিমিত, কিন্তু ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে পশ্চিম অঞ্চলে যথেষ্ট বেশি। সমগ্র বনভূমিতেই উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকের ভূভাগের লবণাক্ততার মধ্যে কোন সঙ্গতি নেই। লবণাক্ততার বিচারে এই অঞ্চলের মাটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো হলো−
লবণমুক্ত ভূমি: এই বনের উঁচু অঞ্চলে লবণমুক্ত মাটি রয়েছে। এই অঞ্চলের মাটি কখনো সমুদ্রের পানিতে কখনও প্লাবিত হয় না।
মধ্য লবণাক্ত ভূমি: এই অঞ্চলে ভূমি স্বল্প সময়ের জন্য আংশিক প্লাবিত হয়। এর সাথে প্রবল বেগে নদীর মিষ্টি পানি মিশ্রিত হওয়ার ফলে মাটির লবণাক্ততার পরিমাণ কম থাকে।

রাশমেলা উদযাপনে সুন্দরবন ভ্রমন আপনাকে দিবে নতুনত্বের স্বাদ

লবণাধিক্য ভূমি : সমুদ্র নিকটবর্তী অঞ্চলে জোয়ারের প্রাথমিক অবস্থাতেই প্লাবিত হয় এবং দীর্ঘ সময় সমুদ্রের পানির নিচে থাকে। জোয়ারের শুরতেই এই অঞ্চল প্লাবিত হয় এবং জোয়ারের শেষ দশায় তা জলমুক্ত হয়।
জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত বৈচিত্র্যময় অংশ গঠিত হয়েছে এখানে। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জগৎ নিজেই নতুন ভূমি গঠনে ভূমিকা রাখে। আবার আন্ত:স্রোতীয় উদ্ভিদ জগৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জলে অঙ্গসংস্থান প্রক্রিয়ায়। ম্যানগ্রোভ প্রাণীজগৎ-এর উপস্থিতি আন্তঃস্রোতীয় কাদা চরে ব্যষ্টিক অঙ্গসংস্থানিক পরিবেশ তৈরি করে। এটি পলিকে ধরে রাখে বীজের জন্য আনুভূমিক উপশিলাস্তর সৃষ্টির জন্য। অনন্ত বালিয়াড়ির সংগঠন ও বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় প্রচুর পরিমাণে থাকা xerophytic ও halophytic গাছ দ্বারা। লতা-পাতা, ঘাস ও হোগলা বালিয়াড়ি ও অসংগঠিত পলিস্তরের গঠনকে স্থিতিশীল করে।



এছাড়াও এই অঞ্চলে বছরে গড়ে ২০০ সে.মি. বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বনের উঁচু অঞ্চলে বৃষ্টির পানি মাটির লবণাক্ততা হ্রাস করতে সহায়তা করে। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল বাংলাদেশ বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণাধীন। এ অঞ্চলের আওতায় দু’টি বন বিভাগ রয়েছে, যা সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ ও সুন্দরবন পুর্ব বন বিভাগ নামে পরিচিত। দাকোপ,পাইকগাছা, কয়রা,শ্যামনগর উপজেলার ৩,৫৭,৩৪১ হেঃ এলাকা সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন এবং দাকোপ, মংলা, মোড়লগঞ্জ, শরনখোলা উপজেলার ২,৪৩,১৪৭ হেঃ এলাকা সুন্দরবন পুর্ব বন বিভাগের আওতাধীন। উক্ত বন বিভাগ দু’টির সদর দফতর যথাক্রমে খুলনা ও বাগেরহাটে এবং রেঞ্জ সদর নলিয়ান,বুড়িগোয়ালিনী,চাঁদপাই, শরনখোলায় অবস্থিত। দু’টি বন বিভাগের অধীনে চারটি ফরেষ্ট রেঞ্জ রয়েছে যা শরণখোলা, চাঁদপাই,খুলনা ও সাতক্ষীরা। সতেরটি ষ্টেশন এবং বাহাত্তরটি টহল ফাঁড়ি/ক্যাম্প বিদ্যমান। সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আটটি ওয়ার্কিং সার্কেল রয়েছে যা সুন্দরী ওয়ার্কিং সার্কেল, গেওয়া ওয়ার্কিং সার্কেল, জ্বালানী কাঠ ওয়ার্কিং সার্কেল, গোলপাতা ওয়ার্কিং সার্কেল, বন্য প্রাণী ও চিত্ত বিনোদন ওয়ার্কিং সার্কেল, জলজ সম্পদ ওয়ার্কিং সার্কেল, কেওড়া ওয়ার্কিং সার্কেল ও মিশ্র ওয়ার্কি সার্কেল নামে অভিহিত।



সুন্দরী ওয়ার্কিং সার্কেল
সুন্দরী গাছের আধিক্য সম্পন্ন বনাঞ্চল যথা শরনখোলা, চাঁদপাই ও খুলনা রেঞ্জ সমন্বয়ে এই সার্কেল গঠিত। আনুমানিক ব্যাপ্তি ২,৩১,১৫৯ হেঃ। উল্লেখ্য যে, সুন্দরীকাঠ আহরনে সুন্দরবনের প্রকৃত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রায় শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। প্রতিবছর জেলেদের দ্বারা সুন্দরী খুটি কর্তন, নদীর ভাঙ্গন, অবৈধ চোরা কাঠ পাচারকারীদের দ্বারা সুন্দরী কাঠ অপসারণ ইত্যাদি বিষয় গুলির দিকে নজর রেখে আহরণ মাত্রা সীমিত রাখা হয়েছে। যাতে প্রতি বছর উল্লেখিত সুন্দরী কাঠ আহরনের ফলে বনের গ্রোয়িং ষ্টক কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হতে না পারে। সুন্দরীর কাঠের সাথে মিশ্রিত কেওড়া ও অন্যান্য প্রজাতির কাঠের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।
গেওয়া ওয়ার্কিং সার্কেল
গেওয়া গাছ সমৃদ্ধ ২,৯৬,৬৯৮ হেঃ বনাঞ্চল। এই ওয়ার্কিং সার্কেল শুধুমাত্র খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে গেওয়া কাঠ সরবরাহের জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিল। সুন্দরবন হতে বছরে ১৮ লক্ষ ঘনফুট গেওয়া কাঠ আহরণ করা সম্ভব। পরিকল্পিত পন্থায় নিয়মিত গেওয়া কাঠ আহরিত না হলে বনের উৎপাদন ক্ষমতা লোপ পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্য প্রাণী অভয়ারন্যকে এই সার্কেলের কর্মকান্ড বহির্ভুত রাখা হয়েছে।

রাশমেলা উদযাপনে সুন্দরবন ভ্রমন আপনাকে দিবে নতুনত্বের স্বাদ

জ্বালানী কাঠ ওয়ার্কিং সার্কেল
এই ওয়াকিং সার্কেলটি নৃতন ভাবে সংযোজন করা হয়েছে। বন্যপ্রানী অভয়ারন্য এলাকা এবং স্বল্প ষ্টক সম্মৃদ্ধ ১১টি কম্পার্টমেন্ট বাদে সুন্দরবনের অবশিষ্টাংশ এই সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। জ্বালানী আহরণযোগ্য এলাকার পরিমান ২,০২,২০৭ হেঃ। জ্বালানী কাঠ হিসাবে গড়ান প্রজাতির অবস্থান সর্বশীর্ষে এবং সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে গড়ান কাঠের আধিক্য দেখা যায়। এলাকা ভিত্তিতে গড়ান আহরনের ব্যবস্থাপনায় বার্ষিক আহরণ মাত্রা ১০,১১০ হেঃ নির্ধারণ করা আছে। সুন্দরবণ পুর্ব বন বিভাগ হতে বছরে প্রায় ২ লক্ষ মন গড়ান জ্বালানী আহরণ করে বনের উৎপাদন ক্ষমতা সঠিক রাখা সম্ভব।
গোলপাতা ওয়ার্কিং সার্কেল
সমগ্র সুন্দরবনে বিস্তৃত গোলপাতা সমৃদ্ধ নদী ও খালের স্ট্রীপ সমন্বয়ে এ সার্কেল গঠিত। বিদ্যমান ষ্টক ও অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে বার্ষিক আহরণ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নির্ধারণ মাত্রা অনুযায়ী সুন্দরবন পুর্ব বন বিভাগ হতে গোলপাতা আহরনের লক্ষমাত্রা প্রায় ২৬,০০০ মেঃ টন। অভয়ারন্য সমুহ হতে গোলপাতা আহরনের জন্য ভিন্ন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
বন্য প্রাণী ও চিত্ত বিনোদন ওয়ার্কিং সার্কেল
সুন্দরবনের বিদ্যমান ৩টি বন্য প্রাণী অভয়ারন্য সমন্বয়ে সার্কেল গঠিত। এই সার্কেলে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত সকল প্রকান বনজ আহরণ নিষিদ্ধ আছে। অবশ্য অভয়ারন্যের বাহিরে চিত্ত বিনোদন ও বন্য প্রাণীর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সমুহ এ সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত।
জলজ সম্পদ ওয়ার্কিং সার্কেল
বন্য প্রাণী অভয়ারন্য ছাড়া সুন্দরবনের অবশিষ্ট জলাভূমির সমন্বয়ে এ সার্কেল গঠিত। মাছ, কাকড়া, ঝিনুক ইত্যাদি আহরনের বিষয়ে কিছু বিধি নিষেধ এ সার্কেলের ব্যবস্থাপনায় সংযোজন করা আছে।
কেওড়া ওয়ার্কিং সার্কেল
কেওড়া প্রজাতির অধিকতর ঘনত্ব সম্পন্ন বনাঞ্চল সমন্বয়ে এ সার্কেল গঠিত। সুন্দরী ওয়ার্কিং সার্কেলের সাথে নদী ও খালের পাড় সংলগ্ন ও নুতন চরের একক কেওড়া প্রজাতির বনে এই সার্কেলের ব্যবস্থাপনা নির্দেশনা প্রযোজ্য। এই প্রজাতির আহরণ সর্বনিম্ন ১৫.০০ সেঃমিঃ নির্ধারণ করা আছে।
মিশ্র ওয়ার্কিং সার্কেল
অভয়ারন্য ব্যতীত সমগ্র সুন্দরবনের এলাকা জুড়ে এ সার্কেলের ব্যাপ্তি। এ সার্কেলের অথীনে বনের অন্যান্য অপ্রধান বনজ দ্রব্য যেমন মধু, মোম, হেতাল, মালিহা ঘাষ, সন, বলা জ্বালানী ইত্যাদি আহরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সমগ্র সুন্দরবন হতে বছরে ১০০০ মেঃটন হেতাল, ৪৭০০ মেঃটন ঘাষ, ১৩০ টন মধু আহরনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারিত আছে। এ সার্কেলের অধীনে শুকনো মওসুমে দুবলা জেলে পল্লীতে জেলেদের অস্থায়ী ঘর নির্মানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিস্তারিত চলবে, জানতে-পড়তে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

১। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (প্রথম পর্বঃ সুন্দরবন নামকরণ ও ইতিহাস) পড়তে ক্লিক করুন।
২। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (৩য় পর্ব: জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রানী)

ভিজিট সুন্দরবন- সুন্দরবনের স্বর্গ রাজ্যে আপনাদের স্বাগতম

লেখকঃ আবু মুহাম্মাদ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৪

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: রামপালের ওখানকার সাম্প্রতিক কোনো ছবি আছে?

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৮

আবু মুহাম্মদ বলেছেন: না বর্তমানে নেই, তবে কিছুদিন পর দিতে পারবো আশা করি।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৬

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভাল লাগ্লো পোস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.