নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:০৭


০০০০০০
Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা


(৩৯)

হঠাৎ ছুটে আসা অন্ধকারে হতাশ হওয়ার মত মনে হলো,আর দিন দুই পরে সব শিল্পীরা কত যন্ত্রনার সম্মুখীন হবে,ছবি আঁকার কলম দিয়ে হয়তো উপড়ে দেয়া হবে তাদের চোখ।যে বইটা দেখছিলাম সেখানে পারস্যের এক জ্ঞানী মানুষের গল্প,হিন্দুস্তানের রাষ্ট্রদূতের উপহার দেয়া দাবার ছবি দেখেই খুব সহজে দাবা খেলায় হিন্দুস্তানী ওস্তাদকে হারালো পারস্যের জ্ঞানী ওস্তাদ,তবে ওটা আর কিছু না পারস্যের ঐতিহাসিকদের বানানো গল্প।পাতা উল্টানোর সময় নিষ্ঠুরের মত ছবি আঁকার কলম চাকু দিয়ে কেন জানি শাহদের চোখ অন্ধ করে দিচ্ছিলাম,
অত্যাচারী যুদ্ধ মাতাল ঐ মানুষগুলোর জন্যেই পৃথিবীর যত যন্ত্রণা,দু তিনটা পাতার পর চাকুটা আবার পকেটে রেখে দিলাম।

আমার হাত কাঁপছিল তবে খুব একটা বেশী না,বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল না মানুষের পাগলামি,
পঞ্চাশ বছরের ছবি আঁকার জীবনে খুব একটা কম দেখিনি,হয়তো আরও খুশী হতাম,এমন যদি হতো অন্ধ শিল্পীদের চোখের রক্ত হঠাৎ বই এর পাতায় ছড়িয়ে যেত।

৩)আমি তখন আনন্দ আর হতাশা মেলানো নতুন এক রাজ্যে।এই অবিশ্বাস্য ঐতিহাসিক বইটা শাহ তামাসপের আদেশে পারস্যের সব খ্যাতনামা শিল্পীদের ছবি দিয়ে শেষ হয়,তবে কোথাও ছিল না কিবংদন্তীর শিল্পী ওস্তাদ বিহজাদের আঁকা ছবি।আমার মনে আর কোন সন্দেহ ছিল না,ওস্তাদ বিহজাদ শেষ জীবনে হেরাত থেকে যখন তাব্রিজে চলে যায়-দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে তখন।বুঝতে পারলাম কিংবদন্তীর ওস্তাদ বিহজাদ সারাটা জীবন আবেগে আর আল্লাহর দেয়া অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে ছবি আঁকার পর,শাহের আদেশ মত ছবি আঁকা এড়ানোর জন্যেই নিজেকে অন্ধ করে দেয়।

সিয়াহ আর খাজাঞ্চী বামন বিরাট আরেকটা নতুন বই নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

‘এটা তো ঠিক সেই বইটা না’,আমি বললাম, ‘এটা মোঙ্গল রাজাদের গল্প কাহিনী।
এই ছবিগুলো আলেকজান্দারের বিশ্বজয়ী ঘোড়াদের যুদ্ধ প্রস্ততির,যুদ্ধের মাঠে নামার পর যেন আগুন বের হতো ঘোড়ার নাক দিয়ে’।
আর ছিল চীনা ছবির নকল করা অপরাজেয় ঘোড়ার ছবি।
‘জেজমি আগা’,আমি বললাম, ‘আমাদের ছবিটা ছিল সুলতান সেলিমের ধারাবাহিক ইতিহাসে, শাহ তামাসপের রাষ্ট্রদূত নানান উপঢৌকনের সাথে ঐ বইটাও ছিল উপহারের মধ্যেদ,তা প্রায় পচিশ বছর…’।
বামুন জেজমী আগা তাড়াহুড়া করে আরেকটা বই আনলো,সুলতানের উপহারের বইটা,বইটায় শাহ তামাসপের সুলতান সেলিমের রং এর ছটায় সাজানো ছবিটার উপহারের পাতার পাশে ছিল আরেকটা পাতা যার কথা আমার মনেই ছিল না,নীলকান্ত মনি আর মুক্তার হাতলের সোনালী সূচ দিয়ে হেরাতের প্রতিভাবান নামকরা ওস্তাদ বিহজাদ নিজেকে অন্ধ করে দিচ্ছে।
খাজাঞ্চী বামনকে জিজ্ঞাসা করলাম,সুলতান সেলিমের ধারাবাহিক ইতিহাসের বইটা কোথায় ছিল,ও আমাকে খাজাঞ্চীখানার অন্ধকারে দুটা লোহার সিন্ধুকের মাঝে স্তূপ করে রাখা কাপড়চোপড়,গালিচা,সিড়ির নীচের জায়গাটা দেখালো।
আমাদের ছায়ায় হাতীর দাত,বাঘের চানড়ার উপরে অদ্ভুত একটা ছবি তৈরী হয়ে ছিল,
পাশের ঘরে ছিল ‘শাহনামার’ আরও কয়েকটা অংশ,সোনা রুপার জরি দিয়ে কাজকরা কাপড়চোপড়,নীলা পাথরের হাতলের চাকু,শ্রীলংকার খনির পাথর কাঁটা হয়নি তখনও,শাহ তামাসপের দেয়া অন্যান্য উপহার ইস্পাহানের সিল্কের গালিচা,হাতীর দাঁতের দাবা,একটা জিনিষ আমার চোখে আটকে ছিল-মুক্তোয় কাজ করা,গাছের ডালপালা,ড্রাগনের ছবিসহ কলমের বাক্স।সুন্দর গোলাপ জলের সুবাস ছিল বাক্সটাতে,পাগড়ী বাঁধার মুক্তা,আর নীলার হাতল দিয়ে তৈরী সূচ,কাজকরা সূচটা নিয়ে আমি ভূতের মত একপাশে সরে গেলাম।

ওস্তাদ বিহজাদের চোখ অন্ধ করার সূচ আর ছবি হাতে আমি দাঁড়িয়েছিলাম একপাশে,দুটো সূচ এক না,তবে হাতের সূচটায় ওস্তাদের হাতের ছোঁয়ার কথা ভেবে শিহরিত হচ্ছিলাম মুহুর্তে মুহুর্তে।কেন শাহ তামাসপ,সুলতান সেলিমকে তার অন্যান্য উপহারের সাথে এ ধরমের একটা জঘন্য জিনিষ পাঠালো?এটাই কারণ হয়তো,যে শাহ কৈশোর,যৌবনে শাহ তামাসপ নিজেই শুধু ওস্তাদ বিহজাদের শিষ্য ছিল না,বরং একজন ভক্ত ছিল সাহিত্য,সংষ্কৃতির,সেই লোকটাই পরিনত বয়সে সবকিছু ভুলে হয়ে হয়ে গেল ধর্মান্ধ নতুন এক চরিত্র!হয়তো সে কারণেই বইটা শাহ তামাসপ সুলতান সেলিমকে উপহার দেয়,আর সূচটা পাঠানোর কারণ হয়তো ওস্তাদ বিহজাদকে নিয়ে যে নানান কানাঘুষা ছিল,সেটার সত্যিটা জানান দেয়া,বলে দেয়া যে সময়ে ওস্তাদ সূচ দিয়ে নিজেকে অন্ধ করে দেয়।যে কারণেই হোক বইটা শাহের কাছে তখন আর অত মূল্যবান ছিল না,হয়তো তখন তার মন ভঁরা ছিল অনুশোচনায় ছোট বেলার সময়টা ধর্মের কাজকর্ম না করে কাফেরদের মত ছবি আঁকায় ব্যাস্ত থাকার জন্যে।

শিল্পীদের কাছে অনেক কানাঘুষা শোনা যেত,কুখ্যাত জিহান শাহ সৈন্য নিয়ে সিরাজ জয়ের দৃশ্য,খ্যাতনামা শিল্পী ইবনে হাসান ছবিটা না আঁকার জন্যে শিষ্যের হাতে গরম লোহা দিয়ে নিজেকে অন্ধ করে ফেলে।সুলতান সেলিম,শাহ ইসমাইলকে যুদ্ধে হারানো্র পরে,ইস্তাম্বুলে যে ওস্তাদ শিল্পীকে সাথে আনে,সেই ওস্তাদ শিল্পী ঔষুধ দিয়ে নিজেকে অন্ধ করে দেয়,কেন না তার বিশ্বাস ছিল,ওটোমান সাম্রাজ্যের পদ্ধতিতে ছবি আঁকা তার পক্ষে সম্ভব না।উদহারণ হিসাবে আগে আমি বললাম,কি ভাবে ওস্তাদ বিহজাদ নিজেকে অন্ধ করে দেয়।

এ ছাড়া কি আর অন্য কোন উপায় কি ছিল না,ঐ নামকরা ওস্তাদদের?কোন শিল্পী যদি ছবি আঁকায় নতুন পদ্ধতি ব্যাবহার করে,তাতে কি পুরোনো ওস্তাদদের ঐত্যিহবাহী ছবি
আঁকার পদ্ধতির খুব একটা ব্যাঘাত হবে?মুক্তার হাতলের সূচটার মাথায় একটা কাল দাগ ছিল,তবে সেটা রক্ত না অন্য কিছু আমার বুড়ো চোখে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।আতস কাঁচ দিয়ে কিছুক্ষ্ণন পরখ করলাম সূচটা,আমার হাতে ছিল হতাশার একটা ইতিহাস,মনটাও ভঁরা বিষাদে।ও ভাবে মানুষ নাকি সাথে সাথে অন্ধ হয় না,একটা কাল পর্দা ধীরে ধীরে নেমে আসে চোখে দিনে দিনে,অনেক সময় কয়েক মাসও চলে যায়।

পাশের ঘরে ঢুকে দেখলাম,হাতা বাঁকানো বেশী ভারী ফ্রেমের হাতীর দাঁতের কাজ করা একটা আয়না,লম্বায় আর চেহারায় বইটার গল্পের আয়নার মত,অবাক হয়ে দেখছিলাম সবকিছু,
মোমবাতির আলোটা আমার চোখে খেলা করছে তখন।

‘কি ভাবে ওস্তাদ বিহজাদ নিজেকে অন্ধ করলো’?ভাবছিলাম বারে বারে,ওস্তাদ কি আয়না দেখে,মেয়েদের কাজল দেয়ার মত আমার হাতের মুক্তা দিয়ে কাজ করা এই সূচটা দিয়ে নিজেকে অন্ধ করে?সাহস করে উটপাখীর ডিম ছিদ্র করার মত হাতের সূচ দিয়ে ছিদ্র করলাম আমার ডান চোখ,ভঁয় হচ্ছিল না একটুও,তবে কেমন জানি একটা বমি বমি ভাব ছিল,হয়তো কোন একটা শারীরিক অনুভুতি নাকি আয়নাতে সব কিছু দেখার একটা প্রতিক্রিয়া।

এমনও হতে পারে বইটা লেখার সময় হয়তো কবির দেখানোর ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর সৌন্দর্য আয়নার চোখে,হাসতে হাসতে আমি সূচ নিয়ে আরেকটা চোখে একই খেলা করলাম।অবাক হয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য নতুন ভাবে দেখছিলাম,তবে যা ভাবছিলাম তা হয়নি,ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে যাইনি পৃথিবীটা,বরং একটা রং আরেকটা রং এর সাথে মিলে মিশে নতুন এক একটা ছবি ছুটে আসছিল আমার চোখে।



আমি সিয়াহ

প্রধান খাজাঞ্চী আর পাহারাদারের সুবাদার খাজাঞ্চীখানার দরজা খুলে দিল,আমার চোখ-পর্দার লাল রং আর সুলতানের হারেমের চেহারা দেখে ভঁয়ে আর উত্তেজনায় হতবাক আমি।
গতকাল রাতে ওস্তাদ ওসমানের অবাক হয়ে দেখছিল,’শাহনামা’,আর পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে,তার মাথা ঝুকে যাচ্ছিল আতস কাঁচের সাথে ছবির পাতায়,ঠোট ভঁরা ছিল অবাক হওয়া অদ্ভুত একটা চীৎকার।

খাজাঞ্চীখানার দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর,হতাশায় ভঁরে ছিল মন,সব বই আর ছবিগুলো আর পরখ করার সূযোগ হয়নি আমাদের।মনে হচ্ছিল ওস্তাদ ওসমান ইচ্ছা করেই ঠিক ভাবে ছবিগুলো পরখ করেনি,সেটা অবশ্য বলার সাহস হয়নি আমার,ওস্তাদকে বললাম,আমার অক্ষমতার জন্যেই হয়তো সব বইগুলো দেখা সম্ভব হলো না।একজন ওস্তাদের মত,ওস্তাদ ওসমান আমার হাতদুটো হাতে ধরে সান্তনা দিচ্ছিল, ‘আমাদের ক্ষমতা আর কতটুকূ?আল্লাহর দৃষ্টি আছে পৃথিবী,মানুষের উপরে,আল্লাহর উপরে আস্থা রেখে আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে,আস্থা রাখতে হবে তার বিচারে।যে ছবিটা আমরা খুঁজছি,সেটা যদি কোন বই বাঁ অন্য কোথাও থাকে কোন রহস্যজনক জায়গায়,আল্লাহর বিচারের হাত ঠিকই নিয়ে যাবে আমাদেরকে সেখানে।এই সূচটা দেখছো,এটা দিয়ে ওস্তাদ বিহজাদ নিজের চোখদুটো অন্ধ করে…’।


নিষ্ঠুরের মত ওস্তাদ ওসমান আমাকে গল্পটা বললো,অনিচ্ছাকৃত ভাবে সূচটার গোলাপী আঠার মত কিছু একটা আমি আতস কাঁচের নীচে পরীক্ষা করে দেখলাম।
‘পুরোনো দিনে ওস্তাদেরা ছবির রং আর সৌর্ন্দযের জন্যে কত কিছুই না করতো এমন কি নিজেদের উপরে যন্ত্রণা করতেও দ্বিধা করেনি ওস্তাদরা,তাদের কাছে অসহ্য,অপমানজনক ছিল একজন শাহ,বা একজন সুলতানের ছবির বিশেষত্ব না বুঝে সমজদারের মত বিশ্লেষন করে খেলা করা’।

কথা বলার সময় ওস্তাদ ওসমানের চোখ আমার দিকে ছিল না,ছিল না ছবিতে,বরং তার চোখ ছিল যেন দূরের অজানা অচেনা কোন সাদা পাহাড়ে।ওস্তাদের সামনে খোলা ছিল,
‘শাহনামার’,পাতাটা যেখানে পারস্য আর তুরানের সৈন্যরা সাহস আর শক্তি নিয়ে জীবন মরণ যুদ্ধে ব্যাস্ত,একটা ঘোড়ার ঘাড় আঁটকে ছিল আরেকটা ঘোড়ার ঘাড়ে,যোদ্ধারা তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ জয়ে ব্যাস্ত,চোখে জয়ের আনন্দ আর চারপাশে ছিল লাল রং এর বন্যা।কারও বর্ম বল্লমের আঘাতে ছিদ্র হয়ে গেছে,কারও মাথা কাটা,কারও হাত কাটা,তলোয়ারের আঘাতে সৈন্যদের শরীরের টুকরা,ছড়ানো ছিটানো সারা মাঠ জুড়ে।

‘পুরোনো যুগে ওস্তাদেরা,বিবেকের সাথে যুদ্ধ করতো ছবির রং বা আঁকার নিয়ম বদলালে,
তাদের কাছে অসম্মানজনক মনে হতো একটা ছবি কোন এক শাহের কথামত তুলে ধরতে,পাশ্চাত্যের কোন শাসকের দেখায় আঁকতে-তবে আমাদের সময়ে শিল্পীদের সেটাই করতে হতো’।
ওস্তাদ ওসমানের চোখটা না আমার দিকে তাকিয়েছিল না বইটার দিকে,মনে হচ্ছিল তার চোখটা ছুটে গেছে দূরে কোথাও কোন ধবধবে সাদা আকাশে।‘শাহনামার’,খোলা পাতাটায় দেখা যাচ্ছিল,পারসী আর তুরানী সৈন্যরা তাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে যুদ্ধ করছে।
ঘোড়ারা যুদ্ধ করছিল কাঁধে কাঁধে আর সৈন্যরা তলোয়ার বের করে একে অন্যকে খুন করে রং ভঁরা আনন্দ উল্লাসে মত্ত হয়ে ছিল,কারও কারও বর্ম ছিদ্র হয়ে গেছে বল্লম দিয়ে।কারও হাত কাটা,কাটা মাথা পড়ে আছে কারও একপাশে,শরীর দু ভাগ হয়ে ছড়ানো সারা মাঠ জুড়ে।
‘বিজয়ী সুলতানেরা যখন পুরোনো ওস্তাদেরকে বাধ্য করতো নতুন কায়দায় বা তার শিল্পীদের পদ্ধতিতে ছবি আঁকতে,অনেক ওস্তাদই সম্মান রক্ষা করার জন্যে সূচ দিয়ে নিজের চোখ অন্ধ করে দিত,যদিও সময়ে অবশ্য সব শিল্পীই তো অন্ধ হয়ে যায়।হ্যা,আল্লাহর কৃপার চোখ হারানোর আগে,তারা শ্রেষ্ঠ ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতো ঘন্টার পর ঘন্টা,অনেক সময় দিনের পর দিন,বোঝার চেষ্টা করতো অর্ন্তনিহিত লুকানো কথা,একটু একটু করে রক্ত পড়তো চোখ দিয়ে,তারপর একসময় সবকিছু বদলে ছুটে আসতো ধবধবে সাদা একটা পৃথিবী।তুমি কি জান অন্ধ হওয়ার আগে আমি কোন ছবিটা দেখতে চাই প্রাণভরে’?

ওস্তাদ তখন আর সেই বুড়ো,অভিজ্ঞ ওস্তাদ ছিল না,কৈশোরের একটা মুখ যে অস্থির হয়ে তার মনের স্বপ্ন খুঁজছে,আর সাদা রংটা ধীরে ধীরে ছড়াচ্ছে তার চোখ জুড়ে।
‘হেরাতের পুরোনো ওস্তাদদের কায়দায় আঁকা,ছবিটা হুসরেভ শিরিনের প্রেমে উন্মাদ হয়ে ঘোড়ায় ছুটে গেছে শিরিনের প্রাসাদের জানালার নীচে’।

মনে হচ্ছিল ওস্তাদ ওসমান ছবির বর্ননার জন্যে দুঃখের একটা কবিতা শোনাবে,পুরোনো ওস্তাদদের জন্যে তার মনভরা দুঃখের গল্পকথা।
‘ওস্তাদ আমার চাওয়াটা তেমন কিছু না’,তাকে থামিয়ে বললাম,‘আমি চাই যেন আমার শেষ দিন পর্যন্ত দেখতে পারি আমার প্রিয়ার মুখটা,জানেন তিনটা দিন তার সাথে দেখা হয়নি আমার।বারটা বছর তার কথা ভেবে গেছি প্রতিদিন,যদিও দেখা হয়নি।যে ছবিতে হুসরেভের ছবি দেখে শিরিন তার প্রেমে পড়ে,ছবিটা দেখে আমার শুধু মনে পড়ছে সেকুরের মুখ’।

ওস্তাদ ওসমানের চোখ মুখ যেন আবেগের স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল,হয়তো বা,আমার কথায় কৌতুহল,হয়তো বা সামনে খোলা পাতার যুদ্ধের দৃশ্য দেখতে দেখতে ওস্তাদ যেন অপেক্ষা করে ছিল একটা খবরের জন্যে যা শুনে তার মন আনন্দে ভেসে যাবে।নিশ্চিত হলাম দেখে ওস্তাদ আমাকে দেখছে না,এক ফাঁকে পড়ে থাকা সূচটা হাতে তুলে নিলাম।খাজাঞ্চীখানার অন্ধকার কোনায়,প্রাসাদের গোসলখানার লাগানো একপাশের দেয়ালে বিদেশীদের দেয়া অদ্ভুত সব ঘড়ি পড়ে ছিল,অকেজো ঘড়ি সব পড়ে ছিল একপাশে।একটু আলোতে সূচটা দেখছিলাম, ওস্তাদ ওসমানের মতে ঐ সূচ দিয়েই হেরাতের ওস্তাদ বিহজাদ নিজের চোখ অন্ধ করে দেয়।

দিনের লাল আলোর ছটা ঘড়িগুলোর গায়ে খেলা করছিল,হীরা,কাঁচ,ধুলায় ভঁরা পুরোনো ঘড়িগুলোর গায়ে,দেখলাম সুচের সোনালী মাথাটায় ছিল গোলাপী রং এর কিছু একটা।সত্যিই কি কিংবদন্তীর ওস্তাদ বিহজাদ এই সুচ দিয়েই তার চোখ অন্ধ করে?ওস্তাদ ওসমানও কি নিজে ঐ জঘন্য কাজটা করলো?ঘড়ির শয়তান চেহারার মরোক্কান যেন আমাকে উত্তর দিল, ‘হ্যা’।
ঘড়িটা যখন কাজ করতো,তখন পাগড়ী পরা লোকটা ঘন্টার সাথে সাথে মাথা দোলাতো,
হাস্পবার্ঘের রাজার উপহার,সুলতানের হারেমের আনন্দের জন্যে।

খাজাঞ্চী বামনএকপাশে রাখা বইগুলো দেখে বললো,সম্ভবত বইগুলো এক পাশাকে হত্যা করার পর ইস্তাম্বুলে আনা হয়,অনেক পাশার জীবন গেছে এ ভাবে,বইগুলোতে কোন নম্বরও দেয়া ছিল না।বামুনটা বললো,পাশারা অনেক সময় নিজেদের ক্ষমতা ভুলে গিয়ে শিল্পী,
কালিগ্রাফারদের বই বানানোর আদেশ দিত,ভুলে যেত তারা সুলতানের কর্মচারী,তাদের বই তৈরী করার ঔদ্ধত্যে মাথা কেটে ফেলাটা একেবারেই যুক্তিযুক্ত।কয়েকটা বই ছিল শুধু ছবির,
কয়েকটা বই এ ছিল লেখার সাথে ছবি,একটা শিরিন হুসরেভের প্রেমের ছবি,ছবিটা দেখে আমি থমকে গেলাম।

ঐ ছবির মধ্যে ছিল আরেকটা ছবি,বাগানে হুসরেভের ছবি দেখে শিরিনের মুগ্ধ হওয়ার দৃশ্য,কোন সময় খুব একটা বড় করে আঁকা হয়নি,দক্ষ শিল্পীরা গম,চালের মধ্যেও ছবি এঁকে গেছে,কেন তারা প্রেমের এই দৃশ্যটাকে অবজ্ঞা করে গেল?বিকেলের দিকে হতাশা এড়ানোর জন্যে তাড়াহুড়ায় বই এর পাতা একের পর এক উল্টাচ্ছিলাম,কাপড়ে আঁকা বিয়ের অনুষ্ঠানের একটা ঘোড়াকে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

চোখের সামনে ছিল একটা ঘোড়া,অদ্ভুত নাক,বসে আছে একটা ঢঙ্গী কনের মত,ঘোড়াটা যেন ছবি থেকে বের হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল,ফিসফিস করে আমার কানে কিছু একটা বলছিল।স্বপ্নের ঘোরে,চীৎকার করছিলাম তবে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না গলা দিয়ে।একটু সামলে ছবিটা নিয়ে গেলাম ওস্তাদ ওসমানের কাছে,ওস্তাদ ওসমান ছবিটা দেখে,
খুব একটা উৎসাহ দেখালো না,দেখে বেশ অবাকই হলাম।

‘ঘোড়ার নাকটা একেবারেই এনিষ্টের ছবির ঘোড়ার মত’,আমি চীৎকার করে বললাম।
ওস্তাদ তার আতস কাঁচটা খুব কাছে নিয়ে থেকে ছবিটা পরখ করছিল,এমন ভাবে যেন তার নাকটা ছবিটা ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

অসহ্য এক পরিস্থিতি সাথে নিস্তব্ধতায় ভঁরা, ‘দেখাই যাচ্ছে এই ঘোড়াটা এনিষ্টের বই এর নিয়মে আঁকা না,তবে নাকটা নিঃসন্দেহে একই ভাবে আঁকা।শিল্পীর আঁকার ধরণটা চীনাদের মত’,কিছুক্ষন চুপ করে আবার বললাম,‘বিয়ের শোভাযাত্রাটা,চীনা ছবির কায়দায় আঁকা,তবে এখানে মানুষেরা চীনা না,ওরা আমাদের লোক’।
ওস্তাদের আতস কাঁচ তখনও আঁটকে ছিল ছবিতে,সাথে ওস্তাদের চোখ,ঘাড়,মাথা,বুড়ো শরীরের সর্ম্পূন অংশটা ঝুকে গেছে ছবিটাতে।
‘ঘোড়ার নাকটা কেটে ভাগ করা’,কিছুক্ষন পর নিশ্বাস হারানো ওস্তাদ বললো।আমার শরীর ছিল ওস্তাদের শরীরের একেবারেই কাছাকাছি,আর আমরা দুজনে ছবিটা আরও ভাল করে দেখছিলাম।
অবাক হলাম শুধু ঘোড়ার নাকটা কাটা না,আরও অনেক কিছু আছে যা অন্যান্য যে কোন ঘোড়া থেকে একেবারেই আলাদা,ওস্তাদ ওসমানের ছবিটা দেখতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল।
‘ওস্তাদ আপনি ছবিটা দেখলেন না,নাকি ছবিটা দেখতে পাননি’?
‘ছবিটার হাল্কা একটু বিবরণ দাও আমার কাছে’।
‘ছবিতে হাসিখুশী একটা কনে,ধুসর রং এর ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে বিয়ে করতে,সঙ্গী,
পাহারাদার যারা ছিল সবাই তার অচেনা,নতুন মানুষদের মধ্যে অস্থির একটা মুখ।
পাহারাদারদের রুক্ষ চেহারা,লম্বা লম্বা দাড়ি,বিশাল শরীর,তামার মত চামড়া,হাল্কা পাতলা কাপড় গায়ে,পুরু কালো ভুরু,মোচ মুখে,অবিশ্বাস্য এক চেহারা।পায়ের পাতলা জুতা,ভাল্লুকের পশমের টুপি,যুদ্ধের কুড়াল দেখে বোঝা যাচ্ছিল ওরা ট্রানক্সানিয়ার তুর্কী জাতির লোকজন।
সুন্দরী কনের সহচারিনী,তেলের বাতি,মুখের ক্লান্তির ভাব দেখে মনে হচ্ছিল অনেক দূর থেকে আসা তাদের।হতে পারে কনে চীন দেশের এক রাজকুমারী’।
‘এমনও হতে পারে কনের অভাবনীয় সৌন্দর্য দেখানোর জন্যে মুখটা সাদা,চোখ দুটো একটু টানা টানা করে আঁকা,সে কারণেই হয়তো তাকে চীনা বলে মনে হচ্ছে’,ওস্তাদ ওসমান বললো।
‘কনে যে দেশেরই হোক না কেন,তার জন্যে আমার দুঃখ হচ্ছে,নিজের লোকজন ছেড়ে,
কিম্ভুতিকার চেহারার পাহারদারদের সাথে যাচ্ছে নতুন স্বামীর কাছে যাকে দেখেওনি একবার’,আমি বললাম, ‘তবে জানি না ঘোড়ার নাক দেখে,কি ভাবে বের করবো শিল্পীর নাম’।
‘পাতাটা উল্টাও,আর বল,কি দেখতে পাচ্ছ,’ওস্তাদ ওসমান জিজ্ঞাসা করলো।
ঠিক সে সময়,পেশাবের পাত্র থেকে উঠে খাজাঞ্চী বামনও,ঘরে ঢুকে আমাদের সাথে ছবিটা দেখছিল,সুন্দরী কনে যার হাসিখুশী মুখ শিল্পীর তুলিতে আঁকা,বাগানে অদ্ভুত ধরণের একটা বাঁশী বাজাচ্ছিল।সুন্দর করে সাজানো চীনের বাড়ীঘর,বোকা চেহারার কাফেলার লোকজন,
স্মৃতির মত ছড়ানো লম্বা লম্বা গাছ,বসন্তের ফুল চারপাশে,গাছের ডালে ঘুমে ঢুলু ঢুলু রাতের পাখী।শাহজাদারা তাবুতে বসে খোরাসানী কায়দায়,মদ আর ভালবাসার কবিতা নিয়ে ব্যাস্ত,
অভাবনীয় সুন্দর ফুলের বাগান,একপাশে সুন্দর ঘোড়ায় বাজপাখী হাতে সুন্দর চেহারার আমলা,মন্ত্রীর দল।কোথা থেকে শয়তান ছুটে আসলো,শনি,অশুভ,অমঙ্গলের উপ্সথিতি নিয়ে সেই পাতায়।
শিল্পী কি বিদ্রুপ করার জন্যে শয়তানকে দেখাচ্ছে,যেখানে শাহজাদা লম্বা বল্লম দিয়ে ড্রাগনকে মারছে?মনে হচ্ছিল গরীব চাষীদের দারিদ্রতা কি একটু বেশী করে দেখানো,যারা শেখের সাহায্যের জন্যে অপেক্ষা করে আছে?শিল্পী হয়তো অদ্ভুত এক আনন্দে মত হয়ে ছিল,চোখ বের হওয়া ক্ষুর্ধাত কুকুরকে আঁকার সময়,গরীব চাষীদের দুঃখ দেখে মহিলার টকটকে লাল হাসির ঠোট আঁকার সময়?শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় এক সময় তারাই হয়ে গেছে শয়তানের জীবন্ত চেহারা।ঐ অদ্ভুত জন্তরা দেখতে অনেকটা জিন,দৈত্যের মত,‘শাহনামা’তে হেরাতের ওস্তাদ বিহজাদের আঁকা ছবি যেন।তবে ব্যাঙ্গ করে শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় তারা হয়ে গেছে আরও দানবিক,অশুভ যদিও দেখতে মানুষের মত।

আমরা হাসছিলাম,বেটে কিম্ভুতকার চেহারা,লম্বা লেজ,বাকানো শিং কয়েকজন মানুষের ছবি দেখে।পাতা উল্টানোর পর আবার দেখলাম শয়তানের চেহারা,জঙ্গলের মত ভুরু,
লম্বা লম্বা নখ,বুড়োদের মত কুচকানো চামড়া,একে অন্যের সাথে মারামারিতে ব্যাস্ত হয়ে আছে,একটা ঘোড়া চুরি করছিল তাদের দেবতাকে উৎসর্গের জন্যে।লাফঝাঁপ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল এপাশে ওপাশে,গাছ কেটে,সুন্দরী রাজকুমারীর আত্মা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছিল পাল্কী থেকে,ড্রাগনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে,খাজাঞ্চীখানা লুটপাট করছে।বর্ননা করলাম ওস্তাদকে নানান ধরণের তুলি আর কলম দিয়ে আঁকা ছেড়া কাপড়ে শয়তানের ছবির,শেকল গায়ে মাথা নাড়া করা দরবেশের ছবির কথাও বললাম ওস্তাদ ওসমানকে।

‘ঘোড়ার নাক কেটে ছবি আঁকা,একটা পুরানো মঙ্গোলীয় ঐতিহ্য’,ওস্তাদ ওসমান বললো, ‘হালাকু খানের সৈন্যরা আরব,পারস্য আর চীন দেশ জয় করে দ্রুতগামী ঘোড়ার সাহায্যে, বাগদাদে জয় করার প্র তার সৈন্যরা,তলোয়ার দিয়ে কচুকাটা অধিবাসীদের,লুঠপাঠ করে,লাইব্রেরীর বইপত্র সব ফেলে দেয় টাইগ্রিস নদীতে।আমরা জানি খ্যাতনামা কালিগ্রাফার,
ইবনে সাকির,পরে শিল্পী হিসেবে যার খ্যাতিও খুব একটা কম ছিল না,ঐ সময় শহর ছেড়ে পালায় দক্ষিন দিকের রাস্তা দিয়ে আর উত্তর দিকে তখন চলছে হালাকু খানের খুন খারাপী।
কোরানের নির্দেশ অনুসারে ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল,তাই কোন শিল্পির তুলিতে আর আঁকা হয়নি কিছুই।আমরা শিল্পীরা ইবনে সাকিরের কাছে অনেক ঋনী,যাকে বলা যায় শিল্পীদের মহাগুরু,আজকের ছবির মিনার,তুলোর মত প্যাঁচানো আকাশের মেঘ,অনেকটা যে ভাবে চীনাদের চোখে ধরা পড়ে,সেটা আমাদের জন্যে ইবনে সাকিরের তুলির অবদান।এটাও শোনা যায় ওস্তাদ ইবনে সাকির শহর থেকে যাওয়ার মঙ্গোলীয় ঘোড়ার নাক পরখ করে দেখছিল।তবে যতদূর জানা যায় ঝড়বৃষ্টি,বরফ দিয়ে বছরখানেক পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর সমরখন্দে,তার আঁকা ছবির কোন ঘোড়ার নাক কাটা ছিল না।তার কাছে ভাল ঘোড়া বলতে যা বোঝা যায় সেটা মঙ্গোলিয়ান দ্রুতগামী ঘোড়া না,বরং ফেলে আসা জীবনের আরবের ঘোড়া।আমার কাছে তাই এনিষ্টের ছবির ঘোড়াকে মনে হয় না মঙ্গোলিয়ান ঘোড়া,যারা ছড়ানো সমরখন্দ থেকে খোরাসান পর্যন্ত’।

কথা বলতে বলতে ওস্তাদ বইটা আর আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল যেন তার মনের চোখে সব ছবিই ছুটে আসছে তখন।
‘নাককাটা ঘোড়া,আর চীনা প্রভাব ছাড়া মঙ্গোলদের সাথে আরে পারস্যে,ইস্তাম্বুলে আসে-এই শয়তানের চেহারা।জান,ছবির ঐ শয়তানেরা হলো ইবলিশের শিষ্য,ওরা বসে আছে মানুষের আত্মা নেওয়ার আর অপকর্মের জন্যে তারা কোন নোংরামী করতে দ্বিধা করে না।এই যে মেঘ,কুকুর,বই সবাই কথা বলতে পারে আর সকলের একটা আত্মা আছে’।
‘একেবারেই সত্যি কথা’, খাজাঞ্চী বামন বললো, ‘আল্লাহ আমার সাক্ষী,অনেক রাতে যখন এখানে শুয়ে থাকি,ঘড়ি,চীনা থালা বাসন,কাচের ঘণ্টার আত্মার সাথে,এ ঘরের তলোয়ার,
বল্লম,রক্তাক্ত হেলমেটদের আত্মা এমন অস্থির হয়ে ছোটাছুটি করে যেন মনে হয় কেয়ামতের দিন আর দূরে নাই’।
‘ঐ সুফী দরবেশদের কাছ থেকে এই বিশ্বাস খোরাসান,পারস্য হয়ে ইস্তাম্বুলে’,ওস্তাদ ওসমান বললো, ‘দুর্দান্ত সুলতান সেলিম,শাহ ইসমাইলকে যুদ্ধে হারানোর পর বেদ্দিজমান মির্জা,শাহ ইসমাইলের প্রাসাদ লুটপাট করে তছনছ করে দেয়,তৈমুর লং এর বংশধর,আর কিছু সুফী দরবেশ শাহ ইসমাইলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ঐ যুদ্ধে অটোমানদের সাথে যোগ দেয়। বিজয়ী সুলতান সেলিম যখন ইস্তাম্বুলে ফিরে গেল,তার সাথে ছিল শাহ ইসমাইলের দুই বৌ,জয়ের পুরস্কার হিসাবে।পীতাম্বর চামড়ার রং,টানাটানা চোখ অপূর্ব সুন্দরী দুজন,সাথে সাত স্বর্গের প্রাসাদ থেকে লুটপাট করা বই,যা তাব্রিজ,মঙ্গোল,ইঙ্কানিদ,জেলারিদের উপঢৌকন,
আরও আছে শাহের উজবেক,পারস্য,তৈমুর গোত্রের সাথে যুদ্ধে লুট করে আনা বইগুলোও।
আমি ঐ বইটা দেখতে চাই যেটা সুলতান আর প্রধান খাজাঞ্চী এখান থেকে নিয়ে গেছে’।

ওস্তাদের চোখ তখন দিকহারা অন্ধদের মত,তবু অভ্যাসবশত ওস্তাদ ওসমান আতস কাঁচ নিয়ে ছবিগুলো পরখ করার চেষ্টা করছিল।সবাই চুপ হয়ে ছিল,ওস্তাদ ওসমান বামন খাজাঞ্চীকে অনুরোধ করলো বইটা খুঁজে আনার জন্যে।বামন খাজাঞ্চী চলে যাওয়ার পর আমি ওস্তাদকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে এনিষ্টের বই এর ঘোড়ার ছবিটা কে আঁকলো’?
‘দু জায়গায় ঘোড়াগুলোর নাক কাটা’,ওস্তাদ ওসমান বললো, ‘যায় আসে না ছবিটা কি সমরখন্দের নাকি দূর সমুদ্রের অন্য কোন দেশের,তুমি যে বইটাতে ঘোড়ার ছবি বের করলে সেটা চীনা কায়দায় আঁকা।আর এনিষ্টের বই এর ছবিটা আঁকা পারসী নিয়মে,অনেকটা হেরাতের যাদুকর শিল্পীর হাতের ছোঁয়া যেন।এটা নিঃসন্দেহে একটা চমৎকার ঘোড়ার ছবি,তবে ওটা মঙ্গোলীয় ঘোড়া না’।
আমি ফিসফিস করে বললাম, ‘তবে এটা ঠিক যে ঐ ঘোড়ার নাকটা কাটা মঙ্গোলীয় ঘোড়ার মত’।

০০০০০০

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০২

রাজীব নুর বলেছেন: এই ধারাবাহিক অনুবাদ শেষ হলে, আপনি নিজের নতুন লেখা দিবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.