নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৮

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা
(৪৬)

ছবি আঁকা শেখার সময় স্কুলে ওস্তাদেরা যখন চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতো,আমরা ফাঁকি দিয়ে গল্প গুজবে ব্যাস্ত হয়ে যেতাম।একটা চোখ বই এর দিকে আর একদিকে গল্প গুজব চলছে,ঠিক এখন যে ভাবে লেইলেক আমার ছবির খাতা হাতে কথা বলছে।জানি না আমার অনুভুতির বিশেষ কোন বর্ননা কোথাও আছে কি না,অনেকদিন কোরান শরীফ পড়া হয়নি।অজানা এক ভঁয় এসে আক্রমণ করলো আমাকে,মনে এলো জালালুদ্দীন রুমীর,‘গরুর কথা কবিতার’শেষের পংক্তিগুলো?যদি পার সবাই ঐ ছবিটা তুলে ধরার চেষ্টা করঃআল্লাহ দোহাই তোমার আমাদেরকে ভুলে যেও না,আর শুধু গুনাহ দেখে বিচার করো না আমাদেরকে,আল্লাহ শুধু আমাদের উপরে বিচারের লাঠিটা ভারী করে দিও না।ক্ষমা করো আমাদের,আমাদের পাপ,ভুলগুলো!তোমার কৃপার উপর নির্ভর করে আছি আমরা’,
কান্নায় আমার গলা ভেঙ্গে গেছে তখন।
কান্নায় কিছুটা বিচলিত হয়ে গেছি,ভাবলাম ওটা হয়তো ক্ষনকিছুর আবেগের জোয়ার,কিন্ত তা না আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম কিছুক্ষন পরে।আমার কান্নায়,বেশ অস্থির হয়ে গেছে তখন সঙ্গী শিল্পীরাও।আমাদের আলাপ আলোচনায় বোঝা গেল পুরোনো দিনের ছবি আঁকার ধরণ বদলে গেছে,ইউরোপীয়ান ছবি আঁকার পদ্ধতির জোয়ার ছুটে আসছে সুলতানের শিল্পে।বোঝা গেল যদি এরজুরুমীদের হাতে আমরা শেষ না হই,শেষ হব আমরা সুলতানের পাহারাদারদের অত্যাচারে।আকাশের কান্নায় কান্না তখন আমাদের চোখে,অত্যাচারের কথা ভেবে না।অন্যান্য সঙ্গীদের মনের কথা আমার জানা নেই,ওরাও কি আমার মতই ভাবছিল?লজ্জা হচ্ছিল নিজের কান্না দেখে,ঐ কান্না কি খুঁজছিল সত্যি,নাকি লুকানোর চেষ্টা করছিল সত্যিকে?কেলেবেক কাছে এসে আমার কাঁধে হাতে বুলিয়ে,চুলে চুমু দিয়ে সান্তনা দিচ্ছিল।আমার কান্না থেমে যায়নি,বরং বেড়ে গেছে তখন আরও, কেলেবেকের মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না,তবে মনে হলো কেলেবেকও কাঁদছে।

ছবি আঁকার স্কুলের ওস্তাদের সাথে আমাদের প্রথম বছর,মা বাবা মার কাছ থেকে দূরের অজানা নতুন একটা সময়।ভুল করলে প্রথম দিকে ওস্তাদের বেতের মার,আবার ঠিকমত ওস্তাদের কথায় ছবি আঁকতে পারলে খাজাঞ্চীর কাছ থেকে প্রথম পুরস্কার পেয়ে আনন্দে দৌড়াদৌড়ি,কান্না হাসির একগাদা মধুর স্মৃতি।শুধু আমি আর কেলেবেক পুরোনো কথাগুলো রোম্নথন করছিলাম,এক সময় সিয়াহও যোগ দিল আলোচনায়,সিয়াহ আমাদের সাথে স্কুলে থাকলেও অল্প কিছুদিন পরেই চলে যায়।সিয়াহ আর কেলেবেকের সাথে হাসি ঠাট্টা,আলাপ আলোচনায় জড়িয়ে,ভুলেই গেলাম যে একটু আগেই হাউমাউ করে কাঁদছিলাম।

শীত সকালের দিনগুলোয় সকালে ঘর করার জন্যে আগুন দিয়ে গরম পানি দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করতে হতো আমাদের,মনে পড়লো পুরোনো ওস্তাদের কথা(আল্লাহ তাকে যেন জান্নাতবাসী করে),তার সব কাজেই কেমন জানি একটা আলসেমী ভাব ছিল,একটা গাছের পাতা আঁকতেই তার কেটে যেত সারাটা দিন।ওস্তাদ যখন দেখতো তার আঁকা সবুজ পাতার দিকে খেয়াল না করে আমরা দেখছি বাইরের গাছটা,মারধর না করে ওস্তাদ চীৎকার করে বলতো, ‘ঐ দিকে না দেখে,দেখ এদিকে’।ওস্তাদের চীৎকার ছুটে যেত সারা স্কুল জুড়ে, অন্যান্য ছাত্ররাও এমন কি স্থাপত্যের ছাত্ররাও বাটালি হাতে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কান্ড দেখতো।
যদিও ওটা আমাদের দোষে না,তবু আমরা মজা করে দেখতাম ছবির খাবারের অভাব উপেক্ষা করে ওটোমান সৈন্যদের নদীর ধারের যুদ্ধের যুদ্ধে ছুটে যাওয়া,লাল কালির দোয়াত থেকে কালি চুইয়ে চুইয়ে পড়ার খেলা,মাস তিনেক ধরে শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবিটাতে।
মনে পড়লো ৭২ বচরের বুড়ো পাশার বৌদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী সার্কাসিয়ান যুবতীর সাথে আমাদের কাল্পনিকে প্রেম পর্ব।যুদ্ধ জয়ের পরে পরে বিভিন্ন দেশ পাশা থেকে আনতো সুন্দরীদের ঘর সাজানোর অলঙ্কার হিসাবে।শীতের সকালে আমাদের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মসুরের ডালের সুপ খাওয়া,ধোঁয়ায় যাতে ছবি আঁকার কাগজগুলো নষ্ট না হয়।ছবি আঁকার জন্যে যখন স্কুলের বাইরে গেলে,আমাদের কান্নাকাটিতে অস্থির হওয়া,আজও ভুলিনি সেই দৃশ্যগুলো।ভেসে আসলো ষোল বছরের মিষ্টি চেহারার লেবেক,বার্নিশ কাগজ দিয়ে একটা ঝিনুক ঝকঝকে করার জন্যে ঘষাঘষি করছে,জানালার ফাঁকের সূর্যের আলোয় তার সেই খালি গায়ের চেহারা কি ভোলার মত।মুখ নীচু করে বার্নিশ কাগজটা পরখ করে,আবার ঘষাঘষিতে ব্যাস্ত হয়ে গেছে,লেবেক।
বাইরের ছুটে যাওয়া আকাশে তার ভরাট চোখটা,আমরা ভুলে যাব না কখনও তার সেই চাহনি,যা বলে দেয় সময়ের স্বপ্ন,স্বপ্ন আছে তাই আছে বেঁচে থাকা।



আমি জানি সবাই বলবে আমি খুনী


তোমরা সবাই হয়তো আমার কথা ভুলেই গেছ,তাই না?ভুললেই বা কি যায় আসে,আমার আসল চেহারাটা তোমাদের কাছ থেকে আর কেন লুকাবো?এই নকল স্বরে কথা বলতে বলতে আমার মনোবল বেড়ে গেছে অনেক,অবশ্য মাঝে মাঝে ভঁয় হয় হঠাৎ আমার আসল স্বরটা যদি বের হয়ে আসে,সবাই চিনে ফেলবে।মাঝে মাঝে আবেগে ভঁয়ে কেউ চিনে ফেলবে ভেবে আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে যায়,হাত কাঁপতে থাকে,ঘাম জমতে থাকে কপালে,এই বুঝি কেউ চিনে ফেললো,আমাকে।

অবশ্য এখন পর্যন্ত ভঁয়ের কোন কারণ ঘটে নি!গত পচিশ বছরের ছবি আঁকার স্মৃতি রোম্নথন করছিলাম,আলাপ করিনি আমাদের ঝগড়াঝাটির কথা,শুধু ছবি আঁকা দিনগুলোর আনন্দের কথা।পৃথিবীর সুন্দর দিনগুলো হয়তো শেষ হয়ে আসছে,চোখের হারেমের সুন্দরীদের সাথে সাথে আমরা হয়তো শেষ হয়ে যাব সময়ের চাকায়।
এই গল্পের উদ্ধৃতিটা কিরমানের আবু সাঈদের,তৈমুর লং এ উত্তরাধিকার গল্পে,সিরাজের ওস্তাদদের গল্পেও ছিল।বছর তিরিশ আগের,জিহান শাহ,কারা কোয়ুনের পাশার পূর্ব দিকের রাজত্বের আসার গল্প।জিহান শাহ সৈন্যদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটিতে ব্যাস্ত,তিমুরিদ খান আর অন্যান্য পাশাদের সবকিছু দখল করে বিজয়ীর মত এগিয়ে যাচ্ছিল এক রাজ্য ছেড়ে আরেক রাজ্যে,তুর্কী সৈন্যবাহিনী পারস্যের সব ছোটখাট রাজত্ব দখল করে চলে গেছে পুর্বদিকের শেষ সেই আগ্রাবাদে,সেখানে ইব্রাহিম,শাহরুখ খানের পৌত্র,তৈমুর লং এর ছেলেও রাজত্ব হারালো জিহান শাহের সৈন্যদের হাতে।জিহান শাহ র্গোগান দখল করে সৈন্যদের পাঠালো হেরাতে।কিরমানের ঐতিহাসিকদের মতে,জিহান শাহের এই অভিযান শুধু তৈমুর লং এর ছড়ানো রাজত্ব সুদূর হিন্দুস্থান থেকে বাইজেন্টাইনের অধিবাসীদের না,বরং হেরাতের দুর্গের নারী পুরুষদের ও একটা ভঁয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করে।ঐতিহাসিক কিরমান অদ্ভুত এক হিংস্র আনন্দে জিহান শাহের বিজয়ের কথা আমাদের কাছে তুলে ধরে,কি ভাবে জিহান শাহ নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে তৈমুর লং এর উত্তরাধিকারদের।কি ভাবে জিহান শাহ হারেম থেকে সুন্দরীদের নিয়ে গেল নিজের হারেমে,কি ভাবে ওস্তাদ শিল্পীদের তার শিল্পীদের শিষ্য হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করে।এই পর্বে কিরমানের ঐতিহাসিক বর্ননায় ছিল কি ভাবে বিজিত শিল্পীরা কাগজ,কলম,তুলি নিয়ে অপেক্ষা করে ছিল পরিনীতীর জন্যে।এক এক করে শিল্পীদের নামের সাথে তাদের কাজের বর্ননা দিয়ে কিরমানের বলা ছিল,যতই যাই হোক ইতিহাস তাদেরকে কোনদিন ভুলবে না,কিন্ত অবাক হওয়ার কথা ঐ শিল্পীদের এখন আর কারও মনে নাই।
হারেমের সুন্দরীদের মত আমরাও ভাবতাম ছবি আঁকার পুরস্কার হিসাবে সুলতানের মোহরের কথা,বাক্সের রং এর জন্যে কটা মোহর পাওয়া যাবে,উটপাখীর ডিমে রং এ সাজানোর জন্যে কটা,এক পাতার ছবি,ছবির বই,আনুষ্ঠানিক ভাবে সুলতানকে দেয়া বই এর জন্যে,হিসেব ঘোরাঘুরি করতো মনের খাতায়।কোথায় সেই পুরোনো দিনের পরিশ্রমী শিল্পীরা যারা অল্পতেই সন্তষ্ট হয়ে যেত?তারা লুকানোর চেষ্টা করেনি তাদের ছবি আঁকার বিশেষ কায়দাগুলো,কোনদিন নিজেদের আড়াল করে রাখেনি ঘরে,ভয় করেনি তাদের কাজকর্মের ধারা যাবে অন্য কারও তুলিতে,প্রতিদিন ছবি আঁকার দপ্তরে আর আবেগে মনের ছবি এঁকে গেছে ছবির পাতায়।কোথায় সেই পুরোনো শিল্পীরা যাদের জীবন কেটে গেছে ছবি আঁকায়,কেল্লার ছবি,সবুজ পাতার পাইন গাছ,নিপুন দক্ষতায় ছবির ফাঁকগুলো সবুজ জঙ্গলে ভঁরা ঐ শিল্পীদের দক্ষতায়?কোথায় সেই ওস্তাদ শিল্পীরা যারা ঈর্ষা করেনি একে অন্যকে,শিল্পীর প্রতিভা সেটাতো আল্লাহর দেয়া,তারা অহংকারে উন্মাদ হয়নি,অযথার প্রতিবাদ ছিল না তাদের?মনে পড়ে আমার বাবার মত শিল্পীরা,তখন বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেচ্ছে তবুও হাসি ছিল মুখে,কেউ কেউ মাতাল হয়ে স্বপ্নে আত্মহারা হতো মাঝে মাঝে,কুমারী মেয়েটার কথা ভেবে অনেকে চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকতো,কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ছবি আঁকার দপ্তরের ছবিটা ভেসে আসছিল চোখে।

মনে পড়ে ঐ পটুয়ার কথা সে বাম দিকে লাইন টানলে জিভটা বের করে রাখতো বামদিকে আর ডানদিকে লাইন টানলে জিভ থাকতো ডানদিকে,আর সেই লম্বা পাতলা শিল্পী,নামটা মনে আসছে না,ছবি আঁকতে আঁকতে অযথাই হাসতো,আর কথা বলতো আপন মনে।আর সেই সত্তর বছরের বুড়ো ওস্তাদ,যার কাজ ছিল ছবির বিশেষ অংশ সোনার পাতায় সাজানো,বই বাঁধাই এর লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করতো লাল কালি কপালে মাখলে নিঃসন্দেহে বয়স বোঝা যায় না?বই এর পাতা অলঙ্কার করার ওস্তাদ রং এর বিশেষত্ব দেখার জন্যে রাস্তার লোকজনকে ডেকে তাদের নখে রংটা কি ভাবে ব্যাবহার করতো,আর এক শিল্পী সোনার গুড়া খরগোসের লোম দিয়ে দাড়িতে দিয়ে চেষ্টা করতো তাকে সুলতানের মত দেখা যায় কি না?কোথায় গেল তারা সবাই?
কোথায় সেই বার্নিশ কাগজ ঘষার কাঠ যা একসময় হয়ে যেত নতুন শিল্পীদের শরীরের অংশ,আর কাগজ কাটার কাঁচিগুলো যেগুলো দিয়ে আমরা ‘তলোয়ার’,খেলতাম?কোথায় ওস্তাদদের লেখার বোর্ড,যেখানে তাদের নাম লেখা থাকতো আলাদা করে?কোথায় সেই চীনা কালির গন্ধ,কফির ধোঁয়ার স্বাদ?কোথায় সেই বিড়ালের বাচ্চার লোমের তুলি,আর ইন্ডিয়া থেকে নক্সা আঁকার জন্যে আসা ছবি আঁকার কাগজ?সেই বিদঘুটে চেহারার চাকুটা যা ব্যাবহার করার জন্যে প্রধান ওস্তাদের সম্মতি দরকার ছিল সবসময়,আজো কি আছে সেই শাস্তি ভুল করলে?
এ কথা আমরা সবাই বলতাম,সুলতানের শিল্পীদের বাড়ীতে ছবি আঁকার অনুমতির নিয়মটা একেবারেই ভুল।সারা রাত ধরে ছবি আঁকায় ব্যাস্ত থাকার পর মহলের রান্নাঘরের চমৎকার হালুয়ার স্বাদ?মনে পড়ে বুড়ো ওস্তাদের কথা,থরথর কাঁপা হাতে মেয়ের তৈরী করা রসের গোল্লা খেতে খেতে তদারকী করতো আমাদের!গর্বের সাথে আমরা নিজেদের আঁকা ছবির পাতাগুলোর নাম দিতাম,পুরোনো ওস্তাদদের মত আমরাও ছবিগুলো বের করে দেখতাম বারে বারে।ওস্তাদেরা বলতো সুলতানের মহলের উপরের আকাশ সোনার গুড়া দিয়ে সাজানো সেটা কেয়ামতের আকাশ,তবে সেটা সোনার গুড়ার সৌন্দর্য দিয়ে সাজানোর কারণে না,বরং মহলের উঁচু তলার ঘরগুলো,পাইন গাছের রং এর সাথে পার্থক্যের জন্যে।
ওস্তাদেরা বলতো আমাদের পয়গম্বরের উচ্ছাসের ছবির কথা,যখন ফেরেশতরা তাকে আল আকসা মসজিদের মিনার থেকে সশরীরে নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহর দরবারে।এমনই একটা দৃশ্য যার গভীরতা ছুঁয়ে যাবে যে কোন শিশুকেও,যে কোন মানুষকে টেনে নিয়ে যাবে বিশ্বাসের রাজ্যে।বললাম কি ভাবে আগের উজিরে আযমের হাতে পাহাড়ে নিহত বিদ্রোহীদের মাথা সাজানোর আমার প্রস্তাবটার কথা,শুধু নিহত সৈন্যের মাথা হিসাবে না বরং সাজানো তাদের বিশেষত্ব দিয়ে।মৃত্যুর আগে তাদের ভুরুর চেহারা,গলায় রক্তের দাগ,ঠোটে জীবন পরকালের প্রশ্ন সাজানো,চোখ বন্ধ করার,নাক দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস নেয়ার চেহারা,ঠিক ও ভাবে আমি ঐ
তুলির ছোঁয়ায় ছবিটাতে নতুন একটা রুপ তুলে দেই।

আমাদের স্মৃতির পাতায় লুকোনো ঘটনার মত আমরা আলাপ করতাম ভালবাসা,যুদ্ধের দৃশ্যগুলো,সূক্ষতার সাথে আলোচনা করতাম,বিশেষ দৃশ্যগুলো যেখানে ছিল কান্নার পাশে,
বাগানে আড়ালে প্রেমিক প্রেমিকার মিলনের ছবিটা।চোখের সামনে ভেসে বেড়াতো তারায় সাজানো স্বপ্নিল আকাশ,বসন্তের সবুজ চেহারা,পাখীর ডাক,বরফে ঢাকা…
রক্তাক্ত শরীরে ভঁয় চোখের ঐ সৈন্য যেন আমরাই,রক্তে ভঁরা আমাদের বর্ম,সুপুরুষ মানুষেরা একে অন্যকে চাকু দিয়ে মারছে,ছোট্ট মুখের,হরিণ চোখের যুবতীরা দালানের জানালা দিয়ে দুঃখের সাথে দেখছে যুদ্ধের দৃশ্যগুলো।দাম্ভিক,সুন্দর চেহারার কিশোরের দল,সুপুরুষ খান,
পাশা,কোথায় তারা,কোথায় তাদের মহল,সব হারানো ইতিহাসের অজানায়।ঐ শাহ,পাশার হারেমের মেয়েদের কান্নার মত,আমরাও এখন জীবনের স্বপ্ন হারিয়ে ছুটে যাচ্ছি স্মৃতির আকাশে,কিন্ত আমরা কি ইতিহাস হয়ে থাকবো আমাদের ওস্তাদদের মত?
একটা হতাশা ছুটে আসতো মাঝে মাঝে আমাদের মনে,আলোচনা করতাম আমরা,মৃত্যুর চেহারা দিয়ে যদি একটা ছবি আঁকা হয়,সেটা কেমন হবে?প্রথম যে দৃশ্যটা ভেসে আসছিল সেটা ফেরদৌসীর শাহনামার শয়তানের প্ররোচনায় জাহহাকের তার বাবাকে খুন করার দৃশ্যটা।কিংবদন্তীর সেই গল্প আছে,‘শাহনামা’র প্রথমে,আল্লাহর হাতে এই নতুন পৃথিবীর সৃষ্টির কথা,সব কিছুই এত সাধারণ এর চেয়ে আর বেশী কিছু বর্ননার দরকার ছিল না।যদি দুধের দরকার হয় শুধু ছুটে যেতে হবে ছাগলের কাছে,তারপর আর কিছু না দুধ ছেঁকে খাওয়া,
কোথাও যেতে হলে বলতে হতো, ‘ঘোড়া’,আর ঘোড়ায় চড়ে যেতে পারবে গন্তব্যস্থানে,
খারাপ কিছু,পাপের কথা ভাবলে,স্বয়ং,‘শয়তান’,এসে দাঁড়াবে তোমার সামনে,বোঝাবে তোমাকে, ‘খুন’,করার আনন্দটা।
জাহহাকের তার আরবী বাবা মেরডাসকে খুন করার সৌন্দর্যটা ছিল অপূর্ব,কেননা কেউ তাকে প্ররোচিত করেনি,আর ঘটনাটা ঘটে মহলের বাগানে রাতের বেলায়,আকাশের তারার বাতিতে ঝকঝকে পৃথিবীতে।
আমরা আলাপ করতাম নামকরা বীর রুস্তমের কথা,না জেনে বিরোধী দলের সেনাপতি সোহরাবের সাথে তিন চারদিন ধরে যুদ্ধ করে যাচ্ছে,তার সন্তান সোহরাবকে খুন করার দৃশ্যটা।কার মন নাড়া দেয়নি,রুস্তনের বুক চাপড়ানোর দৃশ্য দেখে,যখন তার চোখে পড়লো সোহরাবের হাতে তার বৌকে ক বছর আগে উপহার দেয়া বাহুবন্ধন,নিজের ছেলেকে তলোয়ার দিয়ে খুন করার অভাবনীয় সেই দৃশ্য,আকাএ নাড়া দেয় নি।
কি সেই দৃশ্যটা?
বৃষ্টি তখনও জোরেসোরে পড়ছে ছাদে,আমি ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারী করছি,
হঠাৎ আমি বললাম,‘যা দেখছি মনে হয়,আমাদের বাবা ওস্তাদ ওসমান আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না হয়,আমরাই বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে খুন করবো’।
যা বললাম নিষ্ঠুর হলেও কথাটা সত্যি,আর নিস্তব্ধ হয়ে গেছে তখন সবাই।আমি পায়চারী করছি তবুও,অদ্ভুত একটা ভঁয় আমার মনে,নিজেকে বললাম,‘গুমোট আবহাওয়াটা বদলানোর জন্যে আফ্রিসিয়াবের হাতে সিয়াভুসের খুনের গল্পটা বল।তবে ওটা তো একটা বিশ্বাসঘাতকতা যা আমাকে ভঁয়ে অতিষ্ঠ করে দেয়।ওটা না বলে হুসরেভের কথা বল।তবে ফেরদৌসীর লেখা, ‘শাহনামা’র গল্পটা বলবে না হয় নিজামীর হুসরেভ আর শিরিনের কাহিনীটা।
‘শাহনামা’য় দুঃখের দৃশ্যটা ফুটে ওঠে,যখন হুসরেভের চোখের জল বলে দেয় শোবার ঘরের আততায়ীর চেহারা!তার শেষ আশা ঐ টুকুই যখন হুসরেভ তার শেষ নামাজ পড়ার জন্যে প্রস্তত হচ্ছিল।হুসরেভ যখন কাজের ছেলেকে সাহায্যের ভান করে ওজুর পানি,জায়নামাজ আর অন্যান্য জিনিষপত্র আনতে পাঠালো,ছেলেটা ইঙ্গিত না বুঝে সত্যি সত্যি ফিরে আসলো জিনিষগুলো নিয়ে।ঘরে ঢোকার পর খুনীর প্রথম দায়িত্ব ছিল দরজা বন্ধ করা,ঐ দৃশ্যে‘
শাহনামা’র শেষের দিকে ফেরদৌসীর খুনীর বর্ননা্য় ছিল ভুড়িওয়ালা,লম্বা চুলের,দূর্গন্ধ ভঁরা শরীরের একটা লোক।

000000


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৪

কথামৃত বলেছেন: চতুর এ কি এইটা পড়েছিলাম মনে হচ্ছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.