নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্পই জীবন ৷ জীবনই গল্প ৷

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী)

তোমার প্রাণের পরে ঠাই দিও একটুখানি, আমি প্রাণ ভরে শ্বাষ নিতে চাই তোমার মাঝেই ৷ তুমি মানেই আমি আমি মানেই তুমি ৷

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কৃষ্ণলতা"

১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

আজো বিয়েটা হয়তো ভেঙ্গে যাবে সুমনার ৷
হ্যাঁ তাই হলো ভেঙ্গে গেলো এবারো ৷ এই নিয়ে ১২ টা বিয়ে হতে গিয়েও হলোনা মেয়েটার ৷
সুমনার গায়ের রংটাই যেন তার জন্মগত অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে তার ও তার পরিবারের ৷
বাবা- মা তো হতাশ হয়ে বলেই বসেছেন রিক্সাওয়ালা হলেও এবার বিয়ে দেব তাও যদি মেয়েটাকে পার করা যায় ৷
আমাদের সমাজে শিক্ষিত বাবা- মাও আজকাল মেয়ে বিদায়কে বোঝা বিদায় হিসেবেই দেখেন ৷
সুমনার গাযের রং টা কালো বেশ ভালোই কালো ৷ বাবা মার ছোট মেয়ে সে বড় দুবোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ সুমনা ২২ পেরিয়ে ২৩ এ পা দিবে কিন্তু এর মধ্যে সব বিয়ে গুলোই ভেঙ্গেছে তার কাৱো রংয়ের জন্য ৷
একজন তাও বিয়ে করতে চেয়েছিলো তবে পণ দিতে হবে ১৫ লক্ষ টাকা সাথে গয়নাগাটি ঘর সাজানো তো আছেই ৷
একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটা বামন আর চাঁদের সম্পর্কের মতই অসম্ভব ৷
সুমনা মোটামুটি ভালো ছাত্রী ৷ সে বরাবরই শান্ত ভদ্র ৷ কখনো সাজগোজের ধারেকাছেও থাকেনা সে ৷ কিন্তু এবার বুঝি কৃত্তিম উপায়ের প্রসাধনী দিয়েই রং পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে সুমনার ৷ তার বড় বোন বলেছেও অনেকবার এগুলো ইউজ কর ফর্সা হয়ে যাবি ৷
কিন্তু সুমনা নিজের চোখে দেখেছে তার বান্ধবী রুপা কে স্কিন ক্যান্সারে জীবন দিতে ৷ যার কারণ ছিলো এই রংফর্সাকারী ক্রীম ৷
তাই হাজার কথাও সুমনা এসব এড়িয়ে চলে ৷ কিন্তু এবার যে কোন উপায় নেই বাবা মা ও বিরক্ত ৷
সুমনা তার নানীর কাছে শপনেছিল সে জন্মের পরেই নাকী মানুষজন বলাবলি করছিলো " এই মেয়েরে বেচবা কেমনে?? এত কালা"
সুমনার মনে হয় সিরিয়াসলি? একটা নবজাজকের জন্মের চেয়ে তার রংটাই বেশী আকর্ষনীয় নাকি??
আর বেচবো মানে মেয়ে কি হাটবাজারের পণ্য যে বেচে দিবে??
কিন্তু এখন সে হারে হারে টের পাচ্ছে ৷ এগুলো অমানবিকতা হলেও এগুলোই সত্যি কথা ৷ গায়ের রংয়ের প্রচুর দাম ৷ বাসার সবাই তো ভেবেই নিয়েছে ভালো ঘর তো বাদ যে কোন ছেলে হলেই হবে শুধু সুমনাকে পার করা চাই ৷
এভাবে ২৭ নম্বর সম্বোন্ধটাও যেদিন ভেঙ্গে গেলো সেদিন মা যা ইচ্ছে তাই বলে বকছিল সুমনাকে আর দোষ দিচ্ছিলো " কি পাপ করে তোরে জন্ম দিছিলাম?" আমার কোন পাপে তুই আমার ঘরে আসলি কে জানে!!!!
সুমনার কলিজাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে ৷ তার কি দোষ? সে কি ইচ্ছে করে এরকম হয়েছে?? তবুও কেন তাকেই সব ব্লেইম নিতে হবে?? শান্ত মেয়েটা হঠাৎ চটে গিয়ে এই প্রথম মায়ের মুখের ওপর কথা বলল
" আমি কি বলেছিলাম আমাকে জন্ম দাও?? দিয়েছো তোমরা আর কথা আমার শুনতে হবে??"
শাস্তি স্বরুপ তাকে বের হয়ে যেতে বলা হলো ৷ সুমনাও রাগ করে নাসরিন আপার বাসায় চলে গেলো ৷ নাসরিন সুমনার চাচাতো বোন ৷
--- আপা আমার কি অপরাধ তুমিই বলো?
--- না রে! তোর কষ্টটা বুঝেছি আমি ৷ আচ্ছা তোর ভাইয়া আসুক আলাপ করে দেখি ৷
সুমনা জানে কোথাও আলাপ করে কিছু হবেনা ৷ তার এই অভিশাপ মুছবেনা কখনোই ৷ তবুও নাসরিন আপার ভাষ্যমতে রাসেল ভাই নাকি অনেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ৷ যে কোন ব্যাপারে তিনি বুদ্ধি দিয়ে দিতে পারেন ৷
পরদিন রাসেল, নাসরিন দু জনে সুমনা কে নিয়ে সুমনার বাড়িতে গেলো ৷
---চাচী সমস্যাটা জটিল ৷ সুমনাকে নিয়ে আপনাদের চিন্তা হয় বুঝি কিন্তু আপনারা ওকে কেন সব দোষ দিচ্ছেন? আপনারা শিক্ষিত মানুষ এসব আশা করা যায় না ৷
--- বাবা রাসেল, দেখো সবই বুঝি কিন্তু কি করবো বলো? এ মেয়েকে একটু রুপচর্চা করে যে ঠিক হবার চেষ্টা করবে তাও করেনা ৷ কেমন লাগে বলো?
--- আচ্ছা আমি একটা কথা ভেবেছি কাল ৷ ধরেন নিকট কোন আত্নীয় কিন্তু সুমনাকে চেনেনা এমন কোন বিবাহ যোগ্য ছেলে থাকলে খোজ নিন ৷
--- কেনো বাবা??
--- দেখুন পরিচিত হলে একটু পামপট্টি দিলেই তারা আস্থা রাখবে আর সুমনাকে আমরা দেখাবোনা সরাসরি ৷ ছবিতে দেখাবো ৷ আজকাল ভাল এডিট করলে সবাইকে নায়িকা বানানো যায় ৷ আমরা ছবি দেখিয়ে সেভাবে বুঝাবো যেম তারা আস্থা রাখে ৷ একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছু বলারও থাকবেনা ৷ তখনকারটা তখন দেখা যাবে ৷
সুমনার পরিবার এতই অস্থির ছিলো যে রাসেল যা বললো তাতেই তারা রাজী হয়ে গেলো ৷ মেয়েকে বের করতে পারলেই যেন তারা বাঁচে ৷ তো একটু বাঁকা রাস্তায় গেলে ক্ষতি কি?? একটু কিছু লুকিয়ে যদি ভাল কিছু হয় ক্ষতি কি তাতে??
যা কথা সেরকম কাজে লেগে পরলো তারা ৷ খোজ পেল সুমনার বাবার এক কাজিনের ছেলে ডাক্তার ৷ ওর বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছে ৷ প্রস্তাব নিয়ে গেলেন সুমনার বাবা নিজেই ৷
--- আরো শফিক তুই এতদিন পর?? কেমন আছিস? বোস বোস ৷
--- রশিদ কেমন আছিস? এইতো ভাবলাম খোজ ই নেয়া হয় না তাই চলে আসলাম ৷
অনেক কথা বার্তা হলো তাদের ৷ কথায় কথায় শফিক সাহেব তার মেয়ে সুমনার প্রশংসা করছিল বার বার ৷ অনেক লক্ষি কাজ করে সব ইত্যাদি ৷
রশিদ সাহেব মনে মনে খুশি হলেন ৷ সে ছেলে বিয়ে করাবে আর সংসারী মেয়েই খুজছিলো তারা ৷ যদি তা হয় নিজের লোকেদের মধ্যে মন্দ কি??
দুজনের মনে মনে এক কথার প্রকাশ মোটামুটি হয়েই গেলো ৷ রশিদ সাহেব সুমনাকে দেখতে বাসায় যেতে চাইলে শফিক সাহেব বললেন ও তো নওগা ওর খালার বাসায় আছে তিনি খুব অসুস্থ তাই ৷ কিন্তু ছবি দেখাতে পারবেন ৷
ডিজিটাল গ্রাফিক্সে করা ছবিগুলো দেখে পছন্দ না হয়ে কোন উপায় নেই ৷ রশিদ সাহেবের মেয়ে পছন্দ হলো খুব ৷ সেদিনের মত শফিক সাহেব উঠলেন ৷
ধীরে ধীরে কথা এগুতে এগুতে গিয়ে বিয়ে ঠিক হয়েই গেল কিন্তু খালা অসুস্থ এই কথার ভিত্তিতে সবাই সুমনার ছবিতেই তাকে দেখে সন্তুষ্ট ৷ আর নিজের লোকেদের মাঝে তো সন্দেহ কেউ ই করেনি ৷ এদিকে সুমনাকে সেলিমের নম্বর দেয় রাসেল ভাই ৷
সেলিমের সাথে টুকটাক কথা হতো ফোনে সেলিমের ৷ সেলিমের ভালই লাগতে কথা বলতে ৷ সুমনার কন্ঠটা সাবলীল ছিল অনেক ৷ সুমনা যদিও ব্যাপারটা পছন্দ করতো না কারণ সেলিমের পরিবারকে তো ঠকানো হচ্ছে ৷ কিন্তু বাবা মায়ের কথা ভেবে তাদের শেখানো মোতাবেকই কথা বলতো সেলিমের সাথে ৷
এক এক করে বিয়োর দিন এগুচ্ছিলো ৷
--- সুমনা বিয়ের আগে আমরা কোথাও বসে কথা বলতে পারি যদি তুমি চাও ৷
--- আসলে দেখুন আমি বাইরে যাই না সেভাবে ৷ আর বাসায়ও পছন্দ করেনা ৷ আর তো কিছুদিন তখন তো সব ঠিক ৷ এখন না দেখা করি ৷
--- আচ্ছা তুমি যা ভাল করবে ওটাই ওকে নো প্রবলেম ৷
বিয়ের দিন এলো ৷ ভালো পার্লার থেকে লোক এনে সুমনাকে মেকআপে ঢেকে দেওয়া হলো হাত পা সহ ৷ সুমনাকে চেনাই যাচ্ছেনা ৷ অসাধারণ সুন্দর লাগছে তাকে ৷ সুন্দরের আরেক কারণ সুমনীর চেহারা খুব মিষ্টি ছিলো ৷ কিন্তু গায়ের রংয়ের কারণে সেটা তো কেউ তোয়াক্কাই করতো না ৷ সুন্দর চেহারায় মেকঅাপ পরে ওর লুকটাই চেন্জ হয়ে গেছে ৷
কিন্তু সময় বাড়ছে সুমনার ভয় বাড়ছে এখন তো পার পেয়ে যাবে কিন্তু বিয়ের পর ৷ মেকআপ ধুলেই তো সব শেষ ৷
শশুড় বাড়ীর সবাই সুমনার প্রশংসা করছে ৷ মেয়েটাকে আসলেই সুন্দর লাগছে ৷
হয়ে গেলো সুমনা আর সেলিমের বিয়ে ৷
কিন্তু কি হবে বিয়ের পর???
বিদায় হলো সুমনার ৷ গাড়ীতে যেতে যেতে সুমনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে ৷ ভয় বেড়েই চলেছে ৷ কি হবে ৷ কেউ তো সুমনার সত্যিকারের চেহারা জানেনা যা জানে সব কুয়াশা সব মিথ্যে ৷
সেলিমের বাড়িতে অনেক জমকালো আয়োজন ৷ সবাই বাইরে বউ আসার অপেক্ষা করছে ৷ কাপা কাপা পায়ে গাড়ী থেকে নামলো সুমনা ৷ সবাই দেখছে বউকে ৷ সুন্দর চেহারার একটি মেয়ে ৷
মুখটা একটু ফ্যাকাশে ৷ বাবার বাড়ী ছেড়ে এসেছে তাই হয়তো ৷ কিন্তু শুধু সুমনাই ডানে তার থেকেও বড় কিছু ঘটেছে যার পর্দা উঠে যাবে একটু পরেই ৷
সব আয়োজন মেটাতে রাত দুটো বেজে গেলো ৷
সুমনাকে কিছু মেয়ে বাসর ঘরে রেখে গেলো ৷ একটু পরেই সেলিম ঢুকলো ৷ দরজা লক করলো ৷
--- সুমনা তুমি ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে নাও আমি বারান্দায় যাচ্ছি ৷
--- আচ্ছা ৷
সম্মতি তো জানালো কিন্তু মেকআপ ধুয়ে ফেললেই তো বেরিয়ে পরবে সুমনার গায়ের অভিশপ্ত কালো রং ৷ সেলিম কিভাবে নেবে ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে সুমনার ৷
সুমনা গোসল করে একটা সোনালী রংয়ের শাড়ী পরলো ৷ ওয়াশরুম এটাচ ছিলো ৷ বের হয়ে সুমনা দেখলো সেলিম আলো নিভিয়ে ডিমলাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পরেছে ৷
ভয়ে ভয়ে খাটের ওপর বসলো সুমনা ৷
--- নার্ভাস তুমি??
--- না-- মানে না তো ৷ ঘুমাননি?
--- বউ রেখে ঘুমাই কি করে??
সেলিম সুমনার হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো ৷ হালকা আলোয় গায়ের রংটা বোঝা যায়না ৷
পরদিন সকালে সুমনা চোখ খুলেই দেখলো সেলিম তার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে ৷ সুমনা তরিঘরি করে উঠে বসে মাথা নিচু করে ফেললো ৷
--- এত বড় বেঈমানী কিভাবে করলে তোমরা?
--- দেখুন আমার কথাটা শুনুন ৷
--- কি শুনবো? আমি একা হলে কথা ছিল বাড়ীর লোক এখনি সব যেনে যাবে উত্তর কি রেডী আছে না এখন রেডী করবে??
সুমনা নির্বাক হয়ে বসে চোখের জল ফেলছে ৷ সবাই নানান কথা শোনাচ্ছে ৷ সুমনার বাড়ীর লোককেও ফোনে নানান কথা শোনানো হয়েছে ৷
সুমনা চুপ করে আছে আসলেই তো ঠকিয়েছে তাদের ৷ নিজের অসহায়ত্বের বোঝা অন্যের ঘাড়ে ছলনা করে চাপিয়েছে ৷
সেলিমের পরিবার আর যাই হোক সুমনাকে তাড়িয়ে দিলো না কিন্তু সুমনী বুঝতে পারছিলো সে বেশীদিন থাকতে পারবেনা ৷ ডিভোর্সের হালকা পাতলা কথা কানে এসেছ তার ৷
৭ দিন পর,
সুমনা সমস্ত বাড়ী একাই সামলায় বলা যায় ৷ শাশুড়ি তাকে দেখে যতই মুখ ঝামটা দিক সে তোয়াক্কা না করে সমস্ত কাজ একা করে শাশুড়িকে হাত লাগাতে দেয়না ৷ একয়দিনে তার মুখস্ত কে কখন কি করে কি লাগবে ৷
রান্নাটা খুব ভালো করে মেয়েটা ৷ কিন্তু কেউ তা প্রকাশ করে না ৷
কালো মেয়ের কি প্রশংষা করতে আছে?? মান সন্মান চলে যাবে যে
এভাবে পেরিয়ে যায় ২ মাস ৷ সেলিম ফিরেও তাকায়না সুমনার দিকে ৷ কিন্তু সুমনা সবার জন্য যতটুকু করা যায় করে যাচ্ছে ৷ সুমনা যানে কিছু দিনের মধ্যেই উকিল আসবে ৷ সেলিমকে ফোনে কথা বলতে শুনেছে ৷ ২ মাসেই সবার মায়ায় পরে গেছে মেয়েটা যদিও কেউ তার কথা ভাবেনা ৷
সুমনা ভাবে বাড়ীতে গেলে কি বাবা মাও বের করে দিবে? বিয়ে তো হয়েছিলোই ডিভোর্সি মেয়েকে বাড়ীতে রাখাটাও কি অশোভন? হয়তোবা ৷ কি হবে সুমনার ঠিকানা তবে???
সুমনার শশুড় শাশুড়ি একটা ফোন পেয়ে খুব তারাহুরো করে বেরিয়ে গেলো ৷
সুমনা বুঝলো একটা সমস্যা হয়েছে কিন্তু কেউ কিছুই বললো না কি করে জানবে?? দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো এখনো তারা ফিরলোনা সুমন ও চলে আসে এতক্ষণে সেও নেই ৷ সন্ধ্যা হচ্ছে এবার টেনশান বেড়ে গেল সুমনার ৷
সুমনা এবার সেলিম কে ফোন দিতে লাগলো ৷ সচারাচর বিয়ের পর সেলিমকে ফোন দেয়া হতোনা সেলিম ও দেয়নি কখনো ৷ সুমনাও ভয়ে দিতোনা সবসময় নিচু হয়েই থাকে পরিবারে ৷
নাহ সেলিম ধরছেনা ৷ শাশুড়ির নম্বরে ফোন দিতেই ঘরেই বেজে উঠলো ৷ তার মানে উনি ভুলে হয়তো ফোন ফেলে গেছেন ৷ সুমনীর মনে পরলো শাশুড়ির ফোনেই ফোন এসেছিল এই রিংটোন ই তো বাজলো তারপর তারা চলে গেল ৷
সাহস করে সুমনা শাশুড়ীর ফোন হাতে নিলো ৷ রিসিভ কলে আননোন নম্বর ৷ ফোন দিলো সেটায় ৷
--- হ্যালো!
--- জ্বী ১২ টার দিক এই নম্বরে একটা ফোন দিয়েছিলেন ৷ আমার মা কে ৷ উনি তখন বের হয়েছেন এখনো ফেরোননি ৷ কি হয়ছে বলবেন একটু প্লীজ??
--- জ্বী একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল ওনার ফোনের ডায়াল কলে এই নম্বর ছিলো তাই দিয়েছিলাম ৷ আইডি কার্ডে ইনজিওর লোকটার নাম ছিলো সেলিম রেজা!!
ফোনটা হাত থেকে পরে যায় সুমনার ৷ মাথাটা ঝিম হয়ে আসছে চারিদিকটা মনে হয় ঘুরছে ৷ হসপিটালের নাম জানা হয়নি ৷
--- জ্বী হ্যা- হ্যালো! হ- হসপি- টালের না-নামটা
--- সিটি হসপিটাল ৷
সুমনা সিটি হসপিটাল চেনেনা সে দৌড়াচ্ছে ৷ হঠাৎ মনে পড়লো কোনদিকে যাবো?? তখন মাথায় আসলো সিএনজি নিতে হবে ৷ ওর মাথা কাজ করছেনা একদমই ৷
রক্ত জোগাড় করেননি এখনো?
--- ব্লাড ব্যাংকে পেলাম না স্যার ৷
--- তো রিলেটিভদের জানান ৷ আজব তো!
এতটুকুই কানে আসলো সুমনার ৷ তার মানে রক্ত লাগবে ৷ কিন্তু নিজের ব্লাড গ্রুপও তো সে জানেনা সেলিমেরটাও না ৷
--- স্যার একটু আগে যার জন্য রক্ত চাচ্ছিলেন আমি তার ওয়াইফ ৷ আমার ব্লাড গ্রুপটা চেক করে দেয়া যাবে?
--- ওনার গ্রুপ ও নেগেটিভ ৷ ওকে আসুন দেখছি ৷
কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলো রক্তের গ্রুপ ৷
বেঁচে গেলো সেলিম ৷
সেই কালো মেয়েটার দান করা জীবন নিয়ে বেঁচে গেলো সে ৷
তবে ডাক্তার বলেছেন পা এমনভ্বে ইনজিওরড ভাল না হবার আশংকাই বেশী ৷
৬ মাস হয়ে গেছে ৷ বাবা মাও বিরক্ত হয়ে পরেছে ছেলেকে এভাবে টানা এত খরচ ৷
একমাত্র সুমনা সবসময় থাকে সেলিমের পাশে ৷ সব সহ্য করে ৷ সারা রাত সেলিম রায়ের ব্যাথায় কাতরায় সুমনাও চোখের জল ফেলে পায়ে হাত বুলায় ৷ সেলিম ঘুমিয়ে পরে সুমন্ জেগে থাকে যদি আবার ব্যাথা হয় এই ভয়ে ৷
সুমনা সেদিন গিয়ে তার সমস্ত গয়না বেচে ৩ লাখ টাকা এনেছে ৷ সুমনার দাদী অনেক গয়না রেখে গিয়েছিলো ৩ বোনের জন্যে পৱরোনো গয়নার খাত নেই ৷ আর বাবা তো দিয়েছেই সেলিমের পরিবারও দিয়েছে ৷ সব বেচে দিয়েছে সুমনা ৷ কি হবে গয়না দিয়ে যদি পরতে দেখার মানুষটাই না থাকে??
সেলিমের বাবা মায়ের নাকি আর খরচ চালানোর সামর্থ নেই ৷ যা ভাল হবে না তার পেছনে টাকা ঢেলে লাভ কি? এমন কথা শুনেই সুমনা সব বেচে দিয়ে এলো ৷
সেলিম সুস্থ অনেকটাই পায়েও ইনপ্রুভ হচ্ছে ৷
সেলিম পুরোপুরি সুস্থ হবার পরই তার বাবা মা তাকে ধরে বসলো ৷
--- বাবা এখনতো তুই সুস্থ ৷ ডিভোর্সটা দিয়ে দে ৷
--- হুম মা ঠিক বলেছো ৷
--- উকিল ডাক তাহলে ৷ একে রেখে লাভ নেই ৷
--- সুমনা এদিকে আসো ৷
--- জ্বী বলুন ৷
--- বাবা মা বলছেন তোমাকে ডিভোর্স দিতে তোমার কি মত??
--- আপনি যেটায় সুখী হবেন করুন আমি মেনে নেবো ৷
--- ব্যাগ গোছাও যাও এখনি কোন প্রশ্ন না ৷
সেদিন সুমনা চলে আসে সেই বাড়ী থেকে তবে একা নয় সেলিমের সাথে ৷
সেলিমের চলে আসবার আগোর উক্তি ছিলো,
--- ছেলের জন্য অনোক করেছো ৷ করতে করতে বিরক্তও হয়েছো শুধু খরচ করেই ৷ আর এই মেয়েটা সারা রাত আমার পায়ে হাত বুলিয়েছে ৷ দিনে তোমাদের কাজ করেছে ৷ তার সর্বস্ব বিক্রি করেছে যা সম্বল ছিলো ৷ সে তো জানতো আমি তাকে ছেড়ে দিবো তাহলে কি লাভ আমার জন্য করে কিন্তু না সে থামেনি ৷
তার এই ভালবাসার দাম তো চোকাতে পারবোনা তবে তোমরা ওকে এত কিছুর পর যখন মানতে পারোনি আর কোনদিন পারবেও না ৷ তো আমি আমার প্রায়শ্চিত্তটা ওকে নিয়ে আলাদা থেকেই করি তোমরা ভালো থাকো ৷
সুমনা সেলিম ভালো আছে ৷ সুমনা অন্তসত্বা ৭ মাস ৷ সেলিম প্রতিমাসো বাবা মার জন্য টাকা পাঠায় ৷ তারা ভুল স্বীকার করে সুমনাকে মেনে নিতে চাইলেও সেলিম যায়নি ফেরত ৷
মেয়েটা অনেক কেদেছে আর কোনভাবেই তার একফোটা চোখের জল ঝরতে দিবেনা সেলিম ৷
সেলিম বলেছে যদি মেয়ে হয় তোমার মত কালো মেয়ে যেনো হয় ৷ এত সুন্দর একটা মনের অধিকারী ৷ মেয়ের নাম রাখবো
"কৃষ্ণলতা"

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫১

সজিব আহমেদ আরিয়ান বলেছেন: এই ২০১৮ সালে এসেও আমাদের দেশের অনেক জেলায় এমন অনেক পরিবার আছে যারা কালো মেয়েকে বোঝা মনে করে কিন্তু আবার বাবা মা হয়েও ফর্সা মেয়েকে দেহ ব্যবসায় নামায়। আর ফর্সা ব্যক্তিদের খুব সহজেই স্ক্রিন ক্যান্সারের কবু হতে হয় সেটা অনেকেই জানে না। শিক্ষনীয় গল্প!

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ৷

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০২

শায়মা বলেছেন: সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার নাম!

আর তোমার নামটাও আপুনি! :)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) বলেছেন: ধন্যবাদ আপুনি ৷

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৭

ওমেরা বলেছেন: নদীর পানি ঘোলা ভালো জাতের মেয়ে কালো ভালো। খুব ভাল একটা গল্প।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) বলেছেন: ধন্যবাদ ৷

৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪১

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) বলেছেন: গল্প পড়বার জন্য ধন্যবাদ আপনাদের

৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি হতাশ কারণ, হতাশ হবার মত যথেষ্ঠ সময় আপনার আছে। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন দেখবেন, হতাশ হবার সময় পাবেন না ।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৯

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) বলেছেন: জ্বী

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪

আমি ৎৎৎ বলেছেন: আপনি সুন্দর লেখেন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪২

ইরাবতী (ভূতের পেত্নী) বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.