![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফের খুলল কুয়েতের শ্রমবাজার
ডেস্ক রিপোর্ট : দীর্ঘ ৭ বছর পর আরব বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য আবারো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কূটনৈতিক তৎপরতা ও দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের ইতিবাচক নানা কার্যক্রমের কারণে এ সুফল মিলেছে। আর এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের গেল সাড়ে তিন মাসে ৩৮৬ শ্রমিক দেশটিতে গিয়ে বাজার উন্মুক্তের সূচনা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ চেষ্টার পর বাজারটি ফের উন্মুক্ত হলেও ভবিষ্যতে যাতে আর বন্ধ না হয় সেজন্য কুয়েতে থাকা দূতাবাস ভিসা ট্রেডিং বন্ধসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আর কুয়েতে আগের মতো শ্রমিক যাওয়া শুরু হলে পুরো শ্রমিক রফতানি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এতে সরকারি বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা লাভবান হবেন।
জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানায়, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ১৯৭৬ সালে ৫৪৩ জন শ্রমিক যাওয়ার মধ্য দিয়ে কুয়েতের শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। পরের বছর দেশটিতে ১ হাজার ৩১৫ জন শ্রমিক যায় এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। মাঝপথে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় দেশটিতে শ্রমিক যাওয়ার ছন্দপতন হলেও ২০০৭ সালে যায় ৪ হাজার ২১২ জন শ্রমিক। আর এর আগের বছর ২০০৬ সালে দেশটিতে শ্রমিক গিয়েছিল ৩৫ হাজার ৭৭৫ জন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে শ্রমিক যাওয়া কমতে থাকে আশঙ্কাজনক হারে, যা ২০১২ সালে এসে শূন্যের কোটায় নেমে আসে এবং সে বছর দেশটিতে যায় মাত্র দু’জন এবং পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে যায় ৬ জন শ্রমিক।
জনশক্তি রফতানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, অবরোধ, দূতাবাসে হামলা, অবৈধভাবে প্রবেশসহ বেশ ক’টি অভিযোগে ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কুয়েতের শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে যায়।
তবে বিএমইটির কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে একজন শ্রমিক না গেলেও ফেব্র“য়ারি মাসে ৪ জন এবং মার্চ মাসে ১৫৪ এবং এপ্রিলে গতকাল বুধবার পর্যন্ত গেছেন ২২৮ জন শ্রমিক।
পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, তেলসমৃদ্ধ বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত। এক কুয়েতি দিনার বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮০ টাকা প্রায়, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের পছন্দের তালিকায় ছিল কুয়েত।
কর্মকর্তাদের মতে, কুয়েত রাজতন্ত্রশাসিত দেশ। সেখানে মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, অবরোধ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সব ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃক্সখলা বাহিনীর অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু প্রায় সময় বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিষিদ্ধ কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পড়লে দেশটি শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দীন (এনডিসি পিএসসি) দূতাবাসের দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কুয়েতের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে অব্যাহত আলোচনা চালিয়ে যান। এরই ধারাবাহিকতায় কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ফের উন্মুক্ত হতে শুরু করে করে। ইতিমধ্যে একটি এগ্রিকালচার কোম্পানিতে শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীও নিয়োগ পেয়েছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশি কর্মীর নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে ।
সার্বিক বিষয়ে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেন কোনো ধরনের ভিসা ট্রেডিং না হয় সে বিষয়ে দূতাবাস সজাগ রয়েছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশর কর্মীদের জন্য ফের চালু হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের অপরাধমূলক কাজে জড়িত হওয়ার ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমানোর পেছনে রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করায় এখন তার প্রসংশা চলছে কুয়েতের বাঙালি কমিউনিটিতে।
কি এমন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল কুয়েতের শ্রমবাজার খুলতে এমন প্রশ্নে দূতাবাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গেল ছয় মাসে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের কল্যাণে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে হেল্পলাইন চালু; বিমানে ভ্রমণকারী প্রবাসীদের সহায়তায় দূতাবাস থেকে লিফলেট বিতরণ; প্রতি মাসের দ্বিতীয় বুধবার দুপুর ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত দূতাবাসে ওপেন ডে ফোরামে রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অভিযোগ শোনা এবং সেগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান; প্রবাসীদের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিষয়ে আরো সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দূতাবাস কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সহায়তায় স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান; দূতাবাসের উদ্যোগে ত্রৈমাসিক নিউজলেটার প্রকাশ; গেল ১৮ এপ্রিল থেকে কুয়েত রেডিওতে নিয়মিত বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
জনশক্তি রফতানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুয়েতের মতো কূটনৈতিক তৎপরতা সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বাকি সম্ভাবনাময়ী দেশগুলোতে চালানো হলে জনশক্তি রফতানি খাত আগের সেই যৌবন ফিরে পাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।মানবকণ্ঠ
স্থানীয় সময় : ০১৫৮ ঘণ্টা, ২৪এপ্রিল ২০১৪
©somewhere in net ltd.