![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অগোছালো মানুষ এক। মেয়ে অন্বেষা ও ছেলে রিশাদের প্রিয় বাবা এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর ’অপদার্থ’ স্বামী। ;)
আশি এবং নব্বই এর দশকে আমরা যারা বড়ো হয়েছি, আমাদের চলাফেরায় এতো চাকচিক্য ছিল না। এখনকার পোলাপানের মতো এতো টাকা-পয়সা ছিল না পকেটে। আমরা বই বগলে নিয়ে স্কুলে যেতাম, তখন স্কুল ব্যাগের তেমন প্রচলন ছিল না। সাইকেলে চড়ে কলেজে যেতাম। তখন ঢাকার প্রায় সব কলেজে সাইকেল স্ট্যান্ড ছিল। রাস্তার পাশের টং দোকানে বসে আমরা একটা চা পিরিছে ঢেলে দুভাগ করে দুজনে খেতাম। একটা সিগেরেট খেতাম দুই, তিন জনে। সিগারেটের ক্ষেত্রে তখন ফার্স্ট বুক, সেকেন্ড বুক, থার্ড বুক...বলে কথা চালু ছিল। তখন আমজনতার ব্রান্ড ছিল স্টার-রমনা, মধ্যবিত্ত লেবেলে চালু ছিল ক্যাপিস্টান এবং ব্রিস্টল। আশির দশকের শেষ দিকে চলে আসে গোল্ড ফ্লাগ এবং গোল্ড লীপ। এক্টু অভিজাত লোকজন খেতো ফাইভ ফিফটি ফাইভ, বেনসন এন্ড হেজেস কিংবা মার্লবোরো। অনেক সৌখিন লোক আবার হাতে বানানো সিগারেটও খেতো। ’ফ্লাইং ডাচ ম্যান’ নামক ব্রান্ডের প্যাকেট কিংবা ক্যানে পাওয়া যেতো হাতে বানানো সিগারেটের উপাদান।
আমাদের সময় বিনোদনের মূল অনুষঙ্গ ছিল সিনেমা। ঢাকাই সিনেমা খুব জনপ্রিয় ছিল তখন। রাজ্জাক, ওয়াসীম, সোহেলরানা, জাফর ইকবাল, আলমগীর, ফারুক ছিলেন খুব জনপ্রিয় নায়ক। নায়িকাদের মধ্যে ছিল শাবানা, কবরী, ববিতা, সুচরিতা, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, চম্পা প্রমুখ। তুখোড় জনপ্রিয় ভিলেন ছিলেন জসীম। তারপরে ছিলেন, মঞ্জুররাহী, আহমদ শরীফ, রাজ, খলিল, মিজু আহমেদ সহ আরো অনেকে। টেলিসামাদ ছিলেন ঢাকাই সিনেমার সবচে জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। পাশাপাশি ছিলেন
আশিষ কুমার লৌহ, দিলদার, মতি, ব্ল্যাক আনোয়ার, সুরুজ বাঙালি। এদের আগে ছিলেন খান জয়নুল, রবিউল, হাসমত।
আশি দশকের ঢাকায় অনেক গুলো সিনেমা হল ছিল। এর মধ্যে স্টার, মুন, লায়ন, তাজমহল, রূপ মহল, শাবিস্তান, নাগর মহল (পরবর্তীতে চিত্রামহল) গুলিস্তান, নাজ, বিউটি, মল্লিকা এখন আর নেই। এগুলো সব ছিল ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল। গুলিস্তান সিনেমা হলের নামেই সুপরিচিত হয়ে ওঠে ঢাকার গুলিস্তান এলাকা।
নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকা বাসীর বিনোদনের মূল অনুষঙ্গ ছিল সিনেমা। আমরা খিলগাঁও এলাকার পোলাপান তখন দলবেঁধে সিনেমা দেখতে যেতাম জোনাকি, মধুমিতা কিংবা গুলিস্তানে। ঢাকার পিল খানায় একটি সিনেমা হল ছিল, এখন আছে কিনা জানি না। নব্বই’এর দশক পর্যন্ত ওখানে পাকিস্তানী ছবি প্রদর্শিত হতো। মোহাম্মদ আলী, জেবা, দীবা, ওয়াহিদ মুরাদ একসময় এই দেশেও তখন খুব জনপ্রিয় ছিল। পাকিস্তানী ছবির তারকা পর্যায়ের কৌতুকাভিনেতা ছিল রঙ্গীলা।
রাজধানীর অভিসার সিনেমা হলে তখন প্রায় নিয়মিত ভাবে চলতো বিদেশী ছবির প্রদর্শনী। বিদেশী বলতে মূলত ইংরেজি এবং চাইনিজ ছবি। চাইনিজ ছবির নায়ক ব্রুসলী তখন এই দেশেও তুখোড় জনপ্রিয়। এ ছাড়া জেমস বন্ড নায়ক রজার মুর, শন কনরী, ওয়েস্টার্ন মুভির বিখ্যাত নায়ক ক্লিন্ট ইস্টউড,
চার্লস ব্রনসন, এ্যাকশন হিরো চক নোরিস, র্যম্বো খ্যাত সিলভিস্টার স্ট্যালন এর জনপ্রিয়তাও ছিল ব্যাপক। অভিসার ছাড়াও মধুমিতা, গুলিস্থান সহ বিভিন্ন সিনেমা হলে প্রতি রোববার মনিং শোতে ইংরেজি এবং চাইনিজ ছবি প্রদশির্ত হতো। এই সময় এক টিকেটে দুইটি ইংরেজি ছবি দেখার প্রচলন শুরু হয়।
এখনকার পোলাপান যেমন ফাস্টফুডে কিংবা চায়নিজে ডেটিং করে, সেই সময় সিনেমা হল ছিল আকর্ষনীয় ডেটিং স্পট। যে সব পোলাপান সাধারণত স্টল আর রিয়েল স্টলে বসে সিনেমা দেখতো। তারাই আবার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঢুকতো বিলাসবহুল ড্রেস সার্কেলে (ডিসি)। সিনেমা শুরুর আগে ওয়েটিং রুমে দুজনে একান্তে বসে চটপটি কিংবা ফুচকা খাওয়া। বিরতির সময় পেপসি-কোকাকোলা, স্পাইট-সেভেন আপ কিংবা ফান্টা-মিরিন্ডার ২৫০ এম এল কাঁচের বোতলে চুমুক দেয়া, চিপস কিংবা বাদাম খাওয়ার পাশাপাশি অন্ধকারে গার্লফ্রেন্ডকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া, একটু আধটু খুনসুটি এমনই ছিল তখনকার প্রজম্মের সিনেমা কেন্দ্রিক প্রেম।
আশির দশকের মধ্যভাগে ভিসিআর (ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার) নামক একটি যন্ত্রের প্রচলন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ব্যাপক ভাবে হিন্দি ছবির আগ্রাসন শুরু হয়। পুরোন ঢাকার বেগমবাজার হয়ে উঠে এই অবৈধ হিন্দী ছবি প্রদশর্নীর তীর্থ স্থান। ২৪ ইঞ্চি সনি টিভিতে ভিসিআরের মাধ্যমে ছবি প্রদর্শিত হতো। আমরা তখন দলবেঁধে জোনাকি, মুধুমিতা কিংবা অভিসার বাদ দিয়ে বেগমবাজার, সিদ্দিকবাজার মুখি হই। বেগম বাজারে তখন দিনেতো প্রদশর্নী চলতোই আবার মাত্র দশ টাকা দিয়ে সারা রাতও তিন-চারটি ছবি দেখার ব্যবস্থা ছিল। ছবি দেখার মাঝখানে প্রদর্শিত হতো পর্ণ ছবির কাটপিস।
বন্ধুরা, এই লেখাটি সিরিজ আকারে কয়েক পর্বে লিখবো। আজ মূলত লিখলাম আশি এবং নব্বই দশকে সিনেমা কেন্দ্রিক বিনোদনের ইতিবৃত্ত। পরের পর্বে থাকবে রেডিও-টেলিভিশন এবং ব্যান্ড সঙ্গীত বিষয়ক প্যাঁচাল। আমার সমসাময়িক বয়সের যারা এই লেখাটি পড়বেন, তারা কমেন্টের মাধ্যমে নিজের তারুণ্য, অভিজ্ঞতা, বেড়ে ওঠার পেক্ষাপট, প্রেম- ভালোবাসা, আনন্দ-বিনোদন তথা তৎকালীন আর্থ-সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি শেয়ার করবেন আশা করি।
#এই পোস্ট ইতিপূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে।
পোস্টে ব্যবহৃত পোস্টার গুলো নেট থেকে সংগৃহীত।
____________
১৪ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৫৩
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: হুম, বৃস্টল, ক্যাপেস্টাইন সিগারেটের কথা পোস্টে উল্লেখ আছে। সিজার ও মধ্যবিত্ত লেবেলে খুব জনপ্রিয় ব্রান্ড ছিলো।
হিন্দি অমিতাভবচ্চন,ধর্মেন্দ্র, আমজাদখান এবং হেমামালিনী অভিনীত 'শোলে' ছবির হুবহু নকল ছিলো ওয়াসীম, সোহেলরানা, জসিম এবং শাবানা অভিনীত 'দোস্ত দুসমন'। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১৪ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৫৭
আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার একটি বিষয় বেছে নিয়েছেন। আমরা একবার তাড়াহুড়া করে দেখতে গেলাম 'স্বামী কেন আসামী' সিনেমা। বয়স অল্প। সিনেমা তখনও ভালোমতো বুঝে উঠতে পারি না। বারটার শো শেষ করে বুঝতেই পারলাম না 'স্বামী কেন আসামী' হলো। পরে আবার বুঝার জন্য তিনটার শোতে প্রবেশ করলাম। পরপর দুই শো দেখেও বুঝে উঠল না স্বামী কেন আসামী। হা হা হা। এই নিয়ে পরে বিরাট হাসাহাসি...
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:১২
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: আমিও জীবনে অনেক ছবিই একাধিকবার দেখেছি। প্রথম বার দেখেছি নিছক বিনোদনের জন্য। দ্বিতীয়বার হয়তো দেখেছি, বুঝার জন্য। আর... স্বামীরাতো স্ত্রীদের কাছে কারণে-অকারণেই আসামী। হা হা হা।
৩| ১৪ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:১০
কামাল১৮ বলেছেন: একমাত্র সারেং বৌ দেখেছি।বাকি গুলি আর দেখার ইচ্ছা নাই।
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:১০
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: হুম, প্রয়াত অভিনেতা আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত, কবরী-ফারুক অভিনীত 'সারেং বউ' বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অসাধারণ নির্মাণ। অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৪ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:২৫
জটিল ভাই বলেছেন:
অসাধাণ পোস্ট! ধন্যবাদ।
আমিও বহুদিন ভাবছিলাম এমন একটা পোস্ট দেই........
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:১৪
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: দিয়ে ফেলুন ভাই। আপনার সিনেমা কেন্দ্রীক অভিজ্ঞতা জানা হবে।
৫| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৩১
আমি সাজিদ বলেছেন: আপনাদের সময় সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো।
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৩৪
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।
৬| ১৫ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৫০
শোভ বলেছেন: আপনার সাথে আমার মিলে গেছে বাকিটা আরেক পর্বে বলব ।
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৫৪
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা শোনার অপেক্ষায় থাকবো। অনেক ধন্যবাদ।
৭| ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:০৯
আরাফআহনাফ বলেছেন: সমসাময়িক হওয়াতে মিল পেলাম সবকিছুতে।
ছুটির ঘন্টা সিনেমা দেখার পর প্রাইমারী স্কুলের টয়লেটে আর কখনো যাইনি - বহুদিন লেগেছিলো এ ভয় কাটতে।
সেই সময় বিভিন্ন সিরিজ পড়তাম - রোমেনা আফাজ এর দস্যু বনহুর, কুয়াশা, সেবা প্রকাশনীর বই।
সিগারেটের প্যাকেট সংগ্রহ করে "তাস" খেলতাম - স্টার ১০, রমনা ৫, ক্যাপেস্টন-২০, স্টর্ক-৩০, কে-২-৫০ এভাবে মূল্যমান সাজাতাম।
সময় কতই না দ্রুত চলে যায় !!!
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:০০
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: 'সেই সময় বিভিন্ন সিরিজ পড়তাম - রোমেনা আফাজ এর দস্যু বনহুর, কুয়াশা, সেবা প্রকাশনীর বই।সেই সময় বিভিন্ন সিরিজ পড়তাম - রোমেনা আফাজ এর দস্যু বনহুর, কুয়াশা, সেবা প্রকাশনীর বই।...কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা'র কথা বললেন নাতো। আমি প্রথম শুরু করেছিলাম 'দস্যু বনহুর' দিয়ে। পরে যখন মাসুদ রানা পড়া শুরু করি, তখন 'দস্যু বনহুর' পানসে লাগতে শুরু করলো। 'কুয়াশা' 'তিনগোয়েন্দা' সিরিজও আমার খুব প্রিয় ছিল। তবে সেবার ওয়েস্টার্ন বই গুলো ছিলো দুর্দান্ত। এখনও হাতের কাছে পেলেই পড়ে ফেলি। তাছাড়া ফাল্গনী মুখোপধ্যায়, নীহারঞ্জন গুপ্তের বইও পড়েছি অনেক। দেখি সেই সব ক্লাসিক বইয়ের ওপরও একটি পর্ব হয়তো লিখবো। ধন্যবাদ আপনাকে।
৮| ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:১১
আরাফআহনাফ বলেছেন: আরেকটা কথা বলা হলো না - ব্রুসলীর উপর ভিউকার্ড ছিলো আমাদের অন্যতম আকর্ষণ - টাকা পেলেই কিনে ফেলতাম ৮/১০ টা ভিউকার্ড।
১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:০৬
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: শুধু ব্রুসলীই নয়, ভিউকার্ড ছিলো জেমস বন্ড নায়ক রজার মুর, শন কনোরি প্রমুখের। বাংলাদেশী নায়ক/নায়িকাদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল বোম্বের নায়ক নায়িকাদের ভিউকার্ড। পাকিস্তানী নায়ক মোহাম্মদ আলি, নাদিম, জেবা, দিবাদের ভিউকার্ডও পাওয়া যেতো। এই ভিউকার্ড গুলো প্রথমে ইন্ডিয়া থেকে এলেও পরে আযাদ প্রোডাক্টস এর উদযোগে দেশেই উৎপাদান শুরু হয়।
৯| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:১৬
কল্পদ্রুম বলেছেন: ভালো লাগলো। পরের পর্বও লিখবেন।
১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:০৪
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: মন্তব্যে প্রাণিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ।
১০| ২৫ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:৪৩
ফড়িং-অনু বলেছেন: পোষ্টটি পড়ে এখন আমি আশির দশকে।
১১ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৩৮
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: হা হা হা।
আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করুন ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:২৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ৮০ র দশকে সম্ভবত কে-২, বৃসটল, সিজার, ক্যাপেসটান নামে সিগারেট ছিল। দোস্ত দুশমন সিনেমাটা হিন্দি 'শোলে' ছবির বাংলা সংস্করণ। আপনার স্মৃতিচারণের পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।